জানিস, কোন এক বিষণ্ণ বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় তোকে কখনো বলা হয় নি, ভালো থাকিস। ভীষণ আকাশ ভেঙ্গে আসা বৃষ্টি ঠেলে ঐ ঈষৎ বিরক্ত তুই যখন বাড়ি ফিরছিস, হঠাৎ করে তোর কাঁধে হাত রেখে বলি নি, ভালো থাকিস, আবার দেখা হবে। কোন এক বাসের জানালায় তুই, যখন বৃষ্টির দাপাদাপিতে বিরক্তি নিয়েই টেনে জানালাটা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিস, রাস্তার পাশে ভেজা একটা ল্যাম্পপোস্টের নীচে কাকভেজা এই আমি, তোর চোখে চোখ রেখে বলি নি, ভালো থাকিস, দেখা হবে, হারিয়ে যাস নে……
আমাকে তো তুই পাগল বলেই জানতি, সেই ছেলেবেলা থেকেই, বৃষ্টি মানেই ছন্নছাড়া এই আমার একলা হেঁটে যাওয়া কোন এক রাস্তা ধরে, অযুত নিযুত না বলা কথায় নিজের মনেই বিড়বিড় করে বেড়ানো, উঠোনে জমা পানির মধ্যে দিয়ে ছপাৎ ছপাৎ শব্দে দৌঁড়ে বেড়ানো, কেন জানি ভীষণ রকম মনে পড়ে রে তোকে। সেই বৃষ্টির মধ্যে ছুট ছুট ছুট কত্তো দূর…
অনেক বড়ো হয়ে গিয়েছিস এখন, না? অনেক নিয়ম মেনে চলিস এখন। রোজ নিয়ম করে অফিস যাস, রোজ সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠিস, রোজ একটা বিচ্ছিরি রকমের সময়ে হাসিমুখে পত্রিকার পাতা উল্টাস…
রোজ যখন তুই গম্ভীর মুখে বাসা থেকে বের হস, আমি পর্দার আড়াল থেকে এখনো তোকে দেখি, হঠাৎ চোখে চোখ পড়লে ছিটকে পালিয়ে আসি। যদি চিনে ফেলিস! কিন্তু জানি, তুই আর আমাকে চিনতে পারবি না এখন। তুই যে, তুই যে এখন অনেক বড়ো হয়ে গেছিস…
আচ্ছা, তোর কি মনে আছে সেই কথাগুলো? বর্ষার সময় ব্যাগে একটা পলিথিনের প্যাকেট রাখতি? যেদিন ধুন্ধুমার বৃষ্টি, সেদিন বইগুলো প্যাকেটে মুড়ে ব্যাগের মধ্যে রেখে, ভিজতে ভিজতে বাসায় ফেরার দিনগুলো, বাসায় কি বকাটাই না খেতি তুই! তবু, শোধরাতি কোথায়? পরের দিন আবার বৃষ্টি, পরের দিন আবার যেই কে সেই! কেমন জানি ছিলি তুই, খুব মনে হতো তখন, আগের জন্মে তুই বুঝি মেঘ ছিলি, তাই……তাই বৃষ্টি দেখলেই এমন পাগল পাগল হয়ে দৌড়ে যেতি……
কিন্তু, কিন্তু এখন অনেক কিছুই পালটে গেছে রে…এখন বৃষ্টি দেখলে তোর চোখে কেন জানি আমি বিরক্ত ভাব দেখি, টের পাই তোর মনের ভিতর একটা কেমন জানি উদাসীন ভাব, বুঝিবা চিন্তা হয় তোর না? মোবাইলটা ভিজে গেলে কি হবে?? পকেটের টাকাগুলো? কিংবা সদ্য কেনা শার্টটা ভিজে যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাই না?? কিংবা…কিংবা ভাবিস, এখন লোকজন কি বলবে, না?? এই আজকের কথাই চিন্তা কর, কি ভীষণ আকাশ কালো করা মেঘগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছিলো ভীষণ দাপটে। তুই আটতলার অফিসে বসে বাইরে তাকিয়েছিলি, ঐ দূর থেকে ভেসে ভেসে আসছে বৃষ্টিগুলো, তুই নির্বিকার হয়ে দেখছিলি……
জানালাটা ভালো করে লাগিয়ে দিলি তুই, বৃষ্টির ছাঁট যেন ভুলেও না আসতে পারে ভিতরে…
শোঁ শোঁ শব্দে কাঁপছিলো জানালাগুলো, তুই মূর্তির মতো বসে আছিস তোর কাজ নিয়ে…
জানিস, আমি তোকে দেখতে পাচ্ছিলাম, সেই ছোট্টবেলার তুই, এই জায়গায় থাকলে কি করতিস জানিস?? ঠিক ঠিক জানালা খুলে লাফ দিতি!! নিশ্চিত!! তোর যা পাগলামি! মনে আছে? একবার এক অচেনা অজানা রিকশাওয়ালাকে তুই বই খাতা ধরিয়ে দিয়ে বাসার ঠিকানা চিনিয়ে দিয়ে বলেছিলি, “বেল বাজিয়ে বই খাতা গুলো ঐ বাসায় দিয়ে দিবেন।” আর তুই বাসায় গেলি বৃষ্টিতে নাচতে নাচতে! ১ ঘন্টা পর! বাসার সবাই চিন্তায় অস্থির! আর তারপর একটা বেশ ভালো ধোলাইও খেয়েছিলি……
পালটে গেছিস না অনেক?? থাক, এখন হয়তো তুই চাইলেও বৃষ্টি ভালো লাগাতে চাস না, অনেক বেশি প্রশ্ন না এখন তোর মনে??
তবু বলে যাই, ভালো থাকিস, আবার দেখা হবে……
ইতি,
তোর ছেলেবেলা……
ছবি কৃতজ্ঞতা 500px.com
অনেক অনেক সুন্দর লাগলো ভাইয়া। আবেগাপ্লুত!
শিরোনাম পড়ার পরেও বুঝতেই পারি নি কাকে বলা হচ্ছে, এই জন্য আরো বেশি ভাল লাগলো মনে হয় শেষে এসে। লেখা পড়তে পড়তে ভাবছিলাম কার উদ্দেশ্যে লেখা। সেটা জানার পর আরেকবার পড়লাম।
আমরা সব হাহাকার-করা-শহুরে-জড়-পদার্থ! 🙁
আসলেই, আস্তে আস্তে অনেক কিছুই ভুলে যাচ্ছি……
খুব ভালো লেগেছে; এত আপন, এত আবেগমাখা, মনে হয় নিজেরই না বলা কথা এগুলো! 🙁
ধন্যবাদ, লিখাটা লিখার পর কেন জানি খুব মনে হচ্ছিলো, আমার গল্পটাই কি সবার হবে……
মন খারাপ হয়ে গেল………… 🙁 🙁
কিন্তু এত্ত ভাল লেগেছে পড়ে :clappinghands:
মনটা আমারও খারাপ ছিলো লিখার পর……
“ইতি,
তোর ছেলেবেলা……” :clappinghands:
কী অসাধারণ!!!
ছেলেবেলার পাগলামিগুলো হঠাৎ হঠাৎ মনের ভেতর উঁকি দিয়ে যায়। কিন্তু, ‘বড় হয়ে যাওয়ার’ অপরাধে তাদের সাথে ঘুরে বেড়ানো হয় না আর।
বড়ো হয়ে যাওয়ার অপরাধে…
দুর্দান্ত বলেছেন…
খুব ব্যস্ততা যাচ্ছে, সরবে আসাই হচ্ছে না ঠিকমতো, আসলে-ও দুইএকটা লিখা সাঁই করে পড়ে বেরিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু এই লিখাটা পড়ে মন্তব্য করার জন্য লগইন করতে বাধ্য হলাম…………
কী ভীষণ ছুঁয়ে যাওয়া একটা লিখা!! আজ বিকেলে এত্তো ঝড়ো হাওয়া বইছিল, সাথে ঝুম বৃষ্টি…… মন বেশ বিষণ্ণতায় ভরে ছিল… ছাতাটা বন্ধ রেখে-ই ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হয়েছি, কিন্তু পেছনে বেশ ক’জন টিচার দেখে ছাতাটা খুলে-ই ফেলেছি শেষ পর্যন্ত……… যা খুশি তাই, বা ইচ্ছে মতন ডানা মেলার ইচ্ছেটা ও কেন যে আটকে ফেলতে হয়………
প্রিয় ছেলেবেলা, আমার বিষণ্ণ বাদল দিনে, আমি তোমাকে ভীষণ রকম মিস করি……
গল্পটা অনেকটা আমার মতোই শোনালো, কেন জানি বিষণ্ণ মনে হলো খুব…
একবার কি যে হয়ে গেল!
ক্লাসে ধুমসে মারা মারি! ব্যপারটা মোটেও সাধারণ না। তনুর বলে সাজু আউট, কিন্তু ওরা দেবে না। এইবার দেখি ধুম মারপিট করছি।
হঠাত দেখি কপালে রক্ত। চিৎকার দিয়ে উঠি মা!
ধুর- এতক্ষণ ঘুমাচ্ছিলাম! হায়রে ক্লাস ক্রিকেট!!
ফেলে আসা ছেলেবেলা-
🙁
দারুন
ধন্যবাদ…
“কেমন জানি ছিলি তুই, খুব মনে হতো তখন, আগের জন্মে তুই বুঝি মেঘ ছিলি”
দারুণ লাগলো কথাটা…… :clappinghands:
মন খারাপ ও করে দিল ভীষণ 🙁
সেটাই বুঝি চাচ্ছিলাম, মন খারাপে ডুবিয়ে দিতে…
আমার ছেলেবেলার বৃষ্টিটাও এমোন ছিল!
স্কুলে যাবার পথা না ধরে ইচ্ছে করে অন্য পথে লম্বা পথে যেতাম! যেন বেশি ক্ষণ ধরে ভিজতে পারি!
আমাদের বিডিআর এর মধ্যে বিশাল মাঠ ছিল সেখানে দাপাদাপি করতাম সবুজ ঘাসের উপচে পড়া পানিতে।
ছেলেবেলার বৃষ্টি বুঝি সবারই এমন হয়…
বুকের মধ্যে কোথায় যেন একটা জটলা বেঁধে গেল! বেশ কিছুক্ষণের জন্যে হাড়িয়ে গিয়েছিলাম সেই অতীতে…। 🙁
গল্পটাই বুঝি এমন কোন জায়গা থেকে উঠে এসেছে…
অনেক সুন্দর লেখা। অনেক সুন্দর।
আবেগ ছুঁয়ে গেলো
ধন্যবাদ, ভালো লাগলো ভীষণ…
লেখাটা, কেমন যেনো সার্বজনীন ! সকল সমীকরনের জন্যই যেনো সত্য !
বৃষ্টি – বিশ্বাস করবেন, এবার একটাদিনও ভিজতে পারিনি! কিভাবে ভিজবো বলেন? ব্যাগ ভরা বই, মোবাইল পোরা পকেট আর ভদ্রমানুষের গন্তব্য পরীক্ষা হলে !
মন খারাপ করা লেখা। অনেক সুন্দর শৈশবদা, অনেক !
ধন্যবাদ……
আসলেই, এখন কেন জানি অনেক বেশি বাঁধা, অনেক বেশি প্রশ্ন, আগের মতো বাঁধন ছেড়া কিছুই নেই আর…
ভালো লাগল।
আমাদের বাবা মায়েরা স্কুল থেকে আনতে যেতেন কিনা, তাই কখনই ভেজা হত না। একদিন কি হল, সবাই একসাথে নেমে পড়লাম বৃষ্টিতে। আমাদের মায়েরা রক্তচক্ষু করে বকতে গিয়েও কেন জানি বকল না। তাদের বাঁধনছাড়া ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে থাকবে হয়ত।
গল্পগুলো মনে পড়লেই কেমন জানি মন খারাপ হয়ে যায়……
অসাধারণ 😀
আমি এখনও অনেক বৃষ্টিতে ভিজি। 😛
কিন্তু ছেলেবেলার বৃষ্টিতে ভেজাটা বেশি মজার ছিলও :crying:
সত্যি কথা, ছেলেবেলার সেই অনুভূতিগুলো এখন খুঁজে পেতে কেন জানি আগের মতো হয় না…
🙁
অনেক অনেক ভালো লাগলো লিখাটা …… ! অনেক সুন্দর……
ধন্যবাদ… :happy:
ছোটবেলায় বৃষ্টিতে ভেজা বারণ ছিল , ভিজলে আম্মু বকত……… এখন কেন জানি আর আগের মত ভিজতে ইচ্ছা করে না………… তবে বৃষ্টি হলে খুব ভালো লাগে, ঠান্ডা বাতাস মাখা বৃষ্টির ছাঁট যেন হিম হওয়া বুকের কোণে জল মাখিয়ে যায়…… পুরোটা শ্বাস নেবার ক্ষণ নিয়ে আসে এক পশলা বৃষ্টির ঝলক…
অনেক ভালো লাগলো
ধন্যবাদ
এই লেখাটি আমার খুবই প্রিয় 🙂
ধন্যবাদ আপু! দারুণ লাগে যখন কোন লেখা কোন মানুষকে ছুঁয়ে যায়…