একটা ঘটনা বলি।
সন্ধ্যার পর। রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছি ভূতের গলি মসজিদের সামনে। অনেকক্ষণ পর একটা রিক্সা পেলাম। কিন্তু সে পলাশী চিনে না, চিনিয়ে নিয়ে যেতে হবে আর ভাড়া যা তা দিলেই হবে। অগত্যা উঠলাম। কিছুক্ষণ পর কথা প্রসঙ্গে জানলাম,তার বাড়ি নাটোর, কিছুদিন হলো ঢাকায় এসেছে,আগে নাটোরে ভ্যান চালাতো। এখনও ঢাকার তেমন কিছুই চেনে না, তাই ভাড়াও জানে না। যে যা ভাড়া দেয়, তাই ই নেয়!! পলাশী নেমে চিন্তা করলাম কত দিবো। কারণ ভূতের গলি থেকে পলাশী আমি ৩০ টাকা দিয়েও আসি আবার ২৫ টাকা দিয়েও আসি। নতুন লোকটাকে আমার ২৫ টাকা দিতে ইচ্ছা করলো না, ৩০ টাকাই দিলাম।
এই ঘটনার মত ঘটনা অহরহই ঘটে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা তাদেরকে কম পরিমাণটা দেই। আর এটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে!!!
কয়েকদিন পরপর বড়ো রেস্তোরায় খেতে গিয়ে ওয়েটারকে মোটা অংকের বকশিস দিতে আমাদের খারাপ লাগে না। অপ্রয়োজনে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করতে আমাদের বাঁধে না কিন্তু এই ‘ছোটলোক’ গুলোর সাথে ছোটলোকগিরি না করলে যেন আমাদের পকেট ফাঁকা হয়ে যায়। ওই পাঁচ টাকা বেশি দিলে, আমাদেরও যেন রিক্সা চালানো কিংবা পথে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে নামার উপক্রম হয়!!
আরেকটা ঘটনা বলি।
আমার এইচ.এস.সি. পরীক্ষা চলছে। সিট পড়েছে তেজগাও কলেজে। থাকি আরামবাগ। পরীক্ষা শেষে বাসই ভরসা। ছাত্র ভাড়া দিয়ে টিকেট কাটতে গেলে কাউন্টার থেকে জানানো হলো,ছাত্র ভাড়া দিয়ে নাকি ওই বাসে যাওয়া যায় না। অর্ধেক ভাড়া দিতে হলে অন্য বাসে যেতে হবে!!! খাইলাম টাসকি!! কি আর করা!! দল ধরে অন্য বাসেই গেলাম।
এর উল্টা চিত্রও দেখেছি।
বাসে যাচ্ছি একদিন। হঠাৎ সায়েন্সল্যাবের ওইখানে একদল স্কুল/কলেজ পড়ুয়া ছাত্র(!) উঠল। একদল মানে ৭-৮ জনের মত। যাবে মতিঝিল। ভাড়া দেওয়ার সময় খেয়াল করলাম ওই ৭-৮ জন মিলে হেল্পারের হাতে ১০টাকা ধরায়ে দিলো!!আমি তো ভাবলাম, শায়েস্তাখান আবার বেঁচে উঠলো কিনা!! কন্ট্রাক্টর অনেক কাকুতিমিনতির পর আর ৫ টাকা ধরাইয়া দিলো।
এই ঘটনাগুলো আমাদের চারপাশের নিত্য ঘটনা। কেন এই অবস্থা?? আমাদের দেশে পরিবহণ সেক্টরে কোন ফিক্সড ভাড়া আছে বলে মনে হয় না। তাই সবাই চায় অন্যকে ধোঁকা দিতে। অনেক দেশেই ছাত্রদের জন্য ‘ছাত্র টিকিট’ থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে তা নেই। বরং অনেক ক্ষেত্রেই “বলশালী” ছাত্র না হলে বাসের কন্ট্রাকটর/হেল্পারের দুর্ব্যবহারের স্বীকার হতে হবে আপনাকে। আজকাল বলশালী ছাত্ররা বিনা ভাড়াই যেতে পারে,আর আপনি যদি সাধারণ ছাত্র হন, তাহলে আপনাকে যেতে হবে পুরো ভাড়া দিয়ে। আমি আমার এমন কয়েকজন বন্ধুকেও দেখেছি,যারা বাসে ভাড়া না দিয়ে গর্ব করে বলে। চারিদিকেই একটা ফাকি দেওয়ার প্রবণতা!!
কি লাভ বাসওয়ালাকে ১/২ টাকা কম দিয়ে??? কি লাভ নতুন একটা রিক্সাচালককে ঠকিয়ে?? আপনি তার বাহনে চড়ে যাচ্ছেন, ভাড়া তো দিতেই হবে। নিদেনপক্ষে ছাত্র ভাড়াটা তো দেন। সেখানেও কেন ফাঁকি দিতে চান?? আপনার এই প্রবণতা আজকে ছাত্র পরিচয়টাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
– সাবরির অনিক
অনেক ভাল লেগেছে লেখার বিষয়টা।
কথা সেটাই, রেস্টুরেন্টে বখশিস দিতে গেলে আমাদের টাকার মায়া থাকে না, কিন্তু গরীব মানুষকে ৫ টাকা বেশি রিক্সাভাড়া দিতে গেলে, অভাবী ফেরিওয়ালাকে ২ টাকা বেশি দিতে গেলে আমাদের ‘নীতিবোধ’ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তখন মনে হয়, ‘অন্যায্য’ টাকা নেবে কেন সে আমার কাছে থেকে?
:welcome:
নিয়মিত হবেন আশা করছি!
আর বানান নিয়ে আরেকটু সতর্ক হওয়ার জন্য বামদিকের ‘বানান বিভ্রাট’ সিরিজটায় চোখ বোলাতে পারেন। 😀
ধন্যবাদ।
আগামীতে বানানে সতর্ক থাকবো 🙂
:dhisya:
:welcome:
আসলে এ ব্যাপারে আমার একটু কথা আছে, ভাড়া বেশী দেয়ার ব্যাপারে, আমারা তাদের ৫ টাকা ১০ টাকা বেশী দিয়ে যে জিনিসটা করছি তা হল প্রশ্রয়, এর পর এমন চলতে থাকলে দেখা যাবে যে সে ২৫ টাকার ভাড়া চাচ্ছে ৩৫ টাকা, যেমন আমার ব্যাপার ই বলি,
টি এস সি থেকে খিলগাঁও আমি ৪০ টাকা দিয়েও আসি, আবার, আমার ই বন্ধু, রাজার বাগ থেকে যায় ৬০ বা ৫০ টাকা দিয়ে, এজন্য যেটা ন্যায্য সেটাই দেয়া উচিত,
আর বাস ভাড়ার ক্ষেত্রে বলবো যে, হ্যাঁ, ওভাবে করাটা আসলেও উচিত না, কিন্তু তাদের ও তো উচিত স্টুডেন্ট টিকেট রাখা, টিকেট সিস্টেম বাসে হেল্পার রাস্তার মাঝে থেকে লোক উঠিয়ে যে টাকা টা নেয় তা কিন্তু সে মালিক কে দেয় না, এটা তার দুর্নীতি, আর লোকাল বাসের ভাড়ায় এ ব্যাপারটি আছে, সে ক্ষেত্রে ছাত্রদের উচিত যথযথ ভাড়া দেয়া,
শপিং-এর সময় নামকরা দোকান থেকে ‘অন্যায্য’ দামে কাপড় কেনার সময়, দামি রেস্টুরেন্ট থেকে দ্বিগুণ তিনগুণ দামে খাবার কেনার সময় কিন্তু এই প্রশ্রয়ের ব্যাপারটা আমাদের মাথায় থাকে না নিবিড়! পোস্টে এই কথাটাই বলা হয়েছে আমার মনে হয়।
রিক্সাওয়ালারে যে মাঝে মাঝে মাত্রাতিরিক্ত করে না তা না, তবে এক হিসেবে এটা ওদের জন্য হয়ত বিশাল পাওনা যা আমাদের জন্য সামান্যই। সেই হিসেবে বলব যদি আমাদের এতটুকু বিসর্জন তাদের জন্য ভালো হয় তা করতে দোষ কি ?
একমত।
আসলে ব্যাপারটা এমন হয়ে দাড়িয়েছে যে সবাই ই ফাঁকি দেওয়ার সুযোগে থাকে।
বাসে,বিশেষ করে সিটিং সার্ভিসগুলোতে তো অহরহ এমন অবস্থা।
এই প্রবণতাগুলো আমাদের মাঝে থেকেই গড়ে উঠেছে এবং উঠছে।
ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂
আমিও সেটাই বলছি আপু, আমরা যদি একটু ন্যায্য ব্যাপার গুলাতে মনোযোগ দেই, সমস্যা গুলা থাকেনা, আমরা হরতাল করি রাজনীতি নিয়ে কিন্তু আমাদের ন্যায্য ইস্যু গুলা কেও না দিলেও আমরা টু শব্দ করিনা
” বাসে যাচ্ছি একদিন। হঠাৎ সায়েন্সল্যাবের ওইখানে একদল স্কুল/কলেজ পড়ুয়া ছাত্র(!) উঠল। একদল মানে ৭-৮ জনের মত। যাবে মতিঝিল। ভাড়া দেওয়ার সময় খেয়াল করলাম ওই ৭-৮ জন মিলে হেল্পারের হাতে ১০টাকা ধরায়ে দিলো!!আমি তো ভাবলাম, শায়েস্তাখান আবার বেঁচে উঠলো কিনা!! কন্ট্রাক্টর অনেক কাকুতিমিনতির পর আর ৫ টাকা ধরাইয়া দিলো ”
এই ব্যাপারটা আমার কাছেও খুব দৃষ্টিকটু লাগে, আর স্টুডেন্ট ভাড়া জিনিসটা আসলে ঠিক কি আমি পুরোপুরি বুঝি না, স্টুডেন্ট বলে কি ১০ টাকা ভাড়া দিতে পারবে না নাকি অন্য কিছু ? তবে যেহেতু অনেকেরই এই ব্যাপারটায় একটু এলারজি আছে তাই স্টুডেন্টদের জন্য কিছু কম ( যেমন ধরেন ১০ টাকার ভাড়া ৫-৬ টাকা ) করা যেতে পারে তবে সেইটার মাত্রা একদমই কম হওয়া উচিৎ না। তবে এই কাজটা করার জন্যও উচিৎ স্টুডেন্টদের গিয়ে বাস মালিকদের সাথে কথা বলা , রাস্তায় বাস ভাংচুর করা না , অনেক সময় এই ভাংচুর ও দেখা যায় ।
যাই হোক লেখককে ধন্যবাদ এমন একটা বাস্তবতা তুলে ধরার জন্য, আমার মাথায়ও এই ব্যাপারটা ছিল কিন্তু কখনও লেখা হয়ে উঠে নি ।
:welcome:
স্টুডেন্ট ভাড়ার ব্যাপারটা প্রায় সব বাসেই দেওয়া হয়।কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু হেল্পার/টিকেট বিক্রেতা বিটলামি করে।
আগে নিসর্গ পরিবহনের বাসটা মিরপুর থেকে আজিমপুর আসতো।সেই বাসটা গতবছর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।ছাত্ররা এই রুটে প্রচুর পরিমানে বনা ভাড়ায় চড়তো।যার ফলে বাসটা এখন মতিঝিলের দিকে যায়।
এই প্রবণতাগুলো কি আমাদের সমাজেরই অবক্ষয়ের চিত্র না??? 🙁
” অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা তাদেরকে কম পরিমাণটা দেই। আর এটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে!!! ”
এই ব্যাপারটার সাথে সহমত পোষণ করলাম না, আমি সাধারণত বেশি অঙ্কটাই দেই এবং বলে দেই যে এখান থেকে ভাড়া ৩০ না ২৫ ও আসে। অন্যদের ও তো এমনই করার কথা , কম দিবে কেন ? আমরা কি এতই প্রতারক যে এই গরিব মানুষটার সাথেও প্রতারণা করব ?? 🙁
আপনি হয়তো বেশিটা দিতেন,তবে কয়জন মানুষ আছে বেশিটা দিত???খারাপ শুনালেও এটাই সত্য যে,তাদের সংখ্যা কম 🙁
খেয়াল করা উচিত এমন কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন……… আসলে আমাদের সবার সব ক্ষেত্রে সচেতনতা এবং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি-ই সুন্দর করতে পারে সবকিছুকে…………
সরবে স্বাগতম!
নিয়মিত সরব থাকুন!
শুভকামনা……… 🙂
ধন্যবাদ আপনাকে 🙂
:welcome:
খুবই সত্যি কথা। ৩-৪ জন ছাত্র বাসে উঠে ২০-২৫ টাকার বদলে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে নেমে গেছে, এরকম আমিও দেখেছি। পরে কন্ট্রাক্টর আক্ষেপ করে বলছে, এরাই আবার ছাত্র! পকেট থেকে ২-১ টাকা বেশি গেলে আমাদের কিছুই হয়না, কিন্তু তাঁদের জন্য তো এটা অনেক বড় ব্যাপার।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য অধিকাংশ রিকশাওয়ালা বা কন্ট্রাক্টরের চেষ্টা থাকে যেভাবেই হোক ভাড়া একটু বেশি আদায় করতে, তাই চাইলেও সবার সাথে সবসময় ভালো ব্যবহার করা সম্ভব হয়না। 🙁
সত্য!!
ছাত্র হিসাবে যে সম্মানটা আমরা আগে পেতাম তা দিনদিন কমে যাচ্ছে এবং তা গুটিকয়েক মানুষের জন্য।আর পরিতাপের ব্যাপার হলো,এই গুটিকয়েক মানুষের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে।
আর এটা সত্য যে,ঠকানোর প্রবণতাটা সবার মধ্যেই প্রকট!! 🙁
হুম ঘটনাটা খুব কমন হয়ে যাচ্ছে ইদানীং। অনেকেই ১-২ টাকার জন্য কন্ডাক্টরের এর সাথে মারামারি পর্যন্ত করে। হেল্পার কিংবা কন্ডাকটরের কাছে ১-২ টাকার মূল্য অনেক। সমাজে বিবেকবান মানুষের সংখ্যা যেনো কমেই যাচ্ছে 🙁
ভাই আমরা খুবই দরিদ্র জাতি। আমাদের দারিদ্র প্রকাশ পায় রিকশা ঠিক করতে গেলে, বইমেলায় বই এর দাম দেখলে, বাসে ভাড়া দিতে গেলে, লেবারের পাওনা বুঝাতে গেলে। রেস্টুরেন্টের ব্যবসা কমে না, বিয়ের শাড়ির বাজারেও ঠাঁট বজায় থাকে, ঈদের সময় দুই তিন গুন দামের জিনিসও দোকানে পড়ে থাকে না।
🙁
লেখার বিষয়টা খুবই ভালো। কিন্তু, ব্যপারটা হলো, রিকশা ভাড়া কোনটা ঠিক এটা কীভাবে নির্ধারণ করবো? দু’দিন পর পর রিকশা ভাড়া পাল্টাচ্ছে!
আর, বাসে ভাড়া নিয়ে কিছু বলার নাই। জোর যার, মুল্লুক তার-হয়ে গেছে। বাস মালিক নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নেবে আবার অনেক ছাত্রও কম ভাড়া দেবে। কবে যে এসব সমস্যার সমাধান হবে……
:welcome:
একমত!!
রিক্সা ভাড়া গত কয়েকমাসের মধ্যে ব্যাপকহারে বাড়ছে।এবং এটা অনেকটাই রিক্সাওয়ালাদের মর্জির উপর।তারা প্রথমে আস্তে আস্তে ৫টাকা বেশি চাওয়া শুরু করে।তারপর ওইটাই প্রতিদিন চাইতে থাকে।এভাবে এটাই ভাড়া হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশন থেকে নির্দিষ্ট ভাড়া নির্ধারণ করে দিতে পারে।
আর স্টুডেন্ট ভাড়ার ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলা খুবই সোজা।শুধু দরকার যথাযথ ব্যবস্থা,যেটারই অভাব!!! 🙁