সেদিন চৈত্র মাসই ছিল। কিন্তু না, কারো চোখে সর্বনাশ দেখি নি।
কী দেখেছি বলবো? কেন নয়? একটা নদী আমাদের ডেকেছিল, তারপর তার ডাকে সাড়া দিতে আমরা অনেক দূর থেকে ছুটে গেলাম – এই গল্প বলবো না?
অথচ আরেকটু হলেই তো হাওয়ায় মিলিয়ে যেত তার ডাক। যাওয়া শুরু হতেই একের পর এক অঘটন – কে ভেবেছিল যে তারপরও এমন করে তার সাথে আমাদের দেখাশোনার পর্ব চুকবে?
তাকে দেখতে রওনা হলাম, কিছুক্ষণ পরই চতুর্চক্রযান বিদ্রোহ করে বসলো – সাথে তার চালকও। ঝামেলার আর শেষ নেই।
যে সময়ে তার কাছে পৌঁছে যাওয়ার কথা, তখনো আমরা নিজেদের ধুলোমোড়া শহরটাই পার হতে পারলাম না। অসংখ্যবার ঠিক হল, আর যাব না। গাড়ি ঘুরিয়ে শহরেই যার যার ঘরের কোনায় ফিরে যাই। ঘড়ির কাঁটা ধরে চলা একঘেয়ে জীবনে।
কিন্তু চাইলেই কি আর হবে? কোথা থেকে যে ডাকটা আমাদের কানে এসে বাজছিল, নিজেরাও তো বুঝি নি। তাই অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, অনেক দোটানার পরও, ইচ্ছা-অনিচ্ছায় দুলতে দুলতে, যাত্রাপথে দ্বিগুণ সময় কাটিয়েও তার কাছে পৌঁছলাম আমরা।
তারপর? তার বুকে নামলাম যখন, তখন পথের সমস্ত ক্লান্তি, রাস্তার যত হা-হুতাশ অনুযোগ, সব কাটিয়ে মনটা ভরে গেল। চৈত্রের এই খরায় তার ঠাণ্ডা পানিকে ছুঁয়ে দিয়ে মনে হল, আর তো কিছু চাই নি এর বেশি! নদী জুড়ে মহানন্দে মাছগুলোতে লাফাতে দেখে মনে হল, ওদের চেয়ে সুখী আর কেউ নেই যেন এই জগতে। ব্রিজটা দেখে হঠাৎ অনেকক্ষণ ধাঁধাঁ ধরে রইলো আমাদের চোখে, কেন যেন মনে হচ্ছিল, আমরা থেমে আছি, দূরত্ব একটুও বাড়ছে না ব্রিজ আর আমাদের নৌকোর মাঝের, আবার মনে হল যেন ব্রিজটাই দৌড়ুচ্ছে আর আমরা থেমে আছি নৌকোসুদ্ধ, রাতের আকাশ দেখে ছোটবেলায় যেমন ভাবতাম চাঁদটাই দৌড়ুচ্ছে আর মেঘগুলো থেমে আছে।
একগাদা ছিপ পেতে অসীম ধৈর্য নিয়ে বসে থাকা জেলে, কত কত রকমের নৌকো, ধু ধু বালুর চর, গুণ টানা মানুষগুলো, খেলায় মগ্ন মাছের ঝাঁক, অনেক অনেক দূরে নদীর অন্য পার, কংক্রিটের বেখাপ্পা ব্রিজ, সাথে মোটরওয়ালা নৌকার খাপছাড়া আওয়াজ, কেমন অদ্ভুত সাদাকালো মেশানো নাম-না-জানা পাখিটা, সবার হুল্লোড় দেখে মাঝি চাচার হাসিমুখ – কোন্ বইতে যেন পড়েছিলাম কে নাকি আকাশ জুড়ে গান শুনতে পায়, সেদিন সারাটা নদী জুড়ে আমার জন্য গান গাইলো কে যেন…আমি তুমি…তুমি আমি…আমরা তোমরা তারা…আর কবে…
ফেরার সময় প্রহর শেষের আলো আমার গাল ছুঁয়ে কানে কানে বলে গেল, কেন এখানে এসেছিলাম।

চর-নৌকা-মানুষ

সেতু - নৌকার ছইয়ের নিচ থেকে তোলা

আমাদের দেখে মাছেরাও খুশি!

জ্যোৎস্না চূড়া

ছিপ ফেলে প্রতীক্ষা - কী প্রচণ্ড রোদে!
কাজের কথা!
পরীক্ষা শেষে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় নি, তাই সবাই মিলে ঠিক করলাম যমুনা রিসর্টে যাই। অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনা আর দোটানার পর শেষমেশ যাওয়া হল, কিন্তু রিসর্টেই আর ঢোকা হল না। কারণ যেতে যত সময় লাগার কথা ছিল, লাগলো ঠিক তার দ্বিগুণ – সুতরাং আমাদের ঘোরাঘুরির অর্ধেক সময় কাটা পড়লো। যাওয়া-আসা মিলিয়ে নয় ঘণ্টার যাত্রার দৃশ্যত একমাত্র অর্জন ছিল যমুনার বুকে এক ঘণ্টার নৌকা ভ্রমণ। ১২ জন মানুষ মিলে বিরাট বড় ছইওয়ালা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় এক ঘণ্টা ঘুরতে লাগলো ৬০০ টাকা। ইচ্ছা ছিল এরপর রিসর্টের পার্ক আর পিকনিক স্পটটায় ঘুরে আসবো, কিন্তু সময় কম পড়ায় সেটা আর হয় নি। পার্ক আর পিকনিক স্পটের প্রত্যেকটাতেই ৪০-৫০ টাকার মত লাগে ঢুকতে। পার্কটায় ছোটদের জন্য নানান রকম রাইড আছে, বাইরে থেকে দেখলাম। পিকনিক স্পটে যাওয়া হয় নি, পিকনিক করতে না গেলেও এমনিতে ঘুরে দেখা যায় ওটা, আর পিকনিকের জন্য গেলে আলাদাভাবে বুকিং দিয়ে যেতে হয়। সেটা নিয়ে তথ্য সব রিসর্টের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
রিসর্টে খাবারের বেশ দাম, বুফে লাঞ্চ মাথাপিছু ৭৫০ টাকা, তাই যাওয়ার পর খাওয়া-দাওয়া করেছি রিসর্টের একেবারে কাছেই ‘পার্ক ভিলেইজ’ নামে একটা রেস্টুরেন্ট ছিল – সেটায়, যথেষ্ট ভাল খাবার। অন্য সব কিছুও ভাল, ফ্রেশ হওয়ার আর নামাজ পড়ার ব্যবস্থাও আছে। সেখানে ১৫০-২০০র মধ্যে লাঞ্চ করা যায়, তবে কেউ আমার মত ক্ষীণকায় হলে তার ১০০তেই হয়ে যাবে! 😛
এই তো! আর আমাদের মধ্যে কয়েকজন নৌকা থেকে চরে নামতে চেয়েছিল, কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ দেখে পরে সেই পরিকল্পনা বাদ দেয়া হয়েছে। ডাকাতি হয় নাকি, সেই জন্য।
যাতায়াত নিয়ে যে কত প্ল্যানিং আর ভোগান্তি হয়েছে – সব কিছু লিখছি না। কেবল যেটুকু দরকার – কল্যাণপুর থেকে উত্তরবঙ্গের বাসে করে যাওয়া যায় ওখানে, যাওয়া-আসা মিলিয়ে মাথাপিছু ৭০০ টাকা পড়ে তাহলে। এই বাসগুলো রিসর্টেই নামিয়ে দেয়, যতদূর জানি। আরেকটু কমে যেতে চাইলে মহাখালী থেকে সিরাজগঞ্জ কিংবা টাঙ্গাইলের বাসে উঠতে হবে (নিরালা – আরো কী কী যেন বাস আছে), টাঙ্গাইলের বাসে একেকজনের ৩০০র মত লাগে। টাঙ্গাইলে নেমে ২ কিলোমিটার রাস্তা অন্য কিছুতে যেতে হয়। আর ট্রেনেও যাওয়া যায়, ফার্স্ট ক্লাস বা একটু ভাল টিকেটে যেতে হলে বেশ কয়েকদিন আগে কেটে রাখতে হয়, আমাদের হাতে সময় ছিল না দেখে তাই ট্রেনে যাওয়ার বুদ্ধি বাদ দিতে হয়েছে মাথা থেকে। তবে এগুলোর সব তথ্যই এখান-ওখান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত একটা মাইক্রোবাস নিয়ে গিয়েছিলাম আমরা সবাই।
ওহ্ আর যাত্রা শেষে উপলব্ধি – নদী, ব্রিজ এসব ছাড়া ওখানে দেখার মত আর কিছু নেই। কেউ পিকনিক করতে চাইলে – ঢাকা শহর থেকে পালাতে চাইলে রিসর্ট ভাল জায়গা সেজন্য, কিন্তু প্রাকৃতিক শোভা দেখার জন্য অন্য কোথাও যাওয়াই ভাল, যদি না বিশেষ করে যমুনা নদীই দেখতে চায় কেউ!
কারো যদি কাজে আসে, তাই ভেবে এই বেরসিক অংশটা যোগ করলাম লেখার সাথে।
ছবি কৃতজ্ঞতা – সুমী (এই মেয়েটা এত সুন্দর ছবি তোলে!) 🙂
রিসর্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট – এখানে
“আমাদের দেখে মাছেরাও খুশি” :beerdrink: :beerdrink:
. . . . কতদিন ঢাকার বাইরে বেড়াইতে যাইনা! 🙁 :crying:
মাছগুলিকে দেখে সবচেয়ে বেশি মজা লাগছে। 😀
আমিও অনেক দিন পর গেলাম, দেড়-দুই বছর তো হবেই!
ফ্রেন্ডরা মিলে চলে যাও না কোথাও, ছুটি তো এখন। 🙂
ইনশাআল্লাহ, প্ল্যান প্রোগ্রাম চলতেছে 😀
আবারো বলি
“তুমি কেমন করে গান কর হে গুনী
আমি অবাক হয়ে শুনি…কেবল শুনি….”
ধন্যবাদ,এমন একটা দিনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য 😀
তোমরা সবাই না গেলে তো উদ্যোগ মাঠে মারা যেতো! 😀
এত্ত সুন্দর করে লিখেছিস যে মনে হচ্ছিল কল্পনার জগতে চলে গিয়েছি!
🙂
লেখা পড়ে মনে হচ্ছে এখুনি চলে যাই
খুব ই ভালো লেগেছে।
:clappinghands:
তাত্তাড়ি যাও! 😀
শুরুটা দুর্দান্ত!
পদ্মায় গেছিলাম
যমুনায় যাব যাব করেও যাওয়া হয় নাই
আমি শুধু যমুনাতেই গেছি, সেটাও আবার কয়েকবার। আব্বু-আম্মু দুইজনের বাড়িই যমুনার আশেপাশে কিনা!
এরপর পদ্মায় যাওয়ার প্ল্যান। 😀 ইনশাআল্লাহ্।
ঘুরে এলাম তোমার সাথে…………
আমার যে কত্তো ঘুরাঘুরি জমা হয়ে যাচ্ছে…… কখন, কখন যে যাবো…………
শুরুটা উদাসী সুন্দর, আর শেষটা যারা যায়নি তাদের খুব কাজে আসবে……… 🙂
শেষটায় আরো কিছু জিনিস যোগ করতে হবে আপু। এত তথ্য, সব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এদিক-সেদিক। 🙁
যাব যাব করেও এখনো যমুনা রিসোর্ট যাওয়া হয়নি।
জনপ্রতি কত করে খরচ পড়তে পারে আইডিয়া দাও
যোগ করে ফেলেন ভাইয়া! আমাদের যেমন সব মিলিয়ে ৬০০/৭০০র মত পড়েছে জনপ্রতি। আরো কিছু ফ্রেন্ডদের কাছে খোঁজ নিয়েছি, তাদের সময়েও এরকম পড়েছে। কিন্তু আপনারা যদি রিসর্টে থাকতে চান, রুম/কটেজ ভাড়া করেন তাহলে তো আরো বেশি পড়বে।
মাছগুলোর লাফালাফির ছবি দেখে তো পুরোই হতবাক হয়ে গেলাম। 😯
আর, একটা ঘুরতে যাবার বর্ণনা মানুষ এতো সুন্দর করে দেয় কিভাবে? তুমি গল্প লেখা শুরু কর। অনেক ভালো হবে………
পোস্ট পড়ে মনে হলো, কতদিন ঢাকার বাইরে যাই না……
আমার নিজেরও দারুণ লাগছিল মাছগুলিকে দেখে। অনেকেই ফটো তুলতে ব্যস্ত ছিল নৌকায়, আর আমি সারাক্ষণ হা করে এইসব দেখছি। 😀
আমিও অনেকদিন পর গেলাম, সেটাও আবার আরেকটু হলেই যাওয়া হচ্ছিল না! আলহামদুলিল্লাহ্। 😀
জ্যোৎস্না চূড়া !!!!!! দারুন নাম তো 😛
ছবি আসলে অনেক কথা বলে। 🙂
হ্যাঁ আপু। 😛
একমত। 🙂
যাওয়ার ইচ্ছা আছে।
শেষের তথ্য গুলো বেশ কাজে লাগবে।
ধন্যবাদ 🙂 🙂
যেয়ো। এসে তুমিও ব্লগ লিখো একটা। 😀
হুম হুম!