এই বসন্তে…

বসন্ত সত্যিই চলে এসেছে। শুধুমাত্র দিনপঞ্জির পাতায় তার আগমন নয়, প্রকৃতি ও জানান দিচ্ছে এই কথা। পাতা ঝরা শেষে নতুন কচি সবুজ পাতা গজাতে শুরু করেছে গাছগুলোতে, চারিদিকে বেশ রঙ্গিন একটা ভাব।

ক্লাসরুমটা মাটির কাছাকাছি। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর। আর তারপরই শুরু পাহাড়। ইউক্যালিপটাস আর একাইশিয়ায় ভর্তি বনানী; বসন্তের সাথে সাথে কারো চোখে একাইশিয়ার হলুদ পুষ্পরেণুর ভয়। আমি দিব্যি আছি, বরঞ্চ হলুদের গালিচায় পা ডুবিয়ে হাঁটতে বেশ। আর পায়ের নিচে যখন বীজগুলো মুড়মুড় করে ভাঙ্গে, অন্যরকম একটা অনুভূতি জাগে মনে। পাহাড়ে আরও আছে কাশের ঝোপ, ফুলগুলো ফুটছে বেশ ভালোই। হালকা বাতাসেই তারা ছন্দে ছন্দে দোলে। আর বসন্ত বাতাস তাদের নাড়িয়ে দিয়ে যায় ভালভাবেই। ক্লাসের মাঝে হঠাৎ-ই চোখ চলে যায় জানালা পার হয়ে সেদিকে, আর মন যে কোথায় যায় জানি না তা।

সারাটা দিন ব্যস্ততায় কাটে, অনেক আনন্দ ও হয়। আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ। দুটো ক্লাসের পর এক কাপ লেবু চা, আর চায়ের টেবিলে যতসব খুনসুটি…… মন্দ না। তারপর ও এই সেই সেমিনার, এক্সিবিশন, ক্লাইমেট সেলের আলোচনা, কত্তোকিছু যে মিস হয়ে যায়। নিপ্পন একাডেমী সারাদেশে জাপানী ভাষা শেখাচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল এক্সচেইঞ্জ স্টুডেন্ট ওযাওয়া সপ্তাহ জুড়ে ভাষা শেখাচ্ছে ইউনির ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাবে। অনেক মজা হচ্ছে প্রতিদিন খবর পাই, কিন্তু সময়ই পাই না যাবার। শেষদিন স্যারের বকা খেয়ে যেতেই হলো। দুপুরে লাঞ্চ সেরে দৌড়ে ল্যাবে ঢুকেছি, একটু ফাঁক দিয়ে রোদ মাথায় নিয়ে ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাবে গেলাম। কষ্টটা বৃথা গেল না। পরিচয় পর্ব সেরে বসেছি, ওযাওয়া লম্বা চুলগুলো চোখ থেকে সরিয়ে শিশুর হাসিতে মুখা ভরিয়ে বলল পরিষ্কার বাংলায়—তোহ, কি শিখাতে পারি?

হেসে ফেললাম আমরা সবাই, ওর বলার ভঙ্গি দেখে। বললাম—শুনেছি গতকাল চমৎকার দুটো কবিতা শুনিয়েছো তুমি… আর হাইকু আমার অনেক পছন্দ……

পাশ থেকে গিটারটা টেনে নিলো ওযাওয়া, সুর এতো সুন্দর করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে চারিদিকে, আমার দেখা হয়নি আগে।
চারিদিকে আগুন রোদ, পাখিগুলো কোথায় যে হারিয়েছে, স্তব্ধ হয়ে আছে চারিদিক, পুরো ইউনির সবাই যেন হঠাৎ চুপ করে থমকে গেছে, এরই মাঝে ওযাওয়া গাইছে……

হারুগাকিতা, হারুগাকিতা……হারুগাকিতা…
(বসন্ত এসেছে, বসন্ত এসেছে…… বসন্ত এসেছে…)

নিস্তব্ধতার মাঝ দিয়ে আমি যখন হেঁটে ফিরছি রৌদ্র পেরিয়ে, আমার কানে তখনো, এমনকি এখনো বাজছে…… হারুগাকিতা…..হারুগাকিতা……

অনাবিল সম্পর্কে

পুরাণকাব্য আর ইচ্ছে খাতা। স্বপ্ন দেখা আর স্বপ্নে বাঁচা। স্বপ্নগুলোকে গুটিগুটি করে আঁকা। একদিন দোয়েল পাখি...............
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

17 Responses to এই বসন্তে…

  1. অদ্ভুত ছেলে বলেছেনঃ

    শুধু বসন্ত এর জাপানী কী? ‘হারুগা?’

    • অনাবিল বলেছেনঃ

      আমি জানি না! জেনে জানাবো আপনাকে…… 🙂

      আমি অল্প কিছু জাপানী শব্দ জানি শুধু…………

      • অনাবিল বলেছেনঃ

        ‘হারু’ মানে বসন্ত। ‘কিতা’ হলো অতীতকাল, মূল ক্রিয়াপদ হচ্ছে ‘কাইমাস’। অতীতকালে কাইমাশতা, সংক্ষেপে ‘কিতা’ ও বলা হয়…

        ‘গা’ ‘এর’ জাতীয় অর্থ নির্দেশ করে……

        🙂

  2. সামিরা বলেছেনঃ

    বিজয়ী বসন্ত! 🙂

  3. ইঁদুর বলেছেনঃ

    লেখাটা ভালো কিন্তু কেন ভালো তা বুঝতে পারতেছি না!=)-দারুন!

  4. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    হাইকু নিয়ে সরব এর পাঠকদের জন্য কিছু লিখো না! আমি নিজেও কিছু হাইকু লিখেছিলাম!!

    ভালো লাগছে লেখাটা। পিচ্চি তবুও কিউট একটা ব্যাপার

    • অনাবিল বলেছেনঃ

      ইনশাল্লাহ, ইচ্ছে আছে লিখার… হাইকু অনুবাদ করেছিলাম, সেগুলো দেয়ার ইচ্ছে আছে 🙂

      ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো, আমি এক্সাম হলে বসে এক্সট্রা পেইজে লিখেছিলাম এই লিখাটা……… 🙂

  5. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    শুরুতেই প্রকৃতির বর্ণনা শুনে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে…
    খুব সুন্দর!

  6. নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেনঃ

    কেন যেন চোখটা ভিজে গেলো আমার লেখাটা পড়ে। মনে হয় এরকম ভালোলাগাগুলোকে মিস করি বলে… লেখার বর্ণনাটা এত সুন্দর আর সাবলীল ! অদ্ভূত সুন্দর হে অনাবিল…

  7. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    কী অদ্ভুত একটা ভালোলাগায় মনটা ছেয়ে গেলো!
    তোমাকে হিংসে হচ্ছে আপু। রোজ এই জঞ্জালে মোড়া শহরটার ধূসর চেহারা দেখতে হয় না।

    তবে সত্যিই বসন্ত এসেছে, মনে মনে হলেও টের পাই!

  8. ইয়াদ বলেছেনঃ

    চট্রগাম শহরটা এত সুন্দর লাগে!
    এমন পরিবেশে থাকলে প্রকৃতির পরিবর্তন গুলোও চোখে পড়ে বেশি!

    কেমন শান্ত একটা লেখা!

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।