৬ই মে
ঘরের জানালা খুলে বাইরে উঁকি দেয় তমাল। ঝোড়ো বাতাস এক ঝাপটা বৃষ্টি এনে ফেলে তার মুখে। বৃষ্টির পর্দার মধ্যে দিয়ে যেন অন্য এক ঢাকা শহর দেখার চেষ্টা করে সে। তবে সেই চেষ্টা সফলতা পাওয়ার কোনই কারণ নেই। রাত দু’টো বাজে। ঢাকা শহর আলো নয়, অন্ধকারের শহর।
এই ঝড়-বৃষ্টির রাতে ঘুম ভাঙার কারনটা ধরতে পারছে না তমাল। কাঁথার নিচে আরাম করে ঘুমাচ্ছিল সে। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেছে কেন যেন। এক মুহূর্ত পরেই অবশ্য ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়। জানালার নিচের চওড়া কার্নিসে একটা বিড়ালের বাচ্চা ভিজে চুপচুপে হয়ে বসে আছে। করুণ সুরে মাঝে মাঝে মিঁউ বলে ডেকে উঠছে বারবার। এই ডাকেই নিশ্চয়ই ঘুম ভেঙেছে তার।
তমাল বুঝতে পারে না, কী করা উচিত তার। বিড়ালটা ভিজে কষ্ট পাচ্ছে, এটা দেখতেও ভালো লাগছে না। আবার, ঘরে এনে কিছু করার চেষ্টা করবে কিনা, সেটাও না। তবে, তার সব সমস্যার সমাধান করে দিলো বাচ্চাটাই। জানালা দিয়ে এক লাফে এসে ঢুকলো তমালের ঘরে। এসেই গা কাঁপিয়ে ঝেড়ে ফেললো বৃষ্টির পানি। তমালের দিকে তাকিয়ে মায়া মায়া চোখে মিঁউ মিঁউ বললো কয়েক বার। কেমন যেন মায়া লাগলো তার। বিছানা থেকে উঠে লাইটটা জ্বালিয়ে, রান্নাঘর থেকে এক বাটি দুধ এনে দিলো তমাল। একটু করে বাটিতে মুখ ডোবায় আর তমালের দিকে তাকিয়ে যেন না বলা কথায় ধন্যবাদ দিতে থাকে বিড়ালের বাচ্চাটা।
২২শে মে
সপ্তাহ দু’য়েক কেটে গেছে। কিটি এখন তমালের বেকার জীবনের নিঃসঙ্গ ঘরের বন্ধু হয়েছে যেন। আদর করেই তমাল বাচ্চাটার নাম দিয়েছে কিটি। ধবধবে সাদা বাচ্চাটা ঘুরে বেড়ায় ঘর জুড়ে। অফিস থেকে ফেরত আসার পর একাকী সময়টা বাচ্চাটার সাথে ভালোই কাটে তমালের।
২রা জুলাই
সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরত এসে ঘরের সামনে একটা মেয়েকে শুয়ে থাকতে দেখে তমাল। বিরক্তিতে ভুরু কুঁচকে যায় তার। এমনিতেই আজ অফিসে বসের অনেক ঝাড়ি খেতে হয়েছে, এখন আবার কী ঝামেলা এই ঘরের দুয়ারে।
দেখে মনে হচ্ছে, বছর দশেক বছর হবে মেয়েটার। ময়লা একটা কমলা রঙের ফ্রক পরে আছে। ধাক্কা দেয়ার জন্য মেয়েটার হাত ধরতেই চমকে ওঠে তমাল। ভীষণ জ্বরে যেন গা পুড়ে যাচ্ছে। কয়েকবার ডেকে ওঠানোর চেষ্টা করে বুঝতে পারে তমাল, ডাকে সাড়া দেবার মত অবস্থা মেয়েটার নেই। দরজা খুলে কোন রকমে পাজাকোলা করে মেয়েটাকে এনে খাটে শোয়ায় সে।
প্রতিদিন ঘরে ঢোকার সাথে সাথেই কিটি এসে পায়ের কাছে ঘোরাঘুরি করলেও আজ কেন যেন ঘরের এক কোণে গিয়ে বসে আছে। ঘাড়ের কাছে লোমগুলো খাড়া, একই সাথে গলার গভীর থেকে কেমন যেন একটা গম্ভীর আওয়াজ করছে কিটি।
তমাল দৌড়ে বাথরুমে যায় পানির বালতি আনতে।
৪ই জুলাই
মেয়েটা একটু সুস্থ হয়ে উঠেছে। জ্বর ভালো হলেও বিছানা থেকে উঠতে পারে না। সফুরা নাম ওর। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর চাচা এক বাড়িতে কাজে দিয়ে গ্যেছিল। ওই বাসায় প্রচণ্ড মারতো, খেতে দিতো না। তাই সুযোগ বুঝেই পালিয়েছে।
এতো কিছু শুনে ওকে বের করে দিতে পারে নি তমাল। কয়েকদিন যাক, মেয়েটা একটু সুস্থ হলে দেখা যাবে কী করা যায়।
কিটি এই তিন দিন ধরে যে কী অদ্ভূত আচরণ করছে। এর মধ্যে তো বার দু’য়েক সফুরার দিকে তেড়ে আসেছিল খামচি দেয়ার জন্য। গলার ভিতর থেকে ঘরঘর শব্দ করেই যাচ্ছে। কোন খাবারও মুখে দেয় না।
৫ই জুলাই
সফুরাকে অসুস্থ রেখেই আজকে অফিসে যেতে হয়েছে। সারাদিন মেয়েটার কেমন গিয়েছে কে জানে! ঝড়বৃষ্টির মধ্যে তো এমনিতেও অফিসে যেতে ভালোলাগে না।
তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বাসায় ঢোকে সে। রুমের বাতিটা তো জ্বলিয়েই গিয়েছিল বলে মনে পড়ে। নিভিয়ে দিয়েছে মনে হয় সফুরা। কিন্তু, বিছানার উপর তো কাউকে দেখা যায় না।
রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যায় তমাল। অন্ধকার রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে কিছুই দেখা যায় না। হঠাৎ বাইরে ঝিলিক দিয়ে ওঠা বিদ্যুৎ-এর আলোয় মেঝেতে একটা অবয়ব দেখা যায়।
মেঝেতে পড়ে আছে সফুরা। ঘাড়টা অদ্ভূত ভঙ্গিতে বাঁকানো। চারপাশের সাদা মেঝে লাল হয়ে আছে।
আরেকবার চমকে ওঠা আলোয় দেখে তমাল, ওই রক্তের মাঝে থেকে কতগুলো পায়ের ছাপ চলে গিয়েছে ঘরের দিকে, অনেকটা বিড়ালের পায়ের ছাপের মতো। শেষের দিকে ছাপগুলো কেমন যেন বড় কোন প্রাণীর পায়ের ছাপের মতো হয়ে গিয়েছে। ছাপগুলো সোজা গিয়েছে খাটের নিচের দিকে।
হঠাৎ ঘাড়ের কাছে চুলগুলো কেমন যেন দাঁড়িয়ে যায় তমালের। বাইরে আরেকবার ঝলসে ওঠে বজ্রপাতের আলো……
শেষের টুইস্টটা ভাল পাইছি। 😀 কিছুটা ভয়ও পাইছি! :voypaisi:
আমি ভাবছি বিড়ালটা নিজেই সব ভালবাসা পেতে চায় দেখে মেরে ফেলছে মেয়েটাকে। 😛
😛
বাহ! আসলেই, শেষটা ব্যাপক হয়েছে তো!! আমি একটু হতভম্বই হয়ে গেছি পড়ে… 😳
:happy:
খুন হইসে … কেউ শার্লকরে ডাকো … 😳
ভৌতিক গল্প লেখা ফ্লপ হইসে মনে হয় 🙁
শেষ দিকে মনে হচ্ছিলো কোনো হরর মুভি দেখছি। :voypaisi:
শালার অশুভ বিড়াল।
হা হা 😛
ওরে বাবা! ভয় লাগে!!
ভুতুড়ে গল্প লেখার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক!
চেষ্টা করবো আরও……
তোরটা ভালো হচ্ছে। লিখতে থাক
প্রথম আমি লিখছিলাম কলেজে থাকতে। লিখার পর পড়ে দেখি রম্য টাইপ হইছে।
শেষটা আরও জমাইতে হবে আসলে। আর কী কী হরর লেখা পড়ছিস সেটাও ব্যাপার
ধন্যবাদ!
হরর গল্প খুব বেশি পড়েছি তা না। গতকাল স্টিফেন কিং এর একটা ছোট গল্প পড়ে হঠাৎ মনে হলো, একটা হরর গল্প লিখি। সেটারই প্রকাশ এই গল্প। খুব ভালো হবার কথাও না। দেখা যাক সামনে কেমন লিখতে পারি……
:voypaisi:
লিখাটা ভালো হয়েছে। সামনে আরও ভালো ভূতের গল্প পড়তে চাই।
ধন্যবাদ।
সামনে আরো ভালো লেখার চেষ্টা করবো 🙂