আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী মানুষ সেটা প্রমান করবেন কিভাবে? খুব বেশী কিছু করতে হবেনা! ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে আপনার? ঝপ করে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে ফেলুন।
উদাহরণ-
“কি সুন্দর বৃষ্টি হল, প্রথমে খুব ভালো লাগছিলো, পরে হঠাৎ মন খারাপ হয়ে গেল! :’( “
অথবা,
“ইশ, আমার কপালে একটুও সুখ সহ্য হয়না! কালকে ওকে নিয়ে বের হবো ভাবসিলাম, এখন শুনি হরতাল! :’( “ :crying:
অথবা,
“ইয়া আল্লাহ, এত পেইন কেন দাও? :’( তারচেয়ে আমাকে একবারে উঠায় নিয়ে যাও :’( “ :wallbash:
নিজের যাবতীয় হতাশা, ব্যর্থতা, অশান্তি আর অপ্রাপ্তি কোথায় প্রকাশ করবেন?
কোথায় আবার? ফেসবুকে!
আরে ভাই, কেউ কি আছে , যার সাথে যতবার আপনার দেখা হয়, ততবারই বলে হোয়াট’স অন ইয়োর মাইন্ড? ফেসবুক কিন্তু বলে! এমনকি ৫ মিনিটে ৩ বার বসলেও আপনার মনের খবরাখবর সে নিতে চায়! এমন বন্ধু আর কোথায় পাবেন বলুন?!
দেশ ও দশের (পড়ুন দেশ ও প্রেমিক-প্রেমিকার) প্রতি ভালবাসা প্রকাশের মুখ্য মাধ্যম ফেসবুক। হয়ত লগইন করেছেন, দেখবেন হোমপেজে ড্যাবড্যাব করে নির্লজ্জের মত আপনার দিকে তাকিয়ে আছে প্রেমিক-প্রেমিকার প্রেমময় সংলাপ সম্বলিত পোস্ট! বলতে লজ্জা পাচ্ছি যে, ফেসবুক আমাকে প্রাপ্তবয়স্ক করে তোলার ব্যাপারে অন্যতম ভূমিকা রাখছে! 😳
যাইহোক, এবারে আসি দেশপ্রেমের ব্যাপারে। ছোটবেলায় পড়েছিলাম – যদি কাউকে অন্যায় করতে দেখ, হাত দিয়ে বাধা দিবে, তা না পারলে মুখে নিষেধ করবে, যদি এতেও অপারগ হও তাকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করবে। দেশের আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা কিছু দেশপ্রেমিক এসব পন্থার মধ্যে হয়ত তৃতীয়টিকেই বেছে নিয়েছে, যার চূড়ান্ত প্রকাশ দেখা যায় ফেসবুকে গালিগালাজের মাধ্যমে।যেকোনো ছবির নিচে কিছু একটা লিখে শেয়ার দিলেই সেটি দাবানলের মত ছড়িয়ে পরে! :dhisya:
সবাইকে আমি এই দলে ফেলছিনা। একটি ঘটনা উল্লেখ করবো ,যা এই শ্রেণির দেশপ্রেমিকদের স্বরূপ উন্মোচন করবে। গত মার্চ মাসে একটি ছবি খুব শেয়ার হচ্ছিলো। ছবিটি ছিল একজন রিপোর্টারের, খবর পড়ছিলেন। ক্যাপশনে তাকে নিয়ে অশ্লীল কিছু কথা লেখা। খুব অবাক হয়েছিলাম কারন মহিলা যথেষ্ট শালীন পোশাকে ছিলেন। দেখলাম তাকে “ভারতীয় দালাল” ও বলা হচ্ছে। নিচের কমেন্টগুলো পড়ে বুঝলাম- মহিলার পোশাকে সাদা, সবুজ আর কমলা রঙ (যা ভারতের পতাকার রঙ) থাকাতে এই বিপত্তি! স্বাধীনতার মাসে এইসব ভারতীয় দালালদের কি কি করা উচিত সে ব্যপারে কুৎসিত সব মন্তব্য!!! …। কি অদ্ভুত দেশপ্রেম!
ফেসবুক না থাকলে এইসব অকৃত্রিম (!) ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ কিভাবে হত বলুন??? 😛
ভাববেন না আমি ফেসবুক বিদ্বেষী। আমার নিজেরও একদিন চলেনা ফেসবুক ছাড়া। যেহেতু ফেসবুক এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, আসুন আমরা এটি ব্যবহারে আরেকটু সতর্ক হই।
হতাশা আর গ্লানি প্রকাশ না করে মানুষের কাছে আশা- আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্নের বার্তা পৌঁছে দেই।
হিংস্রতা না ছড়িয়ে সত্যিকার অর্থে নেমে পড়ি দেশের কাজে।
আর পছন্দের মানুষটির প্রতি ভালবাসা সযত্নে গোপন রাখি, যেন যে কেউ খোলা বইয়ের মত সেটা পড়ে ফেলতে না পারে! 😀
পেজগুলো আজকাল লাইক পাবার জন্য উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। সকালে একটা পোস্ট দিল, কারও ওড়না সরে গিয়েছে সুতরাং ১ লাইক= ১০০ থাপ্পড়, সন্ধ্যায় একই পেজ পোস্ট দেয়, দেখুন বাচ্চাটা কি সুইট করে নামাজ পড়ছে! এমন সুন্দর একটি জিনিস শেয়ার করতে ভুলবেন না. . . .
মেজাজটা যায় খারাপ হয়ে!!
কেন এমন করছে? লাইক কমেন্ট শেয়ার পেলে কার কি লাভ? একটা লাভ হল যত বেশি মানুষ নিয়মিত অ্যাকটিভ থাকবে, ফেসবুকে পেজ র্যাঙ্ক উপরের দিকে উঠে যাবে এবং আরও বেশি মানুষের কাছে পেজ আপডেট পৌঁছাবে! সুতরাং নিজের পেজের প্রতি নিখাদ (!) ভালবাসা থেকে এর প্রসারের জন্য এত চেষ্টা!
কিন্তু প্রসার হলেই বা কী?! ইদানিং শোনা যাচ্ছে ১৮+ পেজগুলো যখন ১৫-২০ হাজার সদস্য পেয়ে যায় তখন বিপুল অর্থের বিনিময়ে পেজ বিক্রি করে দেয়! ক্রেতার লাভ হল তাকে পেজ র্যাঙ্ক বাড়ানোর ক্লান্তিকর প্রসেসে যেতে হচ্ছে না, রেডিমেড পেয়ে যাচ্ছে। সুতরাং ক্রেতা এখন এই পেজ থেকে উদ্দেশ্যমূলক পোস্ট দিতে পারবে (যেমন কোন বিতর্কিত বিষয়ে জনমত সৃষ্টি করা, ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়ে গালাগালি করা ইত্যাদি) এবং সেটা অনেক মানুষের হোম পেজেও পৌঁছাবে!! হতে পারে এই ব্যবসা একটা কারণ।
কিন্তু আমার কাছে লাইক-ধান্ধার সবচেয়ে বড় কারণ বলে যেটাকে মনে হয় তা হল ব্যক্তিগত জীবনের হতাশা এড়াতে কৃত্রিম আত্মতুষ্টির সন্ধান করা!!
লাইক পাওয়া অনেকটা ইন্সট্যান্ট রিওয়ার্ডের মত– পোস্টটা যে ভাল হয়েছে তার তাৎক্ষণিক পুরস্কার হল লাইক আর কমেন্ট! আমি বেশি লাইক পাচ্ছি তার মানে নিশ্চয়ই আমি জনপ্রিয়! আমি কুল অ্যান্ড রকিং!
এই আত্মতুষ্টিতে ভুগে আমরা বাস্তব জীবন আর ভার্চুয়াল জীবনের তফাত গুলিয়ে ফেলছি! ফেসবুকে আমরা যা করি এবং বলি তা রিয়েল ওয়ার্ল্ডে কোনভাবেই শতভাগ সত্য নয়। আমি ফেসবুকে জনপ্রিয় মানে এই নয় যে আমি বন্ধুদের আড্ডার মধ্যমণি হতে পারব!! কিন্তু লাইক-প্রিয় পেজ অ্যাডমিনরা সেটা টের পাননা, তারা লাইক পাওয়ার মাঝেই আড্ডার মধ্যমণি হওয়ার ‘জোশ’ খুঁজে নেন।
আমার মনে হয়, বাস্তব জীবনে যদি তারা আসলেই যথেষ্ট প্রাণোচ্ছ্বল আর সজীব ব্যক্তিত্ব গড়ে নিতে পারতেন, তাহলে আর লাইক পাওয়ার তৃপ্তি এতটা জরুরী হয়ে উঠত না তাদের জন্য! এটা দিনশেষে সম্পূর্ণ সাইকোলজিক্যাল একটা বিষয় বলেই আমার কাছে মনে হয়– জুকারবার্গ দুনিয়ার কল্যাণে সাইকিয়াট্রিস্টদের পেইন আরেকটু বেড়ে যাওয়া আরকি!! 🙁
oops!! আমার কমেন্টই একটা ব্লগের সাইজ হয়া গেসে 😳 😳 😳
😛
“আমার কাছে লাইক-ধান্ধার সবচেয়ে বড় কারণ বলে যেটাকে মনে হয় তা হল ব্যক্তিগত জীবনের হতাশা এড়াতে কৃত্রিম আত্মতুষ্টির সন্ধান করা!!” -তোমার এই কথার সাথে আমি একমত। আজকাল ফ্যান পেজগুলোর নাম দেখলেই বুঝা যায় এদের অ্যাডমিন কত আজাইরা। আর তারচেয়েও বড় কথা পেজের নামের সাথে অ্যাক্টিভিটিজ এর কোন মিল নাই। 😛
তবে ব্যক্তিগত পর্যায়েও ফেসবুক ব্যবহারে সতর্ক হওয়া উচিত -এটা বলতেই মূলত এই পোস্ট টা দেয়া 🙂
চমৎকার মন্তব্য রাইয়্যান!
থ্যাঙ্কু!! :yahooo: :yahooo:
:dhisya:
খুব ভাল মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ হয়েছে। আমার নিজের মধ্যেও লাইক পাওয়ার প্রতি এক দারুণ আকর্ষণ কাজ করে 😳
আমিও সাধুবাবা না 😳
হিহহি… 😛
পেজ বিক্রি? ইন্টারেস্টিং লাগলো!
ফেসবুকের পেইজে অত্যাধিক রাজনৈতিক পোস্ট এখন বেশী দেখা যায়। বাংলাদেশের মানুষ কেন জানি না, বেশ রাজনীতিবিলাসী। কিছু থেকে কিছু হলেই, এই সরকারকে ‘বাঁশ’ প্রদান করল কি বিরোধী দলকে কাঁচকলা দেখালো।
যেটাই হোক, ১৮+ পেইজগুলোর জনপ্রিয়তা আসলেই অ্যালার্মিং। একটু খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছিলাম, এই পেইজগুলোতে যারা অংশ নেয় তাদের ৯০ভাগেরই বয়স আঠারোর নীচে। তার উপর, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে টিন-ফ্রেন্ড-সার্কেলে এসব পেইজ খুব আলোচিত হয়।
অস্বীকার করা যাবে না, বয়সটা এমনই। কিন্তু, এধরনের কার্যকলাপ যে কোন সময় সামাজিক বিশৃংখলাও নিয়ে আসতে পারে।
পোস্টের মূল আলোচনায়, সবচেয়ে ভাল লেগেছে যে কথাটি, সেটি হলো, “হতাশা আর গ্লানি প্রকাশ না করে মানুষের কাছে আশা- আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্নের বার্তা পৌঁছে দেই।”
😀
তবে, লেখক নিজেই এখানে হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেলে গ্যাছেন কি না, সেটা নিয়ে যথেষ্ট কনফিউশনে আছি
আপনার কনফিউশন কি কারনে হল ঠিক বুঝলাম না। তবে নিশ্চিন্ত থাকুন হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেলিনি। শুরুতে কিছু বাস্তবতা আর শেষে কিছু উপদেশ আর উৎসাহ দিয়েছি। 😀
আর “হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেলার জন্য তো ফেসবুকই আছে। 😛 (আবার কনফিউশনে পড়ে যাবেন না কিন্তু!) 😛
হা হা হা হাসিও পায়। আমি এখন ফেবুতে কিছু লেখারই পাই না। তাও যাই ।
😀
“সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি
সারাদিন আমি যেন ফেসবুকে থাকি”… 😛
সর্বনাশ! এমনটাই অবস্থা 😛
“ফেসবুক আমাকে প্রাপ্তবয়স্ক করে তোলার ব্যাপারে অন্যতম ভূমিকা রাখছে!” =))
“পছন্দের মানুষটির প্রতি ভালবাসা সযত্নে গোপন রাখি, যেন যে কেউ খোলা বইয়ের মত সেটা পড়ে ফেলতে না পারে।” :fire:
এই দুইটা লাইন দারুণ!
ভাল লাগলো লেখা। 😀
:yahooo:
মনের কথা মনেই থাকা ভালো।
মন পবনের নাও …………………
সহমত। 🙂
আসলেই তাই, এখন কেন জানি এমন অবস্থা হয়েছে, মানুষের পাঁচটা মৌলিক চাহিদার সাথে এফবিতে বসাও একটা হয়ে গেছে!
কি অদ্ভুত, জীবনটা ফেসবুক ছাড়া চিন্তাও করা যায় না মনে হচ্ছে সবার কথা শুনে, কিন্তু ব্যবহারটা ভালো হলে আপত্তি ছিলো না, সমস্যা হলো, ব্যবহারটা ভালো তো না-ই, বরং খুব বেশি খারাপ!
আমরা এমনই ভাইয়া। কোনকিছুরই সঠিক ব্যবহার করতে পারিনা। ভাল জিনিসকেও খারাপ বানিয়ে ফেলি ব্যবহার দিয়ে 🙁
আর পছন্দের মানুষটির প্রতি ভালবাসা সযত্নে গোপন রাখি, যেন যে কেউ খোলা বইয়ের মত সেটা পড়ে ফেলতে না পারে!
এই লাইনটা সবচাইতে ভালো লেগেছে।
আসলে আগের কথাগুলোও আমার মনের কথা, কিন্তু ভাবতে ভাবতে মন তিক্ত হয়ে গেছে। বলে তো আর পরিবর্তন আসে না। নিজেকে করতে হয়, তারপর অন্যদেরকে নিয়ে আগাতে হয়… সেই পথেই আগাচ্ছি
ধন্যবাদ ভাইয়া। আমিও চেষ্টা করছি। 😀
ইদানিং মেমেস নিয়েও বেশ বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। টুকটাক এডিটিং শিখলাম, আর পছন্দমতো একটা ছবি পেলাম তো হয়ে গেলো মেমে তৈরি। কেন?
মনের কথা গুলো লেখায় দেখে ভালো লেগেছে 😀
“পছন্দের মানুষটির প্রতি ভালবাসা সযত্নে গোপন রাখি, যেন যে কেউ খোলা বইয়ের মত সেটা পড়ে ফেলতে না পারে।”
এই লাইনটা দারুণ হয়েছে।
সবার শেষের লাইনটা পছন্দ হয়েছে দেখা যাচ্ছে। ওটাই আগে দিতাম! হাহহা… 😛
অনেক ধন্যবাদ আপু 😀
চমৎকার একটা লেখা। অনেক ক্ষেত্রেই ফেসবুকের ব্যবহার বেশ বিরক্তকর হয়ে উঠেছে আজকাল……
🙁
আর পছন্দের মানুষটির প্রতি ভালবাসা সযত্নে গোপন রাখি, যেন যে কেউ খোলা বইয়ের মত সেটা পড়ে ফেলতে না পারে!
পছন্দ হইসে কথাটা।
:love:
“আর পছন্দের মানুষটির প্রতি ভালবাসা সযত্নে গোপন রাখি, যেন যে কেউ খোলা বইয়ের মত সেটা পড়ে ফেলতে না পারে!” :clappinghands: