সালাম ভাই,
খবর কী? আমার কথা মনে আছে? আমি মফিজ, আরেহ মফিজ মিয়া, চিনলেন না? ক্যানরে ভাই দুইদিন আগেও তো ভার্সিটিতে যাওনের আগে পোলাপাইন আমারে সালাম দিয়া যাইত,স্যাররা পর্যন্ত আমার সামনে দিয়া যাইত না, আর আজকাই আমারে ভুইল্লা গেলেন? কি আর কমু, এইডাই হওনের আছিল! ভাই আমি কিন্তু মানুষডা খারাপ আছিলাম না, হেইডা হেই ২০০১ সালের কথা বাপ-মায়ের দোয়া আর হেগো বহুত মেহেনতের পর দেশসেরা ভার্সিটিতে ভর্তি হইলাম,চোখে-মুখে কি এক স্বপ্ন বড় হমু,বাপ মায়ের ঋণ শোধ করমু,আরও কত কি? ক্লাসে ঢুকলেই মনডা ভইরা যাইত, আহ কতদিনের স্বপ্ন, কিন্তু হেই স্বপ্ন স্বপ্নই থাইকা গেল!
ঢাকা শহরে আপন বলতে কেউ ছিলনা,এক বাকের ভাইই সম্বল,হেয় আমারে ভার্সিটির হলে সিট নিয়া দিল,কইল “ মফিজ্জা ভালো মতন থাকিস সমস্যা হইলে কইস! আর কেউ কিছু কইলে আমার নাম কবি”।আমি কই “জ্বী ভাইজান”হেইনত্থন শুরু,এমন একডা রুমে থাকতে দিসিল যেইনে মানুষ তো দূরের কথা,পক্ষীও থাকতে পারত না,তয় কি আর করুম তাই বাইধ্য হইয়া ঐনেই পইড়া রইলাম,পড়ি তো পড়ি না, বড় ভাইয়েরা প্রত্যেকদিন আইয়া কয় হেগর দলে থাকতে উলটা পালটা করলে মাইরা ফেলব,আমিও সায় দেই।বড় ভাইরা সিগারেট আনায়,মাঝে মাঝে আমারেও টান দিতে কয়,গ্রামের মানুষ পরথম পরথম পারতাম না,কাশ আইত,জীবনেও তো খাই নাই,হেরপর ঠিক হইয়া গেছে বড় ভাইরা কইত সিগারেট না খাইলে নাকি ব্যাডা ব্যাডা লাগেন,হেনথন শুরু এরপর ভাইগো লগে মদ,গাঞ্জা,ভাং সব খাইসি, মামা কইস না যা স্বোয়াদ! ! কিছু দিন পর দেখলাম ক্লাসের ভালা ভালা পোলা-মাইয়াগুলা আমারে দেখলে ডরায়,বড় ভাইগো লগে চলি তো মনে হয় ভালাই ডরাইসে!আমি তো মহা সুখ পাইয়া গেলাম,আমার লগের পোলাপান আমারে ডরাইতাসে ভাবলেই ক্যামন জানি সুখ সুখ লাগে।একবার তো এক পোলারে জিগাইলাম ভাই কি রে দিবি নি এক টান? পোলায় আর একটু হইলে কাইন্দা দিত!হা হা হা।
ঐডা ছিল নির্বাচনের টাইম,একদিন বাকের ভাই আইয়া কইল, “মফিজ্জা ল,কাম আছে”.আমি কইলাম,“কি কাম বাকের ভাই?” হে কইল “আগে আয় ব্যাডা”. গেলাম হের লগে,দেখি আমার হলের আরও পোলাপান আছে, আমগো ক্লাসের একটা খুব ভালা পোলা ও আছিল,পরথম ভাবলাম যে এমনেই আইছে পরে হুনছিলাম ওরে মাইর দিয়া আনছে বেচারার পরীক্ষা আছিল,তাই আইতে চাইছিল না।একটু পরে দেখি কয়ডা ভাই কত গুলি রামদা আর বড় বড় কতগুলি দাও ,লাঠি নিয়া আমাগো হাতে দিয়া কইল, “হোন,এই ল, কাপড়ের ভিতর লুকাইয়া রাখ একটা মিছিলে যামু,মিছিল যখন মাঝরাস্তায় পৌছাইব আমি কমান্ড দিমু তোরা সামনে যারে পাবি কোপাবি,বুঝলি, আর ঐ খানে কিন্তু আমাগো বিরোধী পার্টিও থাকব,তাই সাবধানে কেউ যাতে বাটে না পড়ি” ।.কয়েকটা পোলাপাইন না কইছিল ওগোরে এমন চাটা মারছে আর জীবনেও না করত না।শালারা ভাইয়েরা কইছে আবার না করস !
“ হাসান ভাইয়ের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র” স্লোগান মারতাছিলাম, আমার সামনেই আছিল বাকের ভাই,জামাল ভাই।জামাল ভাই এমন সময় আস্তে কইরা কইল, “নে লাগা” আর ওমনেই শুরু যারে সামনে পাইতাছি ফালাইয়াই কোপ! শালার রক্ত তো না যেন পানি,ঐ পক্ষের কতগুলারেও মারছি,এমন সময় দেখি জামাল ভাই বারেক ভাইরে ফালাইয়া কোপাইতেছে! আমি কইলাম “জামাল ভাই, এইডা বাকের ভাই,ছাড়েন ভাই” ততক্ষণে কাম সাড়া, আমি কইলাম “ভাই এইডা কি করলেন?”
জামাল ভাই কইল, “উপরের অর্ডার আছিল বাকেররে মাইরা ফেলতে কালকা ঐ দলের হাসাইন্নার লগে বাকেরের লাগছিল,আইজ মরলে পাবলিক মনে করব হাসাইন্নাই মারছে।“ কিন্তু ভাই?” “ঐ হালা চুপ কর,নাইলে তোরেও..”।
আমি ভাগছিলাম,আর ঐ দিনের পর বারেক ভাইয়ের দায়িত্ব পাইছিল জামাল ভাই,আর জামাল ভাইয়েরটা আমি! শালার ভার্সিটি চইসা বেড়াইছি, আমরা হইলাম বস পোলাপাইন উঠতে বইতে সালাম দেয়!কি মজাই না লাগে!আমার মত আরও কয়েকটা মফিজ বানাইছিলাম!দল জিতল এখন তো দুনিয়াই আমার!
আরামেই আছিলাম ৫ বছর,মদ গাঞ্জা,টাকা,বাড়ি,মাইয়া কোনডারই অভাব আছিল না,চলতাছিল চরম,মাঝখানে আবুইল্লাডা লাগাইলো গ্যাঞ্জাম,পোলারে নাকি কারা পিডাইসে এহন তো বড় ভাই হিসেবে আমার যাওনই লাগে,সামনে আবার নির্বাচন না গেলে এই পোলাপানডিরে পাইতাম না লগে।“কিরে আবুইল্লা আর কত দূর,কোন চিপায় নিয়া যাস” কইতে না কইতে কই ত্থেকা যেন একদল পোলাপাইন আমারে ফালিয়ায় পিডাইতে লাগল, এর পর রাম দাও দিয়া কোপ,বুঝতে পারতাছিলাম না, চিল্লাইয়া কানতাছিলাম! ক্যাডা জানি কইল “আবুল ভাই, এইডারে মারলেন ক্যান ভাই” আবুইল্লা কইল, “উপরের অর্ডার আছিল মফিজ্জারে মাইরা ফেলতে কালকা ঐ দলের কাশেমের লগে মফিজের লাগছিল,আইজ মরলে পাবলিক মনে করব কাশেম্মাই মারছে।“ কিন্তু ভাই?” “ঐ হালা চুপ কর,নাইলে তোরেও..”।
ওই দিনের কথা মনে পড়াতাছে যেদিন আম্মা আর আব্বারে কদম্বুচি কইরা ঢাকায় আইছিলাম,জজ হমু কি স্বপ্নইডা দেখছিল আমার বাপ-মায়, “মা মা গো আমারে আরেকডা সুযোগ দে না মা, আমি আবার গেরামের সেই ভালা পোলা মফিজ হইয়া যাইতে চাই, মা আমারে খাওয়ায় দিবি না মা, আমি তো মা এমন ছিলাম না মা,এমন ক্যান হইলাম মা,আমারে ওরা এমন ক্যান বানাইল মা? আমি তো মা খারাপ হইতে চাই নাই মা, আমারে খারাপ করল ক্যান মা?”
আর শব্দ বেরোয় না মফিজের মুখ থেকে, সে আর দশটা সাধারণ মফিজের মতই পড়ে থাকে, পরের দিন সব পত্রিকায় তার ছবি আসে, সবাই থু থু করে, ঘেন্নার দৃষ্টিতে দেখে, কিন্তু এই মফিজগুলা কাদের তৈরী? আমরাই কি দায়ী না? ও তো জজ, ব্যারিস্টার কিংবা আমার আপনার মতই আম-জনতা হতে পারত,তাহলে এমন কি হয়েছিল যা ওকে এভাবে শেষ করে দেয়! এই মফিজ হয়ত কাল্পনিক কিন্তু এমন হাজারও মফিজ প্রতিদিন তৈরী হচ্ছে প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে! আমরা কয় জন খবর রাখি এর! দায়টা কি আমাদের না!!
চমৎকার!!!
:huzur:
তবে, বাকেরের বারেক হয়ে যাওয়াটা মানতে পারলাম না। 😛
আপি খাইসে ! আমি আসলে লিখতে পারি না, যাও একটু সাহস করে লিখি তাও ভুল ভাল, ঠিক করে দিতেছি।
যাই হোক, মনযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধইন্যবাদ 😛
ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দেয়াটা খুব বেশী দরকার।
কে শুনে কার কথা আপি 🙁
অসাধারণ হইছে অক্ষর।
একটু আগেই আজকালকার স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চাদের কাণ্ডকীর্তি শুনে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো, এই লেখাটা পড়ে আরো খারাপ লাগতেছে। সামনে অবস্থা ভাল তো না-ই, আরো খারাপ হবে, যা মনে হচ্ছে।
ঠিক বলছো, দায় আসলে আমাদেরই।
কমা, দাঁড়ি – বিরামচিহ্নগুলির পর স্পেইস দিও।
আচ্ছা আপি :crying:
কত সুন্দর করে লিখসে ছেলেটা !
:penguindance: :yahooo:
দারুণ! :fire:
এমনি সব সুন্দর লেখা লিখে যাও 🙂 অনেক ভাল লেগেছে 🙂
ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হোক! এইভাবে একেকটা সুন্দর জীবন কী নির্মমভাবে ঝরে যায়!
লেখাটা অনেক ভালো লেগেছে। ভার্সিটিগুলোর নিয়মিত ঘটনা হয়ে যাচ্ছে যেন এই হানাহানি-খুনখারাপি!
লেখার প্রথমে ‘মফিজ’ কিন্তু ‘মজিদ’ হয়ে গিয়েছে।
‘কমা’-র পড়ে স্পেস থাকবে।
*পরে*
ভাল লেখা!
:(;
😀
পিচ্চি! দারুন লিখছিস রে দাদা। :clappinghands:
ছাত্র রাজনীতি আসলেই বন্ধ হওয়া দরকার। প্রিয়তে রাখলাম। 🙂
ধইন্যাপাতা দিদি ।
hmm … thik bolsos…..asole ai sob bondho kora drkar.. and eta k :fire: kora drkar
:happy: :happy:
ধন্যবাদ দোস্ত ! আর হুম এদের :dhisya: :dhisya: করা দরকার।
অক্ষর দারুন হইছে রে……………
:happy: :love:
অসাধারণ লিখেছো অক্ষর!!
খুব ভাবনা জাগে মনে, কোথায় শুরু হয়েছিলো এসবের, শেষ কখন হবে…… 🙁