গোলাপকে যে নামেই ডাকা হোক তাতে গোলাপ বা অন্য কারো অসুবিধা না হলেও মানুষের ক্ষেত্রে কখনও কখনও হয় বৈকি। এই যেমন আমার নামখানি। ছোটবেলায় আমার বাবা যখন আমাকে আর আমার ভাইকে রবিঠাকুরের গান শুনিয়ে আর বই খুলে দেখাতেন আমাদের নাম সেখানে জ্বলজ্বল করছে কি খুশিটাই না হতাম! “আনন্দধারা বহিছে ভুবনে” শুনে কতটুকু কি বুঝতাম জানি না, তবে ভদ্রলোক যে আমার নাম নিয়ে আস্ত একখানা গান বানিয়ে ফেলেছেন এইটা ভেবেই পুলকিত হতাম! :guiter: [আমার জন্মের এত আগেই কিভাবে আমার নাম জানলেন, আর আমি কে এমন রথী মহারথী যে আমারে নামই জানবেন, এই বিষয়ে সামান্য খটকা জাগলেও তাঁকে ভয়াবহরকমের দূরদর্শী আর হৃদয়বান বলেই ধরে নিতাম 😛 ]
নাহ, আনন্দ বেশিদিন প্রাণে সইল না। কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে বেশিরভাগ সময়ই কয়েকবার করে নাম বলা লাগত। সাধানণত নাম বলার পর মানুষ যা শুনত তা হল, সারা, হারা, ঝারা [নাকি ঝাড়া!]। আমার ভাইয়ের নাম চির। দুইজইনের নাম একসাথে বলা হলে অনেকেই এই প্রশ্ন করত, “কোনটা ছেলের নাম কোনটা মেয়ের নাম?” 🙁
স্কুলে সবার নাম উল্টো করে বলার খেলাটা সবসময় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতাম। সবার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা উল্টো নামে ডেকে কিছুক্ষণ হাসাহাসি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকলেও আমারটা সেখানেই শেষ হত না। বুঝতেই পারছেন কৃষ্ণের প্রেমিকা হয়ে থাকাটা খুব একটা সুখকর নয়। আর যার স্কুলের বন্ধুরা একেকটা পাজির পা-ঝাড়া, হাত-ঝাড়া সব তার ক্ষেত্রে তো নয়ই! 😛
ক্লাস ফাইভে আমাদের এক ম্যাডাম ‘ধ’ কে ‘দ’ এর মত উচ্চারণ করতেন। আর প্রতি ক্লাসে তিনি আমাকে একবার করে ডাকতেনই। ম্যাডামের প্রিয় হয়ে ওঠার চেয়েও দুঃখজনক ছিল আরেকটি নতুন নামের আমদানি! হায় শেষপর্যন্ত শাহজাহান পুত্র দারা হতে হল কিনা আমাকে! 🙁 [আমার নাম যারা ছেলেদের নাম ভাবত, তারা কি তবে এই হিসেবে ভাবত? :thinking: ] এর সাথে ‘দাঁড়া’ কথাটার মিল ছিল আরেকটি যন্ত্রণা!
আহ্লাদ করে কোন কোন বন্ধু ধারু ডাকত। একজন ডাকত ধারি। কিন্তু শুনতে তো মনে হত ‘ধাড়ি’!
কলেজে সায়েন্স ফেয়ারে কিছু পারি বা না পারি ম্যাথ অলিম্পিয়াডে নাম দিলাম ফ্রি কোল্ড ড্রিঙ্কসের আশায়। পুরষ্কার বিতরণীর সময় জাফর ইকবাল স্যারের কথা শোনার জন্য বসেছিলাম। সব বিজয়ীর নাম ঘোষণার সময় হঠাৎ শুনতে পেলাম ম্যাথ অলিম্পিয়াডে আমাদের কলেজের ‘ধরা’ নামে কাউকে ডাকা হচ্ছে! আমি যথারীতি বিভ্রান্ত! আমার বান্ধবী একরকম ঠেলেই পাঠিয়ে দিল স্টেজে। গিয়ে বুঝলাম ‘Dhara’ কে ‘ধরা’ পড়া হয়েছে। বাকি কলেজ লাইফটায় আমি ‘ধরা’ই খেয়ে গেলাম!
আর সিরিজ বা ধারার অঙ্ক কষার সময় বন্ধুদের গালাগালি তো ছিল সদা বরাদ্দ।
আমার ভাইয়ের ভোগান্তিও কম ছিল না। ‘চিড়া মুড়ি’ নিয়ে কবিতাই বানানো হয়েছিল তার নামে। এমনকি ওর স্কুলের শিক্ষকরাও ওকে বলত, এ কেমন নাম তোমার বাপু! এছাড়া চিরতা, চিরুনি সহ আরো অনেককিছু বলে থাকবে সব বোধকরি আমাকে বলেওনি। অনেকে ওর নাম লেখা দেখে ‘চিরো’ না পড়ে পড়ত ‘চিড়’ আর ‘চির্’। ‘চিড়’ তো হল ফাটল। আর ‘চির্’ তো ছিদ্র [সেই যে ইয়ং এর দ্বি- চির পরীক্ষার চির্!] কারো নাম বুঝি ফাটল বা ছিদ্র হয়!
আর এই তো সেদিন আমার এক বোনের ছোট্ট সুন্দর একটা ছেলে হল। দুলাভাইকে জিজ্ঞেস করলাম কি নাম রেখেছে। বলল, ঋদ্ধ। আমার কান দিয়ে ঠিক তা-ই ঢুকল কিন্তু মাথার ভেতর কে যেন বলে উঠল, বৃদ্ধ! নিজেকে ধিক্কার দিলাম, ছি ছি, খালামনি হয়ে আমার এ কি চিন্তা! মুখে অবশ্য বললাম, ‘বাহ! সুন্দর নাম। আশা করি নামের মতই ওর জীবন সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।’
কিন্তু সাথে সাথে বেচারার কথা চিন্তা করে দুঃখও হল। ওর জীবন তো ‘বৃদ্ধ’ ডাক শুনে বরবাদ হয়ে যাবে। আর আজকালকাল ছেলেমেয়েগুলো নিশ্চয়ই দস্যিপণায় আমাদের চেয়েও কয়েকগুণে বেশি। :babymonkey:
হেহে!!
এই রকম কত মজার কাহিনী আছে! আমার নাম বাপ্পি! আমাকে অনেক বয়স্ক ব্যক্তি উচ্চারণ না করতে পেরে বলেন পাপ্পি!! :S :haturi:
আপনি কোন এক সরব আড্ডায় চলে আইসেন! আমরাও একটু পচাবো নে! 😛
=)) মজা পেলাম! 😀
সরব আড্ডা কি গ্রুপ চ্যাট ধরনের কিছু? :”>
না না সরাসরি আড্ডা!! TSC বুয়েট রবীন্দ্র সরোবর এ দেই!
ওহ!! বেশ ভাল ব্যাপার। জায়গাগুলো পছন্দ হয়েছে 🙂
খুব ভালো লাগলো!
:love:
ধন্যবাদ! 🙂
আমার ডাকনাম অনিত। নাম যাকেই বলি, শোনে ‘অনিক’। বারবার বলার পর যখন নামটা বুঝতে পারে তখন জিজ্ঞাসা করে, এর অর্থ কী? আমার বাপ-মা অর্থহীন নাম রেখে দিলে আমার কী করার আছে? :haturi:
বড় হয়ে এই একটা ঝামেলা কমে গেসে। এখন আর ডাকনাম নিয়ে খুব একটা পচানি খাইতে হয় না। :happy:
এখন তো তাহলে শান্তিতে আছেন :happy:
হায়রে নাম নিয়ে পচানি! আমিও যে কত পঁচানি খেয়েছি এ জীবনে।
লেখা ভালো হয়েছে 🙂
জেনে ভালোই লাগছে, পচানি খাওয়ার দলে আমি একা না! :beerdrink:
ধন্যবাদ 😀