মনোবিজ্ঞানীরা সব সময় একটা বিষয় বলেন। আবার গুরুজনেরাও বলেন সেটা হলো -তোমার নিজেকেই জিজ্ঞেস করো ব্যাপারটা কি ঠিক? মানে তুমি যা করতে চাচ্ছো তা কি ভালো না মন্দ। মানুষের স্বাভাবিকতা হচ্ছে সে অবচেতনভাবে ভালোটার দিকে ঝুঁকে যায়। আবার স্বাভাবিক নিয়ম হচ্ছে বিবেক যা সায় দেয় তার উল্টোটার দিকেও মানুষের ঝোঁক থাকে। তবে সেটা সাময়িক।আসল জায়গা কিন্তু ঐ বিবেক সম্পর্কিত। তাই আমাদের অবস্থান বিবেকের জয়গানের প্রতি।
-মানুষের ভালো মন্দ বোধ তার চারপাশের যা কিছু আছে তা নিয়ে গঠিত। চর্চার বিষয় সভ্যতার মানদন্ড কিন্তু লালনের বিষয় সংস্তৃতির প্রাচুর্য। আমাদের যা আছে সেতো সভ্যতা আর আমরা যা তাই সংস্কৃতির পরিচয়। এরকম দুটো মিল আর অন্ত:মিলের মধ্যেই আমাদের আনাগোনা। যা চর্চা করে আসছি কাল আর সময়ের পথরেখা বেয়ে তাই নিয়েই তিলতিল গড়ে উঠেছে প্রতিটি আমার আমি।আমার সম্ভাবনার মধ্যে একেবারে সোজা পথ আমি কতটা ভালো তার বিচার নয়। বরং আমি সভ্যতা ও সংস্কৃতির চর্চা ও লালনের জন্য আমি আমার কথায় কাজে কতটা উদারতার পরিচয় দিই সেখানে একটা আপাত সীমারেখা অনুভব করা যায়। পার্থক্যটা সোজা বোঝার জন্য হাসির রকমফেরের মাঝখানে একটা পর্দা টেনে দেয়া যাক। স্মীত হাসি, ঠোঁটের কোনায় বাঁকা হাসি আর ক্রুর হাসি। কোনটাতেই উচ্চবাচ্য বা শব্দের চেঁচামেচি নেই । কিন্তু সবাই এগুলোর মানেটা বোঝে।
– সোজা কথা আমরা একটা কথা বলার চেষ্টা করি। সেটা হলো পজিটিভজম। ফরাসি সমাজ বিজ্ঞানি অগাস্ট কোঁতের ভাষায় সেটা খানিকটা সাংখ্যিক বিচারের মতো। ধরা যাক একটা বিষয় ভালো না মন্দ তা বিচারের জন্য আমরা খেয়াল রাখি সেটা কতটা ভালো বা মন্দ। কতটা উপকারে লাগে বা কতটা ক্ষতি করে। এরকম বিচারে কোন একজন মানুষ সম্পর্কে যদি কোন উপসংহারে কেউ পৌঁছুতে চায় তা হলে বিচারের রীতিটা হবে তিনি কয়টা ভালো কাজ করেছেন আর কয়টা খারাপ কাজ করেছেন। কিন্তু একটা ভালো কাজের সাংখ্যিক বিচার না হয়ে এটাও একই সাথে আরেকটা ভাবনার কথা বলা হয় যে সেই ভালো কাজটার প্রভাব কতটা সুদুর প্রসারী।আবার উল্টো ক্ষেত্রে ‘না’ বোধক প্রভাব সৃষ্টিকারী কাজের দুরবর্তী ফলটাকেও একবার আমলে নেয়া প্রয়োজন।
মানুষ চারপাশে যা দেখে তার প্রভাব তার উপর সবচে বেশিই পড়ে। অনেক বেশি ‘না’ বোধক থেকে ‘হ্যঁ’ যাজকতার সৃষ্টি হয় সত্য কিন্তু প্রয়োজনের নিরিখটা এখানে একটু অন্যরকম। ভাবনাটার আরেকটা পিঠ বলা চলে তাকে। সেটা হলো চারপাশে ‘হ্যঁ’ বোধকের সৃষ্টি, নতুন সৃষ্টি বোধের সৃষ্টি করে । সংস্কৃতির প্রাচুর্যে যা ভাল বোধক বলে প্রতীয়মান তা সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে আরেকটি ভালো কাজ করতে। তাই যত বেশি আলোচনা ‘ভালো’ কে নিয়ে তত বেশি ‘ভালো’র সৃষ্টি হবে এমন সরল অংকে পৌঁছুবার ব্যবস্থা না থাকলেও এটা বাস্তব আলোচনার দৃষ্টিভংগী সৃষ্টি হবে। মানুষকে ধরাবাঁধা জগতে ভালো মন্দের্ এক ঘেরাটোপে আবদ্ধ করার অধিকার কারো নেই । কিন্তু সৃষ্টির আনন্দে আনন্দ মিছিলে যোগ দেবার সুযোগ রয়েছে। সেখানেই উৎসাহ আর আলোচনায় ও মতামতের জগতে শ্রদ্ধা পরম্পরা বজায় রাখার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাবোধ।
শেষ কথাটা বলি! একটা মোমবাতির আত্মকাহিনী। খুব ধীরে, খুব সন্তর্পণে নিজেকে নিঃশেষ করে দিয়ে জ্বালে আলো। কত নিরব! কত স্বপ্ন বুনে দেয় সে! তারপর এক চিলতে অনাবিল হাসি রেখে মিলিয়ে যায় মহাকালের গর্ভে! যেন কত আপনজন। যেন এখনও বাকি ছিল অনেক কথা বলার। অনেক স্বপন দেখার।
পজিটিভজমকে খুব সহজ ভাষায় প্রকাশ করলেন | ভালো লাগলো | মোমবাতির আত্ম্কাহিনীর লাইনগুলো অসাধারণ |
“খুব ধীরে, খুব সন্তর্পণে নিজেকে নিঃশেষ করে দিয়ে জ্বালে আলো। কত নিরব! কত স্বপ্ন বুনে দেয় সে! তারপর এক চিলতে অনাবিল হাসি রেখে মিলিয়ে যায় মহাকালের গর্ভে! যেন কত আপনজন। যেন এখনও বাকি ছিল অনেক কথা বলার। অনেক স্বপন দেখার।”
:clappinghands:
ভালো লাগলো। পজিটিভিজমকে বুঝলাম আরেকটু
পজিটিভিজম যদিও আপেক্ষিক* তবুও আমরা আমাদের প্রেক্ষাপটের কথা চিন্তা করে পজিটিভ দিকে এগিয়ে যেতে পারি। পজিটিভ বিষয়গুলো প্রোমোট করতে পারি।
ম্যালকম গ্ল্যাডওয়েল এর টিপিং পয়েন্ট এ এই রকম একটা ব্যাপার ছিলো, পত্রিকায় নেতিবাচক রিপোর্ট নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। [আত্মহত্যার রিপোর্ট আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ায়!]
সুস্থ আলোচনা সুস্থ আলোচনার পরিবেশ তৈরি করবে।
ভালো কথা, ভালো কথাকে ডেকে আনবে।
* এক দিক থেকে সবই তো আপেক্ষিক! নৈতিকতা, মুল্যবোধ ও! সংস্কৃতি/সভ্যতা ভেদে!
বন্ধুরা! আপনাদের মতামত গুলো আরও বেশি সুন্দর। আমি যা বলতে পারিনি, সহজ ভাষায় লিখতে গিয়ে আরও জটিল করেছি সে গুলো আপনারা বেশ সহজ করে বলে দিয়েছেন।
একটা জিনিস এতো সহজে বুঝে ফেলবো আমার নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না! (সারাজীবন নিজেকে মাথামোটাই ভাবতাম!) গুণটা মনে হয় বর্ণনাকারীর!!
ভালো লাগলো লিখাটা! :clappinghands:
ইতিবাচকতা সঙ্গী হোক জীবনের পথে। 🙂
প্রথমে ভেবেছিলাম কোন রোমান্টিক গল্প! পোস্টে এসে দেখি এ যে আরেক এলাহি কান্ড- ইতিবাচকতার সাহিত্যিকতা! বাহবা!
বাহ! দারুণ লিখেছেন……. 🙂