ফাইন্যানশ্যাল সেন্টারের সংযোগ-পথটা পার হলেই হাডসন নদী। সবচেয়ে আগে দেখতে পাওয়া যায় ঢেউ। থোকা থোকা। সূর্য শতভাগ হয়ে চূর্ণ চূর্ণ বিন্দুতে বিছিয়ে যায় ওইসব ঢেউয়ের বোঁটায়। রাতের ছায়াপথ খেলা করে নদীর বুকে।
এই দৃশ্যটা দেখবার জন্য সারাটা পথ উন্মুখ হয়ে থাকে মুহিত। অ্যাস্টোরিয়া ৩৩ স্ট্রীট থেকে এন ট্রেনে চাপে। একেবারে ম্যানহাটানের কোর্টল্যাণ্ড স্ট্রীটে নামে। মিনিট চল্লিশের এই সময়টুকু মুহূর্তেই শেষ হয়। চোখের সামনে বই মেলে ধরে, চোখ ওঠালেই নেমে পড়ার সময় হয়। আজ বইতে মন নেই। ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখবে সে সুযোগও নেই। গহীন মাটির পেটের ভিতর দিয়ে দীর্ঘ সুতোর মতো পথে ট্রেন চলছে। বাইরে অন্ধকার। মাঝে মাঝে স্টপেজ এলেই ঝলমল ক’রে ওঠে কিছুটা সময়। আবার অন্ধকার, তারপর।
একটা অনিশ্চিত ভাবনায় নিথর হয়ে আছে ও। শান্ত পায়ে নেমে এলো স্টেশনে। সামনে ফাইন্যানশ্যাল সেন্টারের প্রবেশপথে উর্ধ্বমুখি এসকেলেটর। অন্যান্য দিন এসকেলেটরে পা দিয়েও হেঁটে হেঁটে উপরে ওঠে। আজ দাঁড়িয়ে রইলো। নিজের স্থিতির মধ্যেও যান্ত্রিক গতিময়তায় উপরে উঠে যাচ্ছে। মজাই পেলো মুহিত। জীবনের সবক্ষেত্রে যদি এমনটা হতো! মানুষ মহাশূন্যে ভাসমান অগণিত গ্রহ নক্ষত্রের মতো অদৃশ্য গতির কাছে সঁপে দিয়ে নিথর হয়েও গতিমানতায় ভেসে থাকতো এই সীমাহীন সৃষ্টিলোকে।
আজ এইখানে কাজের শেষ দিন। ডাবল শিফট করবে, লাঞ্চ ও ডিনার। স্টিমারস্ ল্যান্ডিং রেস্টুরেন্টে কাজ প্রায় মাস তিনেক হলো। হাডসনের একেবারে তীরে অবস্থিত এই গ্রীষ্মকালীন রেস্টুরেন্ট। গ্রাউন্ড জিরো পেরিয়ে নিউ জার্সিতে যাবার জন্য ওয়াটার ট্যাক্সি যেখানে ভেসে থাকে, প্রাচীন আমলের রাজা বাদশাহর বজরার মতো নানা কারুকার্যময় জাহাজগুলো যেখানে নিশ্চুপ প্রতীক্ষায় থাকে কারও, সেখান থেকে মিনিট পাঁচেক হাটলে রেস্টুরেন্টের চত্বর। সুদৃশ্য পেইভমেন্ট ও শানবাঁধানো তীরে একটু পর পর মাঝারি গড়নের একই উচ্চতার গাছ লাগানো। বেশ চওড়া পথ তীর ধ’রে চলে গিয়েছে দূরে। দৃষ্টিসীমা যেখানে প্রায় শেষ হয় হয়, সেখান থেকে বেঁকে গিয়েছে ডানে। কখনও দৃষ্টি স্থির করে তাকালে সেই বাঁকে চোখে ভাসে জাহাজের মাস্তুল। ধীরে ধীরে স্পষ্টতর হয়ে ওঠে গোটা জলযানটা।
আগস্টের শেষ সপ্তাহ। এখনও গ্রীষ্মের গরিমা চারদিকে। নদীর আদ্র বাতাস সেই গুমর টলিয়েছে কিছুটা। রোদভরা সকালকে দুপুর হতে দিচ্ছে না। ম্যানহাটানের সমস্ত চঞ্চলতা, কোলাহল শুষে নেয় যেন এই জায়গাটা। ভোরবেলা ভিজে হাওয়ায় জগিংয়ে নামে অনেকেই। রোদ ফুটলে দপ দপ বুটের আওয়াজ বা খট্ খট্ পেন্সিলের হিলে মুখর করে রাখে অফিসগামী মানুষেরা।
লাঞ্চের প্রস্তুতি চলছে। বাইরের টেবিল সাজাচ্ছে হোস্ট হোলি দু’একজন ওয়েটারকে নিয়ে। জ্যান দেখিয়ে দিচ্ছেন জায়গা। রেস্টুরেন্টের ভেতরে জায়গা প্রচুর। সামারেই শুধু টেবিল দেয়া হয় বাইরে। মুহিতকে দেখে জ্যান হাসলেন। ভদ্রমহিলা বেশ অমায়িক। মুহিত গুড মর্নিং বলাতে, জবাব দিয়ে ওর যাবার পথ করে দিলেন। হাইহিল পরেন না জ্যান। চামড়ার চপ্পল আর ছিমছাপ সাদামাটা পোষাক। পা দাবিয়ে দাবিয়ে হাঁটেন। যেন জুতোর তলার মেটাল আটকে আটকে যাচ্ছে চুম্বকের জমিনের ওপর। আর জ্যান মৃদু চেষ্টায় ব্যথা ব্যথা পা উঠিয়ে হাঁটছেন। মুহিত মুগ্ধ, নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে দ্যাখে। বেশ ভালো লাগে মালিকের বিরল ছন্দময় চলা।
চেঞ্জিং রুমের সামনে আসতেই বেভারলি বলে উঠলো, হ্যাল্লো, মুহিট, হোয়াটস্ আপ? মুহিত হাসি ছুঁড়ে দিলো একটু। বেভারলী ইংল্যান্ডের মেয়ে। সামারের ক’মাস আমেরিকায় কাজ ক’রে ফিরে যায় দেশে। ওর কথাবার্তা-চলায় আমি ইংলিশ, আমি ইংলিশ ভাব আছে। তাই ওকে এড়িয়ে চলতে চায় ও । ড্রেস আপ করে বাইরে এলে দেখে, একে একে ওর সব ফেলো ওয়েটাররা আসছে। ভেরা, রাহুল, বরকত, মিলানা, গালিনা, ও রোসা। সবার সাথে কুশল বিনিময় হয়ে গেলে এদিক ওদিক দেখতে লাগলো। মিলানা হেসে তাকালো, লুকিং ফর ছাম্ওয়ান? নতমুখে হাসলো মুহিত।
আজ স্টেলাকে দেখছে না। জিজ্ঞেসও করতে পারছে না কাউকে। মিলানা জানে সবকিছু। ওর চোখ থেকে কৌতুক সরে না কখনও। রোমানিয়ার মেয়ে, মিলানা। একহারা গড়ন। লালটুকটুকে চেহারার ছোট্ট পুতুল। কাছাকাছি আসতে চায় খুব। কিচেন থেকে হয়তো টসটসে বড় এক স্ট্রবেরী এনে কামড় দিয়ে অর্ধেকটা বাড়িয়ে দেয় মুহিতের ঠোঁটের কাছে। লজ্জায় দ্বিধায় কতদিন খেতেও হয়েছে সেই ফল। মিলানা রসিয়ে কিছু বলতে গেলেই ও রোমানিয়ার চসেস্কু কিংবা কবি ইউজেন জেবেলিনুর কথা জিজ্ঞেস করে। মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
লাঞ্চের প্রস্তুতি শেষ। গেস্ট আসছে । বাইরে ব্রেড আর বাটার সাজিয়ে অপেক্ষা করছে বাস-বয়। হোস্ট হাসিমুখে অভ্যর্থনা করছেন গেস্টদের। দেখিয়ে দিচ্ছেন আসন-বিন্যাস। আবহাওয়া ভালো। তবু লাঞ্চে তেমন ভিড় হলো না। রেস্টুরেন্টের ভেতরে নির্জন কোনায় বসেন কেউ কেউ। অধিকাংশের লাঞ্চ হলো বাইরেই। দু’পাশেই খোলা জায়গায় আসন পাতা।
তবে মুহিতের পাশটার সব টেবিল ভরে গেল। ওর সাথে আজ মিলানা, রাহুল ও গালিনা। দু’পাশে চারজন ক’রে, ভেতরে দু’জন, মোট দশজন ওয়েটার। ছয়টা টেবিল একেক জনের। গেস্ট-স্যাটিসফ্যাকশানে দারুণ যত্নবান জ্যান। তাই কমসংখ্যক টেবিল দিয়েছেন ওয়েটারদেরকে। দু’জন করে বাস-বয় (টেবিল-ক্লিনার) ওয়েটার-প্রতি। দিনের বেলার গেস্ট মূলত অফিসের। ব্রেক থেকে লাঞ্চ করতে আসেন। গল্পে গল্পে সময় নেন না। এজন্যে দ্রুত টেবিল খালি হয়। নতুন গেস্ট আসে।
বেলা তিনটের দিকে লাঞ্চপর্ব শেষ হলো। দক্ষিণ চত্বরে গাছটার নিচে গোল হয়ে বসলো সবাই।
ডিনারে আরও ভালো সার্ভিস কীভাবে দেয়া যায়, কারও কোনো প্রশ্ন আছে কিনা এইসব নিয়ে কথা বলছেন জ্যান। মুহিত শুনছে আর আনমনা হয়ে যাচ্ছে বার বার। মিলানা বুঝতে পারলো। জ্যান উঠে গেলে, কানে কানে বললো, স্টেলা ইজ গনা-ডু ডিনার ওনলি টুডে। শী’উল বি হিয়ার অ্যাট ফোর থারডি । ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে, মিলানা হেসেই আছে। আড়চোখে তাকালো এদিক-ওদিক। অন্যরা শুনে ফেললো নাতো? একটু দূরের চেয়ারে বসা রাহুল মুখ অন্যদিকে নিয়ে মুচকি হেসে আছে। ওর দৃষ্টির সুতো বেয়ে মুহিতও তাকালো দূরে। হাডসন নদীর জলের বিস্তৃতি পেরিয়ে চোখ স্থির হয়ে আছে স্ট্যাচু অব লিবার্টি- র উঁচিয়ে ধরা মশালের দিকে। একটু সময় পেলেই ওই সবুজ দ্বীপ-রমণীর দিকে অপলক দেখে। কতকাল জলের কল্লোলে, নদীর সজীব হাওয়া গায়ে মেখে বই-হাতে জ্ঞানের মশাল জ্বেলে দাঁড়িয়ে আছেন নিশ্চুপ! খুব ভালো লাগে ওর।
রেস্টুরেন্টের কাছে, একটু উঁচুতে সুইমিং পুল। এর চারপাশ সাদা তাঁবুতে ঘেরা। আকাশের দিকটা খোলা। আয়তকার জলের চারপাশে সমুদ্র-সৈকতের ইজি চেয়ার পাতা সারি সারি। স্নান সেরে সেই চেয়ারে প্রায়-শোয়া হয়ে আছে কেউ কেউ। গগলস প’রে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। ছেলেদের পরনে হ্যাফপ্যান্ট, খালি গা। মেয়েরা বিকিনি ও অতিছোট ব্রা পরে আছে। দক্ষিণের চত্বরের কোণায় তাঁবুর ভেতরে যাবার পথ। এই পথে মিনিট তিনেক হাঁটলে রেস্টুরেন্টের ফ্রীজার। বিরাট ঘরের মতো হিমঘর। চারটে প্রায় বাজে। ডিনারের সব প্রস্তুতি শেষের পথে। শেফ হোসের অনুরোধে ফ্রোজেন লেনটিল স্যুপ আনতে যাচ্ছে মুহিত। সুইমিং পুলে গমগম করছে মানুষ। বাচ্চারাও আছে মা-বাবার সাথে। সবার পোশাক একইরকম। মুহিত চোখ নিচু করে হাঁটছে। অসাবধানে ও অনিবার্য কৌতুহলে তবু চোখ চলে যাচ্ছে পাশেই সারি সারি শুয়ে থাকা প্রায়-নগ্ন মানুষের দিকে। দুপুরের তাপ কমে এসেছে একটু। তবু পানিতে নামলে আরাম বোধ হয়। হিমেল জলের আদর বিন্দু বিন্দু হয়ে ছড়িয়ে আছে ওদের সারা গায়। বৃন্তহীন বুকের গভীরে নেমেছে দু’একটি জল-বিন্দুর মিহিস্রোত। একবিন্দু অন্যটাতে গলে গিয়ে স্রোতে হয়ে নামছে কারও জমজ নদীর মতো ধবধবে উরুদুটোয়।
ফিরে এসে কিচেনের দরোজার দিকে যাবার পথে চোখ আটকে গেল। স্টেলা দাঁড়িয়ে আছে। কথা বলছে হোসের সংগে। ওর পায়ের শব্দে ফিরে তাকালো। কালোপ্যান্ট আর সাদাশার্ট পরে আছে স্টেলা। কাঁধে ঝুলানো ব্যাগটা। চেঞ্জিং রুমেও যায় নি এখনও। চোখ ফিরিয়ে স্যুপের প্যাকেট হোসের হাতে দিয়ে স্টেলার দিকে তাকিয়ে বললো, হাই, জাস্ট গাট হিয়ার? ইয়াপ । ঠোঁট কামড়ে জবাব দিলো স্টেলা। আর কোনো কথা না ব’লে ডিনারের সিট অ্যারেঞ্জমেন্ট ও ডিউটির চার্ট দেখতে গেল জ্যানের ঝুলানো বোর্ডে। ডিনারের ডিউটিও একই স্থানে। এবার পাঁচজন ক’রে ওয়েটার। স্টেলা ও মিলানা-ও আছে। সাথে স্টিভ আর গালিনা। রাহুল গিয়েছে অন্যপাশে।
বিকেল হয়েছে। সূর্যটা হাডসনের জলের ওইপারে। জল ছুঁয়ে যে আলো এইপারে এসে ছড়িয়েছে তা যেন আবীরের কাঁচারঙ। তালু মেলে ধরলে জ্বলজ্বল করে ওঠে হাতের রেখাগুলো। স্টেলা সেইরঙ শুষে নিয়েছে। কমলা-সূর্য-মানবী ঘুরছে মুহিতের সামনে। নদীর দিকের একাংশের টেবিল স্টেলার। মুহিতের, এ পাশের। মাঝখানে পথ। হোস্ট, বাস-বয়, ফুড-রানার, ওয়েটার ও জ্যানের আনাগোনা সেই পথে। কাজের ফাঁকে একটু পর পর চোখাচোখি হচ্ছে ওদের। স্টেলা আজ বেশিরকম অর্থপূর্ণ চোখে দেখছে।
টেবিলের পর টেবিল টেইক কেয়ার করতে করতে বেশ রাত হয়ে এসেছে। হঠাৎ মুহিতের এক টেবিল থেকে ডাক আসলো। গিয়ে দেখে এক গেস্টের কাপড়-চোপড় ভিজে একাকার। বাঙালী ছেলে বরকত বাসিং করছিলো। পাশে দাঁড়ানো বরকতের দিকে তাকালে, ও বললো, ট্রেতে একসাথে অনেকগুলো পানির গ্লাস ছিলো, মুহিত ভাই। এত ধীরে, সাবধানে আসছিলাম, কী ক’রে যে ঢেলে পড়লো, বুঝতে পারিনি। মুহিত বললো, এরকম হতেই পারে। আপনি ন্যাপকিন আনেন, প্লিজ। এর মধ্যেই গেস্টের গলা শোনা গেল, উই আর গনা গেট ছাম ফ্রি বিয়ার, ইজ’ন্ট ইট? মুহিত হেসে বললো, ইয়েস স্যার, সার্টেনলি, অ্যম গনা সেন্ড দোজ রাইট নাও’।
গেস্ট তৃপ্তির হাসি হাসতে হাসতে ন্যাপকিন চাপতে লাগলো শার্টে। বার সেকশান থেকে বিয়ার নিয়ে আসার পথে গাছটার নিচে স্টেলার মুখোমুখি হলো। ব্যারক্যাট মেইড দেম শাওয়ার, মুহিট? ব’লে হাসছে স্টেলা। মুহিত একটু দাঁড়িয়ে পড়ে, মাথা নাড়লো। পা তুলতে যাবে এমন সময় শুনলো, আফটার ডিনার ওয়েট ফর মী ওভার দেয়ার । দৃষ্টি দিয়ে দেখাল। মুহিতের বুঝতে কষ্ট হলো না ইশারা।
পেইভমেন্টের গাছগুলোর গোঁড়ায় ইটের গোল গাঁথুনি। ডিনারের পরে সব ফর্মালিটি সেরে একটু দূরের এক গাছতলায় বসলো মুহিত। বারের কারণে বাইরে ডিনার শেষ হলেও ভেতরে তখনও গমগম করে মানুষ। কেউ কেউ ডিউটি করে, গেস্ট যতক্ষণ থাকে। এসব থেকে একটু নির্জনতায় এসে ঠিক এই গাছটার তলায় বসে। দেশে, ওর গ্রামের কচি বটগাছটার কথা মনে হয়। পুকুরপাড়ে কেমন একা একা দাঁড়িয়ে থাকে। দিনের বেলা তো পাখিরা এসে জটলা করে বেশ। রাত হলে একা হয়ে যেত গাছটা। রাতের বেলা জোছনা ফুটলে গুটিগুটি পায়ে বটতলায় এসে দাঁড়াতো। বসে থাকতো অনেক রাত পর্যন্ত। চাঁদ নেমে আসতো দীঘির মতো পুকুরটার জলে। নির্ঘুম কোনো মাছ জলের ঘুম ভাঙালে চাঁদও ভেসে যেতে চাইতো কোথাও! আহা, কতদিন দেখা হয়নি সেই দৃশ্য, জোছনা-ভরা কুয়াশার মতো রাত।
হোয়াই আর ইউ কুয়ীটিং, মুহিট? ফিসফিসে স্বর স্টেলার। পেছন ফিরে দেখে, আসতে আসতে বলছে কথাগুলো। পাশে এসো বসলো। মুহিত মুখ নিচু করে আছে। স্টেলা উত্তর চাইছে, দৃষ্টিতে।
ছামবাডি ডাজন্ট ওয়ান্ট মি টু বি ওয়ার্কিং হিয়ার, দ্যাটস্ হোয়াই।
হুজ ইট দ্যাট ছামবাডি ? ফর্গেট অ্যাবাউট হিম। হু দ্য হেল ইজ দ্যাট। টেল মি, টেল, মি প্লীজ।
ওয়েল আই গাট ইস জব বিকজ অব হিজ রেফরেন্স। হি ওয়াজ মাই রুমমেট। আই মুভড, সো হি ছেড, ইফ ইউ মূভ, লিভ দ্য জব।
ও… মুহিট ! ইউ আর সাচ অ্যা গুড গাই, হার্ডওয়ার্কিং গাই, জ্যান লাইকস ইউ এ লট।
আই নো, জ্যান এণ্ড এভরিওয়ান লাইকস মি, বাট আই ক্যান্ট, আই অলরেডি টকড্ টু জ্যান। শী ওয়াজ সার্পাইজড দোউ।
ওয়েল দ্যাটস ইয়োর ডিসিশান। আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু ইন্টাফেয়ার। অ্যা’ম কামিং টু ইয়োর অ্যাপার্টমেন্ট টু-নাইট। ইউ লিভ অ্যালোন নাউ, রাইট?
ইয়া।
স্টেলা মুহিতের ঘাড়ে হাত রাখলো । মুহিত ভাবছে। মনে পড়ছে মাস তিনেক আগের কথা। নতুন কাজ নিয়েছিলো। বাস-বয়ের। ওর কাজ দেখে জ্যান বলেছিলেন, মুহিট, ইউ শ্যুড বি অ্যা ওয়েডার, (স্টেলার দিকে তাকিয়ে), স্টেলা, ট্রেইন হীম। অ্যাই ওয়ান্ট হীম টু বি ওয়েডিং অন গেস্টেস, উইদিন ঠু ডেইজ। কাজের সময় স্টেলা ধূসররঙের স্কার্ট ও সাদাশার্ট পরে। কালোপ্যান্ট ও সাদা শার্ট ওয়েটারদের পোশাক এই রেস্টুরেন্টে। মেয়েরা অন্যকোনো রঙের স্কার্ট বা ফুলপ্যান্ট পরতে পারে। ট্রেনিংয়ের সময় বেশ কয়েকবার স্টেলার স্কার্ট দেখা প’ড়ে গিয়েছিল একটু বেশি সময় ধরে। কথার ফাঁকে ফাঁকে শুভ্রতায় ঢাকা বুকের শুভ্র ঢেউয়ে আটকে গিয়েছিল দৃষ্টি। ও মুখ টিপে হেসেছিল। বুক কেঁপেছিল মুহিতের। দু’দিন পর বলেছিল, মুহিট, আউ নো, ইউ লাইক মি। ইউ নো হোয়াট, আই লাইক ইউ টু…।
ইউ আর সাচ্ অ্যা সুইট বয়। এবার বুকের ভেতর ড্রামের শব্দ শুনেছিল। স্কাউটের ড্রাম! মনে মনে বলছে, এই মেয়ে আমাকে লাইক করে। কী স্বচ্ছ নীল চোখ। গড়নে, লম্বা ছিপছিপে মোম। তীরের মতো দৃষ্টি। স্টাচু অব লিবার্টি-র ওপরে যেসব মেঘ এসে থামে, মনে হয়, ওর বোন। আর আমি ? শ্যামলা গায়ের রঙ। ও আলো, আমি অন্ধকার। ও পর্বত-কুমারী, আমি সঘন উপত্যকা। আমার থেকে স্টেলা প্রায় আধফুট-মতো উঁচু হবে। মুখ তুলে তাকাই ওর দিকে। ওর মতো মেয়ের জন্য কি মানানসই ছেলের অভাব?
এরপর প্রায় প্রতিদিন ওরা ডিনারের পর এখানে বসেছে। গল্প করেছে। অন্ধকারে কিংবা কখনও ছুটির দিনে, দিনের আলোয় নিবিড় হতে চেয়েছে। মুহিত ঠোঁট সরিয়ে নিলে চোয়ালে চুমু দিয়ে নিবৃত্ত করেছে নিজেকে। জড়িয়ে ধ’রে ওই দূরের জলে চোখ রেখেছে বহুক্ষণ। আড়ষ্টতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি মুহিত। স্টেলা সময় দিয়েছে ওকে। জানতেও চায়নি, অন্যকাউকে পছন্দ কি-না। শুধু নিজের ভাললাগা কতটুকু জানাতে ও মানাতে পারবে সেই দিকেই যত্ন ওর।
অ্যাস্টোরিয়ার ব্রডওয়ে আর ৩৩ স্ট্রীটে নতুন অ্যাপার্টমেন্ট নিয়েছে মুহিত। এক বেডরুম। লিভিংরুমে বেড ফেলে আরেকজনকে নেয়া যায়। ভাড়া কম পড়বে। সাপ্তাহিক ঠিকানা-য় বিজ্ঞাপন দেবে ভেবেছে। এন ট্রেনে ব্রডওয়ে স্টেশনে নামল ওরা। রাত প্রায় দুটো বাজে। ব্রডওয়ে তবু দিনের মতো সজাগ। সাবওয়ে থেকে নেমে কোণার দোকানের সামনে এসে একটু দাঁড়ালো স্টেলা। মুহিতকে ইশারায় দাঁড়াতে বলে ভিতরে গেল। একটু পরে বেরিয়ে লাইটার জ্বেলে সিগারেট জ্বালাল। মার্লবোরো লাইট খায় ও। গোলাপি সরুঠোঁটের ভেতর দিয়ে ফুঁয়ের মতো ধোঁয়া ছেড়ে তাকাল সামনে। ওর সিগারেট খাওয়ায় মুহিত মনে করে না কিছু। এদের কাছে এটা খুবই স্বাভাবিক।
ডিনার করেই এসেছিল দু’জন। রেফ্রিজারেটর থেকে পানির বোতল ও কোকের ক্যান বের করলো মুহিত। বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিজের ঘরের মতো কাপড় বদলালো স্টেলা। ওর ব্যাগে পাজামা ও টী-শার্ট ছিলো।
লিভিংরুমে বসে আছে দুজন। মুহিত একটা সোডা ভেঙে চুমুক দিলো। পানির বোতল খুলল স্টেলা। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে মুহিত তাকিয়ে আছে ওর দিকে। স্টেলা হাসলো। লিপিস্টিকহীন, রক্তাভ ঠোঁট। সজীব-স্নিগ্ধ ঘরোয়া চেহারা। মোহিত হয়ে গেল মুহিত। দৃষ্টি সরালো না। স্টেলা দু’হাতে মুহিতের ঘাড় চেপে শুইয়ে দিলো কোলের ওপর। বাধ্য ছেলের মতো শুয়ে থাকলো ও। তাকালো উপরে। সাদা মেঘের ফাঁকে সন্ধ্যার দুইফালি চাঁদ এগিয়ে আসছে। নিঃসাড় শুয়ে স্টেলার কোমর জড়িয়ে থাকলো। ওর ঠোঁটের ওপর সেই সরু জোড়া-চাঁদ খেলা করছে কখন থেকে বুঝতেই পারেনি।
***********************
প্রকাশিত : ভোরের কাগজ সাময়িকী
২৭ এপ্রিল, ২০১২
আপনার ভাষা ভালো লেগেছে। তবে গল্পটা পরিষ্কার মনে হয় নাই। মানে আসলে কী ছিল গল্পটা? মুহিত এর চোখে আমরা শহর দেখলাম, মুহিতের কানে আমরা শব্দ শুনলাম, কথা শুনলাম। স্টেলার প্রতি ভালো লাগা আছে সেটাও টের পেলাম। স্টেলার সাথে ওর সংকোচের কারণটা আমি বুঝি নাই। এটা কি বাঙালি হিসেবে আড়ষ্টতা?
গল্পটা শুরু হতে মনে হয় দেরি করেছে। আবার শেষ হয়েছে গল্প ছাড়াই।
সুইমিল পুল বানানটা ভুল এসেছে। সেখানেও মনে হয়েছে বর্ণনা গল্পের প্রয়োজনে নয়, বাহুল্য হিসেবে এসেছে।
গল্প লেখালেখি চলুক। সাথে আলোচনাও।
আপনার অতি মূল্যবান পরামর্শ পাথেয় হয়ে থাকবে, বোহেমিয়ান ।
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানবেন ।
লেখালেখি চালিয়ে যাবার প্রবল ইচ্ছে রাখি ।
ভাল থাকুন । 🙂 🙂
শারীরিক বর্ণনার বাইরে বাকিটুকু ভালো লেগেছে। মানবিক অনুভুতির শৈল্পিক প্রকাশগুলো সাধারনত ঐ বিশেষ টাইপের বর্ণনার বাইরে হয়।
এবার আসল কথাটা বলি। আপনার নির্মাণ অসাধারন। আমার মনে হয় এটি কোন গল্প নয়, বরং ডায়রির একটি পাতা, একদিনের নানা কথন ও কর্ম সংকলন। বেশ ভালো লেগেছে।
ঐ রেস্টুরেন্ট আর বাইরের সাজানো ফুলের ছবি দিতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু কমেন্টে কিভাবে ছবি দেয়া যায় তা বের করতে পারছিনা। আমি আবার টেক ইডিয়ট।
এখনও কি ম্যানহাটনেই আছেন? ভালো থাকবেন।
“শারীরিক বর্ণনার বাইরে বাকিটুকু ভালো লেগেছে। মানবিক অনুভুতির শৈল্পিক প্রকাশগুলো সাধারনত ঐ বিশেষ টাইপের বর্ণনার বাইরে হয়।” – সহমত পোষণ করলাম।
অজস্র ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই, বোকা মানুষ ।
[ কে বলেছে, আপনি ‘বোকা’ ? 🙂 ]
গঠনমূলক পরামর্শ পেয়ে খুবই ভাল লাগছে ।
জ্বী না । আমি ম্যানহাটানে নেই ।
নিউ ইয়র্কের অ্যাস্টোরিয়ায় ৫ বছর থাকবার পর
এখন ম্যাসাচুসেটস্-এর বোস্টন শহরের অদূরে
সাউথ ইসটনে আছি ।
নিউ ইয়র্কের পটভূমিতে লেখা আরেকটি গল্প আছে। পোস্ট দেব ক’দিন পর।
সে সম্পর্কেও আপনাদের মূল্যবান পরামর্শ পাবো আশা রাখি।
ভাল থাকবেন । 🙂 🙂
আপনার লেখার হাত দারুণ।
বোকা মানুষের মত আমার কাছেও গল্পের চাইতে বেশি দিনলিপি ধরনেরই লেগেছে। টুকটাক বেশ কিছু টাইপো দেখলাম।
অশেষ ধন্যবাদ, সামিরা ।
আপনাদের পরামর্শমতো নিজেকে শুধরে নেবার ও লেখার উৎকর্ষ সাধনে আপ্রাণ
চেষ্টা থাকবে ।
কৃতজ্ঞতা জানবেন । 🙂 🙂
লেখনী আর গল্পের কাঠামো চমৎকার লেগেছে, তবে মনে হচ্ছিলো গল্পটা শেষ হয় নি, ডায়েরীর শেষ পৃষ্ঠাটা না পড়াই রয়ে গেছে…
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা, নিস্তব্ধ শৈশব ।
গল্পটা রি-রাইট করার কথা ভাবছি ।
ভাল থাকুন । 🙂 🙂
ইশ! এতো সুন্দরভাবে গঠনের পর মনে হলো গল্পটা হঠাৎ শেষ! পড়ার লোভটা শেষ হলো না।