হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের জন্যে…

লিখতে ইচ্ছে হয় অনেক কিছুই কিন্তু কী-বোর্ডে আঙ্গুল চাপতে গেলেই ইদানিং পেশী শক্তি দেখাতে শুরু করে। তার চিৎকার-চ্যাঁচামেচিতে আমি অস্থির হয়ে মনে মনেই লিখে শান্তি খোঁজার চেষ্টা করি। কিন্তু আজ না বসে পারলাম না।
আমার অনেক দিনের একটা স্বপ্ন আছে। হুইলচেয়ার চলাচলের সহায়ক ব্যবস্থার দাবী আদায়ে রাস্তায় নামবো। হাস্যকর ভাবনা শুনলে আপনারা ভাববেন আমি পাগল হয়েছি। অন্তত আমার এই ভাবনায় বন্ধুরা তাই বলে। কিন্তু তবুও ইচ্ছে হয় নাওয়া-খাওয়া সব ছেড়ে রাস্তায় নেমে একটি প্ল্যাকার্ড হাতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবো যতক্ষন না দাবী মেনে নেওয়া হচ্ছে।

দেশের মানুষের কাছে আমার দাবীটা খুবই সাদামাটা। আমাকে আর দশজন মানুষের মতো চলাফেরার স্বাধীনতা দিতে হবে হুইলচেয়ার সমেতই। খুব কঠিন কিছু কিন্তু নয়। আমাদের সব আছে। দেশের আইন বলে প্রতিটা বিল্ডিং এ ঢুকতে পার্কিং এড়িয়া থেকে হুইলচেয়ারের জন্যে কোন বাধা থাকতে পারবে না। লিফট না থাকলে সিঁড়ির সাথে প্লাটফর্ম লিফটিং জাতীয় যন্ত্র ব্যাবহার করতে হবে। স্থায়ী সিমেন্টের র‍্যাম্প রাখা সম্ভব না হলে রাখা যেতে পারে কাঠের অস্থায়ী র‍্যাম্প (Portable Ramp)। ফুটপাথের দু’পাশটায় একটু ঢালু হয়ে গেলে হুইলচেয়ার নিয়ে সহজে রাস্তায় চলাচলা করা যায়। প্রতিটি ফ্লোর হুইলচেয়ার এক্সেসিবল হতে হবে এবং অন্তত একটি হুইলচেয়ার এক্সেসিবল টয়লেট থাকতে হবে। বিল্ডিং কোড ২০০৮ এর বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রতিটি বিল্ডিং এ সর্বজনীন প্রবেশগম্যতা (Universal Accessibility) মেনে না চললে আইনত দন্ডনীয় অপরাধ মানা হয়। বিল্ডিং কন্সট্রাকশন আইন (১৯৯৬ এর ১২ ধারা অনুযায়ী) সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদন্ড বা নূন্যতম ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয়। আইনের ভয়ে কেউ কিছু করবে এ আমি স্বপ্নেও ভাবি না। কিন্তু মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে একটি বিল্ডিং তৈরীর সময় একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীর সহজ চলাচলের কথা মাথায় রাখলে খুব বড় সমস্যা তো নেই! দিনের পর দিন চার দেয়ালের বন্দী জীবন মানিয়ে নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা কি নিদারুণ যন্ত্রণার আমি জানি। কত হাজারো হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী না জানি এভাবেই তড়পাচ্ছে। রাস্তায় এত এত যানবাহনের ভীড়ে একটি বাস নেই যেখানে হুইলচেয়ার উঠার ব্যবস্থা আছে। অথচ পাশের দেশে পর্যন্ত এ ব্যবস্থা চালু হয়ে গেলো। দূরের যাত্রার কথা তো ভাবাই যায় না। আমাদের জন্যে আসলে আছেটা কি!?
স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরেও আমরা আজো এদেশে পরাধীনই রয়ে গেলাম। সমাজ কি বন্দী করে রেখেছে আমাদের নাকি ভুলেই গেছে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী অগুনতি মানুষ এক মানবেতর জীবন যাপন করছে একি সমাজের বিচ্ছিন্ন বাসিন্দা হয়ে। এভাবে আর কত দিন!?

এবারে আমরা বেরুতে চাই। মুক্ত আকাশের নিচে প্রাণ ভরে শ্বাষ নিতে চাই। স্কুল, কলেজে যেতে চাই ভাই বোনের সাথে। মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাঁচতে চাই সমাজের বোঝা হয়ে নয়। আর তাই সমাজকে আমাদের অস্তিত্ব জানান দিতে আমারই মতো আরো কিছু হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী মানুষ সাথে নিয়ে আমি আসছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে আগামী ২মার্চ”১২ শুক্রবার বেলা আড়াইটায়। সেখান থেকে একটি র‍্যালী করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রীর সামনে এই অভিযোগগুলো তুলে ধরতে চাই আমরা। কিছুটা সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টায় আমাদের এই পদক্ষেপ…
আমাদের এই সচেতনতামূলক আন্দোলনে আমার ব্লগার বন্ধুদের আজ আমি পাশে খুব প্রয়োজন। শুধু কী-বোর্ডে আঙ্গুল বুলিয়ে নয় সত্যিকার অর্থেই সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে সরাসরি অংশ নিতে চলে আসুন ২ মার্চ। কারণ আপনাদের সাহায্য ব্যতীত আমরা শক্তিশালী হতে পারবো না। সহজ চলাচলের ব্যবস্থাসহ ভিন্ন ভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের বাসযোগ্য একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন আমাদের স্বপ্নই রয়ে যাবে। আপনি আসছেন তো?

ফেসবুকে ইভেন্টে যোগ দিতে পারেন এখানে।

অনুষ্ঠানসূচীঃ র‍্যালী ও সমাবেশ।

মূল স্লোগানঃ “ভেঙ্গে যাক সকল বাধা, তৈরী হোক চলাচলের সমতা”

তারিখঃ শুক্রবার, ২ মার্চ, ২০১২।

সময়ঃ বেলা ২:৩০টা থেকে র‍্যালী, সমাবেশ বিকাল ৪:০০টা।

স্থানঃ রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত করে র্যাচলী করে গিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধান অতিথিঃ মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের এমপি।

বিশেষ অতিথিবৃন্দঃ অধ্যাপক জনাব ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

অধ্যাপক ডা.শুভাগত চৌধুরী, পরিচালক লেবরেটরী সার্ভিসেস – বারডেম এবং বি-স্ক্যান এর প্রধান উপদেষ্টা।

সভাপতিঃ সিস্টার ভ্যালেরী টেইলর, সেন্টার ফর দ্যা রিহ্যাবিলিটেশেন অব দ্যা প্যারালাইজড (সিআরপি) প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্বনয়ক।

মিডিয়া পার্টনারঃ সময় মিডিয়া লিমিটেড ও রেডিও টুডে।

আয়োজনেঃ বাংলাদেশী সিস্টেমস চেঞ্জ এডভোকেসী নেটওয়ার্ক (বি-স্ক্যান)
সহযোগীতায়ঃ সেন্টার ফর দ্যা রিহ্যাবিলিটেশেন অব দ্যা প্যারালাইজড (সিআরপি)

এ পর্যন্ত একাত্মতা ঘোষণা করে আমাদের সাথে এই র‍্যালীতে যোগদানকারী সংগঠনগুলো হলো- রোটারী ক্লাব অব ঢাকা সেন্ট্রাল, আমার ব্লগ ডট কম, ব্লগারস ফোরাম, কমিউনিটি ব্লগ সচলায়তন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সরব ডট কম, WaterAid এবং মুক্ত আসর ইত্যাদি।

 

সাবরিনা সুলতানা সম্পর্কে

“আমার কতো দাবি! কতো চাহিদা! কিছুই পাইনা। যেদিকে হাত বাড়াই সেদিকে অন্ধকার। সব জায়গায় নিয়ন্ত্রণ। সামাজিক নিয়ন্ত্রণ। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ। প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রণ। সব নিয়ন্ত্রণে আমি বাঁধা আর গুমরে গুমরে কাঁদে আমার আশা আকাঙ্ক্ষা। ভালোবাসা!”
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে উদ্যোগ, সচেতনতা-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , , , , , , , , , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

5 Responses to হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের জন্যে…

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    আপু সরব এর তরুণরা থাকবে ইনশাআল্লাহ

  2. অক্ষর বলেছেনঃ

    থাকব ইনশাল্লাহ 🙂

  3. নূরবাহার ঈয়াশা বলেছেনঃ

    আসছি ইনশাআল্লাহ!

  4. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    আজ গিয়েছিলাম এবং আপুর সাথে এই প্রথমবার দেখা করার সুযোগ পেলাম।
    সাথে আছি সবসময় আপু, যতদিন বেঁচে আছি ততদিন ইনশাআল্লাহ।

  5. সুমন বলেছেনঃ

    ধন্যবাদ আপু, আপনার কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শিখলাম। আপনার লেখাটি আমার এই পেজে প্রকাশ করলাম। https://www.facebook.com/photo.php?fbid=297274083748531&set=a.246550168820923.1073741828.246517555490851&type=1&theater
    আমি একজন প্রকৌশলী হিসেবে সবসময় চেষ্টা করব এই বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করতে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।