একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জবানবন্দি

তুই কি কোন জাতিস্মর? তুই কিভাবে জানলি শুধু এই জন্মে না, সব জন্মেই কালো আমার বড্ড পছন্দের রং। প্রথম যেদিন তোর সাথে দেখা হয়েছিল সেদিন তুই কালো রঙের একটা জামা কেন পরে ছিলি। কালো তো শোকের রং, তাহলে ঐ রং গায়ে জড়িয়ে তুই ঝলমল করছিলি কেন? এমনভাবে অন্ধ করে দিয়েছিলি কেন আমাকে, যে অন্ধ তোকে ছাড়া চোখে আর কিছুই দেখে না?

তুই ছিলি একটা ঘূর্ণিঝড়ের মতো। জানিস তো ঘূর্ণিঝড় চলে আপন নিয়মে, সে জানে না কার ঘর উজাড় করছে সে বা কোন মায়ের বুক করছে খালি; সে শুধু ঘুরতে ঘুরতে চলে আর যে তার চলার পথে দুর্ভাগ্যক্রমে এসে পরে তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়, কিন্তু নিজের সাথে নেয় না কখনোই। কই আমি তো আমার সর্বস্ব নিয়ে উজাড় হওয়ার জন্য তোর পথের ধারেই দাঁড়িয়ে ছিলাম; আমাকে নিলি না কেন তুই। আমাকে উজাড় করলে বুঝি তোর গৌরব
কমে যেত?

জানিস আমি নিজেকে খুব সাহসী ভাবতাম। আমাদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল একটা সুনসান কবর আর তারি পাশে মস্ত এক পুকুর। দিব্যি করে বলতে পারি ভূত যদি সেখানে না থাকে তাহলে পৃথিবীর আর কোথাও নেই। সেই কবরের পাশ দিয়ে কত গভীর রাতে হেঁটে গেছি কত সহস্র বার, কই আমার তো ভয় লাগে নি। কিন্তু আমার শুধু ভয় লাগত তোকে; যেন তোকে ভালো লাগে বলতেই তুই হয়ে উঠবি মস্ত কোন ডাইনি, কট করে মটকে দিবি আমার ঘাড়টা। তাই
সামনে দাঁড়িয়ে বলা তো দূরে থাক, ইথারেও ছড়িয়ে দিতে পারি নি আমার ভালোলাগার তরঙ্গ। তুই প্রথম বুঝিয়ে দিলি আমি কত ভীতু…

তুই তো জানিস ইতিহাস শুধু বিজয়ীদের নামই ধারণ করে তার বিশাল বপুতে। কিন্তু আমি বিজয়ী হতে চাই নি, বিশ্বাস কর আমি বিজয়ী হতে চাই নি। কারণ আমি জানি কেউ জয়ী হলে কাউকে হতে হয় পরাজিত। কিন্তু আমি তো তোকে হারাতে চাই নি। আমি শুধু চেয়েছি তোর সাথে খুনসুটি করতে করতে বুড়িয়ে যেতে। আমার স্বপ্নের সংসারে তুই রাজরাণী হয়ে থাকতিস না বরং তুই সারাক্ষণ আমার কানের কাছে এসে বলতিস, ‘তোর সাথে সংসার
করে আমার জীবনটা বরবাদ হয়ে গেল’ তাহলেই আমি তৃপ্তি পেতাম।

জানিস তোর জন্য একদিন যেসব কবিতাকে ‘ছ্যাঁক খাওয়া কবিতা’ বলে তাচ্ছিল্যভরে দূরে সরিয়ে দিয়েছি সেই কবিতাগুলো এখন বারবার আমার কাছে ফিরে আসে। আর ওরা ওদের গূঢ় অর্থ গুলো অনাবৃত করে আমার সামনে নগ্ন নৃত্য করে। কেবলই আমার দিকে তাকিয়ে অট্টহাসি দেয়। জানিস আমি কোনদিন হতাশ কবিদের দল ভারী করতে চাই নি। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস দেখ, আজ আমি ওদের নেতা।

জানিস আমি তোর কাছে ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ। ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে আছিস কেন? খুব অবাক হচ্ছিস বুঝি? আমি কৃতজ্ঞ কারণ তুই আমাকে দিয়ে এই লেখাটা লিখিয়ে নিলি। ভাবছিস এ আবার এমন কি মহান লেখা বাপু যার জন্য আবার ঘটা করে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন। ও তুই কখনো বুঝিস না আর বুঝবিও না। কিন্তু আমি জানি একদিন একজন আসবে যে এই লেখাটা দেখে বলবে আরে এ তো আমারই মনের কথা, চুরি গেল কি করে? তারপর আসবে আরেকজন, তারপর আরেকজন।
এভাবে ধীরে ধীরে তোর বা তোদের কাছে কৃতজ্ঞ লোকের ভারে নুয়ে পরবে এ পৃথিবী।

-হিল্লোল

অন্য স্বর সম্পর্কে

ননরেজিস্টার্ড সদস্যগণও যেন সরবে লিখতে পারেন সেই জন্য এই একাউন্ট। যোগাযোগ পাতায় কিছু লিখে জমা দিলে সরব এর মডারেটরগণ তা মূল্যায়ন করবেন। মনোনীত হলে এই একাউন্ট দিয়ে ছাপা হবে।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

7 Responses to একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জবানবন্দি

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    ভালো লেগেছে তো! মুক্তগদ্য টাইপ লেখার আমি ভীষণ ভক্ত। নিজে পারি না যে!

    • হিল্লোল বলেছেনঃ

      অনেক ধন্যবাদ। লেখার সময় ঘোরগ্রস্তের মতো লিখে গেছি শুধু, জানিও না মুক্তগদ্যের মতো হয়েছে নাকি হয় নি!

  2. কৃষ্ণচূড়া বলেছেনঃ

    ভাল লাগলো :clappinghands:
    নিয়মিত লিখুন

  3. সামিরা বলেছেনঃ

    ভাল লেগেছে লেখা।
    নিয়মিত লিখবেন আশা করছি।
    :welcome:

  4. শারমিন বলেছেনঃ

    :welcome:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।