লিফটে জায়গা না পেয়ে ৬ তলা থেকে তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ির দিকে রওনা দেয় আকাশ। চট করে একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আরও জোরে পা চালায় সে। ১২ টা বেজে গেছে মিনিট পাঁচেক আগেই। তিন তলার সিঁড়িতে নেমেই একটা হোঁচট খায় সে। পড়ে গিয়ে জ্বলে ওঠে কনুইয়ের কাছটাতে। সে দিকে খেয়াল না করে আবার দ্রুত নামতে থাকে আকাশ। নীচে নেমে দৌড়াতে থাকে ভার্সিটির ওই প্রান্তের বিল্ডিংটার দিকে। হাঁপাতে হাঁপাতে পৌঁছে যাওয়ার পরেই মনটা খারাপ হয়ে যায় আকাশের। রূপার ক্লাস নিশ্চয়ই অনেকক্ষণ আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। কেউ নেই ক্লাসটার সামনে। স্যারের উপর ভীষণ রাগ হয় তার! কে বলেছিল তাকে দেরি করে আসতে। নিজে দেরী করে আসবে আবার ছুটি দেবে দেরী করে! ধুর! পাঁচটা মিনিটা আগে ছুটি দিলেই দেখতে পেত রূপাকে। দুইদিন ভার্সিটি সাপ্তাহিক ছুটি ছিল, আজ নিয়ে তাহলে তিন দিন হলো ওকে দেখে না আকাশ।
হঠাৎ, ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায় আকাশের।
রাত ১০টা। কী ভেবে মোবাইলটা হাতে নেয় আকাশ। রূপার নাম্বারটা বের করে অনেকক্ষণ ধরে ভাবতে থাকে কী যেন। তারপর ডায়াল করে নাম্বারটায়।
ও পাশ থেকে ‘হ্যালো’ শুনেই বুকের ভিতর ধুকপুক শুরু হয় আকাশের। চুপচাপ কিছুক্ষণ ‘হ্যালো’ শুনে তারপর ফোনটা কেটে দেয় সে। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে বুক থেকে। এতোটা বোকা কেন সে!
পরদিন আকাশের ক্লাস শেষ হয় ১১ টায়। আজ রূপার ক্লাস বারোটায় শেষ জানে সে। তবুও সাড়ে এগারোটার দিকেই রূপার ক্লাস হয় যে বিল্ডিংটায়, তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আকাশ। একটার পর একটা সেকেন্ড যেতে থাকে আর রূপাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা বাড়তে থাকে তার। অবশেষে বের হয়ে আসে রূপা। এদিক সেদিক তাকিয়ে রিকশা খুঁজতে থাকে। আকাশের দিকে একবার চোখ পড়লেও সেদিকে তাকায় না রূপা। একটা রিকশা পেয়েই উঠে চলে যায়।
চার দিন পর রূপাকে দেখতে পেয়ে কেমন যেন শান্তি শান্তি লাগে আকাশের।
সে দিন রাতে আকাশ প্রতিদিনের মতই আবার ভাবে, সে এত বোকা কেন। গত ছয় মাস ধরে সে দাঁড়িয়ে থাকে প্রতিদিন রূপার অপেক্ষায়। তার কিছু দিন আগেই এক বৃষ্টির দিনে ক্যাফেতে প্রথম রূপাকে দেখে সে। দেখার পর থেকেই এই একটা মেয়ে বাদে আর কোন কিছু নিয়ে ভাবতে পারে না সে। প্রতি দিন দেখতে যায় রূপাকে। কোন রকমে ওর নাম্বারটা জোগাড় করেছে, মাঝে মাঝে ফোন করে ওর কণ্ঠ শনতে। কিন্তু, এখনও কিছু বলার সাহস কেন পায় না সে। এতো দিন ধরে যে মেয়েটাকে ভীষণ ভালোবাসে সে, সেই মেয়েটা তাকে চেনেও না। কী কষ্ট! কী বোকা সে!
তবুও, প্রতিদিনের মতই রাতে রূপাকে স্বপ্ন দেখে আকাশ।
আরও এক মাস পরের কথা।
ঝুম বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ। নিজে ভিজে যাচ্ছে এটা নিয়ে কোন আফসোস নেই তার। শুধু পকেটের চিঠিটা ভিজে যাচ্ছে-এটাই দুঃখ। গত কয়েকদিন ধরে সাহস করার চেষ্টা করছে আকাশ। একদিন রূপার সামনে গিয়ে তাকে চিঠিটা দিয়ে আসবে। কিন্তু, প্রতিদিনই সামনে তাকে দেখেও সামনে যাওয়ার সাহস করতে পারে না সে।
রূপা ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে আড়চোখে রাস্তার ও পাশে তাকায়। আকাশ ছেলেটা এই বৃষ্টির মধ্যে আজও দাঁড়িয়ে আছে দেখে খুব অবাক লাগে। ছেলেটা এতো বোকা কেন! রূপার যে বন্ধুর কাছ থেকে রুপার নাম্বার নিয়েছে আকাশ, সে বন্ধু তখনই রূপাকে জানিয়েছে আকাশের কথা। তখন থেকেই দেখে ভদ্র চেহারার, উষ্কখুষ্ক চুলের ছেলেটা প্রায় প্রতিদিন তার ক্লাস শেষ হবার সময় এসে এখানে দাঁড়িয়ে থাকে। গত কয়েকদিন ধরে একটা কাগজও মাঝে মাঝে হাতে দেখা যায়। নিশ্চয়ই মনের কথা লিখে এনেছে, কিন্তু, বলতে না পারার মতো এখন চিঠি দিতে না পারার অবস্থা। কী অদ্ভুত ছেলে!
আকাশ হঠাৎ দেখে রূপা ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে রিকশা খোঁজার বদলে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো! তারপর বৃষ্টির মধ্যেই হেঁটে আসতে লাগলো তার দিকে। আকাশের সব কিছু কেমন যেন ঘোরের মধ্যে ঘটছে বলে মনে হয়।
রূপা আকাশের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে, দেখি চিঠিটা দাও!
পকেট থেকে ভেজা কাগজটা বের করে রূপার হাতে দেয় আকাশ।
কাগজটা হাতে নিয়ে রূপা বলে, চলো। এই বৃষ্টির মধ্যে আর দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।
রূপার ঠোঁটে একটা সুন্দর হাসি। আকাশ মুগ্ধ হয়ে দেখে সে হাসি।
ঝুম বৃষ্টিতে দু’টা মানুষ হেঁটে চলে। রূপা হাতটা বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেয় আকাশের হাত………
তারপর কী হইলো? হ্যাপিলি এভার আফটার? 😛
আমিও জানি না। ওরা একা একা ছিল, সঙ্গ দিচ্ছিলাম দেখে এতটুকু জানি। এরপর তো আমাকে নেয় নাই 😛
হাহা! বৃষ্টি লিখে সরব এর সার্চ বারে সার্চ করছিলাম এইটা আসলো
এটা আমি কী করে যেন মিস করে গেছিলাম!
গল্পটা বেশ প্রেডীক্টেবল ছিল কিন্তু! তবে ভাল্লাগছে
রোমান্টিক গল্প লেখার প্রথম অপচেষ্টা, এমন তো হবেই 😛
ভালো লেগেছে শুনে আনন্দিত 😀
তবে প্রেডীক্টেবল কিন্তু প্রেডিক্টেবল হবে। 8)
বিলাস ভাই , ভাল লেগেছে । 🙂
ধন্যবাদ! 😀
মিষ্টি ভালবাসা… 🙂
🙂
ভালু পাইলাম :happy:
আজকাল এইরাম গল্প পড়লেই ভালু পাই 😛 😛
শুনে ভালু পাইলাম :happy:
হুমমমমম বুঝি বুঝি :angel_not:
😛
😛 😛 😛
সায়েম ভাই, আসিতেছে শুভদিন :penguindance:
ওই আশাতেই দিন পার করছি :yahooo: 😛
😛 :happy:
সুন্দর লিখা, তবে কেন জানি সবসময় আপনার লিখার শেষটায় ভয়ংকর কিছুর জন্য অপেক্ষা করি, এবার কিছু না পেয়ে একসাথে দুঃখ আর আনন্দ দুটাই পেলাম! 😛
আনন্দ তো বুঝলাম, দুঃখ কেন?! :thinking:
দুঃখ যে অন্যরকম কিছু জিনিসটা পেলাম না! 😛
😯 😛
বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় ইরাম লুতুপুতু প্রেম কাহিনীই চাই, সাথে এক কাপ পায়েশের মতোন গন্ধ উঠা এলাচ দেয়া চা, উফফফ !!!! গল্প ভালো লাগছে, পিলাচ 😀
এই নেন এক কাপ চা 😀
আকাশে কার বুকের মাঝে
ব্যথা বাজে
দিগন্তে কার কালো আঁখি?
আঁখির জলে যায় ভাসি :’)
ভালবাসি 🙂
আমার খুব খুব খুব প্রিয় একটা গান! 😀
ভালোবাসার গল্প হিসেবে হয়তো মিষ্টি, কিন্তু এটা খুব অদ্ভুত না যে একজনকে একদিন দেখেই স্বপ্ন-কল্পনা-চিন্তা জুড়ে বসলো সে, আর ভালোবাসার নদী বয়ে গেলো……
আমার খুব অদ্ভুত লাগে, তাই বললাম……
দুঃখিত বেরসিক মন্তব্যের জন্য…………
অদ্ভূতুরে আজব দেশে
আজব অনুভূতি,
মন কারে চায়,
মন কী যে পায়,
তার কোন নাই রীতি 🙂
অন্য রকম কমেন্ট করা কোনই সমস্যা না। এটা ভালো, লেখায় উন্নতি হবে।
🙂
আহ! ভালুবাসা ভালুবাসা :love:
অনেকদিন পর রোমান্টিক গল্প পড়লাম। ভালো লেগেছে। ‘রুপার আকাশ’ 😀
ভালোবাসা সব সময়ই মিষ্টি 😀
হে হে……
ধন্যবাদ 🙂
মনটা ভালো করে দেওয়া গল্প 🙂
“হ্যাপিলি এভার আফটার” না হলে তো ‘এন্ডিং’ হয়ই না 🙂
🙂 😀
ধন্যবাদ, কাউকে মেরে ফেলেন নাই!
এই ধরনের গল্পের মাঝখানে দেখা গেল, একজন শেষ! 🙁
কষ্ট লাগে তখন :crying:
হা হা। এমন রোমান্টিক গল্পে কিভাবে মারি 😛
নাহ গল্পের শুরু পড়ে happily never after ending আশা করছিলাম! এত ভাল সয় না!:P
আমার মন খারাপের গল্প পড়ে মানুষ বিরক্ত হয়ে গেছে। তাই মন ভালো করার কিঞ্চিৎ চেষ্টা 😛
অল্প লেখায় এতো সুন্দর গল্প খুব কমই পড়েছি … ।
ফিনিশিংটার কারণেই বেশি ভালো লেগেছে … 😀
😀 :happy:
অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল!!!!!!!!!!
:happy:
মনে হয় 😛 😀
ছোট কিন্তু খুবইইইই সুন্দর একটি গল্প। http://shorob.com/wp-includes/images/smilies/icon_smile.gif
অনেক ধন্যবাদ 🙂