– তুইও চল্ না আমাদের সাথে! কী রে নীলু চল্!
– না মা তোমরা যাও আমার যেতে ইচ্ছে করছে না। আচ্ছা নীলিমা কী করছে? এতো লেইট করছে কেন?
মা: দ্যাখ তোর বাবা আবার রাগ হয়ে যাবে। ওদিকে আবার তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে। তুই না হলে বাসায় একা থাকবি।
নীলু: কিচ্ছু হবে না। একা তো আমি এর আগেও থেকেছি। ঐ তো নীলিমা এসে গেছে।
নীলিমা: দ্যাখ তো নীলু আমাকে কেমন দেখাচ্ছে! দ্যাখ তো টিপটা মানিয়েছে নাকি।
নীলু: হ্যাঁ তোকে অনেক সুন্দর লাগছে। এখন যা। না হলে বাবা রাগ করবে।
মা: বাই নীলু। আর শোন্ ভুলেও দরজা খুলবি না। আমরা ছাড়া আর যেই আসুক না কেন। ঠিক আছে?
আচ্ছা মা। -এই বলে নীলু গেট আটকে দেয়। একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে। মা, বাবা আর নীলিমা যাচ্ছে ছোট ফুপির মেয়ের আকদে। অন্য সব আত্মীয়দের মাঝে ছোট ফুপি ওকে অনেক আদর করে। যাই হোক এসব চিন্তা বাদ দিয়ে ওর রুমে ঢুকে ভাবে শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়বে। তখনই ওর চোখ পড়ে বিছানার মধ্যে একটা ফটো অ্যালবামের দিকে। অনেক দিন পর ফটো অ্যালবামটা দেখলো নীলু। নীলিমা মনে হয় কিছু বের করার সময় ভুলে বাইরে রেখে গেছে। ও ওদের ছোটবেলার ছবি দেখতে লাগল। দুইজন হসপিটালের দোলনায়। কারণ নীলু ও নীলিমা জমজ বোন। এইসব ছবি দেখতে দেখতে ওর ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। নীলু ও নীলিমা একই সাথে একই স্কুলে ভর্তি হয় একই সেকশনে। নীলিমার অনেক ফ্রেন্ড ছিল ছোটবেলা থেকে কিন্তু নীলুর বাসা থেকে নিষেধ ছিল যে কারো সাথে মেশা যাবে না। তাই ওর সবসময় নীলিমার সাথেই বসতে হত। এতে নীলিমা বিরক্ত হত, কিন্তু তারপরও বসত। নীলু ও নীলিমা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওদের বাসায় আত্মীয়স্বজনদের যাতায়াত কমে যেতে লাগল। ওরাও আস্তে আস্তে সবার বাসায় যাওয়া বন্ধ করে দিল। কিন্তু নীলু বুঝতে পারল না কেন এমন হল। একমাত্র ছোট ফুপি আসত। ছোট ফুপি হচ্ছে ডাক্তার আর সেই একমাত্র ওকে অনেক আদর করত। তাই নীলু তাকে খুব পছন্দ করে। এরপর যখন নীলু বড় হল, এস.এস.সিতে নীলিমার থেকেও অনেক ভালো রেজাল্ট করে হলিক্রসে চান্স পেল। কিন্তু নীলিমা চান্স পায় না। তাই নীলুকেও হলিক্রসে পড়তে দেয়া হয় না। অন্য জায়গায় পড়তে হয়। কারণ নীলুকে একা রাখা যাবে না। ইউনিভার্সিটিতেও ঠিক একই রকম ঘটেছে। নীলু চান্স পেল বায়োকেমিস্ট্রিতে আর নীলিমা কেমিস্ট্রিতে। আবারও নীলিমার সাথে নীলুকে পড়তে হত কিন্তু মাইগ্রেশনের কারণে আর হয়নি। ওরা এখন একই সাথে পড়ে। ইউনিভার্সিটিতেও নীলিমার অনেক ফ্রেন্ড কিন্তু নীলুর কেউ নেই। ও কারো সাথে তেমন কথা বলে না। তবে একজনকে দেখলে ওর হার্টবিট অনেক বেড়ে যায়- অয়নকে দেখলে। অয়নও ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু নীলু ওকে কাটিয়ে যায়। এসব ভাবতে ভাবতে নীলুর মনের মধ্যে এক অদ্ভুত কষ্ট হয়, কান্না ভেঙে আসে – একটা অদৃশ্য দেয়ালের কথা বারবার মনে পড়ে। হঠাৎ করে ডোরবেল বাজে। নীলু নিজেকে সামলে নিয়ে গেট খুলতে যায় জিজ্ঞেস না করেই। গেট খুলে গেটের বাইরে তাকিয়ে দেখার পর ওর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। ওর মনে হয় ও বরফের মতো জমে গেছে। ও তাকিয়ে দেখে কতগুলো হিজড়া ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ও ভয় পেয়ে দারোয়ানকে চিৎকার করে ডাকে, বলে – ‘গেটে কী পাহারা দাও? ওদেরকে এখান থেকে নিয়ে যাও।’ দারোয়ান ওদেরকে ঝাড়ি দিয়ে নিয়ে যাবে এই সময় ওদের মধ্যে থেকে একজন ওর দিকে চেয়ে অদ্ভুত হাসি দেয়। এই হাসি দেখে নীলু থমকে যায়। ও কোনরকমে গেট বন্ধ করে নিচে বসে পড়ে। তখন ওর মনে হয়, ও এটা কী করল? ওর এটা করা ঠিক হয়নি। ওরাও তো মানুষ। ওদেরও তো অনুভূতি আছে। ওদের ঘৃণা করা বা ভয় পাওয়া উচিত না। আর ও এটা কীভাবে করল? ও নিজেও তো ওদের মতই একজন বৃহন্নলা।
–শারমিন
অনেক সুন্দর একটা গল্প। অন্যরকম!
ধন্যবাদ 🙂
ভয়ংকরভাবে অন্যরকম 🙁
ধন্যবাদ
একটা ওয়ার্কশপে এই বিষয়টা নিয়ে আইডিয়া পেয়েছিলাম
দারুণ এর শেষ।
তবে এত দ্রুত চলল কেনো? আরেকটু স্মুথ হতে পারত
তোর হাত চমৎকার চলছে রে!
ধন্যবাদ :happy:
মন খারাপ হলো পড়ে…।আচ্ছা, আমরা সবাই একসাথে চলতে পারি না?? কোন সমস্যা আছে কি এতে???
লেখনী চমৎকার।
ধন্যবাদ 😀
গল্প লেখার দিক দিয়ে বলতে গেলে , এক কথায় খুবই ভালো হয়েছে। তবে এই ব্যাপার গুলো কিন্তু আসলে গল্প না, বাস্তব সত্য, শারীরিক কিছু সমস্যার জন্য পুরো একটা জনগোষ্ঠীকে সমাজ থেকে আলাদা করে দেখা হচ্ছে এইটা ঠিক না।
আরও কিছু অসাধারণ গল্পের অপেক্ষায়…
ধন্যবাদ ভাইয়া :happy:
গল্পটা সুন্দর!
ধন্যবাদ আপুনি :happy:
সবার একটা স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত হোক এই কামনা করি।
সবারই এই বিষয়ে ভাবা উচিৎ যে তারাও তো মানুষ। তাদেরও স্বাভাবিক জীবন যাপন করার অধিকার আছে।
অসাধারণ লেখা। পড়ে থমকে যেতে হলো! এমনটা হতে পারে ভাবি নি!
ধন্যবাদ। :happy:
হাত তো ভীষণ পাকা মনে হলো। আরও লেখা চাই কিন্তু! 8)
:happy:
গল্পটা আগে কেন চোখে পড়েনি বুঝলাম না!
গল্পগুলো আরেকটু বড় করলে ভালো হবে আরো……
ভালো হইসে