আমাদের রাজনৈতিক নেতারা বিশ্বাস করেন পেশীশক্তিতে, লেখকরা বিশ্বাস করেন কলমের শক্তিতে, আর আমাদের হিন্দি-সিরিয়াল-প্রিয় আপামর মা-বোনেরা বিশ্বাস করেন বাকশক্তিতে!!
পাঠক হয়ত প্রশ্ন করবেন মহিলাদের বাকশক্তির প্রাচুর্য এবং আধিপত্য বিস্তারে সে শক্তির প্রয়োগ তো নতুন নয়! আবহমান কাল ধরে চলে আসা এই ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে হঠাৎ আমার কলম-কীবোর্ড ধরার কারণ কী? তাই বিনয়ের সাথে বলছি, পুরুষ অথবা মহিলাদের বাকশক্তি এবং তাঁর প্রয়োগের ব্যাপারে আমার কোন আপত্তি নাই। আমার আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে মহিলাদের বাকশক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে আধুনিককালের হিন্দি সিরিয়ালের অপপ্রভাব।
এ প্রসঙ্গে বলে নিচ্ছি, লেখক একজন হিন্দি-সিরিয়াল-বিদ্বেষী এবং পারিবারিক জীবনে হিন্দি সিরিয়ালের ভিক্টিম ও বলা যায়। এটুকু পড়ার পর অনেক মা-বোন হয়ত আর অগ্রসর হতে চাইবেন না।
আচ্ছা, আপনাকে একটা প্রশ্ন করি। এমন একটি বিনোদনমূলক গণমাধ্যমের নাম বলুন যেখানে
• বারবার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এবং অনেক সময় ঘোরানো পেঁচান বাদ দিয়ে হুবহু একই কাহিনী দেখানো হয়।
• নায়ক-নায়িকার পোশাক হাসির উদ্রেক করে।
• কাহিনী হয় নাটকীয় এবং অবাস্তব, অনেক সময় কোন নির্বোধ এই কাহিনী লিখেছে তা নিয়ে আপনি চিন্তিত হয়ে পড়েন।
• অযথা চাকচিক্যের সাহায্যে দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করা হয় এবং
• একটি বিশেষ শ্রেণীর দর্শকের কাছেই শুধু তা গ্রহণ্যোগ্যতা পেয়ে থাকে!!
এই প্রশ্নটি যদি অন্য কোথাও করা হত তাহলে আমি নিশ্চিত আপনার উত্তর হত বাংলা ছিঃনেমা। কিন্তু এই লেখায় আমি আগেই হিন্দি সিরিয়ালের কথা উল্লেখ করায় আপনার চালাক মস্তিষ্ক অলরেডি ধরে ফেলেছে যে আমার প্রশ্নটির উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলা ছিঃনেমার সাথে হিন্দি সিরিয়ালের তুলনা করে বাংলার ক্লাস-সচেতন হিন্দি-সিরিয়াল-প্রিয় মহিলাদের লজ্জায় ফেলা এবং হিন্দি সিরিয়ালের জ্বালায় অতিষ্ঠ নিরীহ পুরুষদের আত্মতৃপ্তি লাভের উপায় করে দেওয়া। তো আপনাকে বলে রাখছি যে আমার এই উদ্দেশ্য থাকা এবং আমার গোপন উদ্দেশ্য আপনার কাছে প্রকাশিত হয়ে পড়ায় আমি মোটেই লজ্জিত নই।
এখন আমি দীর্ঘদিন ঘরে বসে থাকা আমার অলস মস্তিষ্কের কিছু অনুসন্ধানের কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পরিবারে মা এবং হিন্দি সিরিয়ালপ্রিয় কন্যার মাঝে কথায় কথায় অকারণ ঝগড়া লেগে যাচ্ছে। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমি দেখলাম, এই ধরণের ঝগড়া শুধুমাত্র হিন্দি সিরিয়ালেই উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু অবাক ব্যপার হচ্ছে, হিন্দি সিরিয়ালে এই ঝগড়া হয় শ্বাশুরী এবং ছেলের বউ এর মাঝে। তবে কি হিন্দি সিরিয়াল দেখতে দেখতে অবচেতন মনে কন্যা তার মা-কেই শ্বাশুরী কল্পনা করে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে?
কেউ কেউ হয়ত বলবেন, হিন্দি সিরিয়ালের প্রতি বিদ্বেষ থাকার কারণে আমি কাল্পনিক অভিযোগ করছি। তাঁর প্রতি আমার প্রশ্ন, যে বিনোদন মাধ্যম থেকে আপনি নতুন কোন আইডিয়া পাচ্ছেন না, সৃষ্টিশীলতার বিন্দুমাত্র আভাস নেই, যা আপনার মনকে ঘরের চারদেয়ালের মধ্যে বন্দী করে ধীরে ধীরে আরও সংকীর্ণ করে ফেলছে (আরও অভিযোগের জন্য উপরে বাংলা সিনেমার সাথে তুলনা দেখুন) সেই মাধ্যমকে অপছন্দ করা এবং সেটা থেকে দূরে থাকার যথাসম্ভব চেষ্টা করার পরও যদি আপনি সেই মাধ্যম দ্বারা অত্যাচারিত হন; তাহলে তাঁর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা কি অপরাধ??
– আহসান
ব্লগিং এ স্বাগতম 8)
ধন্যবাদ :babymonkey:
হিন্দি সিরিয়াল বাঙালী ছেলেদের জীবনকে ভাজা ভাজা করে ফেললো। টিভি-র রিমোট সন্ধ্যার পর হাতে পাওয়াই দায়………
আরেকটু বড় লেখা আশা করেছিলাম।
সরবে আপনার আরও লেখা পড়বো আশা করছি 🙂
হিন্দি সিরিয়ালের জ্বালায় আমি টিভি দেখাই বন্ধ করে দিসি
:crying:আপনার পোস্ট পড়ে আপনার অলস মস্তিষ্কের পরিচয় পাওয়া যাইতেছে খানিক!:p-ফাঁকিবাজি পোস্ট হইছে কিন্তু-আরো ভালো লেখা চাই-চাইলে এটা নিয়ে আরো ভালো ভাবে এবং আরো সুন্দর যুক্তি দিয়ে আপনি লিখতে পারবেন।
দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত না হওয়ায় আমার মস্তিষ্ক আসলেই অলস হয়ে পড়েছে 🙁
ব্লগে এটাই আমার প্রথম লেখা। আপনার উপদেশের জন্য ধন্যবাদ।
আমিও ইঁদুর এর সাথে একমত। আরও বিস্তারিত লিখুন
আর শুধু নারীদের একলা দোষ দিলেই হবে না। কেন এমন হচ্ছে সেটা নিয়েও চিন্তা করতে হবে! নারীরা বাসায় থাকে। তাদের কাজের ফাঁকের বিনোদনটা কোথায়? আমরা কি ব্যবস্থা করতে পারছি?
আমার মতে একটাই সমাধান – হিন্দি চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া 😛
বাংলা নাটকের অবস্থা অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে এখন বেশ ভাল, এখনই সময় । এক সাথে সব বন্ধ না করে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা যেতে পারে।
বাংলা নাটক ভাল হলেও মানুষ কেন দেখে না বলে মনে করেন? বিজ্ঞাপন আর খবরের অত্যাচারে। 🙁 এই কারণগুলোও তো দূর করা দরকার।
হিন্দি সিরিয়াল অসহ্য।
ঠিক 🙁
আপনার লেখাটা ভালো হচ্ছিলো। কিন্তু দুই একটা পয়েন্টে এসে সরাসরি দোষ চাপিয়ে দিলেন মেয়েদের উপরে আর হিন্দি সিরিয়ালের উপরে — এই জায়গাটা কেমন যেন গ্রহণ করতে পারলাম না ভালো মতন।
আপনার কথা আর যুক্তি সবই সত্য — আরেকটু বড়ো হতে পারতো। আর সমস্যা বললেই আমাদের দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তি হয়ে যায়না, দু’একটা উপায় বাতলে দিতে হয়। নইলে পাঠক হিসেবে নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনা চিন্তা করতে গিয়ে।
আরো লেখা আশা করছি। শুভ লেখালেখি 😀
লেখাটায় একটু অতিসরলীকরণ হয়ে গেছে, দুঃখিত। এর পর থেকে আরও সচেতন থাকব
কিছুটা খাপছাড়া, তবে আরও ভালো লিখতে পারবেন এইটা confirm. 😀
ধন্যবাদ
“তো আপনাকে বলে রাখছি যে আমার এই উদ্দেশ্য থাকা এবং আমার গোপন উদ্দেশ্য আপনার কাছে প্রকাশিত হয়ে পড়ায় আমি মোটেই লজ্জিত নই।”
লেখকের এই লাইনটাই মূলত লেখার শুরু। এর পরপর লেখার যবনিকা পতন ঠিক মেনে নিতে পারছি না। হাজার দিনের পুষে রাখা বাংগালী মধ্যবিত্ত পুরুষের বিস্বাদ টিভি অভিজ্ঞতার এক বিদ্রোহী মনের পরিচয় দেখতে পেলাম যেন।
দুটি পয়েন্ট আপনার হিন্দী সিরিয়াল বিদ্বেষের বিপক্ষে না বললেই নয়।
১. বাংলার অধিকাংশ মাতা-ভগ্নি পরিষদ শিক্ষা দীক্ষায় এবং চিন্তা চেতনায় বিদগ্ধ পিতা-ভ্রাতা পরিষদের চেয়ে পিছিয়ে। তাদের দিন কাটে চারদেয়ালের মাঝেই। তাদের জন্য চারদেয়ালের উপযোগী বিনোদন মাধ্যমকে এভাবে ভাষার মারপ্যাঁচে নিষিদ্ধ করার অপচেষ্টা মোটেই শুভকর নয়।
২. সিরিয়ালের অভিনেতা অভিনেত্রীদের পোশাকের ব্যাপারে লেখকের হাস্যকর মতামতকে চ্যালেঞ্জ করে প্রতি বছর ঈদে কি পূজায় নতুন নতুন কাপড়ের ব্র্যান্ড বেরিয়ে আসে। এর পেছনে যে বিশাল অর্থনৈতিক বিজ্ঞাপনের হাতছানি, তাকে অগ্রাহ্য করবেন কি করে?
একজন পুরুষ হিসাবে আবেগের ঢাল নিয়ে যুদ্ধে নামাটা কিছুটা বোকামী হয়ে গ্যাছে লেখকের। আপনার উচিৎ ছিল
“জাগো গো ভগিনী, ছাড়ো গো সিরিয়ালের প্যানপ্যানানী” জাতীয় কঠিন প্রেরণাদায়ক স্লোগান নিয়ে হাজির হওয়া।
তারপরও মতামত প্রকাশের অধিকার রিমোটের বাটনে না পারলেও কীবোর্ডের খাঁজকাটা সারফেসে চর্চা করতে পেরেছেন বলে আপনাকে অভিনন্দন।
ব্লগে লেখার জায়গা পেয়ে নিজের রাগ ঝেরে দিলাম, সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা অনেক বড় ব্যপার।
হিন্দি সিরিয়ালে দেখা যায় ৭০ বছরের বুড়ি শোবার ঘরে লাখ টাকার শাড়ি আর কোটি টাকার গহনা পড়ে পারিবারিক সুখ-শান্তির হিসাব করছে। একে হাস্যকর না বললে কী বলব?
সবাই সমাধান জানতে চাইছে, রিসার্চ করে এই পোস্টের একটা দ্বিতীয় পর্ব বের করে ফেলুন চটপট! 😀
:welcome:
ভাল আইডিয়া। ধন্যবাদ 😀
ভাল আইডিয়া 🙂