আগুনরাঙা শেষ বিকেলের আলো এসে পড়েছে বাড়িটার সামনের রাস্তায়। বিকেলের শেষভাগে খেলাধুলার পাট সেরে নিচ্ছে পাড়ার বাচ্চা ছেলেগুলো, রাস্তার মাঝখানে লাল ইটের স্ট্যাম্প বানিয়ে ক্রিকেট খেলছে ওরা। একটু পর অন্ধকার হয়ে যাবে চারদিক, আকাশের ঘন কালো অন্ধকার কেড়ে নেবে ওদের নির্বিবাদে খেলাধুলার বাঁধহীন স্বাধীনতা।
অনেকক্ষণ ধরে পড়ার চেষ্টা করছে মেয়েটা, হচ্ছেনা কিছুতেই। কী এক অশুভ কালো ছায়া ইশারায় ডাকছে ওকে বারবার… একটা অচেনা ভয়ের ঘুটঘুটে অন্ধকার ভর করেছে ওর মনের ভেতর। আজকে ওর প্রিয় চড়াই পাখির বাচ্চাটা মারা গেছে, হঠাৎ করেই। কেন যে বামচোখটা এত বেশি লাফাচ্ছে আজ…
হাত থেকে ফস্কে পড়ে গেলো চিনির বয়ামটা…চুরমার হয়ে যাওয়া কাচের টুকরোগুলো ছড়িয়ে আছে মেঝেতে, সর্বত্র…এখনো আসছে না কেন অফিস থেকে? দেশের অবস্থা ভাল নয়, কখন কী হয়ে যায়…বাবলুটা এখনো বাইরে কী করছে? আসুক আজ, পিটিয়ে ছাল তুলবো ওর…
রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্তিটা আরো বেশি গাঢ় হচ্ছিলো। বাসায় ঢুকেই কোনরকমে ইজি চেয়ারে ছড়িয়ে দেয়া অফিস ফেরত ক্লান্ত শরীরটাকে। ওভার টাইম করে ফিরতে ফিরতে রাত আটটা……ছেলেটা কাঁদছে কেন? মা’র বকুনি খেয়েছে নিশ্চয়ই। আজকেও সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরেছে মনে হয়। সময়টা ভালো যাচ্ছেনা এখন, হয়তো তাই বেশি বকাঝকা শুনতে হয়েছে…… “এদিকে আয়, মা বকেছে? কাঁদিস না, তোকে কাল নতুন ঘুড়ি কিনে দেব, কেমন?!”
বাইরে বিকট শব্দে গোলাগুলি, সাথে অসংখ্য মানুষের আর্ত চিৎকার। কি হলো? বুকটা হঠাৎ ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কেন??… হৃৎপিন্ডটা লাফাচ্ছে তিনগুণ বেগে…বাবলুটা কি ঘুমিয়ে পড়েছে? পাশের বাসার দরজায় বুটের লাথির শব্দ শোনা যায় যে…..?!!!….ওরা কারা?
“দরোয়াজা খোল, নেহি ত তোড় দুঙ্গা……হা হা হা…”…বিকট হাসির কুৎসিত আওয়াজে অসুস্থ হয়ে গেছে বাতাস…দুই তিনটা লাথিতেই খুলে গেল কাঠের দরজাটা…।
বাবলুটা ঘুমিয়ে পড়েছিল, হঠাৎ শব্দে ভয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেলো ওর……মায়ের খোঁজে সোজা চলে এলো সামনের ঘরটাতে……..কতগুলো খাদিকাপড় পড়া ভয়ঙ্কর চেহারার লোক বিচ্ছিরি ভাবে হাসছিল……ওরা বন্দুক দিয়ে গুলি করল ওর বাবাকে,তারপর মাকেও……ওরা বিকট শব্দে হাসছে…!!!
ওর বোনটা ততক্ষণে উঠে এসেছে সামনের ঘরটায়………লোকগুলো কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকাচ্ছে ওর বোনটার দিকে… “ লড়কি ত বহত খুবসুরত হায়………হা হা হা …” , ওদের চোখগুলো যেন ক্ষুধার্ত কুকুরের মত চকচক করছিল………
মেঝেটা অনেক লাল হয়ে আছে………অনেক রক্ত পানির মত গড়াগড়ি খাচ্ছে মেঝেতে…..ঘরের ভাঙ্গাচোরা জিনিসপত্রগুলো উল্টে পালটে পড়ে আছে………গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে আছে পুরনো দেয়ালগুলো….বাবলুটার নিথর দেহ পড়ে আছে রক্ত জমাট মেঝেতে, শেষ মূহুর্তে ওর ভাগ্যে জুটেছিল পশুগুলোর পাশবিক নির্যাতনের দৃশ্য দেখা……বেয়নেটের আঘাতে বীভৎস উলঙ্গ মেয়েটার মৃতদেহ পড়ে আছে একটু দূরেই……বাচ্চাটা কিচ্ছু বোঝেনি, শুধু বলেছিল, “বুবুকে ছেড়ে দাও বলছি…!!”
আজ ২৫ মার্চ,২০১২। ৪১ বছর আগে এমনই এক ২৫ মার্চের রাতে এদেশের অসহায় নিরস্ত্র মানুষের ওপর পাকিস্তানি মিলিটারি ঝাঁপিয়ে পড়ে অতর্কিতে……ভয়ঙ্কর ভাবে নৃশংস মৃত্যু হয় অসংখ্য নিরীহ মানুষের ……তারপর ২৬ মার্চ ঘোষিত হয় স্বাধীনতা, নয়মাস যুদ্ধ করে আরো অনেকগুলো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় সেই স্বাধীনতা…… আজকে আমরা একটি স্বাধীন দেশের বুকে নিঃশ্বাস নেই……ভোরের সূর্যোদয় দেখি……রাতভোর হলে একটা চড়াই পাখি বিস্তীর্ণ নীলিমার বুকে পাখা মেলে………..অবাধ স্বাধীনতায়……
🙁
অনেক ভাল লিখেছিস দোস্ত।
🙁
ধন্যবাদ।
চমৎকার লেখনী……
কিন্তু এই লিখাগুলো পড়ে শুধু মনটাই খারাপ হয়ে যায়……
২৫ মার্চের ভয়াল রাতের কথা আমি হয়তো কল্পনাতেও মনে করতে পারিনা………সেই বিভিষীকা আমাদের ওপর দিয়ে যায় নি……কিন্তু যতবার মনে করতে চেষ্টা করি, চোখে জল এসে যায় 🙁
চমৎকার লেখা। তোমার টার্গেট গ্রুপ মনে হয় স্কুলের বাচ্চারা ছিলো?
আসলে কোন টার্গেট গ্রুপ ছিল না…………তবে মনে হয় স্কুলের বাচ্চাদের জন্য এটা উপযোগী, ধন্যবাদ ।
বীভৎস
🙁
লেখা অনেক ভাল হইসে ।
ধন্যবাদ।
🙁
চমৎকার লেখা।
ধন্যবাদ
ভালো লেগেছে 🙂