আমি অনেক বছর ধরে প্যালিয়াটিভ (ব্যথা দূরীকরণ) ইউনিটে কাজ করেছি। মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া মানুষগুলোই ছিল আমার রোগী। তাদের জীবনের খুব অদ্ভুত একটা সময় তারা আমার সাথে কাটাত। তারা আমার সাথে জীবনের শেষ তিন থেকে বার সপ্তাহের মতো থাকত । মানুষ যখন নিজের মৃত্যুর খুব কাছে চলে আসে, তখন তাদের মন-মানসিকতার ব্যাপক উত্তরণ ঘটে।
সে সময়েই আমি শিখলাম, কারো মানসিকতার উত্তরণের ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ করতে নেই। কিছু কিছু পরিবর্তন ছিল অসাধারণ। এই সময়ে প্রত্যেকেই নানা ধরনের আবেগের মুখোমুখি হয় – মৃত্যুকে প্রথমে স্বীকার না করা, ভয়, রাগ, অনুতাপ, আরো কিছুদিন অস্বীকার এবং অবশেষে মেনে নেয়া। সব রোগীই – প্রত্যেকেই অবশ্য পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার আগে শান্তি খুঁজে পায়।
জীবনে কোনো অনুশোচনা আছে কিনা অথবা জীবনে কোনো জিনিস ভিন্নভাবে করতে চেয়েছিলে কিনা – জিজ্ঞেস করলে, সাধারণত যেসব শুনতাম (অনেকের উত্তরই কাছাকাছি হত খুব), তার মধ্যে প্রধান পাঁচটি হল:
১. সবাই আমার কাছে যা আশা করেছে, সেভাবে জীবন না কাটিয়ে আমার নিজের কাছে যা ঠিক মনে হয় সেইভাবে জীবন যাপন করার সাহস যদি আমার থাকত! – এটা সবচেয়ে বেশি শুনতাম। যখন মানুষ বুঝতে পারে যে তার জীবন প্রায় শেষ এবং পেছনে ফিরে দেখে, তখন কত স্বপ্ন যে অসম্পূর্ণ রয়ে গেল তা সহজে বুঝতে পারে। বেশির ভাগ মানুষই জীবনে তাদের অর্ধেক স্বপ্নও পূরণ করতে পারে না। তাদের এই স্বপ্ন বা আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণের জন্য যে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার তা তারা নিজেদের সাহসের অভাবেই নিতে পারে নি – মৃত্যুর আগে তারা এটাই উপলব্ধি করে।
২. আমি যদি এত কঠিন পরিশ্রম না করতাম! – এটা সব পুরুষ রোগীদের কাছ থেকে শুনেছি। তারা ব্যস্ততার কারণে স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েদের সাথে সময় কাটাতে পারে নি। নারী রোগীদের ক্ষেত্রেও এই ধরনের আক্ষেপ দেখা যায়। সবার এটাই আফসোস থাকে যে – একঘেয়ে কাজকর্মে তাদের জীবনের অধিকাংশ সময় কেটে গেল।
৩. আমি যদি আমার আবেগ অনুভূতি প্রকাশ করতাম! – সবার সাথে সম্পর্ক ভাল রাখতে গিয়ে অনেকেই নিজের অনুভূতি চেপে রাখে। এই কারণে প্রত্যেকে জীবনে যা হতে পারত, তা আর হতে পারে না। তাই সারা জীবন তিক্ততা আর অনুশোচনা নিয়ে কাটিয়ে দেয়।
৪. আমি যদি আমার বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতাম! – বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ তার পুরনো বন্ধুদের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারে না। জীবনের শেষ সপ্তাহগুলোতে যখন এটি বুঝতে পারে, বন্ধুদের খুঁজে বের করাও তখন সম্ভব হয়ে ওঠে না। অনেক মানুষই সবসময় নিজেকে নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে ওঠে যে, সময়ের স্রোতে সোনালী বন্ধুত্বগুলো হারিয়ে ফেলে।
৫. আমি যদি নিজেকে আরও সুখী করতে পারতাম! – এই অনুশোচনা আশ্চর্য রকম বেশি জনের কাছেই শুনেছি। সময় শেষ হবার আগে অনেকে বুঝতে পারে না যে নিজেকে সুখী করাটা ছিল একটা ইচ্ছের দূরত্বে মাত্র। তারা কেবল পুরনো অভ্যাস ও একঘেয়ে জীবনে নিজেদের বেঁধে রেখেছিল। সবাই কি বলবে – এটা ভেবে তারা জীবনকে উপভোগ করতে পারেনি। তারা শুধু নিজেদের এবং অন্য সবার কাছে সন্তুষ্ট থাকার অভিনয় করে যেত। যদিও তারা মনের গভীরে হাসিখুশি ও উচ্ছ্বাসময় জীবনের স্বপ্ন দেখত, এই অভিনয় তাদেরকে কখনই সত্যিকারই সুখী হতে দেয়নি।
নিজের কথা: উপদেশ শুনতে কারোরই ভালো লাগে না। তাই মানুষের অন্তিম সময়ের অনুশোচনাগুলি অনুবাদ করলাম মাত্র। একটু চিন্তা করলে আমরা নিজেরাই খুঁজে পাব আমাদের সীমাবদ্ধতা, আমাদের আক্ষেপগুলো। অদ্ভুত একটা সময়ে এটা লিখলাম। চেনা একজনের মৃত্যুর খবর পেলাম। লিখছি এবং ভাবছি। তোমার আক্ষেপ এগুলোর মাঝে কোনটা? একবার ভাববে কি?
মূল লেখার লিঙ্ক ((http://www.empowernetwork.com/Caroline/blog/nurse-reveals-the-top-5-regrets-people-make-on-their-deathbed/))
– সাবাহ্
এই একটা সময় বুঝি যখন মানুষ নিজেকে শেষবারের মতো খুঁজে পায়!
অদ্ভুত লাগলো লিখাটা……
“…নিজেকে সুখী করাটা ছিল একটা ইচ্ছের দূরত্বে মাত্র” – এমন আক্ষেপগুলো যেন আর কারও না থাকুক।
দারুন লাগলো
আমার একটু দ্বিমত আছে পোস্টের টোনের সাথে, যদি আমি ভুল না বুঝে থাকি।
মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়িয়ে করা আক্ষেপ বেশি গুরুত্বের দাবী রাখে না সারাজীবনের (সু)চিন্তিত জীবনযাপনের স্টাইল?
অনেক অনেক অনেক বেশি মাত্রায় সত্য কথাগুলো। একটা অন্য রকমের অনুভূতি হচ্ছে লেখাটা পড়ে, ঠিক বোঝাতে পারব না।
ধন্যবাদ অসাধারন এই লেখাটির জন্য 🙂 :clappinghands:
ভাল লেগেছে অনুবাদটা। 🙂 নিয়মিত লিখবেন কিন্তু আপু!
আর ৪ নাম্বারটা পড়ে ভয় হল, নিজেকেও এরকম আক্ষেপ করতে হয় কিনা সেটা ভেবে।
শুধু একটা ইচ্ছের দূরত্ব… মানি, কিন্তু পারিনা।
—-
লেখাটা দারুণ লাগলো!
কেমন যেন মনে হলো, অনুশোচনাগুলোতে নিজের মনের ছায়া পড়ছে!
এমন ভাবনা নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চাই না।
অদ্ভুত সুন্দর লেখা! 😯 😯
এই আক্ষেপগুলো আর যেন কেউ না করে… লেখাটা সুন্দর! 🙂