চলচ্চিত্র কাটাছেঁড়া:A Separation

কিছুদিন আগে অস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয় যখন খুব আগ্রহ নিয়ে দেখতে পাই সেরা বিদেশী ভাষার চলচিত্র হয়েছে A separation.  Asghar Farhadi পরিচালিত ইরানী চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ২০১১ সালে। একটি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিরাজমান মানসিক টানাপড়েন আর তার প্রভাব সেই পরিবার ছাড়িয়ে অন্য একটা পরিবারকেও কীভাবে প্রভাবিত করে-তা অপূর্বভাবে দেখানো হয়েছে এ চলচ্চিত্রে।

কাহিনী সংক্ষেপ:

নাদের(Peyman Moaadi) এবং সিমিন(Leila Hatami), ইরানের তেহরানে থাকা এক দম্পতি। ১৪ বছরের সাংসারিক জীবনের একমাত্র মেয়ে ১১ বছরের তেরমেহ(Sarina Farhadi)। শহুরে মধ্যবিত্ত পরিবারের আরেকটু উন্নতি এবং মেয়ের নিশ্চিত ভবিষ্যৎতের আশায় বিদেশে যাওয়ার আবেদন করেন সিমিন। ভিসাও হয়ে যায় তাদের। কিন্তু, ‘আলযেইমার ডিজিজ’ এ আক্রান্ত শিশুর মত অবুঝ পিতাকে ছেড়ে যেতে রাজি হন না নাদের।

এই নিয়ে টানাপড়েন তাদের সংসারকে নিয়ে যায় ভাঙনের মুখে। আদালতে বিচ্ছেদ চেয়ে মামলা করেন সিমিন। একই সাথে নাদের এবং সিমিন দু’জনেই নিজের কাছে রাখতে চান তেরমেহ কে।

আদালতে এই মামলা চলাকালীন সময়ে নিজের বাবার বাড়িতে চলে যান সিমিন। ঘরের কাজ এবং বাবার দেখাশোনা করার জন্য রাজিয়া(Sareh Bayat) নামক এক নারীকে নিয়োগ দেয়া হয় নাদেরের বাড়িতে। পর্দা করে চলার কারণে রাজিয়ার অন্তসত্ত্বা থাকার বিষয়টিও যেন অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে। আবার, রাজিয়া তার কাজ করার বিষয়টিও জানাতে চান না তার স্বামীকে।

এমনই এক দিনে ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটে এক দূর্ঘটনা। নাদেরের দেয়া ধাক্কায় সিড়ি দিয়ে পড়ে যান রাজিয়া। গর্ভের শিশুর মৃত্যু ঘটে তার। দু’টি পরিবার মুখোমুখি হয় আদালতে।

কিন্তু, সিড়ি দিয়ে পড়ে যাওয়াতেই কি শিশুটির মৃত্যু ঘটেছে? নাকি অন্য কোন কারণ?

নাদের আর সিমিনের সংসার কি টিকে থাকবে?

বাবা-মা এর মধ্যে এই অবস্থায় সদ্য কৈশোরে পা দেয়া তেরমেহ-এর মানসিক অবস্থা কী হবে?

এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর যেন অপরূপভাবে সাজানো হয়েছে A Separation চলচ্চিত্রে।

পুরষ্কার:

‘বিদেশী ভাষার সেরা চলচ্চিত্র’ হিসেবে অস্কার ছাড়াও বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে ‘গোল্ডেন বিয়ার’ পুরষ্কার জিতে নেয়।

নিন্দুকেরা কহেন:

নিঃসন্দেহে চলচ্চিত্রটা সুন্দর এবং প্রশংসা পাওয়ার মতো। তবে, ইদানীং কালে অস্কার ঘোষণার পর প্রতিবারের মতো এবারো সামনে এসে দাঁড়িয়েছে একই প্রশ্ন।

A Separation কি শুধুমাত্র শিল্পগুণের কারণেই অস্কার পেয়েছে, নাকি এর পিছনে অন্য কোন কারণ আছে?

ইরানের সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের দেশ ছাড়ার প্রবনতা, কৈশোরে উত্তীর্ণদের উপর মানসিক চাপ, আদালতের স্বচ্ছতা-এসব ব্যপারগুলো পুরো বিশ্বের কাছে তুলে ধরে ইরানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা কি এই চলচ্চিত্রের অস্কার পাওয়ার পিছনের কোন কারণ?

যাই হোক না কেন, চলচ্চিত্রটি অবশ্যই দেখার মতো।

রেটিং: ৪/৫

স্বপ্ন বিলাস সম্পর্কে

বাস্তবে মানুষ হবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জীবনের নানা পথ ঘুরে ইদানীং মনে হচ্ছে গোলকধাঁধায় হারিয়েছি আমি। পথ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি আর দেখে যাই চারপাশ। ক্লান্ত হয়ে হারাই যখন স্বপ্নে, তখন আমার পৃথিবীর আমার মতো......ছন্নছাড়া, বাঁধনহারা। আর তাই, স্বপ্ন দেখি..........স্বপ্নে বাস করি.....
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চলচ্চিত্র-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

19 Responses to চলচ্চিত্র কাটাছেঁড়া:A Separation

  1. নিশম বলেছেনঃ

    চমৎকার ! রিভিউ পড়েই তো অর্ধেক দেখা হয়ে গেলো, বাকি অর্ধেক নাহয় মুভিতেই দেখলাম !

    প্লাস 😀

  2. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    সুন্দরী প্রতিযোগিতা নিয়ে ফাহমিদুল হক এর দারুণ একটা লেখা আছে। রিলেভেন্ট হওয়ায় দিচ্ছি।
    http://www.somewhereinblog.net/blog/fahmidulhaq
    blog/29104053

    অস্কার সিজন বলে একটা ব্যাপার আছে Oscar season is the time period in which Hollywood studios release their more critically acclaimed films, hoping to win at the Academy Awards. Oscar season usually begins in the fall, around November,[1]
    http://en.wikipedia.org/wiki/Oscar_season

    মুভিটা দেখতে হবে।
    তবে আরেকটু বিস্তারিত আশা করেছিলাম

    • স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

      আরেকটু বিস্তারিত বললে পরে দেখার মজা থাকতো না। এছাড়া চলচ্চিত্রটার অস্কার প্রাপ্তির সমালোচনা হতে পারে, কিন্তু, চলচ্চিত্রটা এমনিতে বেশ ভালো……

  3. সামিরা বলেছেনঃ

    ছবিটা দেখেছি আমি। আমার নিজের কাছেও মনে হয়েছিল অস্কার পাওয়ার পেছনে ইরানিদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতাকে(এই প্রবণতা আসলেই আছে তো?) তুলে ধরাটা একটা কারণ হতে পারে।

    তবে এর বাইরে আমার চোখে আর কোন খুঁত ধরা পড়ে নি ছবির। আমি অবশ্য খুব ভাল বুঝি না এসব, তারপরও বলছি। “আদালতের স্বচ্ছতা”র জায়গাটুকু বুঝলাম না ঠিক, বরং আমার কাছে ছবিতে ওদের বিচারব্যবস্থাকে যেভাবে দেখানো হয়েছে সেটা চমৎকার লেগেছে। গৃহপরিচারিকাকে একটু ধাক্কা দেওয়ার কারণে নাদের আর তার পরিবারের যেই ভোগান্তি হয় – সত্যিই এমন হলে মানুষের অপরাধপ্রবণতা অনেক কমে যাওয়ার কথা না? যেখানে কোন কোন দেশে কেউ কাজের লোককে অত্যাচার করে মেরে ফেললেও কোন শাস্তি হয় না। 🙁

  4. বাবুনি সুপ্তি বলেছেনঃ

    ভাল লাগল রিভিউ 🙂 আরো মুভির রিভিউ পাব আশা করি।

  5. মাহি বলেছেনঃ

    রিভিউটা অনেক ভালো হইছে।
    😀

    নেক্সট আর কোনটার রিভিউ দিবেন ??
    অপেক্ষায় থাকলুম … 🙂

    • স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

      আমি তো উৎসাহ পেয়ে যাচ্ছি। 😀
      দেখি কোনটা দেয়া যায়। ইদানীং মুভির চেয়ে ইংরেজী সিরিয়াল অনেক বেশি দেখা হচ্ছে……

  6. অনাবিল বলেছেনঃ

    দেখতে হবে তোহ!
    মুভি খুব কম দেখা হয় আমার, তবে ইরানি মুভি খুবই ভালো লাগে, খুব সুক্ষ মানসিক এবং মানবিক অনুভূতি গুলো এতো অসাধারণ করে তুলে ধরে…………… 🙂

    আরো মুভি রিভিউ চাই …………… 🙂

  7. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    কাটাছেঁড়া ভালো লাগলো কিন্তু অস্কার নিয়ে প্রশ্ন আমার মনেও আছে।

    অফটপিক-
    বানান! বানান!

  8. অদ্ভুত ছেলে বলেছেনঃ

    এখনো দেখি নাই। তবে ইরানী ছবি যেই চার পাঁচটা দেখসি সবগুলাই ভালো পাইসি। এইটাও দারুন হবে সন্দেহ নাই। কাহিনী ভালো লাগসে 😀

  9. রাজিন বলেছেনঃ

    Awesome review

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।