যখন ছাত্র ছিলাম, আমার ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্র আমাকে প্রশ্ন করেছিল স্যার বাংলাদেশে কোনো বিজ্ঞানী আছে?!
অবিশ্বাস্য?
মনে হয় না! অনেকেই এমনটা ভাবে!
আমাদের দেশে বিজ্ঞানচর্চার অবস্থা খুব খারাপ -এটা বলতে খুব বেশি পণ্ডিত হতে হয় না (এই কারণেই তো আমি বলতে পারছি!!)
বিজ্ঞান চর্চা খারাপ হবার অনেকগুলো কারণ আছে। বড় একটা কারণ? বই। বাংলা ভাষায় ভালো বিজ্ঞান বই। ভালো বিজ্ঞান বই এর অভাবে আগ্রহ জন্মায় না। এক বাক্যে সবাই স্বীকার করবেন ভালো বিজ্ঞান বই এর দারুণ অভাব। বিজ্ঞান বইগুলো এতটা বোরিং বাচ্চারা ভয় পায়, মুখস্ত করে।
আমি নিজেও মুখস্ত করেছিলাম আমাদের জীববিজ্ঞান বই! (আফসুস!) গণিত বেশ বুঝে বুঝে করতাম। রসায়নে সবচেয়ে মজা পেতাম! সে যাক গে। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার এক নতুন দিগন্ত চমক হাসান এর গল্পে জল্পে জেনেটিক্স বইটা।
জেনেটিক্স, জেনেটিক্স এর ইতিহাস, মলিকুলার বায়োলজি, বায়োটেকনোলজি, বায়োএথিক্স – এই সব বিষয় নিয়ে একটি কমিক বই! বইটা পড়ার সময় এসটেরিক্স আর টিনটিন এর কথা মনে পড়ছিল! কারণ রম্যের মান অনেক ভালো, স্বস্তা নয়। আবার বই এর বিজ্ঞানও ভুল নয় কিংবা বোরিংও নয়, এই কারণেই তো কমিক! বইটা পড়ার সময় মুখে একটা হাসি লেগেই থাকবে আপনার বাজি ধরে বলতে পারি! বিজ্ঞানের বই তো এমনই হওয়া উচিৎ তাই না?
কার্টুনস গাইড টু জেনেটিক্স বইটার রূপান্তর এই বই। মূল বই থেকে বাংলাভাষীদের জন্য অনেক পরিবর্তন করেছেন লেখক। বই এর কন্টেন্ট অবশ্য অন্তত নবম শ্রেণী হওয়া উচিৎ হবে। মূল টার্গেট সম্ভবত কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। (চমক হাসান নিজে যেহেতু প্রচুর কলেজের ছাত্র ছাত্রী পড়াতেন- সেটাই মাথায় রাখার/থাকার কথা)
এই বই পড়তে গিয়ে অনুভব করেছি, চমক হাসানকে শুধু অনুবাদ করার জন্য বিষয়গুলো নিয়ে আরও পড়তে হয়েছে। না হলে এত সাবলীল অনুবাদ সম্ভব না। নিজের অসাধারণ বোঝানোর ক্ষমতা আছে বলেই হয়তবা এত চমৎকার বোধগম্যতা আছে বইটার।
ইতিহাসের পথ ধরে যখন বিজ্ঞান জানা হয় সেই বিজ্ঞানটা মগজে থাকে বেশিদিন! আমার নিজের অভিজ্ঞতা তাই বলে, এই বই পড়তে গিয়েও দেখলাম। ক্রমোন্নতির ব্যাপারটা আসলেই দারুণ। এই বই এ একদম শুরু থেকে শুরু করা হয়েছে। ধর্মযাজক মেন্ডেল এর আবিষ্কারের কাহিনীটাও আছে- বেশ মজা করেই।
বইটার ফ্ল্যাপে লেখা
আমার খুব ইচ্ছা- আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ ভাষায় লেখা সবচেয়ে আনন্দময় পাঠ্যবই পড়বে। কঠিন মাস্টার মশায়ের কড়া ভাষায় গালি শুনে নয়। অরা বড় হবে বিজ্ঞানকে ভালবেসে। ওরা শুধু মুখস্ত করে পাশ করবে না- অনুভব করবে- কোথায়, কীভাবে, কেন কী হচ্ছে। গণিত অলিম্পিয়াদ শুরুর সাথে সাথে এই আন্দোলনটাও শুরু হয়ে গেছে। এটা চলবে। আমি সেই আন্দোলনের সামান্য একজন কর্মী হয়ে থাকতে চাই। আর এ জন্যই- লেখালেখিটা চালিয়ে যাব- ঠিক করেছি।
অনেক বড় স্বপ্ন বটে! এবং সেই স্বপ্নের জন্য তিনি কাজ করছেন নিরন্তর। ইউটিউবে নিজের চ্যানেলে এর মধ্যেই অনেকগুলো গণিত বিষয়ে ভিডিও চালু করেছেন। আমরা আশা করব তাঁর এই পথ চলা চলবে। এবং তাঁকে একা চলতে হবে না। এই আন্দোলনে আরও অনেকেই যোগ দেবেন।
সমস্যা: বানান একটা সমস্যা মনে হলো। বানানভুল বই এর ফ্ল্যাপ থেকে শুরু করে সর্বত্র চোখে পড়েছে। ( আমরা সরব এ বানান নিয়ে একটু বেশিই কড়াকড়ি!!)
আরও কিছু তথ্য যোগ করা যেত মনে হয়, হিউম্যান জিনোম প্রোজেক্ট ((http://en.wikipedia.org/wiki/Human_Genome_Project)) বিশেষ করে। বায়োএথিক্স এর জায়গাটায় এডিটিং এর দরকার আছে বলে মনে হয়েছিলো।
বাংলা বিজ্ঞান চর্চায় এক অসাধারণ সংযোজন এই বইটি। তরুণরা এখন আর জীববিজ্ঞান মুখস্ত করতে হবে না, বিরক্ত হতে হবে না। তারা গল্পের সাথে পড়বে। তারা আনন্দের সাথে পড়বে! মুখে শুধু এই করো সেই করো, এইভাবে পড়ো না বলে পড়ার জন্য উপকরণও জুটিয়ে দেয়ায়- চমক হাসানকে ধন্যবাদ!
অন্যরকম প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ২১২ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য ২৫০ টাকা। (এমন চমৎকার বই এর দাম আরও কম হওয়া উচিৎ!)
পড়বো দেখি।
বইটা এখন পাবো কই বলো তো দেখি?
বুয়েটের কাছে পিঠে হলে খুব ভালো হয়…
পড়বো দেখি।
বইটা কেন কিনলাম না তখন, এখন হাপিত্যেশ করছি! কোথায় পাবো এখন???
আমার কাছ থেকে!
আমিও পড়ি নাই, দিতে হবে । 🙁
আজকে রকমারি থেকে অর্ডার দিলাম! কালকে পেয়ে যাবো আশা করি! 😀
হু হা হা…বইটা এখন আমার কাছে :happy:
কার্টুনে কার্টুনে জেনেটিক্স 😀 বোঝাই যাচ্ছে বইটা দারুণ হবে 🙂
অনেক ধন্যবাদ, বোহেমিয়ান! এত সুন্দর করে লেখার জন্য।
বানানের বিষয়টা নিয়ে আমি নিজেও একটা সময় মানুষকে অনেক জ্বালিয়েছি। নিজের বইতে ভুলগুলো কষ্টদায়ক। আমি আন্তরিকভাবেই চেষ্টা করব- পরবর্তীতে প্রুফটা ঠিকভাবে দেখে বানানগুলো ঠিক করে দিতে।
আর বাংলাদেশে আমরা কয়েকজন মিলে বেশ ভাল্ভাবেই চেষ্টা করছি সারা দেশে একটা বিজ্ঞান আন্দোলন গড়ে তুলতে আর খুব অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমরা পূর্ণ উদ্যোমে কাজ শুরু করে দিতে পারব আশা করি। কাজটা একটু আলাদা স্টাইলে হবে। মনে করুন একটা গানের দল আছে। সারা সারা বছর ‘ট্যুর’ দিয়ে বেড়ায়। একই পারফর্মেন্স সব জায়গাতে করে। আমরা ঠিক এমন একটা বিজ্ঞানের দল বানাব, যারা দেশের সব জায়গায় যাবে- একটা মজার পারফর্মেন্স করবে। পারফর্মেন্স এর মধ্যে থাকবে- বিজ্ঞানের কিছু বিষয় মজা করে উপস্থাপন করা, প্রজেক্টরে বিজ্ঞানের বাংলা অ্যানিমেশন দেখানো, এমন কিছু এক্সপেরিমেন্ট করে দেখানো যেগুলো ওরা বাসায় গিয়ে নিজেরাই করতে পারবে, পুরোটাই হবে বিজ্ঞানের দল আর শিক্ষার্থীদের সহজ সাধারণ মিথষ্ক্রিয়ায়! – আর সুযোগ হলে রাতে টেলিস্কোপে তারা দেখানো হবে!! আমাদের একটা ওয়েবসাইটের কাজ চলছে। সেখানে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তো আলোচনা হবেই, সেইসঙ্গে কোথায় কোথায় ট্যুর হবে, সেটার তারিখ থাকবে, এবং একটা বড় অংশ থাকবে ফোরামের মতো ‘প্রশ্নোত্তর’ যার যা কিছু জানতে ইচ্ছে হবে, ওরা লিখবে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব উত্তর দিতে।
আমরা যদি এই প্রজন্মকে একটা বিজ্ঞানের হুজুগ তুলে দিতে পারি- ওদের থেকে দারুণ সব মানুষ বেরিয়ে আসবে!
চমৎকার কাজ হবে সেটা , চমক ভাইয়া। আপনাদের আরও কিছু “চমক” দেখার অপেক্ষায় :clappinghands:
চমক ভাই, আমরা আশায় রইলাম সেই বিজ্ঞানের আলো নিয়ে এগিয়ে যাওয়া যাত্রীদের অপেক্ষায়………
দারুণ প্ল্যান চমক ভাই 😀
সাদিক ভাই এর সাথে কাজটা তো?
আমাকেও উনি দলে ডাকছেন 😀
খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করতেছে!
রিভিউ ভালো লেগেছে। বইটা পড়ছি এখনো। তবে যতটুকু পড়েছি খুবই ভালো লেগেছে……
পড়তে হবে বইটা…………… 🙂
বিজ্ঞান আন্দোলনের সবার জন্য ভালোবাসা!! :love: