বিভ্রাট সাহেবের মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল হঠাৎ। বেচারা তখন বাজার করছিলেন। জিনিসপত্রের আগুন দামের কারণে তার মেজাজটাও ক্রমশই চড়া হয়ে উঠছিল। ঠিক এমন সময়েই মেসেজ টোন। মেসেজ ওপেন করে ভ্রূ দুটো আরো কুঁচকে ফেললেন বিরক্ত ভঙ্গিতে। মেসেজদাতা শুরুতেই তার নামের বানান ভুল লিখেছেন- বিভ্রাঠ!
নিজের নামের বানান কেউ ভুল লিখলে এমন রাগ কার বা না হয়? নিজের নামটা সবার কাছেই প্রিয়। প্রিয় না হলেও সেটা বরং অভ্যাসের খাতিরে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া বিষয়। তাই বলে বানান বিভ্রাট কি শুধু নামের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে? শব্দেরও কি মান-অভিমান নেই? না থাকতে নেই? যে শব্দ আমাদের আশ্রয় দেয় ভালবাসার মানুষটিকে মনের কথাগুলো জানাতে, সেই শব্দে ভুল হলে কি তারও অপমানবোধ হয় না?
মা আর মাটি আমাদের বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত। তাই মা-মাটির অপমান আমরা সহ্য করতে পারি না। শত ব্যর্থতাতেও আমাদের প্রতি মা-মাটির প্রতিদানটাও কিন্তু সেইরকমই সর্বশ্রেষ্ঠ রয়ে যায়। তাহলে ভাষাই বা কী দোষ করল? আমাদের সব স্বপ্নের পরিণতি হয় যে ভাষাতে, তাকে যদি আমরা যেভাবে খুশি ব্যবহার (অপব্যবহার) করি তবে কি ভাষাও আমাদের প্রতি বিরূপ হয় না?
কিছু ছোট ছোট কথা, প্রিয়জনের প্রিয় জিনিসটা মনে রাখবার মত করে একটু মনে রাখলেই কিন্তু এই বানান বিভ্রাট এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
কী বলে ভাই লোকে অমন?
তা কি তুমি জানো?
‘হ্যাঁ-না’তে উত্তর হলে
‘কি’ লেখাটাই মানো।
সংস্কৃত ভাই আসে যদি
দীর্ঘ করো সব
ধূলি, ধূম লেখতে তবে
‘ঊ’ হোক রব।
বিসর্গ এর উচ্চারণে
‘হ’ যে আসে চলে
ডাক্তারেতে ‘ডাঃ’ না লিখে
‘ডা.’ লিখো সকলে।
বিদেশি শব্দ যত
চালু এ বাংলায়
‘ই-কার’ আর ‘স’তে রে ভাই
তাদের যে মানায়।
‘না’ এর বুঝি মান নেই আর
পৃথক হলেই দোষ?
‘মানি না’ বদলে ‘মানিনা’ লিখলে
হবে নন্দ ঘোষ!
‘পরি’ তুমি লিখবে
যখন করবে পরিধান
কাপড়-জামা পড়লে পরে
করবে ‘পরি’ মান।
এসো সবাই হাতটা ধরে
মনের কথা লিখি
শুদ্ধভাবে চোখটি খুলে
জগতটাকে দেখি।
দুর্দান্ত স্বর!
দুর্দান্ত স্বর!!
দুর্দান্ত স্বর!!!
একদিকে শিক্ষাও হলো অন্যদিকে মজা!
বাচ্চাকালে এমন টিচার ছিলো না ক্যান? 🙁
পুরুষ টিচার না মহিলা টিচার ? 😉
তোর এই পোস্টরে আমি ১০০ তে ১৫০ দিলাম! এইরকম একটা পোস্টের যে কি দরকার ছিলো! :huzur: :huzur: :huzur: :huzur: :huzur:
তিন কেজি ধইন্যা। :beshikhushi:
জোস হইছে :clappinghands:
থ্যাঙ্কু 😀 থ্যাঙ্কু 😀
দারুণ/দারুন পোস্ট। 😀 :huzur: :huzur:
(বানানটা ঠিক করে দিস)
আহারে,এমন টিচার আগে কেনো ছিলনা 🙁
‘দারুণ’ দীর্ঘ ঊ-কার কিন্তু। দেখে বোঝা যাচ্ছে না।
আর বাপী ভাইরে যা বলছি তোরেও একই প্রশ্ন। উপরে দেইখা নিস। 😛
একদম মুখের উপর চপেটাঘাত ! বাহ, বেশ আরাম লাগছে 😛 :fire:
কোবতে ( কবিতা) খানা বড্ড খাসা হয়েছে গো দিদি !! :yahooo:
ঝা ঝা !!! :penguindance:
কবতে মানে যে কবিতা এইটা আমি বুঝি। ব্যাঙ্গাত্মক শব্দের বানান নিয়ে আমার নিজস্ব কোন অভিযোগ নাই। চিন্তা খাইশ না। 😀
চপেটাঘাত খেতে কারো ভালো লাগতে পারে, জানা ছিল না ! 😮
মন্তব্য করতে ভয় লাগছে যদি বানান ভুল হয়।
হা হা হা 😆
কোন অসুবিধা নেই। ভুল হবে বলে ভয় পেয়ে লেখা বন্ধ করে দেবেন- তা তো হয় না, তাইনা? তাহলে তো এরকম হলো যে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে রাস্তায় বের হলাম না । 🙂
ভুল হলে ভুল শুধরে নেয়া যায়, লেখা বন্ধ করে দিলে সেটুকুরও আর উপায় থাকবে না। 😛
মন্তব্য করতে ভয় পাচ্ছি না জানি কি ভুল বানান লিখে ফেলি!! 🙄
ছোটবেলায় বানানের ব্যাপারে খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন রকম ভাষার গ্যাড়াকলে পড়ে বানান সব ভুলতে বসেছি। অবশ্য ব্যাপার না, এরকম টিচার যখন পেলাম, আর চিন্তা কি?? 😀
চেষ্টা করবো যতটুকু জানি সবই জানাতে। ধন্যবাদ । 🙂
আমার ণ এর ব্যবহারে হাল্কা গ্যাঞ্জাম হয়, য ফলাতেও! :babymonkey:
ণ-ত্ব, ষ-ত্ব বিধানে নিয়মের শেষ নেই রে ভাই। শুধু সচরাচর ব্যবহৃত হয় এমন কিছু নিয়ম শেয়ার করলাম। তাছাড়া রসকষহীন ঐ নিয়মগুলো বইয়ের মত করেই লিখলে পড়তে ইচ্ছে হত না। কষ্ট করে পড়লেও মনে থাকত না। ভেবে দেখি সেগুলো কীভাবে তুলে আনা যায়।
দারুণ আপু! মুগ্ধ! :clappinghands: :clappinghands: :clappinghands:
ছোটবেলায় বানান খুব কম ভুল হত, দিনকে দিন বাড়ছে। 🙁
আচ্ছা দারুণ-এ ঊ-কার বললে কেন? ঊ-কার না এটা – দারূণ? এটা তো উ-কার। ❓
হা হা হা হা। ওটা হ্রস উ-কার ই হবে। বিলাস ভাইয়াকে হ্রস উ দিয়ে লিখে উল্টা কমেন্ট করেও প্যাঁচে ফেলতে পারি নি। বেটা কোন রেসপন্সই করলো না! 🙁
অনেক উপকার হইল!…ঃ)…ভার্চুয়াল জগতে লেখালেখি করতে গিয়ে এই এক সমস্যা!বানান প্রচুর ভুল হয় তাড়াহুড়া করতে গিয়ে!
আশা করি এখন থেকে সেই ভুল একটু হলেও কমবে। 🙂
ওয়াও। অসাধারন ! এটা আপনি লিখেছেন? 😯 আমিতো পুরাই হা হয়ে যাচ্ছি। এভাবে বাচ্চাদের পরালে কতই না ভাল হত।
এমন আরো লেখা চাই 🙂 বিশেষ করে ষ আর ণ নিয়ে। সবাই ভুল করে।
ধন্যবাদ আপু। আমি লিখেছি। একসময় আমার কাছেও কঠিন লাগত কারণ আমি এভাবে শিখি নি। তবে শেখানোর ধরণটা একটু পরিবর্তন করলেই কিন্তু বাচ্চাদেরকেও সহজেই শেখানো যায়। 🙂
এটা সিরিজ হিসেবে দেয়ার আমার কোন ইচ্ছাই ছিলো না। কিন্তু লেখার পর বেশ কিছু মানুষ আমাকে অনুরোধ করেছেন তাদের সমস্যার জায়গাগুলো নিয়ে এভাবে লিখতে। ষ আর ণ এর অনুরোধটা রাখার চেষ্টা করবো। এতো ব্যস্ততার মাঝে আসলে ঠিকঠাক গুছিয়ে উঠতেই সময় চলে যাচ্ছে। তবু চেষ্টা করে দেখবো আপু। আবারো ধন্যবাদ। 🙂
বাঃ !
মজা তো!
সতর্ক হবার আশা ব্যক্ত করছি।
আর লজ্জার সাথে নিচের অংশটুকুর মানে বুঝতে চাচ্ছি…
‘পরি’ তুমি লিখবে
যখন করবে পরিধান
কাপড়-জামা পড়লে পরে
করবে ‘পরি’ মান।
আশার প্রয়োগ ঘটুক-শুভকামনা।
মানে হলোঃ ‘পরি’ শব্দটা ‘পরিধান’ অর্থে লেখা হয়। বাকি সব ক্ষেত্রে ‘র’ এর বদলে ‘ড়’ হবে।
তাই বলা হয়েছে, “‘পরি’ তুমি লিখবে
যখন করবে পরিধান”
‘জামা-কাপড় পরি’ এই জায়গায় কেউ ‘পড়ি’ লিখলে ভুল হবে। তাই এখানে বলেছি, “কাপড়-জামা পড়লে পরে
করবে ‘পরি’ মান।”
আশা করি এখন বুঝতে পেরেছেন। 🙂
দুর্দান্ত :clappinghands:
ধন্যবাদ। 🙂
শেখার আছে অনেক কিছু…….বানান ভুল হল নাকি কোথাও! সেইরকম, খেলতে খেলতে শেখা টাইপ পোস্ট !
আমার নামের বানান সবাই ভুল করে, তাই শব্দের মান অভিমান বুঝি।
চেষ্টায় থাকব নির্ভুল বানানের, আর ভুল করলে আপনিতো আছেন ই :yahooo:
সবাইকে ভুল ধরিয়ে দিতে দিতে আমি বোধহয় ভিলেনের পর্যায়ে পৌঁছে যাব একদিন, আল্লাহ মাফ করুক! 😐
দারুণ লেগেছে ! বিশেষ করে কবিতাটাতো আরও বেশি জোস হয়েছে !! :clappinghands:
অবশ্য কিঞ্চিত লজ্জাও পেয়েছি …… 😳 :voypaisi:
আজ থেকে বানানের ব্যাপারে বিশেষ করে কারো নামের ব্যাপারে আরও বেশি সতর্ক থাকব । 😀
সবাইকে সতর্ক করতেই এই ছোট্ট প্রয়াস। বাংলা শব্দগুলোকে যেন আমরা ভালবাসতে পারি। 🙂
ধন্যবাদ, পড়লাম আপনার সুন্দর এই লেখাটি। আশা করি পরেরবার থেকে বানান নিয়ে সতর্ক থাকব।
সতর্ক থাকবেন শুনে অনেক ভাল লাগল। আপনাকেও ধন্যবাদ। 🙂
অসাধারণ!! :clappinghands:
ক্লাস টেন-এ ণ-ত্ব ও ষ-ত্ব বিধানে এমন একটি কবিতা ছিল মনে আছে, সেটা অনেক কাজে আসতো। এই কবিতাটাও মুখস্ত করে ফেলা দরকার মনে হচ্ছে 🙂
ওরে বাবা! ক্লাস টেনের সেই কবিতা আমার তখনো ভয়ংকর লাগত, এখনো লাগে! কত শব্দ পরপর মুখস্থ করতে হয়! 🙁
দুর্দান্ত! অসাধারণ!
প্রিয়তে নিলাম, আপু 🙂 এখন পর্যন্ত দেখা ‘সরব’ এর সেরা স্বরগুলোর একটি 🙂
বানান নিয়ে যারা ‘বিভ্রাঠ’ করে- নিঃসন্দেহে তাদের জন্য উপকারী 🙂
:huzur:
কবিতাটার প্রশংসা করতে ভুলেই গেসলাম! :clappinghands:
btw, আমাকে ‘তুমি’ করে বলবেন- আপনার চেয়ে ছোটই 😀
ছোট নাকি? তবে তো তুমি, তুই যা খুশি, সাথে বানান ভুল করলে পিঠের উপর দুইটা থাবড়া বরাদ্দ থাকতেও পারে! 😛
‘তুই’ বললে তো বেশি খুশি :happy: আর থাবড়া বরাদ্দ রাখার জন্যে আরো বেশি :yahooo: :love:
নেটে বসলে বানানের দিকে সত্যিই খেয়াল করি না। ছোট ছিলাম, ভালোই ছিলাম। 🙁
এখন থেকে খেয়াল করার সুযোগ আছে তো!
এখন খেয়াল করি তো পু! :happy:
:love:
আপুনি,কবিতাটা এতো ভাল লেগেছে যে কপি করে রেখেই দিলাম।
(আল্লাহ!এ পর্যন্ত যে কয়টা বানান ভুল গেল?)
একটাও না! :beshikhushi:
আচ্ছা আপু, আমি অন্যের লেখা পড়লে ছোট-বড় যেকোন বিভ্রাটই চোখে পড়ে। কিন্তু নিজে লিখলে বিশাল বিশাল ভুল কেমন করে যেন চোখকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায়! এবং সাধারণত যেসব বানান বেশি পরিচিত, সেইসব বানানই আমি বেশি ভুল করি!
[আল্লাহ, এইখানে না জানি কি বানান ভুল করে বসে আছি! স্কেয়ার্ড… :voypaisi: :voypaisi: ]
এহহে… সত্যি সত্যিই দেখি…
কি> কী (হ্যাঁ/ না- দিয়ে উত্তর দেয়া গেলে বানান হবে ‘কি’, অন্যক্ষেত্রে হবে ‘কী’) 😛
নিয়মখানা জানি…
নিয়মটা আরো স্পেসিফিকেলি এইভাবে বলা যায়:
অর্থের প্রগারতা বোঝাবার জন্যে হ্রস্ব ও দীর্ঘ স্বর ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণস্বরূপ,
অব্যয় বাচক অর্থে ‘কি’ ব্যবহৃত হল হ্রস্ব ই-কার হবে, কিন্তু সর্বনাম বা বিশেষণবাচক অর্থে দীর্ঘ ই’কার হবে।
[ তুমি কি (অব্যয় বাচক, হ্যাঁ/না- দিয়ে উত্তর দেয়া যায়) এখনই যাবে? তুমি কী (সর্বনাম) কলম দিয়ে লিখ? এত দূরে হেঁটে যাবে কী(বিশেষণ) করে?]
ক্রিয়াবাচক অর্থে ‘তৈরি’ বানানে হ্রস্ব ই-কার হবে, কিন্তু বিশেষণবাচক অর্থে দীর্ঘ ই-কার হবে।
[ আমরা পড়া তৈরি (‘কর’ ধাতুর আগে আছে, ক্রিয়া বোঝাচ্ছে) করছি। বাজারের তৈরী (বিশেষণ বোঝাচ্ছে, ‘কর’ ধাতু নাই) পচা খাবার খাও কী করে?]