১)
( স্থান: মোস্তফা স্যারের ক্লাস, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ
চরিত্র: সানিকা, মুনা, আনিকা )
– তারপর কি হয়েছে জানিস? পিঙ্ক সিটিতে গেলাম। ২টা ব্যাগ কিনলাম, ১জোড়া জুতা কিনলাম। তারপর আমরা লংড্রাইভে গেলাম। রাতে নান্দু’স এ ডিনার করে ও আমাকে বাসায় ড্রপ করে দিলো।
– ওয়াও ! আমিও কালকে ঘুরতে বেড়িয়েছিলাম। রাজ ওর নতুন হ্যারিয়ার নিয়ে এসেছিলো। তারপর আশুলিয়া গেলাম, নৌকায় উঠলাম (সানিকাকে একটা আস্তে গুঁতো দিলো মুনা)। তারপর অনেক মজা-টজা করে রাতে খেয়ে বাসায় গেলাম। আম্মুকে বলেছি যে আনিকা’র বাসায় তুই, আমি মিলে ইন্টিগ্রেশন করেছি। হি হি হি
– মানাম’রা গত সপ্তাহে প্রিমিও কিনলও, লাস্ট মডেলটা।
– ও!
পাশেই আনিকা জৈব এসিড পড়ছিলও, এদের জ্বালায় উঠে পিছনে গিয়ে পড়া শুরু করলো।
২)
আনিকা, মুনা ও সানিকা – ৩ জনই সিদ্ধেশ্বরী কলেজে পড়ে। আনিকা’র রেজাল্ট মাশাল্লা দিলে বেশ ভালো। ফার্স্ট ইয়ার ফাইনালে সে জিপিএ ৫.০০ পেয়েছে। অন্যদিকে সানিকা আর মুনা সারারাত পড়ার জন্য জেগে থাকলেও ২৫ পয়সার রেটের কাছে তারাও ধরাশায়ী !রেজাল্ট চলে আর কি! সানিকা’র ফিজিক্স আর ম্যাথ এ ক্রস গেছে। মুনা’র অবস্থা আরও করুণ! তার ম্যাথ, বোটানি, কেমিস্ট্রিতে ক্রস গেছে!
এদের বন্ধুত্ব/বান্ধবী-ত্ব কিভাবে হয়েছে তা আমি জানিনা। তবে সানিকা আর মুনার আপাতত জীবনের লক্ষ্য “মৌজ-মাস্তি”। আনিকা বেচারি একটু সেকেলে, তার বয় ফ্রেন্ড তো দুরের কথা, হায়-হ্যালো বলার মতো ছেলে বন্ধুও নাই। এ নিয়ে সানিকা-মুনা’র মতো কষ্ট পৃথিবীতে আর কেউ পেয়েছে বলে জানা যায়নি। কি না করেছে তারা আনিকা’র জন্য? তাদের বেস্ট ফ্রেন্ড একটা বয়-ফ্রেন্ড ছাড়া ঘুরছে, যেখানে তাদের পাইকারি হারে বয়-ফ্রেন্ড চেঞ্জ হচ্ছে! এটা যে তাদের জন্য কী অপমানের তারা জানে!
৩)
আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্ব পড়া শেষ করে আনিকা একটা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললো! হুফফ! ৩দিন ধরে শুধু বোঝার ট্রাই করেছে। ইউটিউব ঘাটিয়ে বেশ কিছু ভালো এনিমেশন পেয়েছে স্পেশাল থিওরী অফ রিলেটিভিটির উপরে। MIT এর লেকচার গুলাও খুব কাজে লেগেছে।
আচ্ছা, সানিকা আর মুনার ব্যাপারটা আসলে কি ? ঠিক বুঝতে পারেনা আনিকা! কয়েকদিন পর পর বড়লোক কিছু ছেলেকে নিয়ে ঘুরোঘুরি করা, বাইরে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খাওয়া, একান্তে কিছু সময় কাটানো- ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা ব্যাপারগুলো! কি দরকার? খাবার-দাবার তো বাসায় খাচ্ছেই আনিকা! গল্প করার জন্য ছোট ভাই আছে, বাবা-মা আছে, ছোট খালামনি আছে। আবার বাইরের কাউকে কেনও দরকার? আর দৈহিক ব্যাপারটার কথাতো তার মাথায় ঢুকেই না! মাত্র ১৬-১৭ বছর বয়স, জৈবিক চাহিদা থাকলে বিয়ে করে ফেললেই হয়! তাহলে কি একেক পুরুষের দেহের স্বাদ একেক রকম? ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে, সুযোগ পেলে বড়ো মামীকে জিজ্ঞেস করতে হবে। ওর বড় মামী বেশ ভালো ডাক্তার।
৪)
– এই মুনা, নেক্সট মানথ থেকে তো প্রি-টেস্ট ! কিছুই তো পড়া হয়নি!
– আমারও তো! কালকে ভেবেছিলাম জেনেটিক্স চ্যাপ্টারটা একটু নেড়েচেড়ে দেখবো, আর এমন সময় রাজ ফোন দিলো যে “পি.এস. আই লাভ ইউ” হচ্ছে, দেখতে যেতে হবে।
– আনিকা তো এবারো মনে হয় জিপিএ ৫ পাবে! আমার বাসায় যে কত্তো সমস্যা হয় ওর জন্য!
– তা আর বলতে! আমার আম্মু তো বলে “ আমার নিজের পেটের মেয়ের উপর আমার বিশ্বাস নাই, কিন্তু আনিকা’র উপর আমার বিশ্বাস আছে”। এ জন্যই তো ওর কথা বলে বলে বের হতে পারি। রেজাল্ট দিলে যে কি হবেরে!
– এক কাজ করি! আনিকাকে একটা বয়-ফ্রেন্ড জুটিয়ে দেই!
– ইম্পসিবল! ও ফিরেও তাকাবেনা! আর ওর তো মোবাইল নেই! ও কিভাবে কন্টাক্ট রাখবে?
– ওর বার্থডেতে একটা মোবাইল দিল কেমন হয়?
– গ্রেট আইডিয়া!
৫)
সবাইকে বিদায় দিয়ে আনিকা ওর ঘরে গেলো। আজকে ওর বার্থডে। পার্টি শেষ করে ও গিফট গুলো খুলতে লাগলো। বড় চাচা দিয়েছে হেলিডে-রেসনিক এর ফান্ডামেন্টাল অফ ফিজিক্স। কি চকচকে, একদম অরিজিনাল বই!! ছোটো চাচা দিয়েছে একটা ডিজিটাল ডিকশনারী।
মুনা আর সানিকা’র গিফটটা খুললো। ও মা! একটা NOKIA 5800 !! সাথে একটা সিম কার্ডও আছে! আনিকা বেশ ভয় পাচ্ছিলো , বাবা কি তাকে পারমিশন দেবে মোবাইলের?
বাবা কিছুই বললোনা। শুধু বললো “ তুমি বড়ো হয়েছ। নিজের ডিসিশন নিজে নেবার চেষ্টা করো। মাথায় রাখবে, কোনটা ক্ষতি আর কোনটা উপকারী বুঝে ডিসিশন নিবে”
সিম ভরার সাথে সাথে মুনা আর সানিকা কনফারেন্স কল করলো। শুরু হলও তাদের গ্রুপ আড্ডা!
৬)
আজকে প্রি-টেস্টের রেজাল্ট দিয়েছে। আনিকা ৪.৭৫ পেয়েছে। সানিকা আর মুনা এফ গ্রেড কেনোনা এবারো তারা ২ সাবজেক্টে ফেল করেছে।
আনিকার বেশ মন খারাপ। রাতে ফোন আসলো, শাফিন ফোন দিয়েছে। শাফিন সানিকা,মুনা’র ভালো বন্ধু। আনিকা-মুনা-সানিকাদের গ্রুপ আড্ডায় শাফিনের সাথে আনিকার পরিচয়। ছেলে খারাপ না। রাইফেলস পাবলিক কলেজে পড়ে। শাফিনের সাথে কথা বলে আনিকা’র কিছুটা ডিপ্রেশন কাটলও। শাফিন তাকে বুঝাতে পারলো যে প্রিটেস্ট কোনও পরীক্ষাই না!
শাফিন আর আনিকা’র সম্পর্ক গাড় হচ্ছে। এটা লক্ষ্য করে সানিকা-মুনা যারপরনাই আনন্দিত ! তবে আনিকা এখনো পড়াশুনা করে, সারাদিন পড়ে। কারণ , রাতে শাফিনের সাথে কথা বলাটা নিয়ম হয়ে গেছে।
৭)
ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১১
আশুলিয়ায় ৩টা আলাদা নৌকায় আনিকা, মুনা ও সানিকা অবস্থান করছে। আজকে ভ্যালেন্টাইন ডে। আর যাই হোক, এই দিনের অমর্যাদা করার মতো সাহস তাদের নেই। তাই দিনটাকে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করতে তারা নৌকা ভ্রমণে বের হয়েছে। এই ফাকে বলে নেই, টেস্টে আনিকা ৪.০০ পেয়েছে। ভালো রেজাল্ট, তবে পুরনো আনিকা’র সাথে যায়না কেনও যেনও!
বাইরে বিকট শব্দে বাজ পরছে। নৌকায় আনিকা ভয় পেয়ে শাফিনের বুকে মুখ গুজে আছে। কেমন যেনও পুরুষের গন্ধ পেলো আনিকা! অন্যরকম গন্ধ, শুধু গন্ধতেই সে কেমন যেনও হয়ে পরছে। সারা শরীরে শাফিনের হাতের ছাপ পরছে। আনিকা ভয় পাচ্ছে। সে আরও জোরে শাফিনকে জাপটে ধরলো। সে স্বাদ পেলো, আদিম স্বাদ।
( লেখকের ভাবনা: এটাই মনে হয় আইনস্টাইনের আবিষ্কার না করা “ইউনিভার্সেল থিওরী অফ রিলেটিভিটি”! )
৮)
স্থান: আইডিয়াল কলেজ, এইচএসসি পরীক্ষার হল
বিষয়: পদার্থ বিজ্ঞান ২য় পত্র
আনিকা কোনও মতেই ই = এম সি স্কয়ার মিলাতে পারছেনা! তার কেমন যেনো বমি বমি লাগছে! তার মনে পরতে লাগলো MIT এর লেকচার, রিলেটিভিটির এনিমেশন গুলো। কিন্তু ইকুয়েশনগুলো লিখতে পারছেনা! ইতিমধ্যেই সে ৩টা গাণিতিক সমস্যা ছেড়ে দিয়েছে। আনিকা’র মনে হতে লাগলো সে হারিয়ে যাচ্ছে, অজানা এক ব্লাকহোলে। কাছেই আনিকা নামের কোনও এক উজ্জ্বল নক্ষত্রে সুপারনোভা ঘটেছে, সেই মৃত নক্ষত্রের টানে সে হারিয়ে যাচ্ছে।
৯)
ব্রাকে সানিকা আর মুনার ৩টা সেমিস্টার শেষ। আনিকা মেডিক্যাল এবং ঢাকা ভার্সিটিতে টিকেনি। ইডেনে সে ইংরেজি সাহিত্য পেয়েছিলো। সামনেরবার আবার এডমিশন পরীক্ষা দিবে আনিকা। তার চোখে শুধু একটাই স্বপ্ন, জেনারেল থিওরী অফ রিলেটিভিটি!
অসাধারণ লিখেছ , জীবনের জেনারেল থিওরী অফ রিলেটিভিটি….পথভ্রষ্ট হলে ইউনিভার্সেল থিওরী অফ রিলেটিভিটি….
লেখাটা বেশ আগের ! ছোট ছিলাম তখন ! খুব কাছে থেকে দেখা কিছু মানুষকে অবজার্ভ করে লিখা। একটা জিনিস দেখেছি কি, পাপী খুব সহজেই পার পেয়ে যায়, কিন্তু যে না বুঝে ভুলের দিকে পা বাড়ালো, সে পদে পদে ব্যাপক কষ্ট পায় 🙁
পুরো গল্পটা একটা জীবন্তের মতো সামনে ভেসে উঠলো! ভালো লাগলো খুব, আসলেই এমনই হয়……
:huzur:
সত্যিই এমন হয় ! কিন্তু হওয়াটা উচিৎ নয় !
মন খারাপ হল পড়ে… 🙁
তুমি বড্ড আবেগী 🙁 🙁
ঝরঝরে লেখা 🙂
প্রথম প্রথম তো বুঝতেই পারছিলাম না যে লিখাটার ” কি নাম দিবো ” ? 😛 😛
পরে গল্পের সাথে মিল রেখে এই নাম দিয়ে দিলুম। লিখা ভালো লেগেছে জেনে খুশী হলাম কিনাদি 😀
তাই নাই? বলো নাই কেন আগে? 🙁 🙂 🙂
কি কি ??? কি বলি নাই !!!! 😛 😛
সরি আরেকটা পোস্টের মন্তব্য এখানে চলে আসছে 🙁
তাও ভালো ! একটা মন্তব্য তো দিলে 😛
দু:খজনক!
একটা পাহাড় থেকে নামাটা অনেক সহজ, তারমধ্যে আবার পা হড়কালে নিজের কিছু করাও লাগে না!।
কিন্তু উপরে ওঠার কাজটা বেশ কঠিন।
তেমনি ভাবে, অধ:পতনের কাজ গুলো আমরা বেশ সাফল্যের সাথেই করি! 🙁
আফসোস!
ভালো লেখা!
ইয়াদ ভাইয়া, খুব সুন্দর একটা মন্তব্য লিখলেন 🙂 ধন্যবাদ পড়ার জন্য। 😀
মন খারাপ হয়ে গেল।
আমারো 🙁 🙁
লেখাটা ভাল লেগেছে।
🙁
😀
চমৎকার লেখা……অসাধারণ :clappinghands:
কিন্তু মনটা খারাপ হয়ে গেলো 🙁
🙁
দারুণ গল্প!
চোখের সামনে যা ঘটতে দেখেছি!
অসাধারণ!
সেটাই তো ! ইদানিং পোলাপান এত্তো বেয়াদপ হইতেসে রে ভাই ! খুবি আতংকে থাকি জুনিওরদের নিয়ে এখন ! আর বাপ-মা কে তো বাপ-মা-ই মনে করেনা !
মন খারাপ হলেও দারুণ গল্প! ইদানীং এটাই অনেক ছেলেমেয়ের জীবনের বাস্তবতা…
তবে লেখার শেষে কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম না নিলেই হয়তো ভাল হতো। পাবলিক খেপে যেতে পারে 🙁
আরও এমন গল্পও চাই 😀
“ক্ষেপে “
আসলে ক্ষেপার কিছু নাই ! আমি কিন্তু প্রাইভেট বলতে গল্পে দেখিয়েছি যে, কিভাবে স্বপ্নটা ভেঙ্গে অন্য রাস্তায় ডাইভার্ট হয়ে গেছে। সে চাইলেও প্রাইভেটে পড়তে পারবেনা, এতো টাকা তার বাপের নেই। জাস্ট এইটুকুই, প্রাইভেটের পড়াশুনা নিয়ে তো কিছু বলিনি 🙂
গল্প ভালো লেগেছে শুনে খুশী হলাম 🙂
😀
ভালো লাগল গল্পটা কিন্তু খারাপ লাগল আনিকার জন্য।
লেখাটা ফেসবুকে পড়েছিলাম, এখন আবারো পড়লাম। কিন্তু ফেসবুকে এই ডায়লগটা ছিলো বলে মনে করতে পারছি নাঃ
‘এটাই মনে হয় আইনস্টাইনের আবিষ্কার না করা “ইউনিভার্সেল থিওরী অফ রিলেটিভিটি”! ‘
থাকলেও মনে নাই। মহা ইউনিক ডায়লগ!
‘তার চোখে শুধু একটাই স্বপ্ন, জেনারেল থিওরী অফ রিলেটিভিটি!’ টাকসি, টাসকি! :huzur:
খুব ভালো লেগেছে…… অস্থির লেখা………