আমরা বেড়াতে যাচ্ছিলাম। গাড়ির জানালায় পাহাড়, গাছের ফাঁকে। মুন্নি বেগমের কন্ঠে দুঃখী গজল বাজছিল। সানিয়া অন্য জানালায় বাইরে দেখছিল। ইফা আর আশিক টুকটাক সংসারী কথা আর স্মৃতি বিনিময়ে ব্যস্ত। কড়ি আত্মমগ্ন পিছনের সিটে। কথা হলো –
Luna: Are you looking at the mountains?
Cori: Did you see the pimple on my leg?
Luna: Look how they are slowly turning blue like the sky
Cori: It’s only a cute little pimple, look!
বিকালটা ছিল হাসিখুশি আর বাতাসটা ভাল। কড়ি আর আমি হাত ধরাধরি করে কিছুক্ষন দাঁড়ালাম ঢেউয়ে পা ডুবিয়ে। একটু পরে সানিয়া-ইফা-কড়ি হাঁটতে গেল। আশিক শুয়ে পড়লো ঘাসের উপরে আর আমি ঘাটে বসে ঢেউ দেখছিলাম। স্বচ্ছ আকাশ, হালকা রোদ। দূরে, ঘাটের যে অংশ লম্বা সরু হয়ে চলে গেছিল মাঝ বরাবর, তার ঠিক প্রান্তে জীবন বীমার সুখি বিজ্ঞাপনের মতন নিবিড় বসে ছিল বুড়ো-বুড়ি। বুড়ির মাথা বুড়োর কাঁধে। ওদের সামনে লেক পার হয়ে উঁচু পাহাড় । সূর্যের আলোয় পাহাড়ে লেগে থাকা গাছগুলিকে উজ্জ্বল লাগছিল আর লেকের পানি চিকমিক করছিল। ওরা হয়তো দেখছিল এই সব, হয়তো কিছুই দেখছিল না। আমি ওদের দেখছিলাম।
একটা সোনালী চুলের শিশু ভীষন অভিমানে ডুকরে উঠে গড়িয়ে পড়লো ঘাসের উপর। এই সব ছেড়ে দিয়ে সে কিছুতেই বাড়ি ফিরতে চায় না। একটু পরেই হাসতে হাসতে ছুটলো লম্বা পা ওয়ালা নীল কালো তিতির পাখির পিছনে। ওর ঝাঁকড়া সোনালী চুল বাতাসে দুলছিল। ছোট ছোট সাদা জুতা পড়া পা গুম গুম করে পড়ছিল ঘাসের উপর আর তার হাসির শব্দ ঝলমলে কাঁচের টুকরার মতন ছড়াচ্ছিল বাতাসে।
পিকনিক সারছিল আরেকটা পরিবার। ওদের পায়ের কাছে গৃহপালিত সুখ হয়ে শান্ত ঘুমাচ্ছিল রেশমি সাদা কুকুর। একটা মেয়ের মাথার গোলাপী টুপিতে খুশির রঙ। শূণ্যে ছোঁড়া হল লাল বল। সে উঠছে…উঠছে দেখলাম আমি, তারপর চোখ ফিরিয়ে নিলাম। তার উর্ধ্বগতি ভালো লাগছিল, তারপর আবার নেমে আসবে জানি, তবে সব জানা সবসময় জানতে নেই।
বাবা আর ছেলে ঘাটে ফিরলো কায়াক নিয়ে। ওদের বৈঠার ছপছপ শুনছিলাম দূর থেকে। আর ধীরে ধীরে আবছা অবয়ব থেকে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছিল ওরা। ছেলেটার মা ঘাটে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিল। আর ‘টিমোথি টিমোথি’ বলে ডাকছিল ওকে। বাবা ছেলে একসাথে কায়াকটা টেনে তুললো বালিতে, পানি ঝড়ালো, শুকাতে দিল। ছেলেটা উত্তেজনায় প্রগলভ।
আমি অন্য একটা বিকাল ভাবলাম। অন্য কোথাও, আমি যেখানে ছিলাম – না থেকেও। যেখানে কখনো যাবো না হয়তো। কি আজব না? যার স্মৃতি আমাকে সবচেয়ে বেশি আচ্ছন্ন করে, তাকে আমি দেখি নাই কখনো?
ওরা ফিরলো। কড়ির নানা আবদার রাখছিলাম আমরা। ওরা বল্লো কতদূরে গেছিল। ব্রীজের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া যায়। আমি বললাম, আশিক মুখে টাওয়েল দিয়ে ঘুমাচ্ছিল যখন, ওকে এসে উঁকি দিয়ে দেখে গেছে একদল তিতির পাখি। ঠিক সেই সময় মুখ থেকে টাওয়েল সরালে ও দেখতো চারপাশটা পাখির মুখ! খাওয়া দাওয়া হলো – সিঙ্গারা, ভেজি রোল, সানিয়ার বানানো সুশি। কড়ি আরো কি কি খেতে চাইছিল। আশিক বল্লো ‘ওই যে যাও তো সূর্যের আলোর দিকে চেয়ে থাক!’ আমরা সবাই একসাথে হেসে উঠলাম।
এমন সুন্দর প্রকৃতির সান্নিধ্য পেলে যেন মনটাই ভালো হয়ে যায়। 😀
একটা প্রশ্ন। এটা কি অনুবাদ করা?
না, এটা আসলে আমার ডায়রীর অংশ 🙂 আমরা আসলেই বেড়াতে গেছিলাম।
লিখাটা অন্যরকম লাগলো, পুরোপুরি, কেমন একটা স্বপ্ন স্বপ্ন ভাব, আর ছোট ছোট কথায় গল্প……
দারুণ এক কথায়!!
:welcome:
অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য ঃ)।
সুন্দর! কাব্যিক। 🙂
:welcome:
ধন্যবাদ সামিরা 🙂
লেখাটা পড়ে আমার কেন যেন অদ্ভূত একটা অনুভূতি হলো। ছোটকালে তিন গোয়েন্দার বইতে যেমন আমি একটা দৃশ্যকল্প খুঁজে পেতাম অমন একটা অনুভূতি…
অসাধারণ সুন্দর ভাষা, কাব্যিক উপস্থাপন। এটা কীসের লেখা, নিজস্ব অনুভূতি নাকি অনুবাদ লেখক নিজেই তা ভেঙ্গে বলবেন আশা করি।
যা-ই হোক। অনেক সুন্দর লাগলো মাশাআল্লাহ! এরকম লেখা পড়তে সত্যিই খুব ভালো লাগে। আর হ্যাঁ, সরব পরিবারে স্বাগত জানাই নতুন লেখককে!!
:welcome:
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। এটা আসলেই একটা আবোল তাবোল লেখা। আমার ডায়রীর অংশ। 🙂 আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারো খুব ভালো লাগলো।
বাহ! ডায়েরির লেখনী হলে তো খুবই ভালো। তাহলে শীঘ্রই নতুন লেখা দিন। এরকম অকপট লেখা পড়তে ভালো লাগে।
পিচ্চি লেখাটা কী কিউট!
নিয়মিত লিখুন আপু
সরব এ স্বাগতম
আপনার কমেন্টটাও অনেক কিউট! নিয়মিত কোন কিছু যদি করতে পারতাম তাহলে কি আর আমি থাকতাম নাকি আমি? :p
হাহা
লেখাটা এতো অসাধারণ হয়েছে, মনে হচ্ছিলো, আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো বারবার। সব কিছু যেন নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছি। রঙ, গন্ধ যেন অনুভব করতে পারছি!
আপনার আরো লেখা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম……
অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়েছেন বলে। 🙂 আমার ভালো লাগায় আমিও খুশি হয়ে গেলাম!
অনেক সুন্দর………………
:happy:
:welcome:
আরও লিখা চাই :happy:
দিব ইনশাল্লাহ! :p
দারুণ লেখা! 🙂
:welcome: