ব্যবহারিক পরীক্ষার হাবিজাবি

আমি জীবনের প্রথম সিরিয়াসলি ভাইবা দিলাম এস.এস.সি.এর প্র্যাকটিক্যালে। এর আগেও স্কুলের পরীক্ষা গুলোতে ভাইবা ভীতি কাটানোর জন্য ভাইবা নেয়া হতো যেটার কারণে আমার ভাইবা ভীতি আরও বেড়ে গেলো। প্রথম প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা ছিলো রসায়ন। আমরা লেখা শেষ করে ভাইবার জন্য অপেক্ষা করছি। আমাদের সাথে অন্য আরেকটা স্কুলের সিট পড়েছিলো তাদেরকে স্যাররা খুব সহজ সহজ প্রশ্ন করছিলেন। যেমন পানির সংকেত কি? এই টাইপ প্রশ্ন। তবুও ওরা উত্তর দিতে পারছিলোনা। আমরা শুনে একটা বিজয়ের হাসি দিলাম। এরকম প্রশ্ন হলে আমাদের ঠেকায় কে! কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের দেখেই স্যাররা কঠিন কঠিন প্রশ্ন করা শুরু করলেন। ফার্স্ট গার্ল মোটামুটি হেস্তনেস্ত হয়ে আসার পর আমাদের কলিজা পানিশূন্য হয়ে গেলো। তবে ঐদিন সময় শেষ হয়ে যাচ্ছিলো দেখে স্যাররা আমাদের সহজ প্রশ্ন করেই ছেড়ে দিলেন। বাকী ভাইবা গুলো ভালোই হলো। পরে শুনেছিলাম নাম্বার নাকি আগে থেকেই ঠিক করা থাকে, প্রশ্নের উত্তর দিতে পারা না পারার মধ্যে পার্থক্য নেই।

এস এস সি এর প্র্যাকটিক্যালের সময় কয়েকটা পরীক্ষার ডাটা মুখস্থ করে ফেলসিলাম।
এইচ এস সি এর সময় প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করতাম আর ক্লাসে বসেই একটা করে চোরাবুদ্ধি বের করতাম, কিভাবে ফাইনালে সবটা কাজ না করে ডাটা লিখে আসা যায়।

বাকী ক্লাসগুলো ভালোভাবে করলেও বায়োলজী ক্লাসে তেলাপোকাটা কখনোই কাটিনি। এম্নিতেই তেলাপোকা ঘেন্না লাগতো, তারমধ্যে ম্যাডাম তেলাপোকাটা ধরে যেভাবে ঘ্যাচ্‌ ঘ্যাচ্‌ করে কাটতেন তা দেখলেই বমি আসতো। কেঁচো যেহেতু না ধরেই কাটা যায় তাই কেঁচো কেটেছিলাম। ফাইনালে কেঁচো কাটতে দিলো। কেঁচো কাটলাম কিন্তু নার্ভটা স্লাইডে তুলতে পারলাম্না, তুলতে গিয়ে ছিড়ে গেলো। স্যার আসলে বললাম যে পারিনি। স্যার বললেন ঠিক আছে কেচোতে স্নায়ুতন্ত্র কোনটা দেখাও। আমি বললাম স্যার “ঐ যে স্যার সাদা সুতার মতো একটা”।স্যার ঠিকমতো দেখতে না পেয়ে আবার জিজ্ঞেস করলেন, আমি আবারও “এইযে স্যার” বলে একটা অদৃশ্য সাদা সুতো দেখানোর চেষ্টা করলাম। যে জিনিস আমি দেখিনি সেটা কি স্যারকে দেখাতে পেরেছিলাম নাকি বুঝলামনা। স্যার মাথা ঝাকিয়ে চলে গেলেন। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

ফিজিক্স প্র্যাকটিক্যালে শুনলাম স্যারকে টাকা না দিলে স্যার নম্বর দিবেন না। আমাদের সাথের অনেকেই টাকা দিলো। আমি আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকলাম। টাকা দিয়ে নম্বর কেনা আমার পক্ষে সম্ভব না। প্র্যকটিক্যালে প্রিজমের উপাদানের প্রতিসরণাংক বের করতে বললো। আমি প্রিজম দিয়ে কোন বের না করে মুখস্থ কোণের মাপ চাঁদা দিয়ে আঁকলাম। তারপর চিত্রে প্রয়জোনীয় জায়গায় পিন দিয়ে খোঁচা দিলাম, ভাবটা এমন যে পিন দিয়ে গেঁথে গেঁথে চিত্র একেছি। ভাইবা শুরু হওয়ার আগে টেনশনে পড়ে গেলাম। অনেকেই টাকা দিয়ে টেনশন ফ্রি আছে। একসময় আমার রোল এলো, আমি ভাইবা দিতে গেলাম।যেই স্যার টাকা নিচ্ছে সেই স্যারের প্রথম প্রশ্ন, “খেয়ে এসেছো?” পরীক্ষা শুরু হয়েছে দুপুর দুইটায়, না খেয়ে যাওয়ার কারণ নাই। আমি বললাম, “জ্বী স্যার”

-“কি দিয়ে খেয়ে এসেছো?”
-“ঢেড়শ ভাজি আর ডাল।”
-” শুধু ঢেড়শ ভাজি আর ডাল? এত্ত বড় পরীক্ষা দিতে এসেছো আম্মা গোশত দিয়ে খাওয়ায় নাই?”
-“জ্বী না স্যার”। বিব্রত হয়ে উত্তর দিলাম।
সাথের স্যার কি যেন প্রশ্ন করতে চাইলেন, স্যার বাধা দিয়ে বললেন,” এই মেয়ে তো খেয়েই আসেনাই, একে কী প্রশ্ন করবেন?” আমাকে বললেন,”যাও, চলে যাও। সামনে থেকে গোশত দিয়ে খেয়ে আসবে।”
ব্যাস আমার ফিজিক্স ভাইবা শেষ।

(এটা একটা পরীক্ষামূলক পোস্ট, পুর্বে সামুতে ও চতুর্মাত্রিকে প্রকাশিত)

কিনাদি সম্পর্কে

মাথা নষ্ট পাবলিক
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

44 Responses to ব্যবহারিক পরীক্ষার হাবিজাবি

  1. বোকা মানুষ বলেছেনঃ

    লিখতে থাকুন। ভালো লেগেছে। শিরোনামটাও সুন্দর!

  2. শিশিরকণা বলেছেনঃ

    :welcome:

  3. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    :welcome: সরব এ স্বাগতম আপু 😀

    এই লেখাটা আগেও পড়ছিলাম।
    মজার :clappinghands:

  4. নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেনঃ

    আমাদের সাথের অনেকেই টাকা দিলো। আমি আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকলাম। টাকা দিয়ে নম্বর কেনা আমার পক্ষে সম্ভব না। — এই জায়গাটা ভালো লেগেছে অনেক। এই মানসিকতাটা আমারও ছিলো। আমিও দিইনি কখনো 🙂

    লেখাটা আগেও পড়েছিলাম। সরবে স্বাগতম আপু। :welcome:

  5. নিশম বলেছেনঃ

    সামনে থেকে গোশত দিয়ে খেয়ে আসবে।

    হি হি হি হি :yahooo: :yahooo: :yahooo: :yahooo:

    মজারু !!! আমারো প্র্যাক্টিকেল নিয়ে একটা লিখা উচিত ! যা একেকটা কান্ড হয়েছে না !!! মজা পেলাম আপনার ঘটনায় !

  6. ছুডবেলায় ফিরে গেছিলাম অনেকদিন পর!! সেই জি এর মান ৯.৮২ ধরে রিভার্স ক্যালকুলেশন! আর স্যার আমাদের গ্রুপকে দেখিয়ে বাকিদের বললো, ওরা সবচেয়ে ভালোভাবে প্র্যাকটিকালটা করেছে! :rollinglaugh:

    সরবে স্বাগতম!! :welcome:
    আরো পোস্টের অপেক্ষায়! 😀

    • কিনাদি বলেছেনঃ

      হা হা! আমাদের স্যার বলছিলেন জি এর মান ৯.৮ অসম্ভব, ৯.৮ মানে এখানে ফাঁকিবাজি করা হয়েছে।।যন্ত্রের ত্রুটির কারণে ১০.২ এর মতো হয়। আমরা তাই এইটারে ধরে রিভার্স করসিলাম। স্যার মহাখুশী। 😀

  7. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    আহারে প্রাকটিকাল! কত পুকুর না সমুদ্র চুরি করেছি এই জীবনে 😀
    প্রাকটিকাল ক্লাসে সারের হাতে চড় খেয়েছি,আরেক স্যার গাধা বলেছে……তখন কত রাগ লেগেছে,আর এখন শুধু এগুলোই মনে পড়ে………

    সরবে স্বাগতম :welcome:

  8. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    প্র্যাকটিকালের দিনগুলিতে কী বিশাল চুরিগুলো যে করতাম। বেশ মজা লাগলো। বানানটা আরেকটু ঠিক হলে একেবারে দশে দশ!
    সরবে স্বাগতম আপু! :welcome:

  9. সামিরা বলেছেনঃ

    হা হা! অনেক জায়গাতেই মিলে গেছে।
    আমিও অদৃশ্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখাতাম কলেজের বায়োলজি ল্যাবে। 😛
    প্রিজমেরটাও মিলেছে। =))
    আর ভাইভা তো আজীবন ভয় পাই। এখনো!
    সরবে স্বাগতম! :welcome:

  10. সাদামাটা বলেছেনঃ

    মনে পড়ে গেলো, তেলাপোকা নিয়ে কী আতঙ্কেই না থাকতাম… ভাইবা সবসময় ভয় পাই, ভাইবাতে ভাইবা কিছু বলতে গেলে আমার মাথায় কি যেন হয় 😯

    সরবে স্বাগতম :welcome:

  11. অরণ্য নীলিন বলেছেনঃ

    সরবে স্বাগতম, আপু :welcome:

  12. ম্যাশ বলেছেনঃ

    আহা!! ক্যাডেট কলেজের সেই প্র্যাক্টিক্যালের মজাদার মুহূর্তগুলো মনে পড়ে গেল… ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি প্র্যাক্টিক্যালগুলো যে কিভাবে পার করলাম তা ভেবে এখনো অবাক লাগে….
    একবার প্রিটেস্ট পরীক্ষায় কুনব্যাঙের পরিপাকতন্ত্রের প্র্যাক্টিক্যালে যকৃত কেটে ফুলকা রেখে দিয়ে স্যারকে বুঝ দিয়েছিলাম যে এটাই কুনোব্যাঙের পরিপাকতন্ত্র!! 😀

    আর আপনার ভাইবার মজাদার অভিজ্ঞতার জন্য ধন্যবাদ… দেখি, কখনো কাজে লাগাতে পারি কিনা!!

    সুন্দর লেখা…সরবে স্বাগতম আপু!!

    :welcome:

  13. প্রজ্ঞা বলেছেনঃ

    দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায়- রইলো না, রইলো না। সেই যে আমার প্র্যাক্টিকালে ফাঁকি মারার দিনগুলি…।। 😛

    খুব মজা পেলাম আপু। 😀
    সরবে :welcome: ।

    এরপর শুধু পরীক্ষামূলক না, নিয়মিত সম্প্রচার(পোস্ট) চাই! 😛

  14. বাবুনি সুপ্তি বলেছেনঃ

    🙂 :welcome: আপু 🙂

  15. কখগঘঙ বলেছেনঃ

    ভাইভা কিন্তু আসলেই দারুন দারুন সব অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়। ম্যাথের ভাইভাতে এস্টারন্যাল স্যার আমার নাম জানতে চাইলেন। আমি নামটা বললাম। আর তিনি বলতে লাগলেন, ”বাহ! কী সুন্দর নাম! খুব সুন্দর নাম! আমার ওয়াইফের সাথে মিলে গেল!” :chup:
    আমি হাসব না কাঁদব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।

  16. পিঙ্ক ফ্যান্‌টাস্ট বলেছেনঃ

    দীর্ঘ শ্বাস!
    chemistry ভাইভাতে চরম ধরা খাওয়ার কথা মনে পরে গেলো।
    সেই স্যার এর কাছে কোচিং করি নাই তো। (শাক দিয়ে মাছ ঢাকি আর কি)
    সে যাই হোক, লেখাটা সুখপাঠ্য, আরো পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।

  17. নীল-দর্পণ বলেছেনঃ

    rreeeeeee kinu reeeeeeeee….eikhaneo 2re dekhe onneeek valo laglo 😀

  18. ইয়াদ বলেছেনঃ

    তেলাপোকা, কেঁচো, ব্যাঙ …. কত কিছু কাটাকাটি করলাম!
    ব্যাঙ সিদ্ধ করে হাড়-মাংস আলাদা করে বোতল বন্দী করে রেখেছি! 😐

    বাসায় কেমিস্ট্রর একটা ছোটখাটো ল্যাব ছিলো!
    ইন্টার এ পরীক্ষার সিট ছিলো ঢাকা কলেজে!
    টাকা দিলে লবণের নাম বলে দিতো! লবণের নাম শিউর হওয়ার পরেও টাকা দিয়েছিলাম কনফার্ম হওয়ার জন্য । 😛

    আমার ক্ষেত্রে খুব আজব একটা ব্যাপার হতো ভাইভার সময়!
    পড়ালেখার বিষয় ছাড়া অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতেন স্যাররা!
    স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি…… ৯০% সময় এই ব্যাপারটা হয়েছে!

    আমার অসহায় মুখ দেখে স্যাররা মনে হয় পড়ালেখা নিয়ে আরো কিছু প্রশ্ন করতেন না! :angel_not:

    • কিনাদি বলেছেনঃ

      আয়হায়! ব্যাঙ সিদ্ধ করেছিলেন কেন? :voypaisi:

      আমি বেছে বেছে রঙীন লবণ নিয়েছিলাম যেন সহজে সনাক্ত করতে পারি। :yahooo: :yahooo

      ভাইভার কথা আর বলবেন না। আমি ভয়ে… 🙁

  19. Em mohasin বলেছেনঃ

    😀 ভালো ভাইবা exam
    পইড়া মজা পাইলাম
    last a বুজলাম ….গপ্লের কাহিনি যাকে নিয়ে সে মেয়ে ছিল 😀

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।