পুনঃপরিচয়

আমি রাস্তান্ধ। কোনদিক থেকে কোনদিকে গেলে কোথায় যে যায় কে জানে। কিন্তু আজকে রিকশায়  দেখি হঠাৎ আমি আশপাশ চিনতে পারছি! রিকশাওয়ালা কোন এক কারণে আমার বহুদিনের পরিচিত এ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। এই পথে পুরোটা কলেজ লাইফ গিয়েছি!! বারমাস অসুস্থ থাকে এটা এমন একটা রাস্তা। তো সেই সময় যাতায়াতের ঐ পার্টে আমার সময় পার হত গালি দিয়ে। লিস্ট অনেক লম্বা ছিল। যারা রাস্তাটা বানিয়েছে সেই শ্রমিককে, যে সুরকি ঢেলেছে তাকে, ইট বিছিয়েছে সেই লোককে, তদারককারীকে, ইঞ্জিনিয়ারকে, আমলাকে, নেতাকে, সরকারকে। লিস্ট শেষ হওয়ার আগেই ঐ রাস্তা পার হয়ে যেতাম [আফসোস], যাই হোক সেই পরিচিত রাস্তা দেখে হটাৎ আজকে গালি ভুলে মনটা কেমন খুশি হয়ে গেলো। বিদেশ বিভূঁইয়ে পরিচিত চরম দুশমনকে দেখলেও মানুষের এমন অনুভূতি হয় মনে হয়।

আজকে অনেক আগ্রহ নিয়ে তাকালাম চারপাশে। এক কোণায় পাইপ বসানোর জন্য রাস্তা কাটা চলছে, সেই কোণা যেটা আমি শেষবার যাওয়ার সময়ও পাইপ বসাতে দেখে গিয়েছিলাম। ঐ জায়গাটা খুঁড়লে মনে হয় পাইপের একটা ফ্যাক্টরি পাওয়া যাবে।

এর মধ্যে তো শুরু হয়ে গেছে রোলার কোস্টার। এই জিনিসটাই আমার সবচেয়ে খারাপ লাগত; আমি নিজে একা থাকলে রিকশার এক কোণা থেকে আরেক কোনায় ছিটকে পরতাম- এই জন্য না, বরং একজন বৃদ্ধ মানুষ কীভাবে এই রাস্তায় রিক্সা দিয়ে যাবেন সেটা ভেবে। গালির পরিমান বাড়তো তখন। যাই হোক, সেই আগের অ্যাডভেঞ্চার শুরু, আমি ছিটকে পড়তে থাকলাম; পরিচিত একটা ভাব আসায় আজকে সেটাকেও আপন লাগলো অনেক।

সেই পরিচিত ভিড়। মানুষ প্রায় ইচ্ছা করে রিকশার সামনে লাফ দিচ্ছে, আবার নিজেই রাগারাগি করে পার হয়ে চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে রিকশার চাকা দিল একজনের পা মাড়িয়ে, চেঁচানোর শব্দ বাড়ার আগেই রিকশা গালিসীমার বাইরে চলে গেলো। মসজিদের পাশের সেই মিনার যা আধখানা হয়ে পরে ছিল, ঠিক তেমনি আছে।

রাস্তার রিকশা, টেম্পো, বাড়ি, জানাল, ছাদ, ভিড়, কোলাহল, দোকান, মায় দোকানের মুরগি-চালডাল-সবজি-মাছ-তেল-চিনি-কাপড় পর্যন্ত সেই আগের মত আছে।

শুধু এই রাস্তার সেই আমি কত বদলে গেছি…

looking-out-the-window

সাদামাটা সম্পর্কে

পথিক মেঘের দল জোটে ওই শ্রাবণগগন-অঙ্গনে// শোন্‌ শোন্‌ রে, মন রে আমার, উধাও হয়ে নিরুদ্দেশের সঙ্গ নে// দিক্‌-হারানো দুঃসাহসে সকল বাঁধন পড়ুক খসে// কিসের বাধা ঘরের কোণের শাসনসীমা-লঙ্ঘনে।।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ এবং ট্যাগ হয়েছে স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

17 Responses to পুনঃপরিচয়

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    খুবই ভালো লাগল।

    জট্টিলস! বিশেষ করে শেষটা।

    [ইয়ে বানান ঠিক কইরেন!]

  2. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    আহারে,কত রাস্তার কথা মনে পড়ে গেলো 😀

    ভালো লিখেছেন……

  3. নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেনঃ

    দারুণ লেখা! শেষটায় কেমন যেন স্বপ্নালু হয়ে যাচ্ছিলাম। স্মৃতিচারণ আর অনুভূতির মিল!! প্রথম হিসেবে সুন্দর লেখা! :guiter:

  4. সব কিছুই থাকে। আমরা বদলে যাই।

    ভাল লাগল!

  5. জনৈক বলেছেনঃ

    ভালো লেখা।

  6. একটা লেখা অসাধারণ লাগে যখন এর সাথে নিজের কোন একটা স্মৃতি মিলে যায়! আমার স্কুলে যাবার রাস্তাটার প্রতিটি মোড় যেমন আমার অসাধারণ প্রিয়! খুব ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে! :littleangel:

  7. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    লেখা যেন পিছুটানে কোথায় নিয়ে যেতে চায়…

    তবু একটু নেতিবাচক কথা বলি। “হটাৎ, কোনায়, জিনিশটাই, মদ্ধে” বানানগুলো শুদ্ধ হলে পড়তে আরো ভালো লাগত। 🙂

  8. প্রজ্ঞা বলেছেনঃ

    সত্যি তাই! সবকিছু একই থাকে শুধু আমরাই বদলে যাই! 🙁

    ভালো লাগল। 🙂

  9. নিলয় বলেছেনঃ

    শেষটা সবচে’ সুন্দর 🙂

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।