স্বপ্ন আর উদ্দেশ্য ছিল শুধুই মানবতার সেবা

আমি বাস করতাম একটি জেলা শহরে। আমার পিতা একজন চিকিৎসক। সরকারি একটি মেডিকেল কলেজের সহকারি অধ্যাপক। আর মা, দেশের একটি স্বনাম ধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে এমএ কিন্তু আমার স্বার্থের কথা ভেবে নিজের বুকে পাথর বেঁধে আজো গৃহিনী। জন্মের পর যে মানুষটিকে সবচেয়ে বেশি দেখেছি তিনি আমার পিতা। আর সবসময়ে সাথে পেয়েছি আমার মা কে। একমাত্র সন্তান বলে আমার জীবনের বেশির ভাগ সময়ই কেঁটেছে পিতামাতার সাথে, এমনকি বন্ধুদের চেয়েও বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে পিতামাতার সাথে গল্প করে। বুদ্ধি হবার পর থেকে যা বুঝেছি তা হলো যারা যখনই সমস্যায় ভোগেন আমার পিতার কাছে চলে আসেন। বাবার মোবাইলটা বাজুক বা আমাদের বাসার বেল, কারন একটাই, কেউ অসহ্যকর সমস্যায় আছেন তাই চিকিৎসকের বাড়ী এসেছেন। আমি অবাক হতাম আবার বাবা যখন পথ চলতো তখন অত্যান্ত নিন্ম শ্রেনীর মানুষও যে তাঁর সাথে কি আপন জনের মত কথা বলত। আপনতো হবেই, কারন গভীর রাতে কোনদিন তার চিকিৎসার ব্যাবস্থা যে আমার বাবাই করে দিয়েছিলেন। আবার কারো ক্ষেত্রে জরুরি রক্তের সন্ধানের জন্যও আমার বাবাকে পেয়েছিলেন আপনজনের মত। তাই যখন বড় হতে থাকলাম আমার সামনে শুধু একটাই চিন্তা ছিল, এমন কিছু করার যা মানুষকে বাচাঁতে না পারি অন্তত মুমূর্ষ সময়ে সহায়তা অন্তত করতে পারে। তাই আমার সামনেও একটিই পথ খোলা ছিল চিকিৎসক হওয়া। কারন গভীর রাতে চিকিৎসক পাওয়াতো দূরের কথা যখন সরকারি হাস্পাতাল গুলোতে ফোন করলেও শোনা যায় ড্রাইভার নেই, এম্বুলেন্স নষ্ট সহ আরো কত অযুহাত তখন বাঁচিয়ে রাখার শেষ চেষ্টাকি আমার পক্ষে করা সম্ভব ছিল না? ডাক্তার হলে জরুরি সময়েও যে এম্বুলেন্সের সব নম্ব্রর আমার কাছে থাকতো, প্রাথমিক চিকিৎসাও যে দিতে পারতাম, আরো কতো কি। মানুষ যখন অসোহায় তখন তাঁকে সহায়তা করার মত আনন্দ কি আর আছে? তাও যদি হয় জীবন বাঁচানোর মত মহৎ কাজ। আমি যখন এইচএসসি পড়ি তখন জীবন বলতে একটাই অর্থ খুঁজে পেতাম, এমন কিছু করা যাতে মানুষের উপকারে আসা যায়। আর প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে সহায়তা করার সবচেয়ে ভালো পথ ছিল চিকিৎসক হওয়া। আমি জানতাম আমি যে পেশাতেই যাইনা কেন সম্মান জনক অবস্থানে যাওয়া বা সম্মান জনক বেতন পাওয়া আবার জন্য কোন দিনও বাধা হয়ে দাড়াবেনা। কিন্তু সেবয়সে আমার কাছে টাকা শুধুই কাগজ, যদি আমার জীবন মানুষের জন্য কাজে না লাগে। একজন বড় ব্যবসায়ীর পক্ষেও সম্ভব মানুষের জন্য, সমাজের জন্য অনেক কাজ করা, এবং তা প্রতিনিয়ত করা। কিন্তু অনেক বড় ব্যবসায়ী আমার পক্ষে কোনদিন হয়া সম্ভব হবে না, সেটা আগেই বিঝে ছিলাম। তাই চিকিৎসক আমাকে হতেই হবে। আমার বেঁচে থাকা মানুষের মত হবে সেদিনই যখন আমি বুঝব আমাকে দিয়ে সমাজের কাজে আসছে। যেকোন কাজ করে অনেক টাকার মালিক হলাম, মানুষের  কাজে এলামনা এমন ভাবে বেঁচে থাকাই আমার কাছে নির্থক। এইচএসসি’র সময় অনেক পরিকল্পণা করেছিলাম এমবিবিএস এ ভর্তি হয়েই মানুষের কাজে লেগে যাব। দু’ একজন চিকিৎসক আংকেল, আমার সহপাঠী ও সিনিয়্র এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেড়িয়ে পরব গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, গরিবদের চিকৎসা দিতে। ‘দু একটি ডায়াগন্টিক সেণ্টারের সাথে কথা বলে নিতাম। আমরা সব রুগি তাদের কাছে পাঠাতাম আর তারা রুগিদের কাছ থেকে ৬০% মূল্য কম রাখবে। যে যে ডায়াগন্টিক সেণ্টারের এমন ভালো কাজের সাথে থাকতে ইচ্ছুক তাদেরকেই পালাক্রমে আমাদের সাথে রাখতাম। ওষুধ দেবার ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি। মান সম্মত যেসব কম্পানি আমাদের ক্যাম্পের রুগিদের কাছ থেকে কম টাকায় ওষুধ দিবে তাদের পালাক্রমে আমাদের সাথে ট্যাগ করে নিতাম। ওষুধ কম্পানী গুলোরও লাভ, জনসেবাও হলো আবার সব রুগি তাদের কাছ থেকে ওষুধ নেবে এটাওকি কম নাকি। এভাবে চালিয়ে যাবার ইচ্ছা ছিল। পূর্ন চিকিৎসক হবার পরও মাসে অন্তত একবার এমন ব্যবস্থা করলে মন্দ কি ছিল? তারপর একটু বিত্তশালী হলে হবে হাস্পাতাল। সেখানে গরিব রুগিদের জন্য থাকবে আলাদা সেকশন। শুক্রুবার আরো বিশেষ সুবিধা। আরো কতো কি যে ভেবেছিলাম। এমন ভাবার কোন সুযোগ নেই যে, আমি এমন মনের মানুষ, আমার নিজের সব টাকা এর পিছনে শেষ করে ফেলব। মটেওনা। আমার মানুষকে নির্স্বাথ ভাবে সেবা দানের মন ছিল। সমাজের যারা বিত্তশালী, বা যেকোন শ্রেনী পেশার মানুষ যারা মানুষের জন্য কিছু করতে চায় তাদেরকে আমাদের কাজের সাথে যুক্ত করে নিতাম। অনুদান এবং প্রান্ত অর্থের পরিষ্কার হিসবের ব্যবস্থা থাকতো। আমার মনে হয় এমন কাজের অর্থের যোগান পাওয়া সমস্যা ছিলনা।  কম্পিউটারের যুগে আমার ব্যক্তিগত কম্পিউটারে সব তথ্য গুছিয়েও রেখেছিলাম। সব ডকুমেন্ট আস্তে আস্তে তৈরী করতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার আর চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ হলোনা। ঠিক কেন হলোনা, তা এখনো বুঝে উঠতে পারছিনা। আমার পরিকল্পনার আংশিক বাদ হয়ে গেল। দেখা যাক বাকি জীবনে কিছু করতে পারি কিনা!

তাওহীদ হাসান সম্পর্কে

বিএসসি প্রকৌশলী(ইইই) ও একসময়ের তুখড় টিভি সাংবাদিক ও।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

4 Responses to স্বপ্ন আর উদ্দেশ্য ছিল শুধুই মানবতার সেবা

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    প্রচুর বানান ভুল। আপনি প্লিজ বানান এর দিকে মনোযোগ দিন।

    • তাওহীদ হাসান বলেছেনঃ

      অনেক বছর ধরে আমার ব্লগ সরবে আসছিল না। তাই এমনি এমনি লিখি। আমার ব্লগ গুলো প্রকাশ হওয়াতো ভাল, এমনকি আমার নিজের ব্লগেও যোগ হয়না। কারন কি জানি নাহ। তাই খালি খালি এর চেয়ে ভালো আর কি লিখব।

  2. নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেনঃ

    আপনার সম্ভবত প্রথম পোস্ট। আপনাকে ব্লগে স্বাগত জানাই।

    আপনার লেখা পড়লাম। আবেগ টের পেলাম। তবে, একটা লেখা শুধুই আবেগ হতে হয়না, তার সাথে একটা রূপ অর্থাৎ ফ্রেম থাকতে হয়।

    আপনার লেখাতে কোন প্যারাগ্রাফ নাই। এই জিনিসটা পাঠককে বোর করে দেয়। আপনার লেখায় প্রচুর বানান ভুল। একটা ভালো ব্লগে ভালো পাঠকরা এই জিনিসটাতে বিব্রত হন। আমাদের বাংলা ভাষাকে আমাদের সম্মান জানানো উচিত। এটাতেও একটু যত্নবান হবেন আগামীতে আশা করি।

    আপনার প্রতি অনুরোধ থাকবে, আরো কিছু লেখা পড়ুন। আপনার এমন আবেগই দেখবেন আরো কেউ অনেক যত্ন করে, সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন — সেখানে শেখার অনেক কিছু পাবেন।

    জীবনে শুধু ডাক্তার হতেই হবে এমন কোন কথা নেই। বরং পৃথিবীর বেশিরভাগ অসাধারণ আর চমৎকার মানুষগুলো ডাক্তার না হয়েই মানুষের কল্যাণে এসেছেন। সবচাইতে বড় কথা, নিজেকে কল্যাণের পথে নিয়ে গিয়েছেন।

    অনেক কথা কইলাম। আপনার প্রতি শুভেচ্ছা রইলো

  3. তাওহীদ হাসান বলেছেনঃ

    আপনার সম্ভবত প্রথম কমেন্ট। আপনাকে ব্লগে স্বাগত জানাই।

    শেষের লাইনটি ছাড়া বাকি সব গুল কথাই ঠিক আছে।
    অনেকে, অনেক ভালো কাজ করে, কথা সত্যি। কিন্তু তাদের সুযোগ, সংখ্যা সবই কম। ডাক্তার নিভৃতে প্রতিনিয়ত মানবতার সাহায্য করতে পারে, যদি ইচ্ছে থাকে। অন্য পেশায় সুযোগ কিছুটা হলেও কম।

    অনেক কথা কইলাম। আপনার প্রতি শুভেচ্ছা রইলো

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।