আমার আর হাসি পায়। কিতা করতাম। হাসি লাগলে কি নে হেসে পারা যায়?
ছোট বেলায় রোজার দিনে মসজিদে যেতাম সন্ধ্যার পর তারাবির নামাজ পড়তে। আসল কারন মোটেও তারাবি পড়া ছিল না। তারাবির নামাজ মানে আনন্দ। কারন এই সময়ে পড়তে বসতে হবে না। অতএব হুজুর এর যত কাছাকাছি বসা যায় ততই মঙ্গল, ফযিলত।
কিন্তু যে তারাবির উসিলায় পড়ায় ফাঁকি মারতে পারতাম সেই তারাবির হক বা ইবাদত বলে যে একটা কিছু আছে তার কখনও কুছ পরোয়া করি নাই। তাই নামাজের নাম করে বাসা থেকে পালাতে পারলেই আলহামদুলিল্লাহ। যেদিন ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা থাকতো সে ব্যপারে আগেই খবর পেতাম। আবহাওয়া গ্রুপটা জোশ ছিল। তাই ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কম ছিল। যাই হোক আবহাওয়ার সংবাদ সব সময় ঠিক হয় না। সুনামির খবর তো আর আবহাওয়া দিতে পারে না। তাই যেদিন সুনামি হত তার পরদিন থেকে ঠিকঠাক আল্লাহ্র নাম নিতাম। আর দোয়া করতাম আল্লাহ্ আর যেন কোনদিন তানভীরের আব্বু আমাদের না দেখে। আল্লাহ্ প্লিজ।
তারাবি পড়ার চেয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হত। সেটা হল নামাজের সময় অন্যগুলোকে হাসানো। বন্ধু হাফিজ ছিল অনেক ভালো ছেলে। মসজিদে এসে সবার আগে বলত আর কোনদিন নামজের মধ্যে কাশবে না। হাফিজ যখন হুজুরের দেখাদেখি সিজদা কালাম করতো, কেন জানি এই সময়টাতে হেবি কাশি দিতে ইচ্ছে করতো। ব্যস! সবার আগেই ফিক করে উঠত হাফিয। হে হে! হাফিয বলে হাসবেনা। ও যখন হাসত, নামাজের মধ্যে একেবারে আদিকালের নিয়ম- একটা ছেলে হাসলে বাকি গুলো খিল খিল করবে। হাসি না আসলেও এই সময় হাসতে যে কি মজা লাগত। মনে করলে আজো …।
শুধু আমি একা ছিলাম না। এক দঙ্গল। পোড়া কপাল ছিল কারন এই সব বাঁদরদের বাবা মা এবং অভিভাবকরা একে অপরকে ভালো চিনত। তাই কোন একজন কিছু কিঞ্চিত করলেই অনেক সময় সবাই মিলে ধোলাই খাইতে হইত। তাই যা করার একসাথে করতাম। স্কুল পালাইলে সবাই এক সাথে পালাইতাম। আমাদের মধ্যে একটা ছিল ফার্স্টবয়। ঐ শালা আবার ক্লাসের মনিটর ছিল। তাই বেচারা খুব কষ্টে ছিল। স্কুলে টিফিন আওয়ারের পরে আবার রোল কল করা হত। ফাসাদ লাগত ঐ খানে। ক্লাসে না থাকলে ২০ টাকা করে জরিমানা। এটা টিফিন খেয়ে ক্লাস না করার গুরতর অপরাধের কারণে। একটা সুবিধা অবশ্য ছিল। মনিটরটার কাজ ছিল রোল কলের কাজটা করা। তাই শেষমেশ ওরেই ধরা। বেচারা দেখল সব গুলো ওর ইয়ার দোস্ত। ও ধুমসে আমাদের ক্লাসে উপস্থিত দেখিয়ে চলল। আমারও ক্লাস বেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাইকেল রেস চালিয়ে দিতাম। কখনও তো সাগরদাঁড়িতে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি পর্যন্ত চলে যেতাম। আর আমাদের মনিটর বন্ধু, ওর জন্য কিছু না আনলে তো দোস্তির মর্যাদা থাকে না। তাই ওরে আইসা উরাধুরা সত্য অসত্য মিলিয়ে আবজাব গল্প আর মাঝে মাঝে চটপটি খাওয়ায়ে বন্ধুর জন্য অগাধ ভালবাসা শীর্ষক মানপত্র চিল্লাইতাম।
কিন্তু ঐ শালাই একদিন করলো এমন কাণ্ড যা সব পণ্ড করে দেবার উপক্রম করলো। শুক্রবারে তো কোনদিন স্কুল হয় না। আর হইলেও আমাদের মত বক ধার্মিকরা জীবনেও ওখানে আসবে না। কিন্তু ঐ বেটা ভুল করে একদিন শুক্রবারের দিন আমাদের ক্লাসে উপস্থিত দেখাল। আসলেও কাজটা করেছিল ভুল করে। ও জানত যে ওর সব দোস্তরা কোনদিনই টিফিনের পর আসবে না। যা করার ওকেই করতে হবে। তাই ও একদিন সবারটা আগাম উপস্থিত দেখিয়ে খাতা টিক মার্ক দিয়ে রাখল।
মাস শেষে ক্লাস টিচারের খাতা দেখার পালা। মাসের প্রথম সপ্তাহে গুরুদেব সেই কর্ম করতেন। আমরাও বড় সাধুর ন্যায় ঘণ্টা ধরে বসে থাকতাম। একদিন সক্কাল। গুরুদেব দেখিলেন তাহার কতিপয় অসাধু শিশ্য শুক্রবারে বিদ্যালয়ে আসিয়াছিল। আবার উহাদের নামের পাশে উপস্থিত লেখা রহিয়াছে। তারচে বড় কথা টিফিনের পরেও, শুক্রবারের মত মহান দিনে ইহারা ক্লাস করিয়াছে।! কি ভেজাল।
তারপর একে একে সব ফাঁশ হয়ে গেল। ক্লাসের ফার্স্ট বয়ের মনিটর গিরি গেল। রাজ্য খতম। বাড়িতে নালিশ গেল। পিঠের উপর দিয়ে সুনামি গেল। শুধুর আবহাওয়ার খবর দাতা ঠিকমত কাজ করলো না।
মনিটর বন্ধুর পোস্ট হারানোতে যে কয় দিন শোক পালন করা লাগে তা শেষ হবার আগেই নতুন ফন্দি জুটল। শুরু হল ব্যথা। পেট ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, হাঁটু ব্যাথা- হেন কোন জায়গা ছিল না যে ব্যথা করতো না। ব্যথা শুরু হত টিফিনের আগেই। ব্যস দরখাস্ত মঞ্জুর। টিফিনের পর এই সুবোধ বালকের আর বিদ্যালয়ে থাকিবার আবশ্যক নাই কারন তাহার শরীরে বিস্তর ব্যথা। হেডমাস্টার মশাই বড্ড ভালো মানুষ ছিলেন। দরখাস্ত ফেলিবা মাত্রই মঞ্জুর। আমরা এবার হালালভাবে এই কাণ্ড করতে লাগলাম।
কথায় বলে চোরের দশ দিন আরে সাধুর একদিন। আবারো ধরা পড়লাম। সবাই এক সাথে। বিশেষ করে একজনের বুদ্ধিতে ভর দুপুরে গার্লস স্কুলের সামনের ব্রিজে বসার কশরত করতে গিয়ে। আমার নামের সাথে ভদ্র বলে একটা শব্দ ছিল। কারণ মুরুব্বিদের সামনে কথা বলতাম না শব্দ করতাম না। সেই আমিও এই ভাবে ধরা খাইলাম।
আইন জারি হল আমাদের পাল আর টিফিনের পর ছুটি পাবে না। কুনু ব্যাথায় কাজ হবে না। ছুটি নিতে হলে বাসা থেকে অভিভাবকের সই আনতে হবে। না হলে কুনু ছুটি নাই।
আবার সেই ক্লাস। কি করা। বের করো নতুন উপায়। আমার দরখাস্তে একজন সই দেয়, আমি দেই আরেক জনের টায়। এভাবে চলল কিছু দিন।
একদিন স্যার ডাকলেন। আমার দরখাস্ত ভরা ক্লাসের সামনে ধরলেন। এইবার আসল কাজটা সারলেন। বড্ড মিহি সুরে জিজ্ঞেস করলেন ‘ তুমি কি তোমার আরেক জন পিতা বানিয়েছ যিনি নিয়মিত তোমার দরখাস্তে দস্তখত মারেন?’।
আমি এমনিতেই অনেক কালো। তারপরও কেমন জানি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। এরকম অপমান কপালে থাকবে স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। একদম লা জাওয়াব বনে গেলাম। মনে হচ্ছিল জীবনে এমন আজিব কথা আর কখনও শুনি নাই।
দিন দুই আগে এরকম তাজ্জব আরেকবার হলাম। প্রথম আলোর খবরে দেখলাম এক মন্ত্রী বলেছেন “ওরা যেহেতু লাল বাতি সবুজ বাতি চিনে, গরু ছাগলও চিনে তাই ওদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া উচিত”।
মনে পড়ল ছোট বেলায় নামাজের সময় হাফিজের মহান বাক্য- “হাসবি না। হাসলে থাপ্পড় দিয়া দাঁত ফালাইয়া দিব”।
হাসতে হাসতে শ্যাষ!!!
চরম হইসে……… :fire: :fire:
আপনার স্কুল পালানোর ঘটনা গুলো বেশ মজার 😀
স্কুল একবারই পালিয়েছিলাম, ছুটি হওয়ার ১০-১৫ মিনিট আগে। তখন অবশ্য ক্লাস চলছিলো না। কি একটা অনুষ্ঠান ছিলো। 😐
মফস্বলে স্কুল পালানোর মত মজার কাজ আর নাইরে ভাই!
হা হা! সেইরকম। :dhisya:
স্কুলে আমাদের ক্লাস মিস দিয়ে পড়ে অ্যাপ্লিকেশনে সব ধরনের ছুতা দেওয়া যখন শেষ হয়ে গেলো, তখন নতুন একটা আবিষ্কার করলাম সবাই মিলে, “পারিবারিক সমস্যার জন্য আসতে পারি নি”। 😛 এটা লিখলে আর মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ইত্যাদির ঝামেলা করতে হত না কীনা! আর টীচাররাও কী না কী সমস্যা ভেবে বেশি কিছু জিজ্ঞেস করত না। 😛 😛
শেষকালে একবার এক ম্যাডাম রেগেমেগে বলেছিলেন, তোমরা কি সংসার করো নাকি যে এখনি পারিবারিক সমস্যা শুরু হইছে?
=))
পারিবারিক সমস্যা! কিছু বলার নাই।
আপনাদের মাথা এত ছোট কিন্তুক বুদ্ধিতে ভরা।
ছোটবেলায় বদগুলাই বড়ো হয়ে ট্যালেন্ট হয়!! আবার প্রমাণিত!! :huzur: :huzur: :huzur:
শৈশব! আপনার কাহিনী তাহলে প্রকাশ করে দিন।
আমি না কুনুদিন ইশকুল ফাঁকি দেইনাই 🙁 🙁 🙁 :wallbash: :wallbash: :wallbash: :wallbash: :wallbash: :wallbash: :wallbash: :wallbash:
চিক্কুর দিয়া কান্নাকাটির ইমু হবে !
ইমো মানেজার কে দরকার। কিন্তুক আপনি কান্দেন ক্যান ভাই?
:rollinglaugh: :rollinglaugh: :rollinglaugh: =))
=)) =)) :rollinglaugh: :rollinglaugh:
পুরাই হাহাপগে লেখা!
কমেন্ট করিতে ভুলে গেছলাম!
=))
বার কয়েক গড়াইয়া হাসলাম! সেইরকম বাঁদরামো করেছেন দেখি! সামনে দেখলে কিন্তু বুঝা যায় না
আমি আসলে ভদ্র। মুরুব্বিদের খুব সম্মান করি। তাই……
হাহা! :rollinglaugh:
‘বোকা’ মানুষ দেখি এতোটাও বোকা ছিলেন না! ফাঁকিবাজির কি অদ্ভুত সব আইডিয়া! :clappinghands:
হাসলে ……ফালায়া…।।
জটিল হইছে। পুরাই সেইরকম। 😆
একটু আগে ভাবের পাগলের এক পোষ্টে তিনি বলেছেন হাসবো না এখন আপনি বলছেন হাসবো না….এটা হতেই পারে না…..! এবার হেসেই ফেললাম 😆 😆 :yahooo: :yahooo: :rollinglaugh: :rollinglaugh:
হাহাহা……
স্কুল পালানো হয় নি এই জীবনে…. আফসোস…….. 🙁
যারা স্কুল পালাতো, তাদের কী খারাপ ভাবতাম….. :p