হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের কষ্ট কেউ কি বুঝবে না?

“তবে কি হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের কষ্ট বুঝবার জন্য অন্যদেরও হুইলচেয়ার ব্যবহার করতে হোক, এই অভিশাপ দেব?” কথাটা শোনার পর চোখ দুটো আপনা থেকেই ঝাপসা হয়ে এলো। আস্তে করে দৃষ্টি সরিয়ে অন্যদিকে ফেরাতেই দেখতে পেলাম জাফর ইকবাল স্যারও সন্তর্পণে যেন চোখটা একটু মুছে নিলেন! কী জানি, হয়তো আমার মতই স্যারের গায়েও কাঁটা দিয়ে উঠেছিল এই নিষ্ঠুর কথাটা শুনে। হ্যাঁ, আমাদের জন্য কথাটা নিষ্ঠুরই বটে। যখন আমরা স্বাধীনভাবে এখানে-সেখানে যেমন ইচ্ছে ঘুরে বেড়াতে পারি, তখন ঐ হুইলচেয়ারে বসে থাকা মানুষগুলো জানালা গলে এক মুঠো আকাশের সন্ধানও পান না। দিনের পর দিন তারা ঘরে বন্দী হয়ে থাকতে থাকতে হয়তোবা জোর করেই ভুলতে বসেন আলো গায়ে মাখবার অধিকার তাদেরও আছে। জোর করে ভুলতে গিয়েই তো এত কষ্ট হয়, বুকের ভেতর জমে থাকা এত এত অভিমান তাই গুমড়ে ওঠে। সবাইকে সামনে পেয়ে আজ সেই অভিমানটুকুই আর চেপে রাখতে পারলো না ছোট্ট সুমাইয়া, নারায়ণগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। কান্নাভেজা গলায় বলে ফেললো যে সে আসলে অভিশাপ দিতে চায় না, কিন্তু চলৎশক্তিসম্পণ্ন সেই মানুষগুলো কিছুতেই বুঝতে চায় না তার কষ্ট, তারা কিছুতেই শুনতে চায় না তার অভিযোগ। তাই সুবিধার অভাবে নিয়মিত ক্লাসে যেতে না পারা সুমাইয়া এখন আর অভিযোগ জানায় না, কারণ সেই ছোট্ট কণ্ঠের কথাগুলোকে কেউ তো পাত্তা দেয় না!

স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে না পারার আক্ষেপ আজ শুধু সুমাইয়ার না। শহীদ মিনারে হয়ে যাওয়া হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের র‍্যালী ও সমাবেশে উপস্থিত বিকল্পভাবে সক্ষম সমস্ত মানুষের। তাদের কণ্ঠে ছিল আজ শুধু সহজভাবে চলতে পারার দাবী। নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ’র ছাত্র জাহিদুল ইসলাম জানান, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে থাকাকালীন সময়ে দ্বিতীয় তলায় উঠে ক্লাস করার জন্য তাকে রোজ ২ জন লোক নিয়োগ করতে হয়েছে, কারণ অন্য কোন ব্যবস্থা তখন ছিল না। পড়ালেখা শেষে চাকরি করবার ব্যাপারেও তিনি ভয় পান। কারণ চাকরি পাবার সুযোগ এবং তার পরিবেশ ইতিবাচক হবে কিনা এটাই যে এখনও নিশ্চিত নয়!

হাতে এবং মেরুদন্ডে সন্ত্রাসীদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়ে হুইলচেয়ারে অবস্থান নিতে হয় মেজর জহিরকে। কিন্তু দেশে ফিরে তিনি বুঝতে পারেন যে আগের মত বাইরের আলো-বাতাস মাখা আর তার জন্য হয়ে উঠবার নয়। শুধু তাই নয়, ঘরে বসে থেকেও বিনোদন উপভোগ করবার অধিকার তাকে দেয়া হয় নি। যেন বিনোদন কেবল সুস্থ মানুষের প্রাপ্য! তাই আজ তিনি সকলের সামনে দাবী জানান, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে যেন কার্টুন প্রোগ্রাম থেকে শুরু করে বাকি অনুষ্ঠানগুলোতেও সাবটাইটেল এবং ইশারা ভাষা (Sign Language) চালু করা হয়। পাশাপাশি  প্রকৌশলীরা যেন ইমারত নির্মাণের সময় এখন র‍্যাম্প তৈরিতে আরেকটু সচেষ্ট থাকেন, ফলশ্রুতিতে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের চলাচল সহজতর হয়ে উঠবে।

বিকল্পভাবে সক্ষম আবদুর রহিম পরামর্শ দেন, হিউম্যান রিসোর্সের আওতায় নিয়ে এসে দাতা সংস্থাগুলোতে  দাবী জানালে তাদের জন্য র‍্যাম্প তৈরিতে অর্থ সাহায্য পাওয়া সহজ হবে।

নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতা প্রয়াত জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকুর সহধর্মিনী খুজিস্তা নূর-এ-নাহরিন স্মৃতিচারণ করেন তাঁর অর্ধাঙ্গের শেষ দিনগুলোর কথা, মৃত্যুর মাস তিনেক আগ থেকে যাকে হুইলচেয়ারে চলাফেরা করতে হয়েছে। তিনি সেইসময় থেকে বুঝতে পেরেছেন, হুইচেয়ার ব্যবহারকারী মানুষগুলো আসলে কতটা অসহায়, ইচ্ছে থাকলেও বাইরের পৃথিবীতে তারা চলাচল করতে অপারগ শুধুমাত্র একটুখানি সুযোগ আর দৃষ্টিভঙ্গীর অভাবে! দিনের পর দিন উপলব্ধি করা কষ্টের তীব্রতা থেকে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ তিনি প্রয়াত টিংকুর ব্যবহৃত স্মৃতিবিজড়িত হুইলচেয়ারটি উপহার দেন বিকল্পভাবে সক্ষম ময়নাকে! ময়নার মুখের সেই ছোট্ট এক টুকরো হাসি দেখবার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। দেখতে পেলাম, চলাচল আরও একটুখানি সহজ হওয়াতে সেই নিষ্পাপ মুখটা উপহার পেয়ে খুশিতে একেবারে ঝলমল করছিল!

ময়নার মত হাজারও হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের নিষ্কলুশ হাসিমুখ দেখতে চাইবার জন্যই বাংলাদেশী সিস্টেমস চেঞ্জ এডভোকেসি নেটওয়ার্ক (বি-স্ক্যান) এর উদ্যোগে এবং সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশেন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি) এর সহযোগিতায় হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য আজকের এই র‍্যালী আর সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে লেবরেটরী সার্ভিসেস– বারডেম এর পরিচালক এবং বি-স্ক্যান এর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা.শুভাগত চৌধুরীর কথাগুলো শুনে নিজের ভেতরে কেমন একটা ব্যথা তিরতিরিয়ে উঠলো। মনে হল, আগে কেন এমন করে ভাবি নি? সত্যিই তো, কেউ যখন জিজ্ঞেস করেন আমাকে যে আমি কেমন আছি, তখন নিজের অজান্তেই উত্তর চলে আসে- আমি ভালো আছি। কিন্তু মানুষ হিসেবে উত্তরটা তো এরকম হবার কথা নয়। কারণ কেবল একার ভালো থাকা মানবিক গুণাবলীর ভেতরে পড়ে না। যদি কখনো বলতে পারি যে আমরা সবাই ভালো আছি, শুধুমাত্র তখনই সত্যিকার ভালো থাকা প্রকাশ পাবে। অথচ আমরা কী সহজেই আমাদের আশেপাশের এই হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী কিংবা বিকল্পভাবে সক্ষম মানুষগুলোর কষ্টের কথা ভুলে যাই, কেবল নিজের ভালো থাকাটাকে বড় করে দেখি স্বার্থপরের মত! স্যারের কথাগুলো আমার ভেতরটা নিংড়ে ভাবিয়ে দিয়ে গেলো খুব।

আজকের প্রাপ্তি- আমাদের অর্জন:

ভেঙ্গে যাক সকল বাধা, তৈরী হোক চলাচলের সমতা” অর্থাৎ “Equal access for all, barriers should fall”- এই স্লোগান নিয়ে শুরু হওয়া আজকের র‍্যালী ও সমাবেশ থেকে আমাদের প্রাপ্তিও কিন্তু প্রথমবারের হিসেবে নেহাৎ কম নয়। রিহ্যাবের প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান ভুঁইয়া আজ কথা দিয়েছেন যে তিনি রিহ্যাবের সকল সদস্যকে চিঠি ও সার্কুলার প্রদানের মাধ্যমে রিহ্যাবের আওতাধীন ইমারতগুলোতে স্থায়ী র‍্যাম্প তৈরির ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি যেসব আবাসিক ভবনে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের চলাচলের সহায়ক র‍্যাম্পের ব্যবস্থা নেই সেসব ভবনের উল্লেখ করে রিহ্যাবে অভিযোগপত্র পাঠাতেও তিনি অনুরোধ করেন উপস্থিত সবাইকে যাতে করে পরবর্তীতে র‍্যাম্প তৈরিতে রিহ্যাব যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

ছোট্ট সুমাইয়ার অভিমান দূর করতে যতটুকু সম্ভব নিজ দায়ত্বে বিকল্পভাবে সক্ষম মানুষদেরক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সহযোগিতা করবার প্রতিশ্রুতি দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। সদা হাস্যোজ্জ্বল এই মানুষটি যে মন্তব্য করেন তা শুনে আরেকবার ভালোলাগা আর শ্রদ্ধায় মনটা ভরে ওঠে। স্যার বলেন, এই দেশের মত সুইট, ভালো আর মহান মানুষ পৃথিবীতে নাকি আর কোথাও নেই। আর তাই মিডিয়া যদি এই বিশেষ মানুষদের নিয়ে সংবাদ প্রচার করে এবং ঠিক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে তাঁর বিশ্বাস দেশের মানুষ অবশ্যই সামনে এগিয়ে আসবে। ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বিশেষভাবে সক্ষম মানুষগুলোর জন্য ভর্তিতে কোটা পদ্ধতি করা হয়েছে বলেও স্যার জানান।

‘ছবির পরিবর্তন হবে না যদি ড্রাইভিং সিটে থাকা মানুষটির পরিবর্তন না হয়’- সমাবেশের প্রধান অতিথি মাননীয় যোগাযোগমন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের এভাবেই মাত্র একটি বাক্যে বিকল্পভাবে সক্ষম মানুষদের প্রতি আমাদের সবার দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। রাতারাতি পুরো দৃশ্যপটের আমূল পরিবর্তন তাঁর পক্ষে সম্ভবপর না হলেও তিনি আশ্বাস দেন পরবর্তী মন্ত্রীসভাতে বিবিধ বিষয়ের আওতায় তিনি হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের সার্বজনীন প্রবেশগম্যতার বিষয়টি তুলে ধরবেন। সাথে সাথে পরবর্তীতে সরকার কর্তৃক আমদানীকৃত সকল গাড়ি বিশেষ করে বিআরটিসি বাসগুলোতে র‍্যাম্পের ব্যবস্থা করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।

আয়োজক ও উদ্যোক্তাদের কথা:

বি-স্ক্যানের পক্ষে আমাদের সবার প্রিয় সাবরিনা আপু মঞ্চে যখন তাঁর জীবনের কিছু অভিজ্ঞতার কথা বললেন তখন কষ্টে লীন হয়ে যাচ্ছিলাম কেবল। শুধু মনে হচ্ছিলো, আজ সাবরিনা আপুর জায়গায় যদি আমি কিংবা আমার আপন বোন হত তাহলে কি এতটা কষ্ট আমি সহ্য করতে পারতাম? জাফর ইকবাল স্যার তো ঠিকই বলেছেন, “প্রতিবন্ধী আমরা, আমাদের মন-মানসিকতা। নতুবা আমরা বিশেষ এই মানুষগুলোকে করুণা না করে, তাদের ক্ষমতাকে শুভ কাজে ব্যবহার করতাম। কারণ এই মানুষগুলো একেকজন যে কাজ করতে পারেন তা আমরা দশজন মিলেও পারি না।” কতটা মনোবল ধারণ করলে এইভাবে রাজপথে নেমে আসা যায়, সত্যিই তো! আপুর কথা শুনে জানতে পারলাম, বাংলাদেশের ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০০৮ অনুযায়ী, প্রতিটি ইমারতে হুইলচেয়ার প্রবেশগম্যতা ও টয়লেট (Accessible) থাকা আবশ্যক এবং এই নিয়ম না মানলে মালিকানাধীন ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদন্ড বা নূন্যতম ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় করা হতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, এই আইনের কেবলমাত্র উল্লেখ থাকলেও কোন বাস্তব প্রয়োগ নেই! খুব অল্প কিছু দাবী আপুদের, আমাদের, সবার। এই বিকল্পভাবে সক্ষম মানুষগুলোর জন্য সহায়ক যাতায়াত ও শিক্ষা ব্যবস্থা, সর্বোপরি স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ বাস্তবায়িত করা। খুব অন্যায় বা অপূরণীয় কোন দাবী নয়, তাই না?

আজকের সমাবেশের উদ্যোক্তা, সিআরপি এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সমন্বয়ক সিস্টার ভ্যালেরি টেইলর যে এত অসাধারণ একজন মানুষ তা সামনা-সামনি না দেখলে বিশ্বাস করা কষ্টকর ছিল আমার জন্য। পুরোটা সময় তিনি বাংলায় কথা বলেছেন, র‍্যালীর সামনে সারিতে না গিয়ে হুইলচেয়ার ব্যবহারীদের ভেতর একজনকে হুইলচেয়ার চালিয়ে নিতে সাহায্য করেছেন, সবচেয়ে বড় কথা, সবার সাথে বাংলায় হেসে হেসে কথা বলে সময় কাটিয়ে দিলেও তিনি সম্পূর্ণ প্রচারবিমুখ ছিলেন! এইরকম একজন মানুষকে সামনে থেকে দেখাটাও একটা সৌভাগ্য, যাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে, জানার আছে। সিস্টার আমাদের মনে করিয়ে দিলেন যে আজ আমরা ভালো থাকলেও ঠিক পরবর্তী দিনেই রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে কিংবা সামান্য কোন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের একজন হয়ে যেতে পারি! কী ভয়ংকর সত্যি একটা কথা! মনে হলো, শুধুমাত্র এই চিন্তাটা মাথায় থাকলে কখনো কি কারও পক্ষে সম্ভব এই বিশেষ মানুষগুলোকে দূরে ঠেলে সরিয়ে দেয়া?

টুকরো কথা- যা কিছু শুভ:

১. সাইদুর রহমান পরাগ নামের এক ভদ্রলোক জানান, বিকল্পভাবে সক্ষম রিকশাচালকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবার জন্য তারা ইলেকট্রিক রিকশা ও হুইলচেয়ার তৈরি করে যাচ্ছেন!

২. সাবরিনা আপু জানান, চট্টগ্রাম রেসিডন্সিয়াল মডেল স্কুলে মাসকুলার ডিসট্রফিতে আক্রান্ত ছাত্রী তাসনিনের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ গত তিন বছর ধরে ক্লাসরুম হিসেবে নিচের তলায় বাথরুম সংলগ্ন একটি কক্ষ ব্যবহার করে আসছে!

৩. এবারে হয়ে যাওয়া বইমেলায় জাফর ইকবাল স্যারের সায়েন্স ফিকশান ‘কেপলার টুটুবি’ বই প্রকাশিত হয়েছে। বইটিতে স্যার উৎসর্গের স্থানে লিখেছেন,

“উৎসর্গ
প্রিয় সাবরিনা সুলতানা।

তোমার প্রাণশক্তি দেখে আমি জীবনকে নতুনভাবে দেখার চেষ্টা করছি।”

বইটির একই কপি আজ স্যার সাবরিনা আপুকে উপহার দেন!

৪. সমাবেশ শেষে ছোট্ট এক বাচ্চা মেয়ে গোলাপ ফুল বিক্রি করতে চলে এসেছিলো শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে। কেউ তেমন করে লক্ষ্য করে নি, কিন্তু আমি দেখেছি যে জাফর ইকবাল স্যার মেয়েটিকে আদর করে কাছে ডেকে চুপিচুপি ১০০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে শহীদ মিনারে উপস্থিত সকল হুইলচেয়ার ব্যবহারীকে একটি করে তাজা গোলাপ ফুল দিতে বলেন! দেখে মনে হয়েছিলো, এই বিশেষ মানুষগুলোও আসলে একেকটা প্রস্ফুটিত তাজা গোলাপ! আমরা কজনই বা এর কদর বাইরে থেকে বুঝতে পারি!

পরিশিষ্ট:

– একজন চমৎকার এবং হাসিখুশি মানুষের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। তিনি বি-স্ক্যানের আরেকজন অতিপ্রিয় আপু সালমা মাহবুব।

– আজকের সমাবেশের মিডিয়া পার্টনার ছিল সময় মিডিয়া লিমিটেড ও রেডিও টুডে।

– এ পর্যন্ত একাত্মতা ঘোষণা করে র‍্যালীতে যোগদান করেছে- রোটারী ক্লাব অব ঢাকা সেন্ট্রাল, আমার ব্লগ ডট কম,  ব্লগারস ফোরাম, কমিউনিটি ব্লগ সচলায়তন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সরব ডট কম, WaterAid এবং মুক্ত আসর।

সিস্টার ভ্যালেরি টেইলরের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে শেষ করতে চাই- “কোন বাধাই আমাদের সামনে পথ আগলে দাঁড়াবে না যদি আমরা বাধা পেরোবার সিদ্ধান্ত নেই।”

বাধা পেরোবার পথে এই বিকল্পভাবে সক্ষম মানুষদের পাশে সবসময়েই আছি আমি, আমরা- তারুণ্যের প্ল্যাটফর্ম সরব ডট কম

ফ্রেমবন্দী মুহূর্ত:

 বি-স্ক্যান এর উদ্যোগে এবং সিআরপি এর সহযোগীতায় হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের র‍্যালী ও সমাবেশের কিছু মুহূর্ত।

 

 

বিকল্পভাবে সক্ষম মানুষের অধিকার আদায়ের দাবীতে সরব টিম একাত্মতা ঘোষণা করে।

 

 

সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করেন (উপরে, বাম থেকে):

আইসিডিডিআরবি এর জেন্ডার স্পেশালিস্ট, রোটারী ক্লাব অফ ঢাকা সেন্ট্রালের পক্ষ থেকে ফারজানা মাজিদ; সোসাইটি অফ ডেফ অ্যাণ্ড সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজারের পক্ষ থেকে জনাম এম.আই. চৌধুরী; বি-স্ক্যান এর প্রেসিডেন্ট সাবরিনা সুলতানা।

(নিচে, বাম থেকে):

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল; মাননীয় যোগাযোগমন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের; সিআরপি এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সমন্বয়ক সিস্টার ভ্যালেরি টেইলর।

র‍্যালী ও সমাবেশে ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের কিছু মুহূর্ত।

 

 

বামে,

ইলেকট্রিক রিকশা চালিয়ে এখন আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন বিকল্পভাবে সক্ষম রিকশাচালকেরা।

ডানে,

ময়নাকে উপহার দেয়া সেই হুইলচেয়ারটি। 

ফিনিক্স সম্পর্কে

"প্রিয় পতাকার লাগি // জটায়ুর মত রক্ত ঝরাতে // আমিও প্রহর জাগি..." https://www.facebook.com/phoenix.chhanda
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে উদ্যোগ, চিন্তাভাবনা, সচেতনতা-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , , , , , , , , , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

16 Responses to হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের কষ্ট কেউ কি বুঝবে না?

  1. সামিরা বলেছেনঃ

    কী সুন্দর লিখো তুমি আপু! সুন্দর গোছানো একটা পোস্ট।

    র‍্যালীটা এত ভালোভাবে শেষ হয়েছে জেনে খুব ভাল লাগলো। পরীক্ষা না থাকলে যেতে পারতাম।

    আসলেই, নিজেরা যে কোন সময় ওদের একজন হয়ে যেতে পারি – শুধু এই কথাটা মাথায় রাখলেও এই মানুষগুলির সুযোগ-সুবিধার কোন কমতি হতে দিতাম না আমরা।

    • ফিনিক্স বলেছেনঃ

      ‘এই লেখাটা সুন্দর হয়েছে’- এইটা শোনার আগে তো আমার সুইসাইড খাওয়া উচিত ছিল! 😯
      সবকিছু লিখে পোস্টটা রাবারের মত টেনে কেমন লম্বা বানিয়ে ফেললাম! কিছুতেই আর ছোট হয় না। শেষে আরও কিছু ছবি যুক্ত করার চিন্তাভাবনা মাথা থেকে বাদ দিতে হলো জোর করে। 🙁

      র‍্যালী আর সমাবেশ সত্যি অসাধারণ ছিল। আমার আশেপাশে এই সুইট কিছু বিকল্পভাবে সক্ষম মানুষ আছেন, জানতামই না! আর যেসব অসাধারণ ব্যক্তিত্বকে চোখের সামনে দেখতে পেয়েছি, সেটা তো উপরিই বলা যায়।

      সবটা মিলিয়ে এক কথা ‘অনবদ্য’! :happy:

  2. ওয়াহিদ সুজন বলেছেনঃ

    “কোন বাধাই আমাদের সামনে পথ আগলে দাঁড়াবে না যদি আমরা বাধা পেরোবার সিদ্ধান্ত নেই।”

  3. ভীষণ ধরণের মিস করেছি! অসাধারণ লাগলো বর্ণনাটা পড়ে…

    • ফিনিক্স বলেছেনঃ

      ঠিক। যারা না ছিল সেদিন, অনেক মিস করেছে প্রত্যেকেই।

      তবে লেখাটা পড়ার যোগ্য হয়েছে, এইটুকুতেই শুকরিয়া। কারণ বর্নণার চেয়ে মূল অনুষ্ঠান অনেক বেশি অন্যরকম, অনেক বেশি ভাববার মত ছিল। লেখায় ভাবনাগুলো ফুটিয়ে তুলতে পারি নি সবটা। 🙁

  4. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    অনেক অনেক ধন্যবাদ চমৎকার একটি লেখার জন্য। এবং সরব টিমকে ধন্যবাদ এমন চমৎকার উদ্যোগ এর পাশে থাকার জন্য

    • ফিনিক্স বলেছেনঃ

      সরবের সবাইকে ধন্যবাদ। তারা শুধু র‍্যালীতে অংশগ্রহণই করেন নি, হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের সাধ্যমত সাহায্যও করেছেন। 🙂

  5. নূরবাহার ঈয়াশা বলেছেনঃ

    ফিনিক্স,
    অসাধারণ লাগলো বর্ণনা পড়ে… জানি না আসলেই কবে ঘুঁচে যাবে এই অসমতা! 🙁

    • ফিনিক্স বলেছেনঃ

      আশা করি, প্রার্থনা করি, যেন সত্যি ঘুঁচে যায়, খুব তাড়াতাড়ি ঘুঁচে যায়। সেই ছোট্ট সুমাইয়ার কণ্ঠস্বর এখনও আমার কানে বাজছে! আমি আর ওর অভিমানভরা কণ্ঠ শুনতে চাই না। একবারের জন্যেও না।

  6. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    শুরু হোক সকলের পথচলা নির্দ্বিধায়, নির্বিঘ্নে……

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।