নটরডেম কলেজের আনুষ্ঠানিকতার শেষদিন। জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা। একে একে ফাদারদের অনেকেই বক্তৃতা দিলেন। রীতিমত হাঁপিয়ে উঠেছি এইসব গুরুগম্ভীর জ্ঞানালোচনা শুনতে শুনতে। :haturi: :wallbash:
এইবার প্রধান অতিথির পালা।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ স্যার। এসেই কোনরকম ভণিতা ছাড়ায় শুধু সবাইকে শুভেচ্ছা দিয়েই শুরু করলেন ‘জ্ঞান বিতরন’ :thinking: । আধাঘন্টার মত জ্ঞান দিলেন,কোন ভণিতা ছাড়া। কিন্তু এতোক্ষণেও আমার ধৈর্য একটুও নষ্ট হলো না। মনে হচ্ছিল যেন তার কথাগুলো গিলছি। কি ছিল তার কথায়??? আদৌ কি কিছু ছিল???
আমার স্কুলে এক স্যার ছিলেন। মুখতার হোসেন (মুখতার আহমেদ নন :P)। তিনি কেমন বক্তা ছিলেন জানি না। তবে তার কথা, শুধু আমি একা নই, সবাই ই হা করে শুনত। অন্য সবার মত সাধারণভাবেই তিনি সব কথা বলতেন। তবু ভালো লাগতো। অনেক অনুষ্ঠানে অনেক মান্যগণ্য ব্যক্তির কথা শুনতে শুনতে আমরা বিরক্ত হয়ে গেলেও, তার কথা শুনতে কখনই বিরক্ত হইনি। তার কথা, তার কন্ঠের মধ্যেও কি তবে কিছু ছিল??? নাকি তার ব্যক্তিত্ব??? নাকি তার কথা বলার ভঙ্গি??? নাকি কিছুই না, শুধুই শুনে যাওয়া????
গণিত উৎসব গুলোতে ‘দুই মিনিট পর্ব’ নামক অনানুষ্ঠানিকতার কথা সবার জানা। পর্বের নাম দুই মিনিট হলেও, খুব কম অতিথিই থাকেন যারা দুই মিনিট কথা বলেন, প্রায় সবাই ই মিনিট খানেকের মধ্যেই কথা শেষ করে দেন। কিন্তু তাদের কথা শোনার একটা অতৃপ্তি আমার সবসময়ই থেকে যায়। আরো শুনতে ইচ্ছা করে, কিন্তু… 🙁
এর ব্যাখ্যা কি হতে পারে??? মানুষগুলোর মধ্যে কি কিছু আছে, নাকি তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ কিংবা তাদের কাছ থেকে নতুন নতুন কিছু শুনতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষাই এর কারণ??? আমার মনে হয়েছে, এই যে ‘নতুন কিছু’ মানে এক্কেবারে নতুন কিছু কিংবা নতুনভাবে, নতুন ভঙ্গিতে পুরাতন কিংবা নতুন কিছু শুনতে চাওয়ার আগ্রহই তাদের কাছে আমাকে টেনে নিয়ে যায়, তাদের কথাগুলোকে আমার ভালো লাগায়।
মাঝে মাঝে নানা অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতারা আসেন, তারা অনেকক্ষণ ধরে বকর-বকর, কেচর-মেচর করেন। কেউ শোনে কিনা কে জানে!! কেন কেউ শোনে না?? আমার কাছে মনে হয়েছে, তাদের একঘেয়েমি প্যাঁচাল, আর নতুনত্বের অভাবই তাদের বক্তৃতার প্রতি কোন আকর্ষণ তৈরি করতে পারে না।
ব্যতিক্রমও আছেন। এক বিজ্ঞান উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এক মন্ত্রী এসেছিলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী সম্ভবত। তার কথা আমার ভালো লেগেছিল। সম্ভবত তার কথার মাঝে নতুন কিছু ছিল। সে মুখে মুখে ছড়া বানাতে জানতো। মজা পাচ্ছিলাম, তাই বিরক্ত হইনি।
আমার কাছে মনে হয় আমরা বক্তৃতার মাঝে নতুন কিছু শুনতে চাই। এক্কেবারে টাটকা আর ঝকঝকে নতুন কিছু না হলেও অন্তত নতুন বলার ভঙ্গি, কিংবা বলার মাঝে নতুনত্ব, কিংবা নতুন আঙ্গিক…এইতো!! তবুও একজিনিস ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বারবার বললে সেটাও কি আর আকর্ষণ রাখতে পারবে??? মনে হয় না। তাইতো আমরা প্রায়ই ওইসব মানুষগুলোর কথা শুনতে শুনতে বিরক্ত হই, কিন্তু অসাধারণ এই সাধারণ মানুষগুলোর কথা শুনতে আমাদের ভালো লাগে, বিরক্তি আসে না।
[পুনশ্চঃ মুখতার স্যার(আবারও বলছি-ইনি সেইজন নন) অসুস্থ। ক্যান্সার হইছে। কেমো দেওয়া হচ্ছে। উনার জন্যে সকলের কাছে দোয়া চাচ্ছি। উনি যেন সুস্থ হয়ে উঠেন।]
এটা একটা ঠিক কথা। এত গম্ভীর সব কথা বার্তা আমাদের মত বাচ্চাদের কখনই ভাল লাগে না। তবে কিছু কিছু মানুষ একদম আলাদা যাদের কথা মন দিয়ে শোনা যায়। সময় কিভাবে চলে যায় বুঝাই যায় না। 🙂
ভাল লেগেছে। কথা বলে এভাবে সবার মনোযোগ ধরে রাখাটা আসলেই দারুণ একটা গুণ!
:welcome:
ধন্যবাদ। 🙂
“অন্তত নতুন বলার ভঙ্গি, কিংবা বলার মাঝে নতুনত্ব, কিংবা নতুন আঙ্গিক…এইতো!! ”
ঠিক বলেছেন!
🙂
ইইইইইইইইইইইইইইইইইই আমার ল্যাব পার্টনার ইজ নাউ অন সরব!! :love: :love: :love:
কেন যেন আমাদের টেস্টের রেজাল্টের সময় তাশরিফ ভাইয়ের স্পিচটা মনে পড়ে গেল 😛
সরব পরিবারে স্বাগতম!!
:welcome:
শূণ্য মানে কোন অনুপস্থিতি নয়,শূণ্য মানে বিপরীত ধর্মের একই পরিমাণ জিনিসের উপস্থিতি,দুটি বিপরীত সমানের অস্তিত্ব। কিংবা অনেকগুলো সমানের বিপরীত প্রভাবের প্রকাশ। তাই শূণ্যের মাঝেই খুঁজে পাই অসীমতার আরেক রূপ…
তোর বায়ো পইড়া ডড়াইছি 😛 হাহাহা 😀 নাহ ভালো হইছে, একটা ভাব আছে 😀
তাশরিফ ভাইয়ের ওই কথাগুলা আমি ভুলবো না ।অনেক শিক্ষণীয় ছিল। 😛
একমাত্র জাফর ইকবাল স্যার ছাড়া আর অন্য কারো বক্তৃতা শুনলে আমার কেন জানি ঘুম আসে 🙁
:welcome:
ভালো লাগল। আর আমার কলেজের কথা মনে পইড়া গেল … :beerdrink:
যাই হোক !!
সরবে স্বাগতম … !!
[বানানের প্রতি মনোযোগী হলে ভালো হয়]
তোর লেখায় ‘নতুন কিছু’ দেখিতেছি ……
সরব পরিবারে স্বাগতম
চমৎকার পর্যবেক্ষণ
আমার একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি, জাপানিজ একটা প্রতিষ্ঠান একটা প্রতিযোগ এর আয়োজন করল, সেখানে আমরা গেলাম। পরীক্ষা দিলাম তারপর পুরষ্কার বিতরণী পর্ব। তো সব কিছুই মোটামুটি টাইম মতো হচ্ছিল এর মধ্যে এক মন্ত্রী এসে বক্তৃতা দেয়া শুরু করলেন। সেটা সব রেকর্ড ভেঙে চলতেই লাগল।
প্রতিযোগটা ছিল আইটি নিয়ে।
সেই আইটিতে তার সরকারের অসামান্য অবদান ব্লা ব্লা ব্লা…
আসলটা বলার আগেই প্রকাশে চাপ দিছি!
কাহিনী যেটা সেটা হচ্ছে পুরো অনুষ্ঠান এর পরের সব কিছু আবার রিশিডিউল করতে হইছিলো। আমরা বললাম জাপানিজ তো! আমাদের নেতাদের চেনে নাই!
দোয়া করি মুখতার স্যারের জন্য। ভালো হয়ে উঠুন উনি।
আসলেই বক্তৃতা দেয়াটা একটা শিল্প। এবং, দুঃখের বিষয় যারা বেশি বক্তৃতা দেন, তাদের অনেকেই এই শিল্পের সাথে অচেনা………
শুভ হোক সরবের সাথে পথচলা :welcome:
ধন্যবাদ আপনাকে 🙂
:welcome: