তোমার কি মনে আছে সেইসব দিনের কথা ? নাকি ভুলে গিয়েছ তুমি? জানি তুমি ভুলবে না ! তবু জিগ্যেস করার জন্যই প্রশ্ন করছি হয়তো !
কী অসাধারণ ছিল সেই সময়গুলো – বল তো! আমার জন্যে চিন্তায় অস্থির থাকতে সবসময়! আমি ভার্সিটিতে গিয়ে মারামারি করলাম কিনা সেই নিয়ে কী যে চিন্তা ছিল তোমার! এখন মনে হলেই হাসি পায়! কী অবুঝই না ছিলে তুমি! আমার মত ভোলাভালা ছেলে, যে কিনা বায়োলজি ল্যাবে সামান্য ২ ইঞ্চির অজ্ঞান তেলাপোকা দেখেই চিল্লাচিল্লি করে উঠত সে করবে মারামারি?! আসলেই যদি তোমার বুঝ হত! তবু আমি তোমার এই অযাচিত(!) চিন্তাগুলো উপভোগ করতাম চরমভাবে। তাই ইচ্ছা করেই চিন্তা বাড়িয়ে দেওয়ার পথ খুঁজে ফিরতাম!
তোমার বোকামি দেখে মাঝে মাঝেই মজা পেতাম। কত সহজেই না মিথ্যে বলে তোমাকে বোকা বানিয়ে দিতাম! আমার সামান্য চালাকিও তুমি ধরতে পারতে না! আর সেই তুমিই আমাকে ‘পিট্টি দেওয়া’র ভয় দেখাতে! আসলেই তুমি বড্ড বোকা ছিলে! (নাকি আমিই বোকা ছিলাম, তোমার অভিনয় ধরতে না পারার জন্যে?)
তুমি তো জানতেই যে, খাওয়া দাওয়া নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। কখন খাব আর কখন ঘুমাব তা নিয়ে থোড়াই কেয়ার করতাম! কিন্তু তোমার যন্ত্রণায় বিরক্ত হয়ে মাঝে মাঝে নিয়মের মাঝে আসার চেষ্টা করতে বাধ্যই হতাম বলা যায়! কথা নেই বার্তা নেই, দুপুরবেলা ফোন করেই বকাঝকা শুরু – ‘খাওয়ার কথা মনে থাকে না? অসুখ বাঁধিয়ে ফেললে কী হবে শুনি?’ বকাগুলো একেবারে খারাপ লাগত না, বরং মিষ্টিই মনে হত!
ধরাবাধা রুটিনকে কাঁচকলা দেখিয়ে ঘুরে বেড়াতাম বন্ধুদের সাথে। বোহেমিয়ান জীবনেই যে অভ্যস্ত ছিলাম এই আমি! তাতেও তোমার বাগড়া! কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগেই বাসায় ফেরার আল্টিমেটাম দিয়ে দিতে! তারপর আবার একটু পরপর ফোন দিয়ে জ্বালাতন শুরু হয়ে যেত! আমার বন্ধুদের মুখ টিপে হাসাহাসি দেখেই মেজাজ খারাপ করে ফেলতাম। মেজাজ দেখিয়ে মোবাইলটা রেখে দিতাম। পরক্ষণেই তোমার হাসিমাখা মুখের কথা চিন্তা করে সব ভুলে ফোন করে তোমায় বলতাম – ‘চিন্তা করার কিছু নেই, এখন বাসায় ফিরছি’। (তবু হয়তো ফিরতে দেরিই করতাম!)
তোমার আঁচল খুঁজে বেড়াতাম সব সময়! তুমি কি জানো শাড়ি পরলে তোমায় কেমন স্বর্গীয় মানবী মনে হত? তখন তোমার বয়স মনে হয় এক ধাক্কায় অর্ধেক হয়ে যেত! শিশুসুলভ হাসি দিয়ে তুমি আসলেই সবাইকে মুগ্ধ করে দিতে পারতে। আমার ঈর্ষা হয় এখনও এটা নিয়ে। কারই বা হবে না!
আচ্ছা! তুমি তো সবই জানো। তবু তোমায় বলছি কেন? মনে হয় তোমার উপর অভিমান থেকেই! সেই যে তুমি বলেছিলে – আমায় রেখে যাবে না! প্রতিদিনই তো বলতে! মনে পড়ে তোমার ? তাহলে কেন অসময়ে আমাকে এভাবে রেখে চলে গেলে তুমি? এখন তো কেউ আমার খোঁজ নেয় না! অনিয়মের বেড়াজালে আটকা পড়লে কেউ তো নিয়মের বন্ধনে আটকাতে চায় না আর!
নাহ ভালোই হয়েছে! এখন আমি একেবারে স্বাধীন! যেখানে ইচ্ছে যাচ্ছি, যখন ইচ্ছে খাচ্ছি, বাসায় ফিরতে না চাইলে ফিরছি না! ক্ষতি কী তাহলে? তুমি তো স্বাধীন জীবনের নিশ্চয়তা দিয়েই গিয়েছ আমাকে! তাহলে কেন আমার এই স্বাধীনতা উপভোগ করতে কষ্ট হয়? আমি জানি না …
একটা জিনিস চিন্তা করে মাঝে মাঝেই অবাক হই! তোমার সাথে কত কথা হত! কিন্তু একটা কথাই কখনও মুখ ফুটে তোমায় বলতে পারিনি। কতবার বলতে চেয়েছি! কিন্তু নির্বোধ লজ্জার কারণেই হয়তো বলতে পারিনি। কিন্তু আজ তো আর তুমি নেই… তোমার সামনে লজ্জাই বা কীসের? তাই আজ নির্লজ্জের মত তোমায় বলছি … “ মা … মা গো … আমি তোমাকে অন্নেক ভালোবাসি! বলতে পারিনি এতোদিন। কিন্তু তুমি তো জানোই মা … তোমায় ছাড়া থাকতে কতটা কষ্ট হয় আমার! তুমি আমাকে ছাড়া কেমনে আছো মা ? ভালো আছো আগের মতই ? উত্তর দিবে না তুমি !? … … … ”
* কোন এক মা-হারা সন্তানের পক্ষ থেকে লেখা … জানি না সে কে? কিন্তু অনুভব করার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম *
* আজ মা দিবস! বিশ্বের প্রতিটি নিঃস্বার্থ মায়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা! তোমাদের জন্যেই তো আমরা বেঁচে আছি মা !! *
দারুন হইসে লিখাটা।। ।। ।। :happy:
নিজেই সন্দিহান এই ব্যাপারে … :/
সবারই তার মায়ের সাথে স্মৃতি গুলো সব থেকে সুন্দর । সব সময় মনে রাখবেন।। কখনো ভুলবেন না যেন।
ভুলে যাওয়া সম্ভবই না!
oshadharon legese lekha ta.asole ma holo ma e ja otulonio sobar theke alada.
মা আর সবার থেকে ভিন্ন … কিন্তু নিজের অস্তিত্বের সাথে অভিন্ন … !!
🙁
🙁