‘খাদুলি’,বগুড়া শহর থেকে অনেকটা ভেতরে ছোট্ট একটি গ্রাম।অজ পাড়া গা বললেও ভুল হবে না।যেখানে এখনও বিদ্যুতের ছোঁয়া লাগেনি সেই ছোট্ট গ্রামটাকে ঘিরেই আমাদের স্বপ্নের ডানা মেলা শুরু। ৩১ ডিসেম্বর,২০১১ মানে থার্টি ফার্স্ট নাইটে সবাই যখন দিনটাকে কিভাবে উদযাপন করবে এই নিয়ে ব্যাস্ত তখন আমরা “সরবের” চারজন (বাপ্পী ভাইয়া, যারির, আকাশ আর আমি) বগুড়ার ধুনটের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি।স্বপ্ন একটাই, “ফ্রেন্ডস ফাউন্ডেশনের স্কুলের ছেলে-মেয়েগুলোকে স্বপ্ন দেখতে শেখানো।”
ফ্রেন্ডস ফাউন্ডেশন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ডঃ ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ যিনি এই ধুনটেরই সন্তান, যে নিজে অনেক বড় হয়ে গেলেও শেকড়ের টান ভুলেননি আর নিজের গ্রামের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া সহজ করার জন্য এই স্কুলটি করেছেন এবং সবসময় তত্ত্বাবধান করছেন। এমনকি যেই গ্রামে এখনও বিজলি বাতির দেখা নেই সেখানে তিনি এই স্কুলে জেনারেটর বসিয়েছেন, ছেলে মেয়েদের জন্য ল্যাপটপ কিনে দিয়েছেন, এরকম আরও অনেক কিছুই যা বলে শেষ করা যাবে না।
যাই হোক আমরা যখন বগুড়ায় পৌছাই তখন প্রায় দুপুর, প্রথম মনে হয়ে হয়েছিল যে হয়ত বাচ্চা কাচ্চার সংখ্যা খুব বেশি হবে না কিন্তু আমাদের অবাক করে দিয়ে প্রায় সত্তর খানেক ছেলে মেয়ে উপস্থিত! অন্যরা অবাক হয়েছিল কিনা জানি না কিন্তু আমি হয়েছিলাম।আমাদের পরিচয় পর্বটা অনেক মজা করে শুরু হয়েছিল,একে তো আমরা সবাই নতুন ওদের কাছে (বাপ্পী ভাইয়া ছাড়া, উনি এর আগেও বেশ কয়েকবার ওখানে গিয়ে ওদের পড়িয়ে এসেছেন) আর আমরাও এমন পরিস্থিতিতে খুব বেশি পড়িনি যখন আমাদেরই “স্যার” বলা হচ্ছে। :happy:
প্রথমেই সবার নাম পরিচয় সব জানা হল। এরপর বড় হয়ে কি হতে চাও জিজ্ঞাস করাতে প্রায় সবাই ডাক্তার হওয়ার কথা বলল। তখন বুঝলাম ইব্রাহীম ভাইকে ছাড়া তেমন কাউকে ওরা দেখেনি তাই ওদের স্বপ্নটা শুধু ডাক্তার হওয়াতেই আটকে আছে ।যদি এরা আরও মানুষ সম্পর্কে জানত, দেখত, তাহলে হয়ত অন্যরকমও বলতে পারত।অবশ্য বেশ কয়েকজন পাইলট হওয়ার স্বপ্নের কথাও জানালো। তালহা এমনি একজন। ওর প্লেনের ছবি তুলে এনেছি আমরা, নিচে দেওয়া আছে (বিঃদ্র- তালহা কখনও প্লেন দেখেনি)
এরপর বড়দের ২ জনকে (যারা ৮ম শ্রেণীতে পড়ে ) নিয়ে কিছুক্ষণ অঙ্কের খেলা খেললাম আমরা।অবাক করা বিষয় হচ্ছে আমরা ভেবেছিলাম হয়ত ছোট হলেও অঙ্কগুলো করতে ওদের একটু হলেও সময় লাগবে কিন্তু কিসের কী ?? আমাদের অবাক করে দিয়ে হুমায়ুন আর শাপলা মুহূর্তেই অঙ্কগুলো করে ফেলে। আমরা চাইছিলাম একতাবদ্ধ হয়ে কিভাবে কাজ করলে সময় এবং শ্রম কম লাগে তা শেখাবো কিন্তু একাই এতো কম সময়ে অঙ্ক দুটো ওরা করে ফেলেছিল যে পরে দলগত ভাবে দেওয়ার সময় আগের চেয়ে সহজ অঙ্কই দিতে হয়েছে আমাদের 😛
এরপর বাপ্পী ভাইয়া দল হয়ে কাজ করার কথা শোনালো, বললাম বাংলাদেশ টিমের কথা যেখানে খেলে একজন কিন্ত সাথে থাকে পুরো জাতি। ওদেরকে বললাম রাজনীতিবিদ হতে কিন্তু কেউ হবে না বলে জানালো। তারপর যখন বাপ্পী ভাইয়া বলল যে যদি রাজনীতিবিদ না হও তাহলে ক্যাপ্টেন হবে কে? একজনকে তো ক্যাপ্টেন হতে হয় যে অনেক ভালো খেলে, ভালো নেতৃত্ব দেয়। তখন দেখলাম অনেকেই আবার মত পাল্টেছে।
ঐ সময়ের সেশনের পর আমরা আবার রাতে বসি সবাইকে নিয়ে, এবারও ভেবেছিলাম খুব বেশি ছেলে-মেয়ে থাকবে না কিন্তু আবার সবাইকে অবাক করে দিয়ে অনেক ছেলে মেয়েই উপস্থিত! এবার শুরু হল আরেকটা মজার খেলা দিয়ে, ” ডাইভারজেন্ট আইকিউ।” একটা বিষয় থেকে কতভাবে কোনদিকে যাওয়া যায় ,কত কি করা যায়,কত নতুন চিন্তা করা যায় এটাই ছিল খেলাটা। খেলাটা শিখিয়ে দিয়ে আসার উদ্দেশ্য ছিল যাতে ওরা ভিন্নভাবে চিন্তা করতে শিখে। এর মাঝে একজন দেখালো সে কলম দিয়ে বই ক্যারী করার মত একটা ক্যারিয়ার বানিয়েছে দেখে আমি সত্যিই অবাক হয়েছিলাম এই ভেবে যে আমার মাথায় এটা আসত না কখনও কিন্তু ওরা কত সহজেই না এ ধরনের জিনিস বানাচ্ছে অবিরাম। এরপর আরও কিছুক্ষণ মজা করার পর আসল স্বপ্ন দেখানোর পর্ব। নিজ গ্রামকে নিয়ে সবার ভাবনা জানতে চাইলাম এবং সবাই আরেকজন ইব্রাহীম ভাই হতে চায়। তখন মনে হল আসলেই শত সহস্র মানুষ লাগে না ভালো কিছু করতে, একজন ইব্রাহীম ভাইয়ের মত মানুষ হলেই হয় আর তখন আরও মানুষ ইব্রাহীম হতে চায় এবং হয়ও। গ্রামকে নিয়ে সবার ভাবনায় মুগ্ধ হওয়ার পর এবার ওদেরকে মুগ্ধ করার পালা চলে আসল।সচারাচর আমি বেশিই কথা বলি ঐদিন আরও বেশি বলেছিলাম। ওদেরকে বলেছিলাম কিভাবে হাজারও ব্যর্থতার মধ্যদিয়েও আমরা হেঁটে চলি, না না অতৃপ্তি , অসংখ্য না পাওয়া, কেন একটা মানুষকে থামাতে পারে না। । পথে নামলে পথের দেখা পাবে , রাস্তা খুঁজে নিতে হয়, তৈরী করে নিতে হয় এমন সব খুব ছোটখাট কথা কিন্তু মনে হল কথাগুলো বলার সময় ওদের চোখেমুখে যেন আমি নতুন কাউকে দেখছিলাম, একদম ভিন্ন, তখন মনে হচ্ছিল নাহ আমি হয়ত সার্থক।
পরদিন সকালে (১ তারিখ) বাচ্চাদের নিয়ে কিছু খেলার আয়োজন করেছিলাম, অঙ্ক দৌড় আর ছবি আঁকা ।ওরা অনেক খুশি হয়েছিল জিতে এবং পুরস্কার পেয়ে।
সব শেষে ঐদিন প্রজেক্টরে ওদের কিছু কার্টুন দেখিয়ে আমরা বিদায় নেই ঐবারের মত। ততক্ষণে দুপুর হয়ে গিয়েছে, সবাই যার যার স্কুলে চলে গিয়েছে, আমি চলে আসছিলাম কিন্তু মন ওখানেই পড়ে ছিল, মনে মনে বারবার বলেছি এইতো মাত্র পথচলার শুরু।
তোদের ছবি কই?
বাকি মন্তব্য পরে করতেছি
আমার ক্যামেরায় যেগুলো তোলা হইছিল তাতে আমি বা যারির নাই।
মনে হয় তোমার ক্যামেরাতে আমাদের জায়গা হইছে 😛
নেক্সট টাইম ধুনট গেলে আমারে ফালায়া যাইয়েন না প্লিজ :crying:
নেক্সট টাইম মানে কি ?? কবে যাবা সেইটা বল 😀
যামু যামু যামু। আমারে না নিলে পরের ট্রিপ বাদ। 8)
এক্কেবারেই বাদ ! 🙁
তাইলে তো নিতেই হয় 8)
আমি ও যাবো ইনশাল্লাহ… অনেক দিনের ইচ্ছে………
মনটাই ভরে গেলো লেখাটা পড়ে…… তালহার প্লেনটা দেখে খুব ভালো লেগেছে……
ইনশাল্লাহ 🙂
সবাইকে একটা নিশ্চয়তা দিতে পারি। সেটা হলো, এই বাচ্চাদের সাথে যেই সময় থাকবা, সেটা সারা জীবন মনে রাখতে পারবা! সুখের স্মৃতি হিসেবে অবশ্যই……
(১০ দিন ওদের সাথে থাকার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি 😀 )
লেখককে বলছি- আবার সেই অসাধারণ জায়গাটার কথা মনে করিয়ে দিলে তো……ওদের স্বপ্ন হোক সত্যি।
আসলেই তাই :happy:
ওদের স্বপ্ন সত্যি হোক
শ’খানেক মুসা ইব্রাহীম, সাকিব আল হাসান, জাফর ইকবাল, হুমায়ূন স্যার, এফ আর খান, মুনীর স্যার আর বাপ্পিদা (!!) – এখান থেকেই উঠে আসবে। আমি একেবারে কাগজে লিখে দিতে পারি !
সাথে যেতে চাই !! স্বপ্ন দেখতে চাই, ছড়িয়ে দিতে চাই !
শতভাগ সত্যি কথা শুধু ” যদি ” আমরা সবাই একটু (খুব বেশি না) সাহায্য করি।
আর পরেরবার সবাই মিলেই যাচ্ছি :yahooo:
ইস কি সুন্দর! নেক্সট টাইম আমারে না নিলে খেলুম না কিন্তু! :crying:
হিংসা হচ্ছে! 🙁
পুরাই ফ্রিগেট!
বাড়াবাড়ি রকম ভালো!
স্বপ্ন গুলো এমনই !
কোন প্রতিবন্ধকতা মানে না!
অসাধারণ তোওওও !!
স্বপ্ন গুলো এমনই !
কোন প্রতিবন্ধকতা মানে না! — আসলেই!!
হিংসিত। যেতে চাই।
যাইতে চাই 🙁