ক্লাস নাইন-টেনে থাকতে বিভিন্ন গাণিতিক ব্যাপার স্যাপারে “যদি এবং কেবল যদি” টাইপের একটা কথা থাকতো। অবিশ্বাস্য হইলেও সত্য, এই কথায় কোনো কৌতুকের আভাসা পর্যন্ত ছিলোনা, অথচ পড়া মাত্র আমার হাসি পাইতো 😛 এই পোস্টটি সম্পর্কেও আমি বলতে চাই, সিরিয়াস কেউ যদি “শুধু এবং কেবল শুধু” অলস সময় কাটাতে চান, তাহলে এই পোস্ট পড়লে পড়তেও পারেন, ক্ষতি নাই !
“কী বে ডাক্তর সাব?” – এই কথা শুনে ভিতরে-বাহিরে অন্তরে অন্তরে জ্বলিয়া পুড়িয়া, ছারখার সহকারে অঙ্গার হইতে হইতে আমি ক্লান্ত! বক্তার কন্ঠে যতোটা আনন্দ গদগদ করে, আমার শ্রবন যন্ত্রে ততোটাই কর্কষ ধ্বণি সজোরে আঘাত হানে। ভাই, স্কুল পাশ করলাম, কলেজ পাশ করলাম, পরীক্ষা মানে ছিলো দুঃখ-আনন্দ মাখা স্মৃতি! দুঃখ, কারণ সিরাম পড়া দেওন লাগতো, শৈশবদার ভাষায় “উলস” পড়া ! আর খুশী, কারণ পরীক্ষার পরেই এমন সব কর্মে মনোনিবেশ করা হবে, যাতে চিরতরুনদের মনোযোগ সর্বদাই অটুট থাকে। মানে, ঐরকম কিছুনা, প্লীজ ট্যাব ক্লোজ করবেন না, বিশ্বাস করেন ১৮+ কিচ্ছু বলিনাইরে ভাই ! মানে, পরীক্ষা শেষ মানেই ছিলো ২০ দিনের স্ব-ঘোষিত ছুটি, এরপরে বঙ্গমাতার বক্ষে বিচরন কে ঠেকায় !
এবার আসি মেডিকেলে। পৃথিবী যেমন সূর্যের চারিদিকে ঘোরে, রিক্সায় উঠে পশ্চাতদেশ লাগানো মাত্র ভাড়া দশ টাকা, সকল নব্য রাজাকারের প্রথম কথাই হলো – “আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা”, ডেস্টিনি বন্ধ হলে টাই ব্যবসায়ীরা কচুরি পানায় আত্মহনন ঘটাবেন – এসবই যেমন অকাট্য সত্য, আমাদের মেডিকেলের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছেও পরীক্ষার যে কোনো সম্মান নেই, তা এ সবের থেকেও দুর্বার সত্য ! ধরেন, আপনাকে চাউল সিদ্ধ কইরে বলা হইলো, “এইটা রাইস”, এরপরে হলুদ দিয়ে বলা হইলো “এইটা ফ্রাইড রাইস”, এরপরে পানি দিয়ে পাতলা (পাইন্যা) করে বলা হলো, “এইটা খিচুড়ি” – এসব কিছুই হইলো ভাতের ডিরাইভেটিভস ! একইভাবে আমাদেরকেও আইটেম, কার্ড, টার্ম, প্রফ নামের ভিন্ন মোড়কে একই গোলা (পরীক্ষা) খাওয়াতে খাওয়াতে ভক্তি শ্রদ্ধা উঠে গেছে পরীক্ষা থেকে। সপ্তাহে ৮টা দিন (মেডিকেলে পড়লে ছয়দিনরে ছয় মাস মনে হয় বলিয়া অনেকে অবৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়েছেন, কিন্তু নাসার বিজ্ঞানীরা টাইম ডাইলেশন নিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের মতে, “যারা মাইনষের হার্ট-লাংস ধইরা আইসা সেই হাত দিয়াই দেদারসে প্লেটের পর প্লেট ভাত গলধঃকরন করিতে পারে, তাহারা আর যাই করুক, মানুষ সুবিধার না! তাদের সাঙ্ঘাতিক কথার অবশ্যই একটা মুল্য আছে!) আইটেম দিতে দিতে যখন ঘামে ঘামায়িত, তখন মাঝে মাঝে আকাশ হইতে বজ্রপাত হয় যে, “কাইল এনাটমি ২টা, ফিজিও ২টা আর বায়ূ-কাম-স্ত্রী ওরফে বায়োকেমিস্ট্রী ১টা আইটেম, পড়াশুনা স্টার্ট দে!”, তখন আমি শুধু আকাশ দেখি ! হে বিধাতা, টিচারদের শক্ত এটেল মাটি দিয়া না বানাইলে কি ক্ষতি ছিলো?
ওসব কথা বাদ, মেডিকেলের কথা বহুত বলিয়াছি, বলে বলে তাহার মুল্য বাড়াইয়া দিয়াছি। “এখন নিজের কথা বলি, নিজের কথা বলতে বলতে নাও দৌড়াইয়া চলি”, গানের মতো গাইতে ইচ্ছে করলেও, আমি “মিচা” কথা বলিনা। আমি আমার নবাবী ভূড়ি নিয়ে চেয়ারেই বসে আছি, আর চটাশ চটাশ করে টাইপ করতেসি, আম্মা মহাবিরক্ত, কারণ, কাইল ২টা ফিজিও আইটেম আছে, আর আমি বাংলা সাহিত্যে এক অনবদ্য ও অকৃত্রিম হাওয়া যোগ করতে উদ্বেলিত। হাওয়া বললাম, কারণ এই পোস্টের মুল্যমান হাওয়ার থেকেও সামান্য কম, কারণ হাওয়াতে সুগন্ধ, দুর্গন্ধ, মাটির সোদা গন্ধ বহুত কিছুই থাকে, আমার এটাতে শুধুই কটু গন্ধ 😛
আজ ব্যাপক পড়াশুনা করে গেছিলাম PECTORAL REGION এর আইটেম দিতে। ইহা সম্পর্কে ধারণা দিতে আমার লজ্জা করছেনা, কিন্তু পাঠককেও লজ্জায় ফেলাইতে ইচ্ছে করেনা। আপনি চাইলে গুগল করতে পারেন, ১৮ বয়স হোক কি না হোক। জ্ঞানের দুয়ার সবার জন্য উন্মুক্ত!
তো, যা বলছিলাম। গেলাম আইটেম দিতে, সিরাম উলস প্রিপারেশন! ম্যাডাম ডাকিলেন, “রোল ১৮৮”, আমি তাকাইলাম! “আমি দেখিলাম উহারে দেখিলাম” ধরণের একটি আবেগ সর্বদাই আমার মাঝে কাজ করে, আজও করলো। আমি এক লম্ফে ম্যাডামের সবচাইতে পাশের সিটে প্রত্যাবর্তন করিলাম। এরপরের অবস্থা শোচনীয়। এসির বাতাসের নীচেও আমি ঘামাচ্ছি, অনিন্দ্য সুন্দরী ম্যাডামের কোনো প্রশ্নের উত্তরই আমি টেনে হিচড়ে পেট হইতে বাহির করতে পারছিনা। প্রতিটার উত্তরই জানি, হাসের মতো গলা আজ ছুচোর মতো করে আওয়াজ বের করছে, চি চি করে ২-১টার উত্তর দিলাম। বহু আশা নিয়ে, হাতের মুঠো শক্ত করে, নতুন শক্তি নিয়ে যখনই আমি হড়বড় করে সব বলিবার জন্য চোখ খুলিলাম, ম্যাডাম বলিলেন, “যাও”। ইশশশ, বলিবার কালে কী সুন্দর ঠোঁট গোল করিয়া কহিলেন “যাও” !!!
এই পোস্টের শিক্ষনীয় কিছু না থাকা সত্ত্বেও, ঠিকই কিন্তু উতসাহী পাঠক আর কিছু শিখুক না শিখুক PECTORAL REGION সম্পর্কে জেনে গেছেন। আজ এ পর্যন্তই, আবার দেখা নাও হতে পারে, এতে অবাক হবার কিছুই নাই।
( খুবই অগোছালো লেখা, এটাই স্বাভাবিক। যারা মানুষ ভালো, তারা নাকি অগোছালো হয় কিছুটা ;D )
হে হে হে
মেডিকেল জীবন
কেমন জানি স্যান্ডউইচ স্যান্ডউইচ ভাব
মজা লাগসে =))
আমি মেডিক্যালে পড়লে পাস করতে পারতাম না, এত নিয়মিত পড়া আমার পক্ষে অসম্ভব! এজন্যেই মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দেই নাই! :penguindance: :penguindance:
btw, আমি কিন্তু উৎসাহী পাঠকদের কাতারে পরি নাই! :happy: :happy:
মেডিকেলকে, :dhisya: :fire: :dhisya:
তোকে, :clappinghands: :babymonkey: :huzur:
আর আমি, =)) 🙄 :penguindance:
গত ছয় বছর অজস্র সাপ্লির বোঝা টানতে টানতে আমি ক্লান্ত না, কেমন জানি ম্যাদা মাইরা গেছি! 😳
“যারা মানুষ ভাল, তারা নাকি অগোছালো হয় কিছুটা” 😛 😛 মহামতি নিশমের উক্তি নাকি?
মেডিকেলের পুলাপান!! আমি ভয়ে ঢুকি নাই!! যাউজ্ঞা এইগুলা অভ্যেস হয়ে যাবে!
তোর লগে কুলাকুলি/ হাত মিলানো সাবধানে করতে হইব বুঝা যাইতেছে!
Pectoral Region 😛
মেডিকেল ভয় পাই, তবে হবু ডাক্তারদের ‘কলুর বলদ’ অবস্থা পড়তে ভালোই লাগে 😛
হা হা………
শুভকামনা থাকলো…….
বাই দ্য ওয়ে, ডাক্তার ভয় লাগে….. 😛
মেডিকেল বন্ধুদের মুখে এই আইটেম এর কথা এত শুনছি পরে বলতাম আইটেম ছাড়া কিছু থাকলে বল ।
হে হে, আইটেম বহুত জ্বালায় ঠিকাছে, তবে চান্সে যখন একবারে 10-12 টা ক্লিয়ার হয়া যায় তখন সেই আনন্দ রাখার জায়গা ধরাধামে দুর্লভ 😉
শেষের বাক্য অনুযায়ী আমিও ভালো মাইনষের কাতারে পড়ি
হাহাহাহ………………………