জীবনে আমরা সব মানুষ-ই কমবেশী অভিনয় করি। সে ইচ্ছাকৃত হোক, অনিচ্ছাকৃত হোক, কারো ক্ষতি না করে হোক অথবা কারোর ক্ষতি করার উদ্দেশ্যেই হোক- অভিনয় করা হয়-ই। এটা আমার নিজস্ব অভিমত। এরকম প্রচুর অভিনেতা আমরা রাস্তায় চলার পথেও দেখি। তাদের হয়ত কারো ছেলের অসুখ, মেয়ের বিয়ে দিতে পারছে না, কারো আবার বাবা অথবা মা মারা গিয়েছে। নতুবা সে নিজেই অসুস্থ। এরকম ও দেখেছি অন্ধ ভিক্ষুক, রাস্তায় অসহায়ের মত বসে আছে। আরেকদিন হয়তো অন্য রাস্তায় তাকেই দেখা গেল মেয়ের চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাইছে। দিব্যি চোখে দেখতে পায়! আমাদের তখন অনেক রাগ লাগে। প্রতারক বলে গালি দেই। অনেকে হয়তো দু-চারটা চড় থাপ্পর ও মেরে আসে।
এরকম ই একটা ঘটনা বলি। আমি যেই হলে থাকি তার সামনেই ঘটনাটা ঘটেছিল। এক হাড় জিরজিরে বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালা। রিক্সা ফেলে রাস্তার পাশে শুয়ে আছে। বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে।আমরা কয়েক বান্ধবী হলে ফিরার পথে এই দৃশ্য দেখে তাকে হলের গেস্ট রুমে নিয়ে আসি। বৃদ্ধ বললেন তার ভীষণ শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে।খুব কষ্ট লাগছিল। দেখে মনে হচ্ছিল এখন ই হয়ত তার শ্বাস আটকে যাবে।হলে বেশ কেয়েকজন মিলে আমরা তাৎক্ষণিক ভাবে টাকা তুলে সাহায্য দেই, ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে দেই। কিন্তু সে যেই রকম অসুস্থ তাতে খাবার আর টাকার ব্যবস্থা পরে করে আগে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু সবচেয়ে অবাক লাগছিল যে আনুষাঙ্গিক সব খরচ দিয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলেও সে কোনোভাবেই যেতে রাজী হল না। শেষ পর্যন্ত সাহায্যের কিছু টাকা আর খাবার তার হাতে তুলে দেই। ভীষণ কষ্ট করে তার রিক্সা টেনে টেনে সে চলে যায়।এরপর শুরু হয় আসল ঘটনা। আশেপাশের সব রিক্সাওয়ালারা এবার বলতে শুরু করে, তার মত অভিনয় আর কেউ পারবে না। এক একদিন এক এক রাস্তায় সে তার এই অসুস্থতার অভিনয় করে, তাকে কোন সাহায্য করা উচিত না…সে শ্বাসকষ্টের রোগী হলে এখন কি করে রিক্সা চালিয়ে নিয়ে গেল…হেন তেন আরও বহুকিছু। হতভম্ভের মত দাঁড়িয়ে থাকি। নিজেকে অসম্ভব প্রতারিত মনে হয়। সারাটা দিন মন খারাপ লাগে। ভাবি মানুষ কি করে পারে অন্যের আবেগ নিয়ে এমন প্রতারণা করতে? ভাবতে ভাবতে একটা সময় মনে মনে সমাধান দাঁড় করাই, এই লোকটার ঘরেও নিশ্চয়-ই বউ বাচ্চা আছে।এই টাকা টা দিয়ে হয়ত তাদের জন্য সামান্য চাল ডাল কিনে নিয়ে যাবে। আমাদেরকে ধোঁকা দিয়ে হয়তো সে আজকে একদুশো টাকা নিয়েছে। সেটা প্রতারণা ছিল বলে তারপর আমরা গালাগাল ও দিয়েছি।কিন্তু তারপরও তাকে না খেয়েই থাকতে হয়। তারপরও আমার মত দুবেলা নিশ্চিত খাবারের ব্যবস্থা তার হয় না।তারপরও শুধু একটু পেট ভরে খাবার জন্য সামান্য এই প্রতারণার আশ্রয় নিতে হয়। আমার বাবা মায়ের মত তারও নিশ্চয়ই ইচ্ছে করে তার ছেলে মেয়েগুলোকে পেট ভরে খাওয়াতে। না হয় সেটা অন্যদের সাথে প্রতারণা করেই হল!
ভাবতে থাকি কাকে দোষ দিব…যে সমাজ সব মানুষকে দুবেলা পেট ভরে খেতে দিতে পারে না সেই সমাজকে? নাকি সেই সমাজ প্রতারিত মানুষ যে খাবারের জন্য মিথ্যে অভিনয় করে তাকে?
খুব খুব খুব ভাল লেগেছে লেখাটা!
আপনার দৃষ্টিভঙ্গি চমৎকার।
আমরা সচ্ছল মানুষেরা খুব সহজেই এদের প্রতারক বলে গালাগাল দিই। অথচ কতটা অসহায় হলে মানুষ এই কাজ করতে পারে সেটা তাদের জায়গা থেকে খুব কমই চিন্তা করে দেখি। দেখলে বেশিরভাগ দায় আমাদের কাঁধেই বর্তাবে, এই আশংকায় হয়তো!
সরবে স্বাগতম! :welcome:
ধন্যবাদ 🙂
দোষ আমাদের যে আমরা এইসব সাত পাঁচ চিন্তা করি। খুব সহজেই এসব অসংগতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারি না।
দেশ কে নিয়ে চিন্তা করি দেশের মানুষকে নিয়ে চিন্তা করি।
একটু চিন্তা করলেই এসব অসংগতির সংগতিপূর্ণ ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। আমরা একটু কষ্ট করে চিন্তা করতে চাই না…এটাই সমস্যা
চমৎকার তো লেখাটা। উপসংহারটা আরো ভালো।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ 🙂
লেখাটার ভাবনাটা চমৎকার! আসলে এরকম প্রশ্নের মুখোমুখি হলেই নিজের ভেতরটায় টানাপোড়েন শুরু হয়……আসলে কাকে দোষ দেবো? সত্যিই জানিনা…
সরবে স্বাগতম! :welcome:
চমৎকার আরো লেখা পাবার আশায়…
অনেক ধন্যবাদ 🙂
সরবে স্বাগতম! :welcome:
“ভাবতে থাকি কাকে দোষ দিব…যে সমাজ সব মানুষকে দুবেলা পেট ভরে খেতে দিতে পারে না সেই সমাজকে? নাকি সেই সমাজ প্রতারিত মানুষ যে খাবারের জন্য মিথ্যে অভিনয় করে তাকে?”
উপসংহারটা ভাল লেগেছে খুব |
ধন্যবাদ 😀
” কাকে দোষ দিব…যে সমাজ সব মানুষকে দুবেলা পেট ভরে খেতে দিতে পারে না সেই সমাজকে? নাকি সেই সমাজ প্রতারিত মানুষ যে খাবারের জন্য মিথ্যে অভিনয় করে তাকে?”
দারুণ একটা লেখা। আমরা কতজনই বা এমন করে ভেবে দেখি!
পড়ে দেখার জন্য ধন্যবাদ 🙂
সবই অভিনয় … যাই হোক, সরবে জানাই স্বাগতম 🙂
ধন্যবাদ 🙂
অসাধারণ একটা পোস্ট
সরবে সরব স্বাগতম! :welcome:
ধন্যবাদ 🙂
“ভাবতে থাকি কাকে দোষ দিব…যে সমাজ সব মানুষকে দুবেলা পেট ভরে খেতে দিতে পারে না সেই সমাজকে? নাকি সেই সমাজ প্রতারিত মানুষ যে খাবারের জন্য মিথ্যে অভিনয় করে তাকে?
”
এভাবে ভেবে দেখিনি কখনো। সত্যিই অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গি 🙂
সরবে স্বাগতম :welcome:
ধন্যবাদ
সরবে স্বাগতম। :welcome:
আসলে কারো উপর রাগ করলে আমাদেরকে অন্তত ৭০ টা কারণ সেই ব্যক্তির পক্ষে দাঁড় করিয়ে তারপরে বিচার করা উচিত। তাহলেই ইতিবাচকতা আসবে সমাজের শরীরে। আপনার লেখাটার উপসংহারে এই চিন্তাটা দেখতে পেয়ে ভালো লাগলো খুব। 🙂