একটা সময় ছিল যখন ভারতীয় বাংলা মুভির অনুকরণে হিন্দী মুভি তৈরি করা হতো। ভারতে বাংলা মুভির যে কত গৌরব সেটি তাদের জাতীয় পুরস্কারের তালিকা দেখলেই বোঝা যায়। বাংলাদেশের বাংলা সিনেমাও এক সময় পায়ে পা মিলিয়ে চলছিল কিন্তু হঠাৎ করেই পতন। ভারতীয় বাংলা মুভির মান কমার সাথে সাথেই কে যেন বাংলাদেশের মুভিতে অশ্লীলতা ঢুকিয়ে দিলো ভেজালটা লাগায়ে। কিন্তু একদিন সুদিন ঠিকই আসে। ভারতীয় বাংলা মুভি আবার মাথা উঁচু করে উঠছে। বাংলাদেশের সিনেমাকেও বলবো জেগে উঠেছে শুধু একটু ধাক্কার প্রয়োজন। বাংলা মুভির জাগরণের নতুন সংযোজন “২২ শে শ্রাবণ”। বাংলা পদ্য সাহিত্যের ধনভাণ্ডার থেকে বেরিয়ে আসা একটা অসাধারণ মানের সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার।
কাহিনী বেশি বলা ঠিক হবে না। কারণ কাহিনী এক কথায় টাশকি। তবুও কিছুটা বলি। গত কয়েক মাসে কলকাতার পুরা ব্যাড়াছ্যাড়া অবস্থা । কয়েক মাসের মধ্য ৪ টা খুন। তাও আবার যে সে খুন না । সিরিয়াল কিলিং!! সিরিয়াল কিলিং এর এক বিশেষ ধরণের নিয়ম কিংবা ছাঁচ থাকে। এই বারের খুনি আবার কবি। প্রত্যেকটি খুনের পর তার লাশের পাশে থাকে এক বিখ্যাত কবির কবিতা এবং কবিতার সাথে থাকে খুনের বর্ণনার মিল। অনেকদিন ধরে এই কেসে থাকা অভিজিৎ ( পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ) কোন কূল-কিনারা করতে পারছেনা। কোন উপায় না দেখে শেষমেশ পুলিশ বাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া প্রবীর রায় চৌধুরী ( প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) এর সাহায্য চায় সকলে। প্রসেনজিৎ এক আজব কিসিমের পাবলিক। চান্স পাইলেই গালাগালি। পরমব্রত ভাবে এই পাগলার গালি খাওয়ার থেইক্কা গুলিস্তানে বইসা পাগলা মলম বিক্রি করা অনেক ভালো। কিন্তু সিরিয়াল কিলিংএর খাউজানির ওষুধ পাগলা মলম দিয়া হয়না। এর লেইগ্গা ইস্পিশাল পাবলিক লাগে। পুনরায় পুলিশে যোগদান করে প্রসেনজিৎ। কেইসটি হঠাৎই অসাধারণ এক গতি পায়। প্রসেনজিৎ এবার খুনির আরেক রূপ বের করে। খুনি যেদিন খুন করে এবং যার কবিতা লাশের পাশে রেখে যায় সেদিন ঐ কবির মৃত্যুদিন। এদিকে পরমব্রতর প্রেমিকা একজন সাংবাদিক, নাম অমৃতা ( রাইমা সেন) । সে তার টিভির এক অনুষ্ঠানের জন্য এক কবির সাক্ষাৎকার নেয়। নাম নিবারণ ( গৌতম ঘোষ)। লোকটি কেমন জানি। রবীন্দ্রনাথের সাথে ফোনে কথা বলে। রাতের বেলা হঠাৎ বের হয়ে যায়। Hungryalist এর কথা বলে। এই সে লোক না তো? কিন্তু তার পরবর্তী শিকার কে হবে ? তাকে কি থামাতে পারবে অভিজিৎ ও প্রবীর?
পুরো মুভি জুড়েই রয়েছে কবিতা। বাংলা সাহিত্য যে কত প্রাচুর্যপূর্ণ সেটি এই চলচ্চিত্র দেখলে পুনরায় মনে পড়ে। বোঝায় যায় যে মুভিটি করতে বেশ খাটনি খাটতে হয়েছে। শ্রীজিৎ মুখোপাধ্যায় এর পরিচালনা একেবারে দুর্দান্ত। মুভিটির প্রত্যেকটি দৃশ্য দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
অভিনয়ের দিক দিয়ে সবাই ফাটিয়ে অভিনয় করেছে। পরমব্রত, গৌতম ঘোষ প্রত্যেকেই দারুণ করেছে। রাইমাকে মোটেও ভালো লাগেনি। কিন্তু সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছে প্রসেনজিৎ। অসাধারণ অভিনয়। প্রত্যেকটি সংলাপের পর তালি দিতে ইচ্ছে করে।
মুভিটির সংগীতের কথা না বললেই নয়। “একবার বল নেই … ” এবং “গভীরে যাও … “ দুটিই দুর্দান্ত। “আমাকে আমার মতো থাকতে দাও …” খ্যাত অনুপম রায় আবার মাত করলেন।
মুভিটির খারাপ দিক বলতে গেলে বলতে হবে সম্পাদনা। মুভিটির চিত্রনাট্য আরো একটু দ্রুতগতির হতে পারতো। এছাড়া যারা কবিতা পছন্দ করেন না তাদের জন্য মুভিটি বেশ বিরক্তকর লাগতে পারে।
সব মিলিয়ে এই চলচ্চিত্র থেকে বাংলা সিনেমার জয়যাত্রা শুরু হলো। আমি আশা করি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রও একদিন পিছু নিয়ে পরবর্তীতে এগিয়ে যাবে। সেদিন বলবো “২২ শে শ্রাবণ” এর মত অগ্রজদের ধন্যবাদ।
এক কথায় দারুণ মুভি।
রেটিং – ৪.৫ / ৫
বলেন কী! সিরিয়াল কিলার নিয়ে বাংলা মুভি! দেখতে হবে!
রিভিউ এর জন্য ধন্যবাদ 😀
ধন্যবাদ বাপ্পী।
তোমার ইস্তাম্বুল নিয়ে লেখা চাই। 😛
মুভিটা দেখে ফেলছি! দারুণ লাগছে আমার!
দেখোতে হবে মনে হয়। কিন্তু ডাউনলোড করতে পারলে ভাল হত।