মাঝে মাঝে ডায়েরী খুলে পেছনের পাতা উল্টে পড়তে বেশ লাগে। অনেক কাজ, কিন্তু কিছু করতেই মন লাগছে না, তাই পুরোনো ডায়েরী টেনে পড়তে শুরু করে দিলাম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়টা বছর কেটে গেছে, পাতা উল্টাতে উল্টাতে দেখি প্রথম বছর শেষে কী সব হিজিবিজি লিখে ডায়েরীপাতা ভরিয়ে রেখেছিলাম তখন………
একটা বছর কেটে গেলো এই ক্যাম্পাসে। মাঝে মাঝে বিশ্বাস-ই হতে চায় না, মনে হয় এইতো সেদিন! আবার মাঝে মাঝে মনে হয় যেন সবসময়-ই এই ক্লাস-সিটি-সেশ্যনাল চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছিলাম, পৃথিবীর জন্মলগ্ন হতে, শত-সহস্র বছর ধরে…
কিন্তু না, এই বছর ক’টার আগেও অন্য একটা জীবন ছিলো, অন্য একটা পৃথিবীতে আবাস ছিল। অথচ সেসব দিন গুলোর স্মৃতি গুলো কোথায় পালিয়ে গেছে বুঝি। কিংবা, এই বছর চক্র আগের সব স্মৃতিকে জল ঢেলে ধুয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয় গ্রহান্তরিত হয়েছি।
এই গ্রহে যে কি আছে! হ্যাঁ, আছে অনেক কিছু। সবুজ পাহাড় আছে, গ্রামীণ মাটি আছে। জারুল গাছ আছে ছড়ানো ছিটানো, যে গাছ গুলো শীত পুরো চলে গেলে, বসন্ত শেষে গ্রীষ্ম যখন কালবৈশাখী নিয়ে আসে, তখন তাদের সবুজ চুলে পরে বেগুনী মুকুট। সোনালু আছে, তারা আমাদের চলার পথে বিছিয়ে দেয় পারস্য দেশের হলুদ গালিচা।
আর আছে ডিপার্টমেন্টের সামনে ভাস্কর্যের মতো দেবদারুর সারি। আরো আছে অনেক কিছু। কোন কোন দিন একসাথে দুটো ক্লাস টেস্ট, দুটো কুইজ, দুটো ভাইবা আছে মাত্র…..
আমাদের এখানে নাতিশীতোষ্ণতা নেই। গরমে পুড়ে ছাই হই, শীতের দিনে হিম হাওয়া আমাদের অস্থি-মজ্জাকে জমিয়ে বরফ করে দেয়। আর হলের পাশের পুরোনো পুকুরটাতে একটা পানকৌড়ি ডুব দিয়েই চলে, নয়তো শুষ্ক ডালের উপর বসে থাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা ভাস্কর্যের মতো। প্রায়ই ইচ্ছে হয় পুকুরটাতে দুটো ঢিল ছুঁড়ি।
সব কিছুর মাঝে এনার্জি টেকনোলজির কোর্সটা অনুপ্রেরণা যোগায়। কোন কোন ক্লাসে লেকচারে তন্ময় হয়ে যাই, আবার কোন কোন ক্লাসে নিজেকে দেখি পাশের একাইশিয়া গাছে নাম না জানা পাখিটার পিছু পিছু ছুটতে। এভাবেই চলছে।
সূর্য ডোবার আগে হলে ফিরি দিনশেষের ক্লান্তি নিয়ে। বিছানার উপর বসে জানালাটা খুলে দিই। দু’চোখ বুঁজি, কল্পনার আকাশটা অনেক বড় হয়ে যায় এক নিমেষেই। হলের পেছনের ধানক্ষেতের দু’প্রান্ত হঠাৎ-ই খুলে যায়, পানি প্রবাহিত হতে শুরু করে, নিমেষেই হয়ে যায় এক অতলান্ত হ্রদ। সে হ্রদের বুকে বাহারি বৃক্ষের ছায়া পড়ে দিনভর, সে ছায়ায় ভেসে বেড়ায় এক শান্ত রাজহাঁস; তার সাথে আমিও।
চোখ বুঁজেই কত কি যে ভেবে যাই— স্বপ্ন, কবিতা, ক্লান্তি, আড্ডা, ভালোবাসা, রাগ, অভিমান, দেশপ্রেম, অ্যসাইনমেন্ট, সিমুলেশন সেশ্যনাল…… সবকিছু।
মাঝে মাঝে নিজেকে বিপন্ন মনে হয়, আবার হাসিও পায়, সব মিলিত বোধের মাঝে হেঁটে গিয়ে নিজের সাথে মিল খুঁজে পাই মার্সিডিজ বেঞ্জের। নিজেকে মনে হয় ডেইমলার ক্রাইসলারের এক নিথর মার্সিডিজ বেঞ্জ, যে কিনা কোন এক তুষার ঝরা শীতার্ত দিনে শুদ্ধি পরীক্ষার জন্য এক গ্লাস টইটুম্বুর জল মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্পিডব্রেকার থেকে ঠিক এক মিটার দূরে।
‘ক্লাসটেস্টের পড়া পড়বি না!’ রুমমেটের ডাকে সচকিত হই, চোখ মেলি, অতলান্ত হ্রদটা নিমেষেই আবার ধানক্ষেত হয়ে যায়। মার্সিডিজ বেঞ্জ থেকে নিজেকে টেনে বের করি, গাড়িটাকে অবহেলায় পেছনে ফেলে হেঁটে যাই সামনের দিকে, পেছনে আমার অভিন্ন সত্তা মার্সিডিজ বেঞ্জ তুষার জলে ভিজতেই থাকে, তুষারে ঢাকা পড়ে যায়, আমি সব উপেক্ষা করে হাঁটতেই থাকি…… হাঁটতেই থাকি…… হাঁটতেই থাকি……
পিচ্চিকাল থেকেই লেখালেখির বস! 😀
কে বস ???
🙂
স্বপ্ন গুলো কিছু সময়ের জন্য হলেও সব কিছু ভুলিয়ে রাখে। 🙂
স্বপ্নে-ই তো বাঁচা, তাই না!
🙂
সব কিছু কেমন জানি ঘোরের মধ্যে ছিলো লিখাটায়, সবার স্বপ্ন কি একই সুরে বাঁধা থাকে?? জানি না……
কেমন জানি অন্যরকম লাগলো পুরোটা পরে…
অন্যরকম…
মনে আছে ঘোরের মাঝে-ই লিখেছিলাম………… কেমন অদ্ভুত অনুভূতি ………
হ্যাঁ, স্বপ্নের সুতো কোথাও কোথাও মনে হয় একসাথে বাধা……………
এত সুন্দর !! অদ্ভূত একটা স্বপ্নময়তা লেখাটার পুরোটা জুড়ে। নিজের ক্যাম্পাস জীবনের কথা মনে হলো। এত সুন্দর করে মনে হয় অনুভূতিগুলোকে সাজাতে পারিনি কখনো। নিঃসন্দেহে এমনই অনেক তন্ময় হয়ে যাওয়া ভাবনাতেই আমার সময় কাটতো বেশি বেশি।
রুমমেটের ডাকে সচকিত হই, চোখ মেলি, অতলান্ত হ্রদটা নিমেষেই আবার ধানক্ষেত হয়ে যায়। মার্সিডিজ বেঞ্জ থেকে নিজেকে টেনে বের করি, গাড়িটাকে অবহেলায় পেছনে ফেলে হেঁটে যাই সামনের দিকে, পেছনে আমার অভিন্ন সত্তা মার্সিডিজ বেঞ্জ তুষার জলে ভিজতেই থাকে, তুষারে ঢাকা পড়ে যায়, আমি সব উপেক্ষা করে হাঁটতেই থাকি…… হাঁটতেই থাকি…… হাঁটতেই থাকি……
ঘোরের মতন একটা সময়, একগুচ্ছ অনুভূতির দল…
ভাবনাতে তন্ময় হয়ে-ই সময় কাটে এখনো……… গুচ্ছ-গুচ্ছ অনুভুতির মেঘদলে হারাই সবসময়………
দারুণ! কিউট লেখা
ধন্যবাদ…… ধন্যবাদ……
খুব জানতে ইচ্ছে করছে, লেখকের মার্সিডিস বেঞ্জ, সেই বিখ্যাত স্পীডব্র্যাকার টেস্ট পাশ করেছে কি না?
কারণ, তার জানা থাকা দরকার, জীবনের স্পিডব্র্যাকার কেবল একটি নয়, অনেকগুলো।
বোঁ ভয়াজ..
কেন নয়!
স্বপ্ন আর বিশ্বাস আমাদের সব বাধাই পার করে দিতে পারে আমি জানি!
মার্সেই………
এতো পিচ্চি বয়সে এরকম ভাতিক্কি লেখা লিখেছিলে? তোমাকে একটি গোলাপ ফুলের শুভভেচ্ছা, এই নেও :love:
আমি হাজার চেষ্টা করেও এরকম স্বপ্ন স্বপ্ন লেখা লিখতে পারিনা। অনেক ভালো লিখেছো আপু 🙂
:happy: :happy: :love:
সবসময় স্বপ্ন দেখি তোহ, তাই এমন লেখা!
আর আমি বরাবর-ই বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, সেটা আর বলতে!!
😛 😛
ডায়েরি লেখার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ 🙁 আব্বু আম্মুর ধারণা ছেলের ডায়েরি পড়া বাবা মায়ের ন্যায্য অধিকার- আমি যতই বলতাম এটা আমার ব্যক্তিগত জিনিস, আমাকে বুঝানো হত বাবা মায়ের কাছে আবার প্রাইভেট কী? :S :S :S স্কুলের এই অভিজ্ঞতার পর ডায়েরি লেখা ছেড়ে দিসি 🙁
চুয়েটের প্রতি আমার একটা অন্যরকম টান আছে!! তখন সময়টা আমার জন্য খুব খারাপ যাচ্ছে– এইচএসসিতে বাংলা ইংরেজিতে বাঁশ খেলাম, মেডিক্যালে আরও ভয়াবহ বাঁশ। আদৌ কোন ভাল জায়গায় পড়ার আত্মবিশ্বাস তখন ভেঙ্গে চুরমার! এতটা দিশেহারা আগে কখনও লাগেনি! এমনই সময়ে চুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দিল– আমি ১৬তম!! জীবনের প্রথম কোন ভার্সিটিতে অ্যালাউড হওয়া, পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পাওয়া. . . . . দুঃসহ ছয় মাস শেষে প্রথম স্বস্তির শীতল বাতাস!!! চুয়েটে সেই একবারই গিয়েছি, অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সেদিন পরীক্ষার টেনশনে উপভোগ করার মুডে ছিলাম না! কিন্তু ভালবেসে ফেলেছিলাম সেটা তো এখন জানি :love: :love:
দারুণ লিখেছেন আপু! ফার্স্ট ইয়ারেই এতো সুন্দর লেখনী!! ভীষণ ভালো লাগলো!! :love:
সবচেয়ে মজা পেলাম “প্রায়ই ইচ্ছে হয় পুকুরটাতে দুটো ঢিল ছুঁড়ি” পড়ে 😀 😀 😀 হাহা!! বুঝাই যায় পাজির পা ঝাড়া!! 😀
আমার ক্ষেত্রে উল্টোটা! আমি সবসময় আমার ডায়েরী চোখের সামনে রাখি, যেন ওনারা পড়ে ফেলে!
কিন্তু ওরা কখনো পড়ে না…………… 🙁 🙁
[ পড়লে দেখতে পেত কি বিশাল সাহিত্য প্রতিভা……… :p :p ]
এইচ এস সি তে তোমার চেয়েও বিশাল বাঁশ খেয়ে আমি প্রায় দিশেহারা! একটা মাত্র ফর্ম নেয়া, একটা মাত্র অ্যডমিশন টেস্ট দিয়েছি! রেজাল্ট দিল- আমি ১৪তম!! অনেক স্বস্তি ছিল আলহামদুলিল্লাহ……… আম্মু-আব্বুর কাছে থাকতে পারা!! আমার চেয়েও তারা খুশী আমাকে কাছে রাখতে পেরে আর তাদের খুশীতেই আমি সুখী……… 🙂
হুম্ম, প্রকৃতির মাঝে থাকতে পেরে অনেক ভাগ্যবান আমি……… 🙂
সবসময়ই বিশাল ভাবুক আমি…… তাই কাব্যিক করে ঢিল ছোঁড়া ! অতি নিরীহ আমি, বুঝতে পারছি নিজে পাজির পা ঝাড়া বলে এখন অন্যের উপর চাপিয়ে দিচ্ছো!! :p 😛 😛
দারুণ হয়েছে :love:
:happy:
ধন্যবাদ আপু পড়ার জন্য……… 🙂
আমার ডাইরী লেখার ধৈর্য কোনকালেই ছিল না, অনেকবার স্টার্ট করেও কন্টিনিউ আর করা হয় নাই।
আপনার লেখাটা মন ভালো করে দেয়া টাইপ। 🙂
ডায়েরীকে আমার খুব বন্ধু মনে হয়, তার কাছে মন খুলে কথা বলা যায়, আমি একটু চাপা স্বভাবের, তাই ডায়েরি-ই বন্ধু… 🙂
লেখাটা ভাল। মুগ্ধ করে রাখার মতো ভাল।
🙂
ধন্যবাদ অনেক………