সমাজের যান্ত্রিকতায় যখন আমরা নিত্য পিষ্ট হই লালসা, হতাশা আর ফেলে আসা স্মৃতিকাতরতায়, তখনই খুঁজে ফিরি এক টুকরো নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা। একুশে বইমেলা ঠিক তেমনই এক স্বপ্নদ্রষ্টা শক্তির নাম, যেখানে খুঁজে পাওয়া যায় সেই পুরনো ‘আমি’কে। ফেলে আসা জীবনের কথকতা আর নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়ার সেই বইমেলায় হাজারো বইয়ের ভিড়ে খুঁজে নিতে হয় নিজের কথা বলা বইটিকে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে ‘সরব’ ব্লগের এই আয়োজন, ‘আয়নায় মুখোমুখি ব্লগার-লেখক’। লেখালেখি জীবনে ব্লগ থেকে বইতে পা রেখেছেন যারা, তাদের ভাবনার জগত পাঠকদের সামনে উপস্থাপনের ছোট্ট প্রয়াস।
অপেক্ষায় থাকুন নতুন বইয়ের, অপেক্ষায় থাকুন নতুন সাহিত্যিকের…
বইমেলা হোক সরব, প্রাণের উৎসবে!
১. নিজের সম্পর্কে কিছু বলবেন?
উ: নিজের সম্পর্কে তেমন কিছু বলার নেই। প্রথমত মানবিক মানুষ হতে চাই, অতঃপর কবি হতে চাই। খানিকটা শিল্পী হতে চাই– যেহেতু শিল্পকলার ছাত্র।
২. লেখালেখির সাথে সম্পর্কের শুরু হলো কী করে?
উ: পড়ার মাধ্যমে লেখালেখির সাথে সম্পর্ক। আমি ঠাকুরমার ঝুলি পড়ার বয়সে বড়দের বই পড়ি। আমার বাবার অনেক বই ছিলো। তাছাড়া টিফিনের টাকা জমিয়ে আমি বই কিনতাম। আর প্রায় প্রতিদিন তিনমাইল হেঁটে একটা এনজিওর পাবলিক লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে আসতাম। রাত জেগে বই শেষ করতাম, কোনোদিন শেষ করতাম দুটো বই। তখন আমি সিক্স/ সেভেনে পড়ি। হয়তো এইভাবে আমি হয়ে গেলাম ইনসোমনিয়াক। সেই রোগ বয়ে বেড়ালাম ১৫/১৬ বছর।
আমার বয়স এখন একত্রিশ। আমি ইশকুলের লেখার বাইরে প্রথম লিখি, তখন আমার বয়স দশ। তার মানে ২১ বছর ধরে লিখছি। এবং ফেলে দিচ্ছি।
৩. কেন লিখেন? লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
উ: কেনো লিখি সেই বিষয়ে পুরোপুরি জানি না, হয়তো কোনোকিছু (যেমন, দুঃখ, অতি আনন্দ, হতাশা, স্বপ্ন ইত্যকার বিষয়) থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যে লিখি। এইটুকু জানি কোনো সামাজিক/ নৈতিক দায় থেকে লিখি না। দায় থেকে লিখলে সেটা আরোপিত এবং বানানো মনে হয়। শিল্পের জন্ম স্বাভাবিক সহজ, স্বতঃস্ফূর্ততায়। যেহেতু আমি সামাজিক জীব– সেহেতু আমার লেখা বা সৃষ্টির মধ্যে তার ছাপ থাকবেই। এটা আরোপ করার বিষয় নয়।
লেখালেখি নিয়ে মহৎ কোনো পরিকল্পনা নেই। না লিখে থাকতে পারবো না, তাই লিখবো। পারলে ছেড়ে দিতাম। লেখালেখি খুব কষ্ট– মুদি দোকানদারি, মাটি কাটা অনেক সহজ। কারণ সেটা করে দেখেছি।
৪. লেখালেখির ক্ষেত্রে কোনো অনুপ্রেরণা আছে কি? কাউকে কি অনুসরণ করেন?
উ: তেমন কোনো অনুপ্রেরণা নাই। আবার বলা যায় অনেক অনুপ্রেরণা মহান লেখকদের সব লেখাই আমার অনুপ্রেরণা। পড়তাম আর ভাবতাম এই জায়গাটা আমি লিখলে কেমন হতো। আর বাবাকে লিখতে দেখতাম, বিচ্ছিন্ন কাগজে লিখছেন আর হারিয়ে ফেলছেন। এখনও লিখেন, আগের মতোই। তিনি কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস লিখেন। কোথাও ছাপাতে দেন নি কখনো, তেমন কোনো লেখা, বা পান্ডুলিপিও সংগ্রহে নাই। সব হারিয়ে গেছে। ছোটোবেলায় কেউ আমাকে লিখতে বলে নি। কারো সাথে মিশতাম না, খেলার মাঠে যেতাম না, নির্জনতার ভিতর যেটুকু নৈসঙ্গ তা কাটতো বই আর খাতার সাথে। ক্লাসের বই অবশ্যই নয়।
লেখালেখির ক্ষেত্রে কাউকে অনুসরণ করি না। করতে চাইও না। তবে নিজের লেখার মধ্যে মহান, অতিশয় ভালো কোনো লেখার প্রচ্ছন্ন প্রভাব থেকেই যায়। এটা এড়ানো সম্ভব না, আবার দরকারও নেই। এটা সবার মধ্যেই ছিলো। এবং থাকবে। তবে নিজের স্বর আবিস্কারে চেষ্টা খুব্বি জরুরি।
৫. অনেকের ধারনা এখন অধিকাংশ লেখকের লেখা একই প্যাটার্নের হয়ে থাকে, নতুনত্ব খুব কম পাওয়া যায়- আপনি কি এর সাথে একমত?
উ: একমত কিংবা দুইমত কোনোটাই বলবো না। তবে এই বিষয়ে দুইটা কথা বলবো।
লেখক হওয়ার পূর্বশর্ত পাঠক হওয়া। আমাদের প্রধান সমস্যা হলো আমরা পাঠক হওয়ার আগে লেখক হতে চাই। আমরা জানতে চাই না যে আমাদের জন্যে এটা খুবি খারাপ। এবং দুর্ভাগ্যের ব্যাপার।
আমরা নিকোলাই গোগোল না পড়েই গল্প লিখতে বসে যাই। দস্তয়েফস্কি না পড়েই উপন্যাসিক হয়ে যাই। এমন কি আমরা রবিনাথও পুরোপুরি পড়ি না। আমরা পুরাণ-কুরান, দর্শনবিজ্ঞান, ইতিহাস ভাসাভাসা জানি, একলাইন মাইকেল পড়ি নি। কিন্তু ভাবালুতা করে বলি কবিতা। লিখতে গেলে আমাদের সাহিত্যের মহান ওল্ডমাস্টার (মাইকেল, বঙ্কিম, রবিনাথ, বিভূতি, মানিক, তারাশঙ্করসহ সবাই )দের সব লেখাই পড়তে হবে তাও জানি না। কারণ আমাদের ধৈর্যের বড় অভাব। বড় বড় চুলদাড়ি বেনী করে, সানগ্লাস পরে, দামি কাগজ/ মলাটে চারফর্মা অখাদ্য ছাপিয়ে লেখক হয়ে যাই। কিংবা মদগাঞ্জা খেয়ে আজিমপুর কবরখানায় মহান কোনো লেখকের কবরের উপর পড়ে কান্নাকাটি করি। আহ্ একেই বলে লেখক!
আমরা লিখতে গেলেই অন্য অনেক লেখকের নকল হয়ে যায়। ফলত প্যাটার্ন মিলে যায়। ধরা পড়লে বলি, আমিতো তার লেখা কখনোই পড়ি নাই। কিংবা বলি এইটা হইলো, নৈর্ব্যক্তিক অবচেতনের ফল।
এইসব বলে হয়তো কিছু সময়ের জন্যে পার পেয়ে যাই। কিন্তু সময় যে কী কঠোর জল্লাদ তা আমরা জানি না। জানি না যে সময় ঠিকই আমাদের গলা কেটে নর্দমায় ছুঁড়ে ফেলে রেখে যাবে, হয়ে যাবো ইঁদুর আর গন্ধমুষিকের আহার। আহা!
আমরা জানি না যে, অন্যদের থেকে আলাদা হওয়ার জন্যে, নিজস্ব ধরন তৈরি করার জন্যেই পড়তে হবে।
গতবছর আমার দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে একটা কবিতার বই, ‘পাখি ও পাপ’, অন্যটা মুক্তগদ্য সংকলন, ‘শোনো, এইখানে বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়’। এই দুটি বইয়ের জন্যে আমি আঠারো/উনিশবছর অপেক্ষা করেছি। তারপরও কিছু হলো কিনা নিশ্চিত নই। সময় যদি ধরে রাখে তবেই কিছু, নাহয় নর্দমেয়।
আমরা মনে করি লেখক হওয়া অনেক সহজ, অনায়াসে হওয়া যায়– যেনো লিখতে পারলেই লেখক। কিন্তু জানি না যে, এ বড় কঠিন কাজ, অনেক সাধনার, অনেক পাঠপরিক্রমার। উদ্ভিদের মতো বীজ থেকে অঙ্কুরোদ্গম, তারপর চারা, ক্রমশ বৃক্ষ এবং বৃক্ষের বয়স।
৬. নতুন লেখকদের বিষয়ে পাঠকদের মনোভাব কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
উ: অবশ্যই ইতিবাচক হওয়া উচিত। কারণ এই দুষিত সময়ে একদল মানুষ অন্তত লেখালেখির মতো শুভ্র বিবষয়াদির বলয়ে আছে সেটাও অনেক বড় বিষয়। এরা অন্তত কারো পেটে ছুরি মারবে না, রাস্তায় মেয়ে দেখলেই ছুটে যাবে না চেপে ধরার খেয়ালে।
৭. একজন ব্লগারের কি তার প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা আছে? থাকলে কতটুকু? বাঙলা ব্লগে দায়বদ্ধতার কী রকম ছাপ দেখতে পান?
উ: দায়-ফায় বাজে এবং বস্তাপঁচা কথা। এইটুকু জানি ব্যক্তিসত্তা নৈর্ব্যক্তিক সত্তার পূর্বগামী। আমি সত্য হলে জগৎ সত্য, আমি মিথ্যা হলে জগত মিথ্যা। আমি বিন্দু। আমাকে ঘিরেই বৃত্ত, বৃত্তের পরিধি। প্রথমত রাস্তা বানাবো আমি নিজে হাঁটার জন্যে। অপর সেই রাস্তাতেই হাঁটবে পরে। যেহেতু নিজের জন্যে বানাবো, ভালো মতোই বানাবো নিশ্চয়ই।
৮. ব্লগের ফিডব্যাক নিয়ে আপনার মন্তব্য কী? সবসময় কি সঠিক মনে হয়?
উ: ব্লগের ফিডব্যাক সবসময় ভালো নয়। ব্লগকে একদা আমি পিঠ চুলকানি সংস্থা বলেছিলাম। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্লগ খুব উপকারি জায়গা। প্রিন্টমিডিয়ায় কারণে অনেক ভালো লেখক অগোচরে হারিয়ে গেছে। কারণ প্রিন্টমিডিয়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে দলের লোকজনদের ফোকাস করে, ফোকাস করে চাটুকার এবং তেলের আড়তদারদের। অন্যদিকে অনলাইন একটা স্বাধীন ক্যানভাস। এইখানে আমরা সহজেই নিজেদের তুলে ধরতে পারি। ভালোমন্দ বিচার তৎক্ষণাৎ করতে পারি।
৯. ব্লগ আসার পর মানুষ খুব বেশি ওয়েব-নির্ভর হয়ে গেছে, আগের মতো বই কিনে পড়ে না – এ নিয়ে আপনার কী মতামত?
উ: কথা সত্য নয়। যারা আগে বই কিনতে তারা এখনো বই কিনে। বই পড়ার ব্যাপারটাই অন্যরকম। যেটা স্ক্রিনে সম্ভব নয়। আমি নিজেই দীর্ঘ কোনো লেখা কম্পিউটারে পড়তে পারি না। আগে বই খুঁজি, না পেলেই কম্পিউটারে পড়ার কথা ভাবি।
১০. আপনার নতুন প্রকাশিত বই সম্পর্কে পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?
উ: নতুন বইয়ের নাম ‘ডুবোজ্বর’। আপাতচোখে এটি গল্পের বই। কিন্তু এর অধিকাংশই কাব্যগল্প কিংবা গল্পকাব্য– যেহেতু আমার লাইন কবিতা। এই গ্রন্থের গল্পগুলি প্রথাগত কাঠামোতে লেখা নয়। এইখানে পাঠকের জন্যে অনেক ফাঁকা জায়গা রাখা আছে। কবিতায় সাধারণত আমি যে ধরনের স্পেস ব্যবহার করি, এইখানেও অনেকটা সেইরকম।
নাম: ডুবোজ্বর
লেখক: নির্ঝর নৈঃশব্দ্য
ধরন: গল্প
প্রকাশক: ঋতবর্ণ, কক্সবাজার
মূল্য: ৬৪ টাকা
পাওয়া যাবে:
১৫ ফেব্রুয়ারির পর থেকে লিটলম্যাগ কর্নারে, চর্যাপদ, কোরাস, উন্মুক্তস্টল এবং লেখকের ব্যাগে
পূর্বে প্রকাশিত সাহিত্যস্বর:
আয়নায় মুখোমুখি ব্লগার-লেখক(৪): মাইনুল এইচ সিরাজী
আয়নায় মুখোমুখি ব্লগার-লেখক(৩): আবদুল্লাহ আল মাহমুদ
আপনার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। আরও জানার আগ্রহ তৈরি হলো।
দায়বদ্ধতা ব্যাপারটা নিয়ে আপনার সাথে একমত না।
“এইটুকু জানি ব্যক্তিসত্তা নৈর্ব্যক্তিক সত্তার পূর্বগামী।”
– সেটাই! তাই আপনি একভাবে দেখছেন আমি আরেকভাবে।
প্রিয়,
অনেক দিন আগে এই বিষয়টা নিয়ে আপনি আরও একবার দ্বিমত করেছিলেন। তখন আপনাকে খুব সম্ভবত বলেছিলাম, বিষয়টা নিয়ে মুখোমুখি আলোচনা হলে আপনি হয়তো আমাকে খানিকটা বুঝতে পারতেন। এতো স্বল্প পরিসরে কিবোর্ড চেপে চেপে আলোচনায় আমি অক্ষম। তাই কখনো যদি দেখা হয় কথা হবে।
অনেক শুভকামনা।
“প্রথমত রাস্তা বানাবো আমি নিজে হাঁটার জন্যে। অপর সেই রাস্তাতেই হাঁটবে পরে। যেহেতু নিজের জন্যে বানাবো, ভালো মতোই বানাবো নিশ্চয়ই।”…এতটুকু পরে আশ্বস্ত হলাম! 😀
ইন্টারেস্টিং সাক্ষাৎকার। আপনার লেখা পড়ার আগ্রহ জাগলো।
বইটার নামটা ভালো লাগলো।
সাক্ষাৎকার দুর্দান্ত হয়েছে ।
“আমরা লিখতে গেলেই অন্য অনেক লেখকের নকল হয়ে যায়। ধরা পড়লে বলি, আমি তো তার লেখা কখনোই পড়ি নাই। কিংবা বলি এইটা হইলো, নৈর্ব্যক্তিক অবচেতনের ফল।”
ঠিক এরকমই একটি কথা এই সিরিজের প্রথম সাক্ষাৎকারে আমি বলেছিলাম । লেখার অনুকরণ বিষয়ে আমার বক্তব্য ছিলো —
“লেখক যখন প্রথম লিখেন, ভঙ্গিটি শুরু হয় নিজের মতন করে। দিনে দিনে লেখক পরিপক্ব হন, বিভিন্ন বাঁক পরিবর্তনে লেখার ধারা এবং গুণগত মান পরিবর্তিত হয়। আমার লেখার সঙ্গে কেউ কেউ শহীদুল জহিরের মিল খুঁজে পান। বিনয়ের সঙ্গে জানাতে চাই, শহীদুল জহিরকে পাঠের আগেই লেখার এই ধরণটি আমি হঠাৎ রপ্ত করেছিলাম একটি গল্প তৈরির প্রক্রিয়াতে। গল্পটির নাম- ‘যখন একুশ শতকের আকাশে ফুটছিল ফসফরাস ফুল, সভ্য কুকুরটি তখন নিহত হয়েছিল!’ শহীদুল জহির হওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার। তবু, আমাদের দেশে অনেকগুলো শহীদুল জহির জন্ম নিলে, কেউ কেউ শহীদুল জহিরকে ছাড়িয়ে গেলে, সোনার কাঠি রূপোর কাঠি নামের লেখকের কলম নিত্য সোনা ফলালে, লেখালেখি নামের চাষাবাদে বাম্পার ফলনের আনন্দে আমি আপ্লুত হবো!”
প্রিয় নির্ঝর নৈশঃব্দ্য, যখন থেকে আমি এরকম ধারায় গল্প লিখতে শুরু করি, তখন থেকে আপনি আমার লেখার সঙ্গে পরিচিত ! এখন , ঠিক এই পোস্টে আমার জানতে ইচ্ছে করে, আপনি আমার উপরের কথাগুলো বিশ্বাস করেন কি-না ? ব্লগে পড়া আমার সেরা গল্পগুলো ছিলো মোস্তাফিজ রিপন আর তারিক স্বপনের । সেই গল্পগুলোর খানিক প্রভাব হয়তো আমার লেখাতে থাকতে পারে ।
তার অনেক পরে, আমি শহীদুল জহির পড়ি । শহীদুল জহির পাঠ পরবর্তী আমার উপলব্ধিটা এরকম,-
“শহীদুল জহির হওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার। তবু, আমাদের দেশে অনেকগুলো শহীদুল জহির জন্ম নিলে, কেউ কেউ শহীদুল জহিরকে ছাড়িয়ে গেলে, সোনার কাঠি রূপোর কাঠি নামের লেখকের কলম নিত্য সোনা ফলালে, লেখালেখি নামের চাষাবাদে বাম্পার ফলনের আনন্দে আমি আপ্লুত হবো!”
প্রিয় শিপন,
আপনি ঠিক আমার এই কথাটাই কোট করবেন ভাবি নি। কথাগুলি ঠিক আপনার উদ্দেশ্যে নয়। এবং আপনার কথাগুলি অবশ্যই আমি মানি। আপনার দুইটা উপন্যাসসহ সবগুলি গল্পই আমার পড়া। আকাশচুরি এবং মোস্তাফিজ রিপনের গল্পও পড়া। প্যাটার্নের মিল থাকতেই পারে। এইখানে আমি অনুকরণের কথা বলেছি। যেটা বলতে গেলে চুরির পর্যায়ে পড়ে। যেটা আসলে চোখে লাগে। চুরি করে যদি নিজের ধরনের সাথে মিলিয়ে দেয়া যায় তাহলে শিল্পের সৃষ্টি হয়, এমন চুরি অনেক মহান লেখকরাও করেছেন। জীবনানন্দ চুরি করেছেন ইয়েট্স, অ্যালেন পো প্রমুখ কবির কবিতা থেকে– সেটা তার নিজের কবিতা হয়ে গেছে। রবিনাথ অ্যালেন পোর গল্প থেকে নিয়েছেন। এমন কি তার রক্ত করবী নাটকের প্লট এবং কিছু সংলাপ পর্যন্ত বাইরের একটা রচনা থেকে নেয়া। আবার রবিনাথের ডাকঘর নাটকের মতোই লাগে ল্যুসুনের কাব্য নাটক দ্য পাসার বাই। এটা ল্যুসুন রবিনাথ থেকেই নিয়েছেন। শামসুর রাহমানের অনেক কবিতা ডিলান টমাস থেকে নেয়া। কিন্তু তার হয়ে উঠেছে। চোকা পেরেকের মতো চোখে লাগে না।
এই ব্যাপারটা আগেও ছিলো এখনো আছে। আমি আসলে তাদের কথাই বলেছি যারা চোরাইমালের ব্যবহার জানেন না। চৌকির মাঝখানে যা চোখা পেরেকের মতো হা করে থাকে, শুলেই পিঠে বিঁধে। এমন চোর আমার চেনাজানাদের মধ্যেও আছে। এইখানে আর নাম উল্লেখ করলাম না। এইসব নিয়ে ইতোমধ্যে চট্গ্রামে আমার বন্ধু কবি সবুজ তাপস পূর্বকোণ সহ অনেক ছোটো কাগজে বড় বড় প্রবন্ধ লিখেছেন। সম্প্রতি কবি মুজিব মেহদীও লিখেছেন। আরো অনেকেই লিখছেন। কিন্তু লাভ হচ্ছে না।
কিন্তু সময় এদের ক্ষমা করবে না।
অনেক শুভকামনা।
ঠিক আমাকেই উদ্দেশ্য করে আপনি বলেননি তা জানি, ভাই । তবু, মনে হলো, আমার বক্তব্যের বিষয়ে আপনার অবস্থানটা কী একটু জেনে নেই ।
অনেক শুভ কামনা আপনার জন্যও ।
ক্লাস সিক্স থেকে ইনসোমনিক….. বলেন কী :thinking:
যাই হোক আপনার সম্পর্কে জেনে ভালো লাগলো।
ভালো থাকবেন।
শুভকামনা।
অভিনন্দন ভাইয়া 🙂
সোজাসাপ্টা বক্তব্য পড়ে ভাল লাগলো, “ডুবোজ্বর” পড়ে বাকিটা বলবো! 😀
লেখকের ব্যাগ থেকে পেলে ব্যপক হতো!!