লক্ষ্মী ভাইয়া,
কেমন আছ?নিশ্চয়ই ভালো,স্রষ্টার কাছে যে থাকে তার নিশ্চয়ই খারাপ থাকার কথা না,তাই না ?
মনে পড়ে তোমার ?আকাশে মেঘের ডাকাডাকি শোনামাত্রই আমাদের কি ছোটাছুটি ই না শুরু হয়ে যেত। অন্যদের মতো খেলার আয়োজন কিংবা বৃষ্টির জলে নিজেদের ভিজিয়ে নেবার আনন্দে নয়-তোমাকে নিয়ে হতো সেই ছোটাছুটি।কারণটা অনেক বেশি কষ্টের। কেননা সৃষ্টিকর্তা তোমার ওপরের আদলটা যতখানি নিখুঁত করে গড়ে দিয়েছিলেন,ভেতরটা ততখানিই খুঁত রেখে গড়েছিলেন।
এটাই হয়তো নিয়তির খেলা।
মেঘের ডাকাডাকি যত বাড়তে থাকতো তোমার বুকের ভেতরের কষ্টটাও বাড়তে থাকতো। হার্টের ছিদ্রের কারণে অল্প ঠাণ্ডাতেই তুমি কাবু হয়ে পড়তে। এই হার্টের ফুটোই তোমাকে শেষ পর্যন্ত আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে গেল।
এখনও আগের মত বৃষ্টি হয়, কিন্তু আমাদের আর আগের মত ছুটোছুটি করা হয় না। বৃষ্টিটাও আজকাল সুন্দর মনে হয় না আগের মত। সেটাকে কেমন যেন কান্নার মত দেখায় যেমন করে আম্মু কাঁদে তোমার ছবি দেখে।
ভাইয়া,তোমার কবরটা এখন খুঁজে বের করে নিতে হয়। দু’টা বছরেই মানুষের অস্তিত্ব কেমন মাটির সাথে মিশে যাবার মত হয়ে গেছে। কবরের সীমানা দিয়ে শুধু উপস্থিতি টুকুরই কি জানান দেয়??!!জানি,আসল অনুভবটুকু তো অন্য জায়গায়।
তাই তোমার কবরের পাড়ে দাঁড়িয়ে দোয়া করি।
তোমার মুখে বুবু ডাক শুনতে পারি নি। কখন আমরা বাসায় আসবো সেই অপেক্ষায় দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা আর আসামাত্রই অমনি বুকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া-তা আর আমাদের পাওয়া হল না।
ভাইয়া বলে ডাক দিলে কত লজ্জাই না পেতে তুমি। আমি তোমাদের কত ছোট,আমায় ভাইয়া ডাকো কেন-এমন একটা ভাব।
তোমাকে ঘুম পাড়ানোর গল্প বলবো বলে কত রকমের বই কিনে জমিয়েছি।
সব আজ স্মৃতির ভাণ্ডারে অবাস্তব জায়গা করে নিয়েছে। কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়-হয়তো এই সত্যটাকে প্রমাণ করতেই।
বৃষ্টির ডাক শুনলে আমাদের তোমাকে নিয়ে কত চিন্তা হতো। সেই বৃষ্টিই আজ তোমাকে গান শোনাবে। ঘুম পাড়ানোর গান। ঘুম ভাঙানোর গান।
ঠাণ্ডা বাতাসে তোমার শ্বাস ভারি হয়ে আসতো। আর আজ তুমি পুকুর পাড়ের ঠাণ্ডা বাতাসের কিনারেই শুয়ে আছো।
যেই জগতে তুমি আছ তার ঠিকানা কারো জানা নেই, সেই খানে কোন নেটওয়ার্ক পৌঁছায় না। অন্য পাড়ের সেই জগতে যে যায়, সে আর ফিরে আসে না, যেখানে সবাইকে যেতে হয়।সেখানেই তুমি সুখে থাকো। ভালোবাসা আর দোয়া-আপুদের এই জিনিস কয়টাই তোমাকে দেয়ার মত আছে।
ফুলের কাছে,পাখির কাছে,সাদা কালো মেঘের কাছে ঠিকানাবিহীন সবুজ খামে ভরে ,বনলতার ফুল জড়িয়ে তোমার জন্য এই চিঠি পাঠিয়ে দিলাম, ঠিক ঠিক তোমার কাছে পৌঁছে যাবে আমি জানি,কেননা ওরাই তো জানে স্রষ্টার ঠিকানা যেখানে উনি তোমায় রেখেছেন।
অনেক অনেক ভালো থেকো।
ইতি
তোমার ফেলে যাওয়া বোনটি।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো। যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক
🙁
মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। আবেগগুলো ছুঁয়ে গেলো …..
লক্ষ্মী ছোট্ট ভাইয়াটা নিশ্চয়ই ভালো আছেন। আল্লাহ তাকে ভালো রেখেছেন। চলে যাওয়া মানুষরা নাকি সবই টের পান, ভাইয়াটাও তাহলে জানতে পারছে তার আপু তার জন্য প্রার্থনা করছে, তাকে স্মরণ করছে…..
নিশ্চয়ই……।
মন খারাপ করে দেবার জন্য দুঃখিত 🙁
নিশ্চয়ই……।
মন খারাপ করে দেবার জন্য দুঃখিত
“তোমাকে ঘুম পাড়ানোর গল্প বলবো বলে কত রকমের বই কিনে জমিয়েছি”
এক বৃষ্টি যেমন কত আনন্দে ভরিয়ে দিতে পারে। টুকরো স্মৃতি মনে পড়ে গিয়ে সব আনন্দই নিছক মন খারাপ করায় রূপ নেয়।
প্রিয়জন হারানোর বেদনা চরম দুঃসহ। আরো কঠিন, একে কাগজের ভাষায় স্থান দেওয়া।
অনেক ভাল লাগলো। এবং অনেক মন খারাপ হলো ওই ভাইয়াটার জন্য।
“প্রিয়জন হারানোর বেদনা চরম দুঃসহ। আরো কঠিন, একে কাগজের ভাষায় স্থান দেওয়া।”
আসলেই অনেক কঠিন,তাই যতবার “কবর” কবিতাটা পড়ি ততবার মনে পড়ে যাঁদের হারিয়েছি তাদের মুখ আর মুগ্ধ হই কবির প্রতিভায়। 🙁
লেখাটা অনেক সুন্দর হয়েছে। মনে হল একেবারে ভেতর থেকে উঠে আসা কথাগুলো। একটুও জড়তা খুঁজে পেলাম না।
আমারো এরকম একটা লেখা দেয়ার প্ল্যান অনেকদিন থেকে।
যারা চলে যায় তারা হয়তো একদিক থেকে বেঁচেও যায়। আবার এটা হয়তো ঠিক চলে যাওয়াও না – আত্মার তো মৃত্যু নেই। 🙂
“যারা চলে যায় তারা হয়তো একদিক থেকে বেঁচেও যায়। আবার এটা হয়তো ঠিক চলে যাওয়াও না – আত্মার তো মৃত্যু নেই।”
অনেক ভাল লাগলো কথাটা।আপনার লেখার অপেক্ষায় রইলাম
🙂
পড়ে ভীষণ কষ্ট লাগলো।
মন খারাপ করে দেবার জন্য দুঃখিত 🙁