ভাবুন তো একবার, আপনি গভীর রাতে শুয়ে আছেন নিজের স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে। হঠাৎ, দরজা ভেঙে প্রবেশ করলো অস্ত্র হাতে। টেনে নিয়ে গেলো আপনার ছেলে আর মেয়েটাকে। আপনার মেয়েটার কী হলো আপনি কখনো জানতে পারলেন না। আর, কয়েক মাস পরে আপনার ছেলেটাই আপনার ঘরে ঢুকে গুলি চালালো আপনার বুকে!
ভাবতে পারছেন? নাকি দম বন্ধ হয়ে আসছে? বারবার চোখের পাতা ফেলে কি ভোলার চেষ্টা করছেন ভয়ংকর সে দৃশ্যের কল্পনা?
আপনার কাছে যা কল্পনা তাই বাস্তব হয়ে আছে উগান্ডার মানুষের কাছে বহু বছর ধরে।
উগান্ডা ও পাশ্ববর্তী দেশ কঙ্গো, সুদান, দক্ষিণ সুদানের মানুষ বাস করছে এই ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের মধ্যে আজ বহু বছর ধরে। এখানের মানুষ এখন জানে না ঘুম থেকে পরদিন জেগে উঠে নিজের পরিবারকে পাশে পাবে কি না। শিশুরা জানে না, পরদিন সকালেও বাবা-মা ডাকতে পারবে কি না। শত শত ছেলে রাতে লুকিয়ে থাকে একসাথে ধরে নিয়ে যাবার ভয়ে।
এই ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন তৈরী করা মানুষটার নাম জোসেফ কোনি। আদৌ কি তাকে মানুষ বলা যায়?
জোসেফ কোনি
জোসেফ কোনি উগান্ডার কুখ্যাত গেরিলা গ্রুপ Lord’s Resistance Army (LRA) এর প্রধান। এই গ্রুপের প্রথম দিকে জনসমর্থন থাকলেও পরবর্তীতে মানুষের ঘুম কেড়ে নেয় এর হিংস্রতা। উগান্ডাতে শুরু হলেও ছড়িয়ে পড়ে এর আশেপাশের দেশে। ব্যপক পরিমাণ গোলাবারুদ থাকায় সরকারও এর বিরুদ্ধে কিছু করার সাহস পায় না। আর তার এই গেরিলা বাহিনীর জন্য বাচ্চা-কিশোর ছেলেদের ধরে আনা হয় তাদের ঘর থাকে। ছোট ছোট মেয়েদের ধরে আনা হয় তাদের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য। জোর করে দেয়া ট্রেনিং এর পর ছেলেদের অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য করা হয় তাদের বাবা-মা খুন করতে।
এই পর্যন্ত কোনি কতজন শিশুকে এমনভাবে ধরে নিয়ে গেছে জানেন?
৬৬,০০০ এর উপর!
জোসেফ কোনি-র কারণে আজ আফ্রিকার এ দেশগুলোতে কোন শিশুরই নিরাপত্তা নেই। অনেকে কিশোরই মনে করে, এভাবে পালিয়ে পালিয়ে ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াও অনেক ভালো। কল্পনা করতে পারেন, যে বয়সে ছেলেমেয়গুলোর আনন্দে ঘুরে বেড়ানোর কথা, জীবন নিয়ে রঙিন স্বপ্ন দেখার কথা- সেই বয়সে থাদের ভাবতে হচ্ছে ‘মরে যাওয়া ভালো’!
এই শিশুটির কি এখন অস্ত্র হাতে নেয়ার বয়স?
International Criminal Court (ICC) এর অপরাধীদের তালিকায় শীর্ষ নামটি তাই শুধুই জোসেফ কোনি।
তবে অনেকটাই অচেনা কোনিকে নিয়ে মানুষের আগ্রহের সূচনা হয় ৫ই মার্চ, ২০১২ তে। জেসন রাসেল নামক একজন নির্মাতা জোসেফ কোনি এবং তার ভয়াবহতা নিয়ে নির্মান করেন ত্রিশ মিনিটের একটি ডকুমেন্টরী যার নাম kony 2012. জোসেফ কোনির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জেসন রাসেল ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন Invisible Children, Inc. তবে যুক্তরাষ্টের নিজস্ব কোন সংঘাত না থাকায় জোসেফ কোনি-র বিপক্ষে পদক্ষেপ নিতে অস্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। তাই, জনগনকে জোসেফ কোনি সম্পর্কে জানিয়ে জনগণের চাপের মুখে যুক্তরাষ্ট্রকে কোনি-র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামানোটাই ছিল Invisible Children, Inc. এর উদ্দেশ্য। পরবর্তীতে ২০১০ সালে বিশাল জনগণের চাপের মুখেই প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ১০০ জন স্পেশাল ফোর্সের আমেরিকান সেনাসদস্যকে পাঠান উগান্ডার সামরিক বাহিনীকে কোনি-র বিপক্ষে লড়াইয়ের ট্রেনিং দিতে। তবে, জনসমর্থন কমে গেলেই এ সেনা সদস্য অপসারণ করা হবে, সেই ধারণা থেকেই সারা বিশ্বে জোসেফ কোনি-কে পরিচিত করতেই প্রকাশিত হয় kony 2012।
Kony 2012 এর পোস্টার
গত এক সপ্তাহে এই ডকুমেন্টরি দেখা হয়েছে মাত্র(!) ৭৩ মিলিয়ন বার!
সারা বিশ্বে জোসেফ কোনি-কে পরিচিত করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে আরো চাপের মধ্যে ফেলে উগান্ডাকে সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার নিশ্চয়তাই ডকুমেন্টরির নির্মাতা ও Invisible Children, Inc. এর সবার প্রত্যাশা। আমেরিকান সৈন্যদের এই ট্রেনিং জোসেফ কোনি-র বিপক্ষে জিততে ও লাখ লাখ শিশুর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে ভীষণ প্রয়োজন।
তবে প্রচারের সাথে সাথেই kony 2012-কে বেশ সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়। সমালোচকদের প্রশ্ন:
১. যে আমেরিকার সৈন্যরা ইরাক, আফগানিস্তানে বহু শিশুকে হত্যা করছে তারা অন্য দেশে শিশুদের বাঁচাতে যাওয়াটা হাস্যকর নয় কি?
২. আমেরিকা নিজেদের কোন সুবিধার নিশ্চয়তা ছাড়া কোথাও কিছু করে না। তবে কি উগান্ডা বা সংলগ্ন এলাকায় নিজেদের কোন উদ্দেশ্য নিয়েই যাচ্ছে আমেরিকা?
৩. যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যরা মানবাধিকার লংঘন করবে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে?
৪. জাতিসংঘের বদলে কেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কেন এখানে সামরিক সহায়তা চাওয়া হচ্ছে?
৫. বিশাল সংখ্যার একটা মানুষ kony 2012 ডকুমেন্টরিটা দেখেছে। অন্তর্জালের সহায়তায় মানুষকে ভুল পথে নেয়া হচ্ছে না তো?
এসব প্রশ্নের জবাব দেয়ার কেউ থাকুক বা না থাকুক, জোসেফ কোনির হিংস্রতা থেকে মুক্তি পাক লাখো শিশুর জীবন। তারা বাবা-মায়ের সাথে ঘুমাতে যাক জীবনের অনিশ্চয়তা নয়, সুন্দর এক ভোরের স্বপ্ন চোখে নিয়ে।
সমালোচকদের প্রশ্ন পড়ে আমার নিজের মনেও প্রশ্ন জাগলো। 😳
ভিডিওটা দেখা হয় নাই এখনো, বড় দেখে। সবাইকে অনেক শেয়ার করতে দেখলাম।
আর যত যাই হোক, এইসব অনাচার যেন বন্ধ হয়, এই দোয়া করি।
অনাচার যেন বন্ধ হয়, সেই দোয়াই করি……
এই লেখাটির জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ
মানুষকে জানানোটাও অনেক বড় একটা কাজ।
ইদানিং কালে যেটা হচ্ছে if u can’t convince them then confuse them!
এইটা নিয়ে উলটা পালটা ভিডিও দেখলাম
এর বিপরীত মতামতগুলাও জানা দরকার
আর আমি আমেরিকার হস্তক্ষেপ এর বিপক্ষে
আমিও আমেরিকার হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে। ওরা যেখানে যায়, শুধুমাত্র নিজের কোন ভালোর চিন্তা করেই যায়………
আমেরিকা যার বন্ধু, তার শত্রুর অভাব নাই…
এর চেয়ে সত্য কথা আর কী-ই বা হতে পারে……
অসাধারণ একটা লেখা-
buffering এর কারণে অনেকেই ৩০ মিনিটের ডকুমেন্টারি টা দেখতে পারে নি- অনেকে আবার ধৈর্যহীনতায়; সবার জন্যই লেখাটা কাজে লাগবে, ভাইয়া 🙂
ধন্যবাদ ভাইয়া 😀
ধন্যবাদ লেখাটির জন্য ।
মানুষকে তথ্যগুলো জানানোটাও বড় কাজ ।
আপনাকেও ধন্যবাদ…… 😀
“জাতিসংঘের বদলে কেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কেন এখানে সামরিক সহায়তা চাওয়া হচ্ছে?” প্রশ্নটা যৌক্তিক। :thinking:
আমেরিকার হস্তক্ষেপে কোনিই না হয় শেষ হল,কিন্তু ওরা যদি জায়গা না ছাড়ে তাহলে তো ভোর আর দেখা হবে না,আমেরিকা কোনির চেয়েও ভয়ংকর।
এই ভয়টাই পাচ্ছি……
Blood Diamond মুভিটায় এরকমই একটা কাহিনী ছিল যদিও প্রেক্ষাপট ভিন্ন, আমি ভেবেছিলাম এমনকি ঘটতে পারে ?? কিন্তু এই লেখাটা পড়ে বুঝলাম যে আসলে পৃথিবীতে কি ঘটছে আর কি ঘটতে পারে ?? আমি এই কোনির ব্যাপারে কিছু জানতাম না, কিন্তু লেখা পড়ে যেটা মনে হচ্ছে আমেরিকা হোক বা জাতিসংঘ, এই ধরনের জঘন্য কাজ বন্ধে কারও না কারও এগিয়ে আসা উচিৎ ।
কোনির পতন ঘটুক আর এই ধরনের পশুর জন্ম না হওয়াই শ্রেয় ।
আর লেখাটার জন্য ভাইয়াকে অনেক ধন্যবাদ, এই ব্যাপারে কিছুই জানতাম না, সরবে এসে অনেক অনেক কিছুই জানা যায় । সামনে আরও তথ্য ও গবেষণামূলক লেখা পাব আশা করি 🙂 ।
ধন্যবাদ, অক্ষর।
আমি আশা করি জাতিসংঘ এগিয়ে আসুক এ ব্যপারে। আমেরিকার হস্তক্ষেপটা কেন যেন কালো থাবার মতো একটা ভয় হয়ে গেছে………
ধন্যবাদ স্বপ্ন বিলাস।
ধন্যবাদ………
আমেরিকার হস্তক্ষেপ সন্দেহজনক। কিন্তু ‘মানবাধিকার সংরক্ষণ’ এর আওতায় এনে জাতিসংঘ কিছুই করছে না কেন?
এই পোস্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভিডিওটা ডাউনলোডে দিলাম।
জাতিসংঘ এখন অনেকটাই পশ্চিমা দেশের হাতের পুতুলের মতো। দেখা যাক, তারা কিছু করে কি না এবার……
ধন্যবাদ।
কোনি নাকি গত ৬ বছর ধরে আমেরিকাতেই আছে? এই ভিডিও তে দেখলাম…
তাই নাকি!!! ভিডিওটা দেখে নেই…
http://youtu.be/vO9HL99itSU
পোস্টটা আগেই পড়েছি, কিন্তু মন্তব্য করা হয়নি। কোনি কে আগে জানতাম না , সাইজ বড় দেখে সবার শেয়ার দেয়া ভিডিওটা দেখা হয়নি, লেখা পড়ে জেনে নিলাম…
মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগে……
বন্ধ হোক সমস্ত অন্যায়…………।
“বন্ধ হোক সমস্ত অন্যায়…………”
সমালোচনা গুলো আমাকে বেশি প্রভাবিত করল। তবে এমন নর পশু দের উচিত শাস্তি হওয়া দরকার।
ঠিক এমনি ঘটনা মনে হয় “ব্লাড ডায়মন্ডে” দেখেছিলাম।
সমালোচনা *
দেখা যাক কতটুকু সত্য আর কী হয়। কিছুদিন গেলেই বোঝা যাবে………
অনেক সুন্দর একটা লেখা। কিন্তু তথ্যগুলো নির্মম।
🙁
বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক ভাবে সমাধান করার চেষ্টা করা উচিত। জাতিসংঘের উচিত এগিয়ে আসা।
😳
এই বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক তোলপাড় হচ্ছে। দেখা যাক কী হয়……