বুড়ি, কেমন আছিস রে ? , ভাল আছিস তো? অনেক দিন চিঠি লিখা হয় না, শেষ কবে চিঠি লিখেছি মনেই করতে পারছি না, কোন এক পরীক্ষার খাতায় মনে লিখেছিলাম এটা মনে আছে কিন্তু সেটা সেই তাম্র যুগের কথা , তার পর চিঠি লেখা হয় না, আমাদের এই নাগরিক জীবনে চিঠি লেখার সময় কোথায়রে? হঠাৎ করে আজ অনেক দিন পর চিঠি লিখতে বসলাম , তোর কথা অনেক মনে পড়ল । কত দিন দেখা হয় না তাই না রে?
আজ বৃষ্টির দিন জানিস? বাহিরে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে , যাকে বলে “কুকুর বেড়াল” বৃষ্টি । আকাশের সব দুঃখ বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে যাচ্ছে , এত কি দুঃখ আকাশের বলতে পারিস ? আচ্ছে তোর ওই খানে কি বৃষ্টি হয়? আমাদের মত এত সুন্দর আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি ? বৃষ্টি নামলে কি এখনও তোর অস্থির লাগে , এখন ও বৃষ্টিতে ভিজিস? তোর কি এখন ও সেই ঠাণ্ডার রোগটা আছে ? আচ্ছা তোর কি মনে আছে বৃষ্টি নামলে তুই ভিজার জন্য কি করতি? তার পর আবার ঠিকই জ্বর বানিয়ে বসে থাকতি , আচ্ছা কি মজা পেতি বলত? আমাকে জোর করে বৃষ্টিতে ভিজাতি , তার পর এক সময় তো আমার ই অভ্যাস হয়ে হয়ে গেল!! অনেক দিন বৃষ্টিতে ভিজি না , কেন জানি ভাল লাগে না ।
আচ্ছা ,তোর দেশটা কেমন বলতো , অনেক বেশি সুন্দর?? আচ্ছা ওই দেশের আকাশ কি আমাদের আকাশ থেকে ও বেশি নীল? গাছ গুলো কি বেশি সবুজ? তোর কি দেশটা এতই ভাল লেগে গেছে? তুই ওই দেশে কি করিসরে বুড়ি , তোর কি আমার কথা মনে হয়? তোর কি ছোট বেলার কথা মনে পড়ে? আচ্ছা তোর কি সেই আইসক্রিম ওয়ালার কথা মনে আছে , ওই সে বুড়ো লোকটা তোকে যে অনেক আদর করত? জানিস লোকটার সাথে না কিছু দিন আগে দেখা হল , এখন ও তোর স্কুল এর সামনেই আইসক্রিম বিক্রি করে , এত টুকু ও বদলে নি ,ঠিক আগের মতই আছে , মনে হয় কোন একটা বয়সে আটকে গেছে , আশ্চর্যের ব্যাপার কি জানিস তোর কথা না লোকটার এখন ও মনে আছে!! তোর কথা জিজ্ঞাসা করল , আমি শুধু মাত্র তোর দেশের নামটা বললাম , লোকটা না অনেক্ষন ধরে স্থির তাকিয়ে ছিল । আচ্ছা , বুড়ি তুই কি জাদু জানতি বলত? সবাই তোকে এত ভালবাসত কেনরে?
তোর রুমটা সেই আগের মতই আছে, ঠিক আগের মত গোছানো , খুব মাঝে মাঝে গভীর রাতে মা তোর ঢুকে , আমি ও যাই , তোর টেডি বিয়ারটাকে দেখি , ওই দেশে ও কি তোর টেডি বিয়ার আছে? দেয়ালে তোর লাগান স্টিকার গুলো এখনও আছে , তোর সেই খেলনার পুতুল গুলো ঠিক সেই রকমই আছে , আচ্ছা ,তুই না ও গুলো ছাড়া ঘুমাতে পারতি না, এখন তাহলে ঘুমাস কিভাবে রে? নাকি বড় হয়ে গেছিস রে ?
তোর বিড়ালটা এখন অনেক বড় হয়ে গেছে , সারা দিন এটা এ রুম ও রুম ঘুরে বেড়ায় , মনে হয় তোকেই খুঁজে , তুই কি এখন ও বিড়াল পালিস ?? ওই দেশে কি বিড়াল রাখার অনুমতি আছে??
তোর কি এখনও কথা বলা রোগ আছেরে??মনে আছে রে স্কুল থেকে এসে যে কথা শুরু করতি? সারা দিন কি করেছিস না করেছিস সব বলা চাই ই চাই , এত কথা কিভাবে বলতি? স্কুলে কে কি করল না করল ,কোন মেয়েটার সাথে আজ ঝগড়া হল , কোন মেয়েটা তোকে ধাক্কা দিল সব বলা চাই ই , তোর কি মনে পড়ে? কি সুন্দর করে টুক টুক করে কথা বলতি , সারা ঘর তোর শব্দে আলোড়িত থাকত , আচ্ছা ,ওই খানে কার সাথে কথা বলিস? তোর কথা শুনার মত মানুষ কি কেউ আছে? ওই খানে কে শুনে বলত তোর কথা? নাকি মন খারাপ করে বসে থাকিস , ওই খানে ও কি কারও সাথে ঝগড়া করিস? তার পর গাল ফুলিয়ে বসে থাকিস? জানিস ,অনেক দিন ধরে না তোর মত কেউ কথা বলে না ,সারাটা কেমন যেন নিঃশব্দে ডুবে থাকে , মা ,বাবা , সবাই কেমন যেন ইশারায় কথা বলে , তুই কোথায়রে বুড়ি ফিরে আয় না , আবার আমাদের ঘরটা আনন্দে ভরে উঠবে , তোর হাসির ধবনিতে মুখরিত হয়ে যাবে আমদের ঘর । আমি না ভাল নেই রে , এখন খুব বেশি রকম অগোছালো হয়ে গেছি , তুই নেই যে , এখন আর সকালে আর ঘুম থেকে উঠা হয় না, মাঝে মাঝে না ভুলেই যাই যে সকালে আমার না উঠলে হবে , আর কাউকে স্কুলে দিয়ে আসতে হবে না , কেউ আর সকালে জ্বালাতন করে নারে , প্রতিদিন রাতে ফিরার সময় আর কারও জন্যই কিছু আনতে হয় না, সকল প্রয়োজন এখন ফুরিয়ে গেছে , কাউকেই আর এখন বিকেলে বেড়াতে নিয়ে যেতে হয় না, কেউ আর চিল্লাফাল্লা করে ঘরটা মাতিয়ে রাখে না রে , সম্পূর্ণ ঘর ভর্তি বিশাল রকম শূন্যতা , আচ্ছা বুড়ি , তুই কত বড় হয়েছিসরে? উচ্চতায় কি আমাকে ছাড়িয়ে গেছিস? তোর মুখটা দেখতে অনেক ইচ্ছে করে রে । মাঝে মাঝে আমার মনে হয় তুই আমাকে ডাকছিস , খুবই আস্তে , মনে হয় খুব সকাল বেলা আমার তুই আগের মত “দাদা ভাই” বলে কানের কাছে চিৎকার করছিস, কেন আসিস না বুড়ি , এত সুন্দর দেশটা দেখতে তোর ইচ্ছা হয় না? এই যে এত সুন্দর বৃষ্টি , এত সুন্দর জোসনা , এত সব কিছু ফেলে কেন চলে গেলি ? আমার কথা কি তোর মনে পড়ে না? ওই দেশটা এতই সুন্দর? ফিরে আয় না রে বুড়ি , – তোর দাদা ভাই
মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। খুব……
😐
দারুণ টাচি
অসাধারণ
দাদা , ধন্যবাদ!!!
(ব্যাপক লজ্জা পাবার ইমু)
🙁
মন ছুয়ে যায় কথা গুলো। সুন্দর লেখেন আপনি 🙂
ধন্য!!!!! 😳
?????????? এমন চেহারা হয়েছে কেন? !!!!!!!!!! :thinking:
অসাধারণ লিখেছেন, পড়তে পড়তে চোখের কোণটা ভিজে উঠল…………
প্রিয়জনেরা কেন যে শুধু দূরে দূরে চলে যায়………………
লেখা চলুক……………………।
:love:
লেখাটা ভালো লেগেছে-এবং ভালো দিকটা হল পুরো লেখাটায় ছন্দপতন হয়নি কোথাও। সুন্দর।
ধইন্না!!
তোর লেখার ক্রমোন্নতি দেখতেছি … 🙂
চোখের ডাক্তার দেখাইছস তো!! তুই না আবার চোখে কম দেখতি!! :p
ধন্যবাদ দোস্ত!! :love:
এমন লেখা লিখতে থাক … (এর চেয়ে ভালো)
পইড়া পইড়া চোখ নষ্ট হইলেও খারাপ লাগব না …
(তেলের পরিমাণ বেশি হয়া গেল নাকি!?) …
:love:
মন ছোঁয়া লেখা।
ধন্যবাদ!!
অনেক সুন্দর লেখা, মন খারাপ করা। 🙁
এর পর কখন ও যদি মন ভাল করার কিছু লিখতে পারি , সেটা আপনার জন্য থাকল , দোয়া করবেন