ভার্চুয়াল জগতের অপরাধ; পর্ব ১ : স্টুডিও থেকে যেভাবে মেয়েদের ছবি বিক্রি হয়

স্টুডিও থেকে মেয়েদের ছবি বিক্রি হয় এবং বিক্রির পর এই ছবি গুলো কই যায়…. পরিচিত কিছু মেয়ের হয়রানির অভিজ্ঞতা শুনে নিজেই নেমে পড়ি অনুসন্ধানে। পরিচিত + স্টুডিও ব্যবসার সাথে জড়িত কিছু মানুষের সাথে কথা বলে যে তথ্য পেলাম, তার সারমর্ম হল –

 

ছবি গুলোর উৎস বিভিন্ন স্টুডিও এবং মেয়েদের ফেসবুক প্রোফাইল এ থাকা আলবাম। বিক্রি হওয়ার পর ছবি গুলো ব্যবহার করা হয় পর্ণোগ্রাফি তে যা ফটোসপে এডিট হয়ে ছড়িয়ে যায় বাংলাদেশের আনাচে কানাচে। এডিট হওয়া এসব ছবির মুল ক্রেতা গ্রাম্য কিশোর-যুবক, যারা এডিটিং এর পার্থক্য ঠিক বুঝতে পারে না। আর, এসব ছবি দিয়ে হয়রানি করা, ব্লাকমেল করা এগুলো তো এখনকার ঘটনা…

 

এবার আসুন জানি কিভাবে ও কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে আপনার ছবি।

 

ডিজ়িটাল ক্যামেরার যুগ। আপনি যখন স্টুডিওতে ছবি তোলেন, তখন ওরা আপনাকে কাগজে ১টি নাম্বার লিখে দেয়। মুল ছবিটি থাকে ওদের কম্পিউটার এ। পরবর্তীতে আপনার ছবির প্রয়োজন হলে আপনি ওই নাম্বার ওদের দিয়ে ওখান থেকে ছবির প্রিন্ট নিতে পারেন। মেয়েদের জন্য ঝামেলার শুরু এখানেই…

 

কেস স্টাডি-

মোহাম্মদপুরের এক স্টুডিও। information  আছে যে ওখানে ছবি বিক্রি হয়। ক্রেতার বেশে আমি। কিছু ছবি প্রিন্ট করাবো। প্রিন্ট করতে দেয়ার পর ভাব জমালাম স্টুডিওতে কম্পিউটার এর সামনে বসে থাকা ছেলের সঙ্গে। সে তখন ফটোশপে এক মেয়ের passport size ছবির লাইট ইফেক্ট ঠিক করছে।

 

আমি – ভাই, মেয়ে টা তো josh !

ছেলে – (হাসি মুখে) ভাইজান এর পছন্দ হইছে নাকি?

আমি – হুম… (কিছুক্ষন বসে থাকার পর), ভাই মেয়েটার ছবি একটু দেয়া যাবে plz?

ছেলে – না ভাই, আমরা যারে তারে সবার ছবি দেই না।

আমি – (আরও কিছু কথা বার্তার পর) ভাই, টাকা পয়সা নিয়ে প্রব্লেম হবে না। ইচ্ছা হইলে আমার ছবি গুলার সাথে এই মেয়ের একটা ছবি দিয়ে দিয়েন।

 

বিকালে ছবি আনতে গেছি। খাম খুলে দেখি মেয়েটার ১টা passport size ছবি সে আমাকে দিয়েছে (নৈতিকতার কারনে বাসায় এসে ছবিটি ছিড়ে ফেলেছি)। ছবির জন্য তাকে অতিরিক্ত ৫০ টাকা দিতে হল। সে বলল তার কাছে নাকি ব্যাপক কালেক্শন আছে। অত্র এলাকার সব মেয়ের ছবি নাকি তার কাছে পাওয়া যাবে। আমি বললাম দেখান দেখি আপনার কালেকশন… সে আমাকে নিয়ে pc-র সামনে বসিয়ে ফোল্ডার বের করে দিল। বলল choice করতে। যে ছবি-ই নেই, মাত্র ৫০ টাকা। ctrl+A সব ছবি select করে ইনফরমেশন প্যানেলে দেখলাম মোট ছবির সংখ্যা ৭৩১ টি। মানে ইচ্ছা করলে আমি এদের যে কারো ছবি নিতে পারব মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে!!!

 

এই চিত্র বাংলাদেশ এর প্রায় সর্বত্র। পাড়া মহল্লার স্টুডিও তে এই কাজ হয় সব থেকে বেশী। এলাকা ও মেয়ের চেহারা ভেদে ছবির দাম ৪০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে ওঠা নামা করে।

 

অনেক মেয়ে অচেনা ছেলের friend request accept করে। ফেসবুকে ছবি আপলোড করে ইচ্ছামত। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এক মেয়েকে চিনি যে তার ভাত খাওয়ার ছবিও পারলে ফেসবুকে আপলোড করে। এই সুযোগ কাজে লাগায় অনেকে। friend request দিয়ে মেয়ের friend হয়, তারপর album থেকে ছবি গুলো save করে। পরে ছবি গুলো বিক্রি করে দেয় স্টুডিও তে। এসব ছবি স্টুডিওয়ালা দের কাছে বিক্রি হয় ১০-১৫ টাকায়। edit এর পর এসব ছবি পরিনত হয় পর্নোগ্রাফিতে… আর, এসব ছবি ছড়িয়ে পরে সব জায়গায়…

 

অতএব, স্টুডিও তে ছবি তোলা, ফেসসবুকে ছবি আপলোড করা এবং friend request accept করার ব্যাপারে আপুরা সতর্ক হন।

 

কিছু টিপস –

 

১/ যেখান সেখানে ছবি তুলবেন না। সদ্য গজিয়ে উঠা ছোট্ট দোকানে ফোন-ফ্লেক্সি-স্টুডিও-মোবাইলে গান ডাউনলোড – এই টাইপের মাল্টিটাস্কিং দোকান থেকে ১০ হাত দূরে থাকুন। বড়, স্বনামধন্য ও বিশ্বস্ত কোন স্টুডিও থেকে ছবি তুলুন। যদি আপনার বাসা এগুলো থেকে দূরে হয়, এবং যাতায়াত সমস্যা হয়, হলে একসাথে অনেকগুলো ছবি প্রিন্ট করিয়ে রাখতে পারেন।

২/ friend request accept করার ব্যাপারে সতর্ক হন। ঊদার্যবশত যাকে তাকে friend বানাবেন না।

৩/ যদি কখনও এই ধরনের ঘটনা ঘটেই যায়, সবার আগে থানায় জিডি করুন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় অভিজ্ঞ কার সাহায্য নিন। মনে রাখবেম, আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়।

 

(প্রতিদিনের জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা ব্যাপারে ভার্চুয়াল জগতের অপরাধ নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে লেখার ইচ্ছা আছে। এটা আমার প্রায় ১ বছর আগের লেখা এবং বেশ কিছু ব্লগে পূর্ব প্রকাশিত। এই ধরনের অন্য কোন অপরাধ নিয়ে ২য় পর্ব লেখার চেষ্টা চালাচ্ছি)

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে সচেতনতা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

8 Responses to ভার্চুয়াল জগতের অপরাধ; পর্ব ১ : স্টুডিও থেকে যেভাবে মেয়েদের ছবি বিক্রি হয়

  1. জনৈক বলেছেনঃ

    :welcome:

    তবে, নতুন লেখা দিলে বেশি ভালো হতো… লিখতে থাকুন হাত খুলে। 🙂

  2. আপনাকে চিনার আগেই এই লিখাটি পড়েছিলাম, আপনিই যে সেই তা তো বুঝি নি!

    ভালো লেগেছিলো অনুসন্ধানী লিখাটি, সাধু সাবধান…

    :welcome:

  3. সামিরা বলেছেনঃ

    পোস্টটা অসাধারণ! খুবই জরুরি জিনিস।
    এই ব্যাপারগুলি এত ভয়ানক! অথচ বেশিরভাগ মানুষই জানে না।
    বিশেষ করে ফেবুতে ছবি দেওয়ার ব্যাপারটা। 🙁 স্টুডিওতে এখন না হয় কমই ছবি তোলে এখন মানুষ।
    ওহ্‌ আর এই বিখ্যাত লেখাটা অনেক আগেই পড়ে ফেলেছিলাম। 😀

  4. বাবুনি সুপ্তি বলেছেনঃ

    অনেক ধন্যবাদ।

  5. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    যদিও লেখাটা আগে পড়া ছিল, তবুও এ ব্যপারে আবার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য ধন্যবাদ। আশা করছি এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এবং এর সমাধানে কী করা যায়, সেটা নিয়ে আরও পোস্ট পাবো।

    সরব-এ স্বাগতম 🙂

  6. তিষা বলেছেনঃ

    :welcome:

  7. তামীম বলেছেনঃ

    এই লেখাটা অনেক আগে কোথাও যেন পড়েছিলাম। আপনি আর কোথাও প্রকাশ করেছিলেন?

  8. অনাবিল বলেছেনঃ

    আপনার লিখাটা আগেই পড়েছি…… 🙂

    সরবে স্বাগতম!
    :welcome:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।