যা না বললেই নয়

আমি নীরব কেন? কেন এই দীর্ঘ নীরবতা?

কতটুকু স্পষ্ট হলো এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার কথা?

ভুক্তভোগী আমরা দর্শকমাত্র! স্রেফ পাদটীকা!

আত্মরক্ষার গুল মেরে চলছে আগ্রাসনের দাবি

নিশ্চিহ্ন হতেই পারে ইরান, আমরা বসে ভাবি!

যুদ্ধবাজ একাই ধ্বংস করতে পারে সভ্যতার স্তম্ভ

পারমাণবিক বোমার শক্তি যার দক্ষতা আর দম্ভ!

“Our lives begin to end the day we become silent about things that matter.”

~Martin Luther King, Jr.

এই হিসেবে আমার জীবনের শেষ এরই মধ্যে শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। আজকাল সময়ে-অসময়ে আমার বাকরোধ হয়, চুপচাপ দেখে যাই অনেক কিছুই।

এবং তখন, আমি কেন আমাকে এড়িয়ে চলবো

কেন আমিও তার নাম বলবো না…আমি বলবো;

বলবো: বছরের পর বছর ধরে প্রকাশ্য গোপনে

ধনী হয়েছে সে পারমানবিক শক্তির ভয়ংকর ধনে!

ইদানীং পৃথিবীসুদ্ধ ঝড় তুলে দিয়েছেন একজন মানুষ – অনেক দিন চুপ করে থেকে শেষমেশ জীবন্মৃত হয়ে বেঁচে থাকার অনীহায় মুখ খুলেছেন তিনি। নাম তার গুন্টার গ্রাস।

গুন্টার গ্রাস

অথচ, তাকে কেউ দেখতেই পায় না, আশ্চর্য অন্ধ

অথচ, তার কাছে কেউ যেতেই চায় না, সব পথ বন্ধ!

তার কাছে গেলে সব তদন্তের দন্তে পোকা ধরে

আর চোখে ঠুলি পড়ে?

তার সম্পর্কে কম-বেশি যা-ই জানি, জার্মানির নোবেল-বিজয়ী এই লেখকের নাম বোধ হয় আমরা প্রায় সবাই শুনেছি। ৮৪ বছর বয়সে এই মানুষ একটি কবিতা লিখেছেন, জার্মান এই কবিতার নাম বাংলায় ‘যা না বললেই নয়’।

আমি সকলের এই নির্মম নীরবতা অনুভব করছি

নীরবতাকে ক্রীতদাসের প্রতিশব্দ হিসেবে পড়ছি

ঘৃণ্য মিথ্যার পচাডোবায় ডুবে আছে পুরো পৃথিবী

জেগে ঘুমিয়ে থাকার ভান ও ভণ্ডামির ছায়াছবি

‘ইহুদি-বিদ্বেষী’-এই তকমা-আঁটা জুজুর ভয়ে;

বিশ্ববিবেকের বিরাট বাঘ বসে থাকে ম্যাঁও হয়ে!

সে কথা বলার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে – সেটা মাথায় রেখেই তিনি লিখেছেন এই কবিতা, প্রকাশও করেছেন। ১৭ বছর বয়সে জার্মান নাৎসি বাহিনীতে কাজ করা এই মানুষ আজ কথা বলছেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে – ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দায়ে অভিযুক্ত করে ইসরায়েল নিজেই যে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করতে যাচ্ছে পৃথিবীর বুকে, তার বিরুদ্ধে। ইসরায়েলের কাছে নিজ দেশ জার্মানির পারমাণবিক যুদ্ধের সহায়ক ডুবোজাহাজ বিক্রির তীব্র সমালোচনাও আছে সাথে।

কিন্তু এখন, এমনকি আমার স্বদেশ; –জার্মানি;

পৃথিবীর মানুষ এবং আমি তার যে ইতিহাস জানি

রক্তাক্ত কলঙ্কিত তার হাত, সব মহাপাপের বাপ

বাধ্য হয়ে নিয়তির মতো মেনেছে অযুত অভিশাপ;

বারংবার নিছক ন্যায্য বাণিজ্যের নামে—

স্রেফ ক্ষতি কিনেছে অনেক চড়া দামে

এবং এখনো ক্ষতিপূরণ হিসেবে ইসরায়েলকে নাকি

আরো একটি যুদ্ধাস্ত্র–ডুবোজাহাজ দেয়ার আছে বাকি!

কবিতায় যেমনটা বলেছেন – বাস্তবেও ঠিক তাই হয়েছে; তার এতদিনকার না-বলা কথা চাউর হওয়ামাত্র ‘ইহুদি-বিদ্বেষী’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন তিনি। শুধু কি তিনি নিজেই? বামপন্থী গ্রাসের সমালোচনা না করায় গোটা পশ্চিমা বামপন্থী চেতনাধারীদেরকেই পচনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানো গোষ্ঠী বলে দাবি করা সারা। সেই সাথে ইহুদি গণহত্যার সাথে জড়িত দলের অংশবিশেষ ছিলেন তিনি এক সময় – সে কথা মনে করিয়ে দিতেও ভুল হয় নি কারও।

ইসরায়েল, যার বুলির তোড়ে অসংখ্য খুলি উড়ে যায়

যেখানে সেখানে যে পারমানবিক বোমার প্রমাণ পায়

সে অদ্ভুত কাকতাড়ুয়া এক, জয়ের প্রয়োজনে বানায় ভয়

তাই আমাকে বলতেই হচ্ছে, যা আসলে না বললেই নয়!

কেন আমি এতদিন চুপ ছিলাম? শেকড়ের গোপন টান?

সিন্দবাদের নাছোড়বান্দা ভূত ঘাড়ে বসে টানছে কান?

তাই আমিও ইসরায়েলের মুখের ওপর করিনি উচ্চারণ

এই সত্য! না হয় সত্যকে পাশ কাটানোর কী কারণ!

কেবল যে সমালোচনাই কুড়িয়েছেন তা তো অবশ্যই নয় – তবে ইসরায়েলে প্রবেশাধিকার হারিয়েছেন এর মধ্যেই, নিজের দেশেও খুব একটা কাঙ্ক্ষিত নন এখন। অপরাধ – ইরান আর ইসরায়েলকে নৈতিকতাকে ‘একই পাল্লায়’ মেপেছেন নাকি। ইরানের প্রেস টিভিতে অবশ্য তার এই ‘লিরিক্যাল স্ট্রাইকের’ প্রশংসা করা হয়েছে। এই অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অন্তত ১৬টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে তার কবিতা।

আমি এখন কেন এসব কথা বলছি?

যখন অমোঘ মৃত্যুর পথে হেঁটে চলছি;

শেষ কালে শেষ কালিতে কেন লিখছি—

যেনো দিব্যি দিব্যচোখে দেখছি;

ইসরায়েল; পারমানবিক শক্তিধর এই শয়তান

বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি! বিশ্ববাসী সাবধান!

কবিতা হিসেবে খুব যে শৈল্পিক কিংবা সাহিত্যমানে অনেক উঁচু – এমন কিছু কিন্তু নয় ‘যা না বললেই নয়’; এমন কি একতরফাভাবে ইসরায়েলের কাঁধেই যে সব দোষ চাপানো হয়েছে আর ইরানকে শতভাগ নিরপরাধ হিসেবে দেখানো হয়েছে – ঠিক তা-ও না। তারপরও অতি-প্রতিক্রিয়াশীলতার হাত থেকে রেহাই পেলেন না গ্রাস, কবিতায় যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তিনি – তা সত্য হল।

এটা আজ, এক্ষুণি আমাকে বলতেই হবে

কেননা আগামীকাল অনেক দেরি হয়ে যাবে;

একজন জার্মান হিসেবে আমি জানি

অতীতের অনেক ভুল এবং গ্লানি

কিন্তু আর নয়; এমনিতেই আমরা অপরাধভারে নত

তাই চোখের সামনে ঘটতে দিতে চাই না এই ক্ষতি আর ক্ষত!

এমন কথাও উঠেছে – সিরিয়ায় যে গণহত্যা চলছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের নেতৃত্বে, সেটা ‘বাদ’ দিয়ে গ্রাস কেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কথা বলছেন – যেখানে ১৯৪৮এর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের চাইতে সিরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি!

এবং আমি দুঃখিত, কোনোমতেই চুপ রবো না আর

কেননা পশ্চিমা ভণ্ডামির ভাণ্ডার জানা আছে আমার

কেননা, আমি জানি, অনেকেরই মুখে আধফোটা ভাষা

উন্মুখ অধীর অপেক্ষায় তারা, কেবল পতনের প্রত্যাশা

তারা চায় ইসরায়েলের পরমাণু শক্তি আর ইরানের পরমাণু ক্ষেত্র

দুটোতেই দৃষ্টি রাখুক আন্তর্জাতিক নতুন সংঘের নিরপেক্ষ নেত্র!

তারা চায়, ইসরায়েল যেনো পারমানবিক শক্তিশূন্য হয়

সেই শক্তির মুক্ত এবং পোক্ত দখল পেলেই মানুষের জয়।

গ্রাসকে অভিযুক্ত করা হয়েছে এই বলে যে তিনি নিজের দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই কবিতা লিখেছেন। ইসরায়েল যে ইরানকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায় সে কথা বলে অতিরঞ্জনের অপরাধও করেছেন নাকি তিনি। এককালে জার্মানির নাৎসি বাহিনীতে কাজ করার কথা স্বীকার করে যে মানুষ কয়েক বছর আগে সৎসাহসের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন, আজ একই কারণে তার ইসরায়েলের সমালোচনা করার অধিকারই নেই – এমনটা বলা হচ্ছে। অনেক ভক্ত মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার কাছ থেকে – তার এই ‘ঘৃণ্য’ কবিতা পড়ে এক লেখক নিজের বই থেকে তার নাম মুছে ফেলার সিদ্ধান্তও জানিয়েছেন।

আর ঠিক এভাবেই, ইসরায়েলি, ফিলিস্তিনি, এবং সবাই

দীর্ঘ মুখোমুখি হিংসা-বিদ্বেষ থেকে পেতে পারে রেহাই।

অদ্ভুত পৃথিবী, তাই না?

ছন্দহীন এই কবিতার অনুবাদগুলোর মধ্যে এই মিলযুক্তটাই সবচেয়ে ভাল লাগলো। তবে মূল কবিতা যেহেতু জার্মান, সেখান থেকে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে – আবার সেটা বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে গঠন পালটে, তাতে করে অর্থও হালকা এদিক-ওদিক হয়েছে – তাই বোধ হয় সবাই ইংরেজিটা পড়ে ফেললে ভাল করবেন। আর জার্মান জানলে তো কথাই নেই!

পুরো কবিতাটা একসাথে পাবেন এখানে, মাহফুজ জুয়েলের অনুবাদে।

সামিরা সম্পর্কে

পীচ-গলা তরলে আটকে পা, দুঃস্বপ্ন অন্ধ দুই চোখে/ অসতর্ক হৃদয় পোষ মানে মিথ্যে বলার আফসোসে.../// প্রকাশিত লেখার কপিরাইট সংশ্লিষ্ট লেখক সংরক্ষণ করেন এবং লেখকের অনুমতি ছাড়া লেখা আংশিক বা পূর্ণভাবে কোন মিডিয়ায় পুন:প্রকাশ করা যাবে না।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে কবিতা, চিন্তাভাবনা, সচেতনতা-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

11 Responses to যা না বললেই নয়

  1. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    গুন্টার গ্রাসকে নিয়ে পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হচ্ছে দেখেছি। কিন্তু, আসলেই ব্যাপারটা জানা ছিল না। জানানোর জন্য ধন্যবাদ।

    মাহফুজ জুয়েলের অনুবাদটা পড়ে ভালো লেগেছে। যদি জার্মান জানতাম ভালো হতো, মূল কবিতা পড়া যেত……

  2. নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেনঃ

    অনুবাদটা সুন্দর করেছেন মাহফুজ জুয়েল।
    গুন্টার গ্রাসের কবিতার অনুবাদের কথা শুনেছিলাম বেশ ক’দিন আগেই। বিষয়বস্তু সম্পর্কেও জেনেছিলাম তখনই। আজকে পুরোটা পড়া হয়ে গেলো।

    এই কথাগুলো না বললেই না দেখে গুন্টার গ্রাস বলেই ফেললেন। নিজের কাছে, নিজের সাহিত্যবোধের কাছে, আত্মার কাছে মুক্ত হবার জন্য তিনি বলেই ফেললেন শেষমেষ। আমার মনে আছে যেবার তিনি নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন সেবারের কথা।

    এমন শক্তিশালী সাহিত্যিক পাওয়া যায়না খুব একটা। শক্তিশালী বলছিলাম সত্য বলার সাহস থেকে। ইসরায়েলের প্রোপাগান্ডাগুলো সবাই কমবেশি ধারণা করতে পারে, আমেরিকারগুলোও। কিন্তু কূটনীতিক কারণে, নিজ বিবেকের কাছে তারা এত বেশি দুর্বল যে কেউ প্রতিবাদ করেনা। ইসরায়েলে প্রবেশ নিষেধ হয়েছে। হয়ত আমেরিকাও এখন এই সত্য বলায় এই সাহিত্যিককে আরো অনেক রকম ভোগান্তিতে সাহায্য করবে। কিন্তু তাতে হয়ত বিবেকশূণ্য পৃথিবীবাসীর কিছুই যাবে আসবে না। আমেরিকা আর ইসরায়েলের সাথে বৃটেন-ফ্রান্স মিলে যৌথ সব হিজিবিজি ক্ষমতা প্রদর্শন মহড়া থেকে কী করবে আগামী বিশ্বে সেটাই জটিল প্রশ্ন। আফগানিস্তান-ইরাকের ঘটনা তো বিশ্ববাসী দেখেছেই। পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতেই পারে এই আগ্রাসনের ফলে। এইসব ভাবলে মাথা শূণ্য লাগতে থাকে !!

    কবিতার এই অংশটা আরেকবার পড়ার মতনঃ


    ইসরায়েল, যার বুলির তোড়ে অসংখ্য খুলি উড়ে যায়
    যেখানে সেখানে যে পারমানবিক বোমার প্রমাণ পায়
    সে অদ্ভুত কাকতাড়ুয়া এক, জয়ের প্রয়োজনে বানায় ভয়
    তাই আমাকে বলতেই হচ্ছে, যা আসলে না বললেই নয়!
    কেন আমি এতদিন চুপ ছিলাম? শেকড়ের গোপন টান?

  3. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    translations were published in a number of countries, generating significant controversy, particularly in Germany and Israel. This intensified on 8 April, four days after publication, when Eli Yishai, Israel’s Minister for the Interior, banned Grass from entering the country. The decision was based on a 1952 law barring former members of Nazi organizations from entering Israel.

    এখানে রিএকশন দেখা যাবে
    http://en.wikipedia.org/wiki/What_Must_Be_Said

    গুন্টার গ্রাস এর কবিতাটির সলিমুল্লাহ খান এর অনুবাদ

    এতদিন কেন চুপ মেরে আছি, কেন মুখ খুলিনি এত দীর্ঘ দিন
    একটা খেলা চলছে–যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা
    মহড়া চলছে প্রকাশ্যে দিবালোকে–
    এ খেলার শেষে আমরা বেঁচে যাই তো হবো পাদটীকা।

    খেলার নাম অতর্কিতে হামলার অধিকার
    হামলাকারী– এখন জনৈক বাচালের ডাকে সমবেত–
    ইরানের জনজাতি ধুলায় মিশিয়ে দেবে
    কারণ তার সন্দেহ
    তার ক্ষমতার বলয়সীমায় পরমাণু বোমা তাতাচ্ছে ইরান।

    অথচ অনেক দিন হলো আর একটা দেশের হাতে পরমাণু শক্তি মজুত আছে
    আর সে ক্ষমতা বাড়ছেও দিনে দিনে
    তার উপর কারও কোন নিয়ন্ত্রণ নাই, কেননা তা পরিদর্শনের
    আওতার বাইরে
    সে দেশের নামটা মুখে আনতে কেন রাজি নই আমি?
    সারা দুনিয়া খেলছে এই লুকোচুরি খেলা
    আমিও মেরেছি চুপ এই লুকোচুরির তলায়
    আমার তো মনে হয় এই নিশ্চুপ থাকার চেয়ে
    বড় মিথ্যাচার বড় কেলেঙ্কারি আর কিছু নাই
    এই মিথ্যার বিরুদ্ধে টু শব্দটি করো দেখি তুমি
    দেখবে অভিশাপ ভয়াবহ খড়গ আসছে নেমে তোমার মাথায়
    তুমি ‘এয়াহুদি বিদ্বেষী’।

    আমার দেশ অপরাধী– কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে সে
    বহু বহুবার– অপরাধ তার তুলনাবিহীন।
    আর আজ ভাগ্যের ফেরে– হয়তো নিছক ব্যবসাজ্ঞানে
    অথচ মুখে বলছে ক্ষতিপূরণ হিসাবে– ঘোষণা করেছে
    ইসরায়েলকে আরো এক ডুবোজাহাজ বেচবে সে
    দুনিয়া ধ্বংস করতে পারে এমন ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যায়
    জাহাজ থেকে, ছোড়া যাবে সে দেশপানে
    যে দেশে প্রমাণ নাই পরমাণু বোমা আছে
    শুদ্ধ আছে ভয় আর ভয়ই তো অকাট্য প্রমাণ।
    তাই আমাকে বলতে হবে যে কথা না বললেই নয়।

    তো এদ্দিন, আজতক, কেন চুপ মেরে আছি আমি?
    আছি ভয়ে, ভয় জন্মদাগের
    এ দাগ কোনদিন মুছবার নয়
    এ দাগের ভয়ে এদ্দিন ইসরায়েলের মুখের উপরে
    করতে পারিনি আমি সত্য উচ্চারণ
    কারণ তার সনে বাঁধা আছি আমি চিরদিন
    থাকতেও চাই বাঁধা হয়ে।

    যে কথা বলতে পারিনি তো সে কথা বলছি কেন এখন?
    এখন বয়স হয়েছে আমার, ফুরিয়ে এসেছে কলমের কালি
    এমনিতেই ভাঙাচোরা বিশ্বশান্তি
    আর সে বিশ্বশান্তির পথের কাঁটা
    হয়ে দাঁড়াচ্ছে ইসরায়েল
    এ কথা না বললেই নয়, বড্ড দেরি হয়ে গেছে
    বলবার সুযোগ আর নাও থাকতে পারে আর।

    আরও এক কারণে বলছি আজ
    আমরা জার্মান জাতি, অপরাধভারে নত হয়ে আছি
    সামনে আরো এক অপরাধ ঘটতে চলেছে
    আর আমরাও হতে চলেছি তার ভাগদার সমান অপরাধী
    যে অজুহাতে এতদিন পার পেয়ে গেছি
    তাতে দালালি আর হবে না হালাল।

    মাপ করবেন, আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না আজ
    কেননা পশ্চিমা দুনিয়ার ভণ্ডামি দেখতে দেখতে আমি হয়রান
    আশা করছি আপনারাও–আরো অনেকেই
    মুখে আঁটা কুলুপ খুলে নিরবতা অভিশাপ মুক্ত হবেন
    দেখতে পাচ্ছেন এগিয়ে আসছে বিপদ
    যে দেশের কারণে হাত জোড় করে সে দেশকে বলুন
    বলপ্রয়োগ করবেন না
    আর দাবি তুলুন
    দুই দেশের সরকারকেই বলা হোক
    ইসরায়েলি পরমাণু শক্তি
    আর ইরানি পরমাণু ক্ষেত্র
    দুইটাই থাক মহাজাতিক সংঘের অবাধ ও স্থায়ী নজরে।

    কি ইসরায়েলি কি ফিলিস্তিনি সকলের–
    আমাদের সকলের– মায় এই উন্মত্ত ভূখণ্ডের ঘরে ঘরে
    যারা করি শত্রুর সঙ্গে করি গলাগলি বসবাস
    তাদের সকলের বাঁচবার এ ছাড়া আর পথ নাই।
    নাই শুদ্ধ তাদেরই নয়, আমাদের সকলের।

    সূত্র: http://arts.bdnews24.com/?p=4408

    • বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

      লেখাটির জন্য সামিরাকে ধন্যবাদ। আমাদের জানা দরকার কী হচ্ছে বাইরে!

      • সামিরা বলেছেনঃ

        পোস্টে যোগ করে দিব এইসব তথ্য?
        পড়েছিলাম এই অনুবাদটাও। মূল কবিতাটা এরকমই আসলে – পড়তে ভাল লাগলো যেটা সেটা দিয়েছি। 😀

  4. অদ্ভুত ছেলে বলেছেনঃ

    ওহ এই তাহলে গুন্টার গ্রাস! কোথায় যেন শুনেছিলাম নামটা। লেখা পড়ে বুঝলাম কে 🙂
    কয়জনই বা পারেন কলম হাতে বিদ্রোহ ছড়িয়ে দিতে, মানুষকে একাত্ম করতে? উনাকে স্যালুট …

    আর এইরকম পোস্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ :love:

  5. শারমিন বলেছেনঃ

    অনেক কিছুই জানতে পারলাম যা আগে জানতাম না।
    :love:
    😀

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।