অনুবাদ: বৃত্তবন্দী সুখ – পাওলো কোয়েলহো

আশ্রমের দরজায় জোরে কড়া নাড়ার শব্দ পাওয়া গেলো একদিন। গেটে পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব ছিল যে সন্ন্যাসীর ওপর, দরজা খুলেই তিনি দেখতে পেলেন গাঁয়ের এক লোক চমৎকার এক ছড়া আঙুর হাতে দাঁড়িয়ে আছে।

–      আমার খেতের সবচাইতে মিষ্টি আঙুর এগুলো, আপনাকে উপহার দিতে নিয়ে এসেছি আমি।

–      অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে! এক্ষুনি আশ্রম-প্রধানের কাছে নিয়ে যাচ্ছি আমি এগুলো। কী যে খুশি হবেন তিনি আঙুরগুলো পেলে!

–      না না! এগুলো কেবল আপনার জন্যই এনেছি আমি। কারণ যখনই আমি এই দরজায় কড়া নাড়ি, আপনিই সবসময় খুলে দেন। সে বার খরায় যখন আমার খেতের সব ফসল নষ্ট হয়ে গেলো, আপনি তখন রোজ আমাকে এক টুকরো রুটি আর এক গ্লাস সুরা খেতে দিতেন।

আঙুরগুলো নিলেন সেই সন্ন্যাসী, আর সারাটা সকাল ধরে মুগ্ধ হয়ে দেখলেন সেগুলোকে। তারপর ঠিক করলেন, আশ্রম-প্রধানের কাছেই দিয়ে আসবেন উপহারটা, এই মানুষটা তাঁকে সবসময় জ্ঞানের কথা বলেন।

আশ্রম-প্রধান আঙুরগুলো পেয়ে দারুণ খুশি হলেন। কিন্তু হঠাৎ তাঁর মনে পড়লো, আশ্রমের এক সন্ন্যাসী খুব অসুস্থ। ভাবলেন, “আঙুরগুলো তাকেই পাঠিয়ে দিই বরং আমি। কে জানে, কিছুটা হলেও তাঁর ভাল লাগবে হয়তো এই অসুস্থ শরীরে।”

ঠিক তাই করলেন তিনি। কিন্তু অসুস্থ সন্ন্যাসীর ঘরেও বেশিক্ষণ রইলো না সেই উপহার, তিনি ভাবলেন, “রাঁধুনী এতদিন ধরে দেখাশোনা করছে আমার, সবচেয়ে ভাল খাবারগুলো আমাকেই খাইয়েছে। আঙুরগুলো খুব পছন্দ করবে সে।”

রাঁধুনী তো এত সুন্দর আঙুর দেখে অবাক! এত নিখুঁত আঙুরগুলো – আশ্রমের তত্ত্বাবধান করেন যিনি, তিনি ছাড়া আর কেউ এর উপযুক্ত কদর করতে পারবেন না। সবাই তাকে পুণ্যবান একজন মানুষ হিসেবে জানে, প্রকৃতির এই আশ্চর্য উপহার তাকেই মানায়।

তত্ত্বাবধায়ক আঙুরগুলো হাতে পেয়ে, আশ্রমের সবচেয়ে অল্পবয়সী ছাত্রকে দিয়ে দিলেন সেগুলো; সবচেয়ে ছোট্ট সৃষ্টিগুলোতেও স্রষ্টার কারুকাজ যে কতটা নিখুঁত – তা যেন সে বুঝতে পারে। উপহার পেয়ে ছাত্রের সেই মানুষটাকে মনে পড়লো, প্রথম যেদিন এই আশ্রমে এসেছিল সে, যিনি সেদিন দরজা খুলে দিয়েছিলেন। সেদিন তিনি তাকে এখানে ঢুকিয়েছিলেন বলেই তো আজ এমন সব মানুষদের মাঝে আছে সে, যাঁরা জানেন জীবনের খুঁটিনাটি সৌন্দর্যগুলোর মূল্য কেমন করে দিতে হয়।

আর তাই, রাত নামার ঠিক আগ দিয়ে, আঙুরগুলো দরজার পাহারায় থাকা সেই সন্ন্যাসীর কাছে নিয়ে গেলো সে।

–      এই আঙুরগুলো খেয়ে নিন। বেশিরভাগ সময়ে একলাই থাকেন আপনি এখানে, খুব ভাল লাগবে আপনার এগুলো খেলে।

সন্ন্যাসী বুঝতে পারলেন, আঙুরগুলো আসলে তার ভাগ্যেই ছিল। তারপর সবগুলো আঙুর খেয়ে, সুন্দর সুখের এক ঘুমের রাজ্যে ডুবে গেলেন তিনি।

এভাবেই বৃত্তটা পূর্ণ হল; সুখ আর আনন্দের সেই বৃত্ত, ভালো মানুষদের মাঝে যা অবিরাম দীপ্তি ছড়িয়ে যায়।

[ মূল গল্প ((http://paulocoelhoblog.com/2011/11/29/the-circle-of-joy/))

ঠিক এই গল্পের মত একটা ভিডিও: 

http://www.youtube.com/watch?v=nwAYpLVyeFU&lr=1&feature=watch

]

সামিরা সম্পর্কে

পীচ-গলা তরলে আটকে পা, দুঃস্বপ্ন অন্ধ দুই চোখে/ অসতর্ক হৃদয় পোষ মানে মিথ্যে বলার আফসোসে.../// প্রকাশিত লেখার কপিরাইট সংশ্লিষ্ট লেখক সংরক্ষণ করেন এবং লেখকের অনুমতি ছাড়া লেখা আংশিক বা পূর্ণভাবে কোন মিডিয়ায় পুন:প্রকাশ করা যাবে না।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে অনুপ্রেরণা, অনুবাদ, গল্প-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

30 Responses to অনুবাদ: বৃত্তবন্দী সুখ – পাওলো কোয়েলহো

  1. অক্ষর বলেছেনঃ

    “এভাবেই বৃত্তটা পূর্ণ হল; সুখ আর আনন্দের সেই বৃত্ত, ভালো মানুষদের মাঝে যা অবিরাম দীপ্তি ছড়িয়ে যায়।”

    ভালো লাগল আপি, অনেক ভালো। পৃথিবীর সবাই যদি এমন হত! আমরা তো এখন ভালোটা নিজের জন্য রেখে খারাপটা মানুষ্কে দিতে চাই! মানুষের অপকার করতে পারলেই যেন শান্তি 🙁 জানিনা কেন তবে বারবার মনে হয় সবাই গল্পের ঐ মানুষগুলোর মত হয়ে যেতে পারতাম। অন্তত নিজে তো চেষ্টা করতে ক্ষতি নাই।

    আবার বলি অনুবাদটা খুবই সুন্দর হইসে, তোমার অনুবাদ গুলো পড়লে একবারও মনে হয় না অনুবাদ পড়ছি, খুবই সাবলীল লেখা। :babymonkey:

    • সামিরা বলেছেনঃ

      আসলেই যদি হতে পারতাম এই মানুষগুলির মত, তাহলে তো খুবই ভাল হত। কিন্তু মনেই যে থাকে না!
      ধন্যবাদ ভাইয়া। 🙂

  2. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    অসাধারণ সামিরা, অসাধারণ! বলার মত কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
    শেষ রাতে হঠাৎ করেই মনটা কেমন এক ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো।

  3. স্রোতস্বিনী বলেছেনঃ

    সকাল বেলায় উঠে এতো সুন্দর একটা লেখা পড়ে মনে হচ্ছে, একটু চেষ্টা করে দেখি না-এমনটা হতে পারি কিনা।
    গতকাল অনেকটা এরকম ই একটা উক্তি পড়েছি,কার লেখা ছিল না-“what we are is the result of what we thought”.
    “এভাবেই বৃত্তটা পূর্ণ হল; সুখ আর আনন্দের সেই বৃত্ত, ভালো মানুষদের মাঝে যা অবিরাম দীপ্তি ছড়িয়ে যায়।”-বোঝাই যায় না এটা একটা অনুবাদ,খুবই সাবলীল আর সহজ। আপু,পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

    • সামিরা বলেছেনঃ

      সেটাই, চেষ্টা করতে তো দোষ নেই। ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

      কিন্তু আপনার ব্লগে বেড়াতে গিয়ে কোন লেখা পেলাম না যে? 🙁

      • স্রোতস্বিনী বলেছেনঃ

        সরি আপি… এখনো আপনাদের মত উঁচু মানের লেখা লিখতে পারছি না বলে পোস্ট দিতে পারছি না….. 🙁 আজকে সাহস করে দিলাম একটা…… 🙂

  4. অনাবিল বলেছেনঃ

    মুগ্ধ!

  5. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    কী চমৎকার! তাই না?

    আরও আসুক। কোয়েলহো!

  6. আবদুর রাজ্জাক শিপন বলেছেনঃ

    আমাদের সুন্দরগুলো ফুল হয়ে যাক, ফুল হয়ে যাক..
    ভুল দূরে যাক, ভুল দূরে যাক…

  7. শারমিন বলেছেনঃ

    অসাধারণ ,অসাধারণ :huzur:

  8. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    আনন্দের বৃত্ত! কী অদ্ভূত সুন্দর লেখা!

    এবং, খুবই সুন্দর অনুবাদ! :clappinghands:

  9. জনৈক বলেছেনঃ

    কোয়েলহোর এই ছোট গল্পগুলো কত যে ভালো লাগে!

    কিপ ইট আপ!

  10. দারাশিকো বলেছেনঃ

    আঙ্গুর ফল যখন হাত থেকে হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছিল তখন আমার যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুপথযাত্রী একেকজন সাহাবীর তাদের পানির পাত্র অন্যদের দিকে পৌছে দেয়ার কাহিনী মনে পড়ে গেল। তার মানে এইটা শুধু গল্প না, এইটাই সত্যি 🙂

    পাওলো কোয়েলহো পড়ার জন্যই আপনার ব্লগে আসা 🙂

  11. ইঁদুর বলেছেনঃ

    ভালো লাগল গল্পটা

  12. সামিরা বলেছেনঃ

    ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂

  13. তিষা বলেছেনঃ

    সামিরাপু, এত সুন্দর করে অনুবাদ ক্যামনে করেন!!
    :love: :huzur: :clappinghands:

    আমি পারি না। 🙁

  14. নূসরাত রহমান বলেছেনঃ

    কী সুন্দর গল্প! কীইইই সুন্দর!! আপু শেয়ার করি?

  15. নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেনঃ

    এত সুন্দর অনুবাদ। আর গল্পটা খুউব সুন্দর।
    অনেক ধন্যবাদ কষ্ট করে অনুবাদ করে আমাদের কাছে পৌছে দেয়ার জন্য :huzur:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।