পুরনো কথা তেমন মনে পড়ে না আমার।
সবচেয়ে পুরনো স্মৃতির কথাও মনে নেই।
একদম ছোটবেলার কিছু ঘটনার কথা মনে পড়ে, কিন্তু আমার বোনের দাবি – এগুলো আমি অন্যদের মুখে শুনে শুনে কল্পনা করেছি।
তো আমার কী দোষ? কোন্টা কল্পনা আর কোন্টা বাস্তব – সেটা এখন আলাদা করবো কীভাবে বলেন!
একটা বেশ প্রিয় স্মৃতি – আমাদের বাসার সামনে সাদা সাদা চিকচিকে বালু দিয়ে আমরা ছোট ছোট পাহাড় বানাচ্ছি। আমরা তিন ভাইবোন, আর এক ভারতীয় ছেলে।
ওর সাথে আমরা অনেক খেলতাম মনে হয়। আমরা যে বাড়িটায় থাকতাম, সেটারই কোন এক ফ্ল্যাটে ওরাও থাকতো।
সেই বাড়িতে এক তিউনিসিয়ান পরিবারও থাকতো বলে আমার ধারণা। সে বাসার মা-টা তার বাচ্চাকে ট্রলিতে করে নিয়ে যেত নিজের সাথে, কাজে যাওয়ার সময়।
এর সবই আমার আবছা আবছা মনে পড়ে। এমনও হতে পারে অনেক ভুলভাল আছে স্মৃতিতে।
বড় একটা শামুকের কথা মনে পড়ে, আমাদের বাসায় ছিল। সেটা কানে দিয়ে সাগরের গর্জন শুনতাম বোধ হয়। বীচ থেকে কুড়িয়ে এনেছিলাম নাকি?
আম্মুর কাছে একটা পরিবারের গল্প শুনতাম। তাদের দশ-বারোটা বাচ্চা, সবাইকে নিয়ে বীচে এসেছিল কোন একদিন। তারপর একজনকে আর খুঁজে পায় নি পরে।
এসব লিখতে এত অস্বস্তি হচ্ছে, কেবল ভাবছি – যদি ভুল থাকে কোন?
কিন্তু স্মৃতিচারণে ভুল হলে কি কোন সমস্যা আছে? আমি তো শুরুতেই বলে নিচ্ছি…আর না হয় গল্পই হল এসব। কার কী এসে যাবে তাতে?
দৈত্যাকৃতির কিছু ছাতার কথা মনে পড়ে। মাথার অনেক ওপরে – খুলছে আর বন্ধ হচ্ছে, আস্তে আস্তে।
একটা ছড়া মনে পড়ে…
আমি মনে হয় একটু বেশি বয়স পর্যন্ত ফীডারে দুধ খেয়েছি, নাহলে এখনো মনে আছে কীভাবে?!
রাঙতা প্যাঁচানো ছোট ছোট চকলেটের কথা মনে পড়ে, সেই ভারতীয় ছেলেদের বাসায় খাটের ওপর। কী অদ্ভুত স্মৃতি!
নাকি গল্প?
দেশে আসতে চাওয়ার বায়না ধরার কথা মনে পড়ে।
প্লেনে অনেক রঙের জুসের কথা মনে পড়ে, এয়ার হোস্টেসের হাতের ট্রে-তে।
শেষ। ঐ কয় বছরের আর কোন স্মৃতি মনে পড়ছে না এখন আর।
তারপর…
জিদ করে ভাইয়ার নিউজপ্রিন্ট খাতা নিয়ে, বারান্দার মেঝেতে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে খালি পাতাগুলোর পুরোটা জুড়ে এত বড় বড় গোল্লা এঁকে দিয়েছিলাম একবার।
রেগে ওর ‘তিন গোয়েন্দা’র মাঝখান থেকে কয়েকটা পাতা ছিঁড়ে ফেলার কথাও মনে আছে।
একটা মানুষের মুখ মনে পড়ে, স্থির মুখটা তাকিয়ে দেখছি আমি। তারপর আরও অনেকগুলো মানুষ মিলে তাকে নিয়ে বাড়ির গেট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, এমন একটা দৃশ্য।
একটা মানুষের বুকভাঙা কান্নার দৃশ্য ভাসে মাঝে মধ্যে চোখের সামনে, একটা মূহুর্ত কেবল।
ফর্সা এক মহিলার দিকে তাকিয়ে হাসছি আমি…
তারপর আয়নার দিকে তাকালাম।
শেষ।
লজ্জাবতীর কথা মনে পড়ে। এই পাতাগুলো কি মুগ্ধই না করতো সে সময়!
একটা জায়গায় গিয়ে অনেক অনেক লজ্জাবতীর দেখা পেতাম। অন্য কোথাও তেমন না।
একটা রকিং চেয়ার কিনতে চেয়ে খুব বায়না ধরলাম একবার। নিয়েও যাওয়া হল আমাকে কোথায় যেন, সেখানে অনেক রকিং চেয়ার। কিন্তু সব বড়দের, ইয়া বড় বড়। আমার জন্য উপযুক্ত কোনটা পাওয়া গেল না।
ফিরে এলাম। আর কেনা হয় নি।
একটা বিশ্রী সময়ের কথা মনে পড়ছে, কয়েক মূহুর্ত স্থায়ী হয়েছিল সেটা। বলবো না।
খুব লম্বা একটা মেয়ে থাকতো এখানে, ওর মা ছিল রাশান। বাবা এদেশেরই। দুটো নাম ছিল ওর – দু’ভাষার দুটো নাম। মায়ের কারণেই দেখতে একটু অন্যরকম ছিল বোধ হয় ও। দাদীর কাছে থাকতো ও, পরে বাড়ি বিক্রি করে কোথাও যেন চলে গেল সব।
ওর জন্মদিনের কথা অল্প একটু মনে পড়ে। একটা নরমাল কেক, আর একটা কেক সাদা ভালুক না বিড়াল – কী যেন।
এটা বলতে গিয়ে আরও অনেক পুরনো আরেকটা মেয়ের জন্মদিনের কথা মনে পড়ছে। ওর জন্মদিনের কেক ছিল তিনতলা – সবচেয়ে ওপরের তলায় একটা রাজকন্যা।
আমার সাদা বালিশে দাগ হয়ে যেত কিছুদিন পর পর। আর আম্মু অবাক হত এসব দাগ কোথা থেকে আসে সেটা ভেবে।
রাতের বেলা আমি শব্দ না করে অনেক কান্নাকাটি করতাম মাঝে মধ্যে, সেই কান্নার দাগ।
নাহ্, আমি দুখী বাচ্চা ছিলাম – এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। অনেকের চেয়ে সুখীই ছিলাম বরং, আর ভাগ্যবতী! আমি নিজে নিজেই দুঃখ বানাতাম। সবচেয়ে কমন দুঃখ যেটা ছিল বলে মনে পড়ে – অমুক মানুষটা কেন আমার মনের মত হল না। কেন আমি যেমন চাই তেমন ভাল হল না।
এমন ভাব, যেন নিজে খুব ভাল মানুষ!
প্রচণ্ড উদ্ধত ছিলাম, মনে আছে। বাইরের মানুষের সামনে না অবশ্য। সহজেই রাগ উঠতো। জিদ করতাম; ‘মেয়েমানুষের এত জিদ ভাল না’ – এ কথাও শুনেছি।
জিদ তো কারোরই ভাল না, তাই না? ছেলে-মেয়ে যাই হোক।
লিখতে লিখতে মনে হচ্ছে যেন ভুলে যাচ্ছি আরও সবকিছু।
ক্লাস ওয়ানে প্রথম স্কুলে ভর্তি হতে গেলাম। কিন্তু ঐ ক্লাসটা আর পড়া হয় নি আমার। ড্রেস বানানো হয়েছিল সেটা মনে আছে, সাদা শার্ট আর সবুজ রঙের টিউনিক। একদিন-দুদিন গিয়ে আর যাই নি, ইচ্ছা করে নি তাই।
টু-তে পড়েছি কয়েক মাস। ঐ বছর থেকেই স্মৃতিগুলো একটু পরিষ্কার হতে শুরু করেছে।
আমারও কত কিছু মনে পড়ে। সেই মনে পড়াগুলা আসল নাকি নকল/কল্পনা জানি না তো! সম্ভবত সবারই এমনটা হয়!
আমাদের স্মৃতিতে মনে হয় ফাকিঝুকি ভুল কপি পেস্টিং এর সম্ভাবনা আছে!
আমিও অনেক বড় হয়ে ফিডার খাইছিলাম! মানে প্রায় ক্লাস ওয়ান যতদূর মনে পড়ে 😛
সবার এমনটা হয় শুনে আশ্বস্ত হলাম। নাহলে আবার নিজের মাথা খারাপ কিনা সেটা নিয়ে চিন্তা হত।
হাহাহাহা, না আমার অবস্থা এত খারাপ ছিল না। এখনো আবার খান নাকি লুকিয়ে লুকিয়ে? 😛
খাইসে! কিছু কইতে গেলেই দেখি বিপদে পড়ি!
🙄
আরেহ বাবা !! এই রকিং চেয়ার এর স্বপ্ন তো আমার এখনো আছে 😛
“আমাদের বাসার সামনে সাদা সাদা চিকচিকে বালু দিয়ে আমরা ছোট ছোট পাহাড় বানাচ্ছি।” … প্রথম দিকের এই লাইন গুলা পড়ে আমার যে অই দূর মরুভুমির দেশের সেই কবেকার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। 🙁
“সবচেয়ে কমন দুঃখ যেটা ছিল বলে মনে পড়ে – অমুক মানুষটা কেন আমার মনের মত হল না।” আর এইটা পড়ে প্রথমেই মনে হল। তুমার কপালে খারাপি আছে ভবিষ্যতে যদি এখনো এই জিদ থাকে। 😛 O.o
লিখা তা ভালো হয়েছে। ভাবিয়ে তোলে এই আর কি।
আমার এখন আর ওরকম কোন স্বপ্ন নাই, এখনকার স্বপ্ন সব ‘অবস্তুগত’, ধরা-ছোঁয়া যায় না এমন। এইসব স্বপ্ন পূরণ বেশি কঠিন মনে হয়।
তুমিও কি মরুভূমির দেশের মানুষ নাকি মিয়া? 😛
হাহাহা, সেটাই। দেখা যাক কী হয়!
ভাবিয়ে তুলেছে জেনে খুশি। 🙂
লেখাটা ভাল লাগল-খাপছাড়া স্মৃতি খাপছাড়া কথা এটাই স্মৃতিচারন আসলে। আমারও মাঝে সাঝে এমন একটা দুটা জিনিস মনে আসে আসে না-ডে জা ভু মনে হয় অনেক কিছু। শিরোনামের গানটা অনেক পছন্দের।
ধন্যবাদ! 😀
আমার নিজেরও প্রিয় গান। 🙂
যাক একজন পাওয়া গেলো যার ছোটোবেলার গল্প খুব বেশি মনে নেই। আমি খালি ভাবি সবার ছোটোবেলার কথা মনে আছে, কিন্তু আমারটা মনে পড়ে না ক্যান!
দুটো জিনিস মনে আছে…
একটা হলো, একটা বান্ধবী ছিলো সামিয়া নাম (সামিয়া কিন্তু!) ও ক্লাসে খালি ফার্স্ট হইত আর আমি খালি সেকেন্ড হইতাম। আমারে প্রতিদিন টিফিন খাওয়াইত। :love:
আরেকটা হলো, নার্সারীতে থাকতে একা একা মেইনরোড পার হয়ে বাসায় চলে আসছিলাম। আম্মু আমাকে দেখে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো। পরে অনেক মারছে :crying:
হ্যাঁ আমিও সেটা ভাবি, মানুষের এত কিছু মনে থাকে কীভাবে!
টিফিন খাওয়াইত! 😛 😛 খারাপ খুব খারাপ!
হাহাহাহাহাহ, মজা পাইলাম খুব। :clappinghands:
কোথাও যেন চলে গেল সব-
কোন কোন শব্দ খুব নিঃশব্দে হারিয়ে যায়
মহাকালের মাঝখানে তার অস্তিত্ব অজানাই থাকে,
শুধু জ্যোৎস্না রাত্রি জানে শূন্যতার গভীরতা
তাই কিছুই আর পড়ে না মনে
এই হারিয়ে যাবার মেলায়।
😀 এত কবিতা কীভাবে লিখেন?
আমি তো কনফিউজড হয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিলো কোন গল্প পড়ছি……
পরে বুঝলাম, আসলেই আত্মকথন।
পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিলো, চোখের স্মাওনে কোন সিনেমার ট্রেলার দেখছি, টুকরো টুকরো ছোট্ট ঘটনা…… 🙂
উফ্ আগে বলবেন না? জীবনের প্রথম গল্পটা একটুর জন্য লিখতে পারলাম না। 😛 আগে জানলে গল্প বলে দাবি করতাম!
আমার ছোটোবেলা আসলেই রুপকথার মতো :love: সেই রুপকথায় ভাইয়া কখনো নায়ক আবার কখনো ভিলেন যখন মারামারি হতো আরকি। 😛
অসম্ভব মজা আর দুষ্টামি করতাম ছোটোবেলায়
এখন সেইসব কথা মনে হলে মন খারাপ হয়ে যায় :crying:
লিখাটা ভালো হয়েছে :love:
হাহাহা। তাই নাকি? 😀
আহা রে! 🙁
থ্যাঙ্কু পিচ্চি!
ছেলেবেলার অনেক কথা মনে পড়ে, কিন্ত সবার দাবি, কথাগুলো তাদের মুখ থেকে শুনে শুনে কল্পনা আমার………।
দুঃখ বানানোর অভ্যাসটা এখনো আছে……… :p
এটা সবসময় মনে হয়- অমুক কেন আমার মনের মতো হলো না, আমি যেমন চাই তেমন কেন হলো না……
স্মৃতিকথন……… বেশ লেগেছে………… 🙂
আপনার সাথে অনেক মিল তো দেখি আমার! 😀
আমার ছোটবেলা এখনও শেষ হয়নাই! 😛
সুন্দর একটা লেখা 🙂
পিচ্চি! 😛