ফুটবলের এক মহানায়কের গল্প

সে অনেকদিন আগের কথা! Jean Varraud নামে এক ভদ্রলোক। নিজের ক্লাবের জন্য প্রতিভা খোঁজার কাজ করেন! একদিন এক বালকের খেলা দেখে বেশ ভালো লেগে যায়, যদিও সে বালক ঐদিন খুব একটা ভালো খেলে নি।

ভদ্রলোক গেলেন ক্লাবের ডিরেক্টর এর কাছে। ডিরেক্টর সাহেব ক্লান্ত হবে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। স্কাউট ভদ্রলোক বললেন, চলেন আমার সাথে! নতুন এক প্রতিভার খোঁজ পেয়েছি!
ডিরেক্টর বললেন, ধুর! আমি ক্লান্ত! কালকে যাবো নে।
স্কাউট নাছোড়বান্দা।
বললেন, আজকেই যেতে হবে! ডিরেক্টর গেলেন।
ওমা! যাকে দেখতে যাওয়া, সে তো বলই পায়ে পায় না!
একটু পরেই একটা পাস আসলো তার দিকে!
রিসিভ করলেন!
টেকনিক দেখে ডিরেক্টর মুগ্ধ! এবং সাথে সাথেই রাজি!
১৪ বছর বয়সী বালক আসলো ক্লাবে।
১৭ বছর বয়সে প্রথম বিভাগের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামেন!
১৯ বছর বয়সে গোল করা! সেই গোল দেখে মুগ্ধ হয়ে ক্লাবের চেয়ারম্যান দিলেন গাড়ি! গোলের পর উদযাপন দেখে গ্যালারিতে বসা এক তরুণী দিল মন!
********************

এটি এক  ফুটবলার এর গল্প।
ফুটবলের প্রতি ভালোবাসার গল্প!

খেলা শুরু করার আগে ছোট্ট সাইকেল নিয়ে শহর দাপিয়ে বেড়াত! শহরের লোকজন আদর করে বিশেষ এক নামে ডাকতো তাকে।

পরিবারের সাথে তার বেশ ঘনিষ্ঠ পরিবেশে বেড়ে উঠা! তার মা চাইতেন ছেলে যেন অনেক বড় কিছু হয়! তিনটি জিনিস মনে রাখতে বলেছেন ছেলেকে।
০১. মানুষকে সম্মান করা
০২. পরিশ্রম করা
০৩. কাজে মনোযোগী হওয়া।

মায়ের কথা রেখেছেন এই ফুটবলার।

ছোটবেলায় ফুটবল খেলতে গিয়ে এর প্রতিভ ভালোবাসা টের পান তীব্রভাবে। ফুটবল ছাড়া বাকি সব অর্থহীন মনে হতো। পরিবারও টের পায় তার এই ফুটবল প্রতিভা।
ছোটবেলায় তার নায়ক ছিলো Enzo Francescoli। নিজের নায়কের নামে নিজের ছেলের নামও রেখেছেন Enzo!

১০ বছর বয়সে প্রথম কোন ক্লাবের জার্সি গায়ে তোলেন। এর চার বছর পরেই পেশাদার ক্লাবে খেলার লাইসেন্স পান।
যদিও প্রথম বিভাগে খেলার সুযোগ পান ১৭ বছর বয়সে! আর প্রথম গোল করেন আরো প্রায় দেড় বছর পর!

চার নাম্বার পজিশনে থেলে লীগ শেষ করে তার দল।
উয়েফা ক্লাবে জায়গা করে নেয়। এমন সময় ক্লাবের বেশ কিছু ভালো প্লেয়ার অন্য দলে চলে যায়। খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি উয়েফা কাপে।
এমনকি লীগে রেলিগেশনেও পড়ে অবনমন হয় দ্বিতীয় বিভাগে।
বুঝতে পারলেন, দ্বিতীয় বিভাগে খেলার মত প্লেয়ার নন তিনি।

চলে আসলেন আরো বড় ক্লাবে। ক্লাবের ম্যানেজার তার উপযোগী ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করলেন। শুরু হলো বড় পরিসরে পথচলা।
৩৫ ম্যাচে গোল করলেন ১০ টি। আন্তর্জাতিক পরিসরে আগমন ঘটলো।
একদিন ফ্রি কিক নিয়ে গিয়ে বুঝতে পারলেন তার ডান পায়ের কারিশমা!

আউটসুইং এর মত বাঁক খেয়ে বল খুঁজে পেতে লাগলো তার ঠিকানা, জাল।

ফ্রি কিক নেওয়ার সময় সারা স্টেডিয়াম গর্জন করে উঠতো। গোল করে তিনিও তার জবাব দিতেন।
দেশের সেরা ফুটবলার এর প্রশংসা আসতে লাগলো।

১৭ অগাস্ট ১৯৯৪।

জাতীয় দলের প্রথম খেলা। দল তখন দুই গোলে পিছিয়ে। বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামলেন।
৩০ গজ দূর থেকে দূর্বল বাম পায়ে শট এবং গোল।
তার কিছুক্ষণ পর কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে পেনাল্টি বক্সের মাঝামাঝি মাথা ছুঁয়ে গোল করলেন!
এই প্রথম এক ম্যাচে করলেন দুই গোল!

১৯৯৪ এর বিশ্বকাপে তার দল কোয়ালিফাই করতে পারেনি।
১৯৯৬ এর ইউরো তে যাওয়ার জন্য তার দল সংগ্রামে ব্যস্ত। এরকম পরিস্থিতে ১৯৯৫ সালে রুমানিয়ার বিপক্ষে এক মরা-বাঁচা যাকে কিনা বলে Do or Die  অবস্থায় পড়ে তার দল। শেষ পর্যন্ত ৩-১ গোলে জয় পায়। এবারও অসাধারণ একটি গোল করেন। ডান পায়ের বাঁকানো এক শট।

এরপর টানা ৭ ম্যাচে জয়। দিনের পর দিন দলের এক অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠা।
৬ ডিসেম্বর ১৯৯৫। উয়েফা ক্লাবের খেলা।
আগেই জানতেন বিপক্ষ দলের গোলকিপার একটু এগিয়ে থাকে পোস্ট থেকে। মনে রাখলেন এবং কাজে লাগালেন এই তথ্য। মাঝমাঠ পেরিয়ে অল্প একটু সামনে থেকে করলেন অবিশ্বাস্য এক গোল।
কোয়ার্টার ফাইনালে দেখা হয় এসি মিলানের সাথে!
প্রথম লেগে ২-০ গোলে হেরে আসলেন সান সিরো থেকে। পরের ম্যাচ নিজেদের মাঠে।
সতীর্থদের বলে রেখেছিলেন প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যে গোল করতে পারলেন অঘটন সম্ভব।
১৪ মিনিটের সময় দিলেন অসাধারণ এক পাস। গোল মুখের সামনে স্ট্রাইকারও আর দেরি করলেন না!
স্কোর: ১-০।
৬৩ মিনিটের সময় ফ্রি কিক পেলেন। গোল করার মত এঙ্গেল ছিলো না! তাতে কী! গোল করালেন।
স্কোর: ২-০।
৬৯ মিনিটের সময় আবার হাজির তিনি! এবার পেনাল্টি বক্সের সামনে মাটিতে আছাড় খাওয়ার আগে বল ঠেলে দিলেন স্ট্রাইকার এর দিকে! এবারও নিরাশ করেননি স্ট্রাইকার।
স্কোর ৩-০। দুই লেগ মিলিয়ে ৩-২।
এসি মিলানকে সরিয়ে সেমিফাইনালে তার দল। সেমিফাইনালেও গোল করালেন। দল গেল ফাইনালে।

কিন্তু পর পর দুই ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখায় খেলতে পারলেন না তিনি এবং যাকে দিয়ে এত গোল করাতেন সেই স্ট্রাইকার!
ফলাফল যা হওয়ার তাই হলো। শক্তিশালী বায়ার্ন মিউনিখ এর সামনে দাঁড়াতে পারলো না।

এর মধ্যে চলে আসলো ইউরো ১৯৯৬।

কয়েকদিন আগেই কার এক্সিডেন্ট করে খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই তিনি। যদিও কোচ দল সাজিয়েছেন তাঁকে কেন্দ্র করেই।
প্রথম রাউন্ডে একদমই ফর্মে ছিলেন না। তার দল অবশ্য ঠিকই পরের রাউন্ডে জায়গা করে নেয়।

চারদিন বিশ্রাম পেলেন। সেই সাথে ফিরে পেলেন নিজেকে। পরের ম্যাচে দেখা হলো নেদারল্যান্ডের সাথে। অসাধারণ খেলেও গোল করাতে পারলেন না সতীর্থ স্ট্রাইকারের ভুলের কারণে। এক্সট্রা টাইমেও কোন গোল হয়নি। ট্রাইবেকারে জিতে পরের রাউন্ড নিশ্চিত করলো দল।

পরের রাউন্ডেও গোল শূন্য ড্র এবং ট্রাইবেকার। এবার অবশ্য ভাগ্যের কোন সহায়তা পাননি। টুর্নামেন্ট থেকে বাদ।
এরপর আবার ক্লাবের খেলা। এবার আরো বড় ক্লাবে! আরো বিশাল মঞ্চে!
নতুন দল আবার সদ্য চ্যাম্পিয়নস লীগ জিতেছে। হাই প্রোফাইল কোচের অধীনে কঠোর পরিশ্রমের সাথে তাল মেলাতে পারলেন না। কোচ বুঝলেন তার সমস্যা! ছাড় দিলেন, আত্নবিশ্বাস দিলেন।
একদিন এক ম্যাচের আগে ডেকে বললেন,
শোনো! এই ম্যাচে তুমি খেলছো না!
তুমি খেলবে পরের ম্যাচে! আমি জানি তুমি পারবে।
(পরের ম্যাচ ছিলো আরো বড় প্রতিপক্ষের সাথে!)

কোচের কথার মর্মার্থ বুঝতে পারলেন। কর্নার উড়ে আসা এক বলকে বাম পায়ে রিসিভ করে বাম পায়েই দিলেন এক শট! আরেকটি অসাধারণ গোল!
ক্লাবের সমর্থকরা তার নাম দিলো “Giant of the giants”।

প্রথম কোন বড় লীগ জিতলেন। পরের বছর আবারও লীগ জয়! এবার তিনি আরো বেশি পরিণত।
তবে চ্যাম্পিয়নস লীগ আর জেতা হলো না। বড় কোন কাপ জেতার ক্ষুধা থেকেই গেলো।

এর মধ্যে চলে আসলো ১৯৯৮ বিশ্বকাপ।
প্রথম ম্যাচে গোল করালেন। দল জিতলো ৩-০ গোলে। পরের ম্যাচে অসাধারণ পারফরম্যান্স। সাথে ঘটলো দূর্ঘটনা। বিপক্ষ দলের এক প্লেয়ার তাকে গালিগালাজ করে। মেজাজ হারিয়ে থুথু মারেন। রেফারি সাথে সাথে দিলেন লাল কার্ড!! সাথে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা!
তাকে ছাড়াই দল উঠলো পরের রাউন্ডে। সেখানেও জয় লাভ করলে কোয়ার্টার ফাইনালে। দেখা ইতালির সাথে। গোল শূন্য ম্যাচে গড়ায় ট্রাইবেকারে।ভাগ্যের সহায়তা পেলেন।

সেমিফাইনালেও জয় পেলো তার দল!
এবার ফাইনাল!
এই মঞ্চের জন্যই হয়তো এতদিন অপেক্ষায় ছিলেন জিনেদিন ইয়াজিদ জিদান!
ছোট্টবেলায় সাইকেল নিয়ে শহরময় ছুটে বেড়ানোর সময় সবাই আদর করে ডাকতো জিজু।
ফ্রি-কিক নেওয়ার সময় ক্লাবের সমর্থকরা জিজু বলে উৎসাহ দিতো।
জিজু এবার ঘরের মাঠে! নিজের শহরে!  বড় কোন কাপ জিততে না পারার ক্ষুধা নিয়ে!

ফাইনালে দেখা হয় ব্রাজিলের সাথে। বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা দল। সেরা মঞ্চ! সেই সাথে জিদানের সেরা পারফরম্যান্স!
ড্রিবলিং, পাসিং সবই ছিলো অসাধারণ! নিজেও হয়তো কখনো কল্পনা করেননি এত ভালো প্রদর্শনীর।

প্রথমার্ধে করলেন দুই গোল! হেড এ। দ্বিতীয়ার্ধে petit করলেন আরেক গোল।
ফ্রান্স ৩ – ব্রাজিল ০
বিশ্বকাপ  ধন্য হলো জিদানের হাতে উঠে।………

১৯৯৮ সালেই জিতলেন ব্যালন ডি’অর।  সাথে FIFA World Player of the Year! (তখন এ দুটো পুরষ্কার আলাদা ছিলো।)

বিশ্বকাপের পরের মৌসুম ছিলো বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সের ঠিক উল্টো! বিতর্ক, ইনজুরি, ক্লাবে প্রিয় কোচের পরিবর্তন, ফর্ম হারানো সব মিলিয়ে মোটেও ভালো যাচ্ছিলো না সময়।

মৌসুমের মাঝামাঝি আবার নিজেকে ফিরে পাওয়া! দুর্দান্ত কিছু গোলও করেন। সেই মৌসুমের শেষ ম্যাচে লাৎসিও আর জুভেন্টাসের খেলা। বৃষ্টির পানি জমে ছোটখাটো পুকুর হয়ে যাওয়া সে ম্যাচে জুভেন্টাস হেরে যায়।

টানা তিনবার লীগ জেতা হলোনা জিদানের।
পরের মৌসুমের আবারও লীগে জয়ের একদম দারপ্রান্তে জুভরা।এবার তাদের নিরাশ করে টট্টির রোমা।

এদিকে ২০০০ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপ। বিশ্বকাপ জয় করলেও মানুষের খোঁচা চলছিলো! ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয় কোন দুর্ঘটনা কী না সেটি নিয়ে আলোচনা আর গবেষণা।
জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত জিদান। কাপের খেলা শুরু হওয়ার আগে জাপানের সাথে এক প্রদর্শনী ম্যাচে দিলেন অদ্ভুত সুন্দর গোল! যেন কারাতের কোন মারপ্যাচ।
ইউরোতে ফ্রান্সের গ্রুপে ছিলো ডেনমার্ক, চেক, আর নেদারল্যান্ড।
ডেনমার্কে উড়িয়ে দেয় ৩-০ গোলে! সাথে উপহার হিসেবে দেখে মেলে এক নির্ভরযোগ্য স্ট্রাইকার এর। থিয়েরি অঁরি।

পরের ম্যাচে চেক কে ১-২ গোলে হারানো।পরের ম্যাচে নেদারল্যান্ডের সাথে ২-৩ গোলে হেরে যায়।
পরের রাউন্ডে রাউলের স্পেন কে হারায় ফ্রান্স। ১-২ গোলে। সব আলো নিজের দিকে নিয়ে আসেন জিদান! বরাবরের মতই অসাধারণ এক গোল করেন ফ্রি কিক থেকে।

সেমিফাইনালে দেখা হয় ফিগোর পর্তুগালের সাথে। আবারও লাইম লাইট নিজের দিকে টেনে আনেন। ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স ছিলো সে ম্যাচে, নিজেরই স্বীকারোক্তি!  পেনাল্টি থেকে গোল করে নিশ্চিত করেন ফাইনাল।

ফাইনালে মুখোমুখি ইতালির সাথে। ১-০ গোলে ইতালি এগিয়ে। খেলা প্রায় শেষের দিকে। ৯৪ মিনিটে ফ্রান্সের প্রত্যাবর্তন।
তারপর অতিরিক্ত সময়ে ত্রেজেগের গোলে ফ্রান্সের শিরোপা জয়।

২০০১ এ যোগ দেন রিয়াল মাদ্রিদ এ। রেকর্ড ৭৫ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি দিয়ে রিয়াল নিয়ে আসে তাকে জুভেন্টাস থেকে।

অধরা চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনালে জিদান !  আবারও জ্বলে উঠেন এ মহানায়ক!
লেভারকুসেন এর সাথে রিয়ালের খেলা। ১-১ গোলে সমতা।
৪৫ মিনিটের সময় রবার্তো কার্লোসের উড়ন্ত এক পাস কে দুর্দান্ত ভলিতে পাঠিয়ে দেন গোলপোস্টে! চ্যাম্পিয়নস লীগের ইতিহাসে সেরা গোলের মর্যাদা পায় গোলটি।

এবার আর নিরাশ হতে হয়নি জিদান কে। চ্যাম্পিয়নস লীগ ওঠে তার হাতে।
২০০২ এর বিশ্বকাপে ইনজুরি আক্রান্ত জিদানকে ছাড়াই প্রথম দুই ম্যাচ খেলে ফ্রান্স।
তৃতীয় ম্যাচে ইনজুরি নিয়েই মাঠে নামেন, কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি। কোন গোল না করেই ফ্রান্স বিদায় নেয় বিশ্বকাপ থেকে।

২০০৩ এ জেতেন লা লীগা। সেই সাথে তৃতীয়বারের মত নির্বাচিত হন ফিফা প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার এ।

২০০৪ এ আবারও ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেন দুই গোল। ক্রোয়েশিয়ার সাথে ড্র আর সুইজারল্যান্ডের সাথে ৩-১ গোলে জিতে পরের রাউন্ডে যায় ফ্রান্স! সেখানে গ্রিসের সাথে হেরে যায়, গ্রিস ঐ টুর্ণামেন্ট এ চ্যাম্পিয়ন হয়! (ক্যামনে কী!!)

ইউরো তে হারার পর জিদান জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।
ক্লাব পর্যায়ে তখন আরেক ফুটবল তারকা নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন সব আলো!
এর মধ্যে ২০০৬ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের খেলার সুযোগ পাওয়া নিয়ে টানাটানি। অবস্থা বেগতিক দেখে কোচ ডাক দিলেন জিজু কে।
অবসর ভেঙে দলে আসলো দলের প্রাণ!

কোন মতে প্রথম রাউন্ড পার করে ফ্রান্স। পরের রাউন্ডে স্পেনকে হারায় ফ্রান্স। জিদান নিজে এক গোল করেন, আরেকটি গোল অন্যকে দিয়ে করান।

কোয়ার্টার ফাইনালে নিজেই গোল করেন, পর্তুগালকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ফ্রান্স।

সেই ব্রাজিলের সাথে দেখা আবারও! জিদান আছেন, ফ্রান্সের আর ভয় কী!!গোল করালেন অঁরি কে দিয়ে।

ফাইনালে ফ্রান্স!

আবারও জিদানের জ্বলে উঠা! আবারও গোল!
প্রথম ৭ মিনিটের মধ্যেই ফ্রান্স এগিয়ে ১-০ গোলে। জিদানের অসাধারণ এক পেনাল্টি! এরকম পরিস্থিতে চিপ করে গোল করার সাহস কার হয়!!
ইতালির বেয়াদব ডিফেন্ডার মাতারাজ্জির উল্টাপাল্টা কথা শুনে শান্ত থাকতে পারলেন না। মাথা দিয়ে ঢুশ মেরে বসলেন। ফলাফল লাল কার্ড।

বিশ্বকাপের পাশ দিয়ে মাথা নিচু করেই ফিরে আসলেন।
জিদান বিহীন ফ্রান্স হেরে যায় ট্রাইবেকারে।
মহানায়কের হাতে উঠে আরেকবার ধন্য হতে পারলো না বিশ্বকাপ।

একটা রূপকথার যেন শেষ হলো।
ক্লাব, জাতীয় দলকে এমন সমান তালে টেনে নিয়ে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে কতজন ফুটবলার এর?

একটা নড়বড়ে জাতীয় দল নিয়ে এত বড় বড় মঞ্চে দাঁপিয়ে বেড়াতে পেরেছেন কতজন?
গতি ছিলো না তেমন, তাই বলে আটকে রাখতে পারেনি কেউ। অসাধারণ ড্রিবলিং, পাসিং, টেকনিক দিয়ে গোল করেছেন, করিয়েছেন, খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন। ছয় বছর ধরে ফিফা প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার এর প্রথম তিনজনের মধ্যে ছিলেন, এর মধ্যে প্রথম হয়েছেন ৩ বার। চ্যাম্পিয়নস লীগের গত ২০ বছরের ইতিহাসে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন। ই্উরো, বিশ্বকাপ, শীর্ষ দুই ইউরোপিয়ান লীগ, চ্যাম্পিয়নস লীগ জিতেছেন। ছোটখাটো কাপের কথা না হয় বাদই দিলাম!
সাথে জয় করেছেন কোটি মানুষের হৃদয়। জায়গা করে নিয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার এর তালিকায়!
ফুটবলের প্রতি তার ভালোবাসা অকৃত্রিম। তাই নিজে যেমন ফুটবলকে দিয়েছেন অসাধারণ কিছু মুহূর্ত তেমনি ফুটবলও তাঁকে দিয়েছে দুহাত ভরে!

অসাধারণ এই ফুটবলার এর জন্য রইলো শ্রদ্ধা।

ইয়াদ সম্পর্কে

সারাদিন আগডুম বাগডুম ভাবি! মন খারাপ থাকলে নিজেই নিজেকে কাতুকাতু দেই! মন ভালো থাকলে উলিয়া উলিয়া করি!
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

9 Responses to ফুটবলের এক মহানায়কের গল্প

  1. সামিরা বলেছেনঃ

    কী জিনিয়াস মানুষজন!
    খেলা বিষয়ক পোস্ট শেষ পর্যন্ত পড়তে পেরেছি যেহেতু আমি, তার মানে যথেষ্ট ইন্টারেস্টিং হয়েছে লেখা। 😀

  2. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    অসাধারণ এই ফুটবলার এর জন্য রইলো শ্রদ্ধা…… :clappinghands:

  3. মনে হচ্ছিলো এক সুপারম্যানের গল্প পড়ছিলাম! কী অসাধারণ একটা জীবনের গল্প! অসাধারণ একজন খেলোয়াড়!

  4. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    জিদান এর খেলা যারা দেখে নাই! ওরা যে কত্ত বড় একজন জাদুকর এর খেলা মিস করল জানলও না!

  5. রাইয়্যান বলেছেনঃ

    শেষদিকে টায়ার্ড হয়ে গেসি 🙁 আমি আসলে ফুটবল তেমন একটা বুঝি না 🙁 🙁 🙁

    নাহ, আমারে দিয়া হইব না 🙁

  6. অনাবিল বলেছেনঃ

    কেমন যেন স্বপ্নের গল্প!!

  7. বাবুনি সুপ্তি বলেছেনঃ

    তোমার c+ এর টিউটো কই? দাওনা কেন? 🙁 সব তো ভুলে খেয়ে ফেলছি এত দিনে :((

  8. জনৈক বলেছেনঃ

    জিদান… আ কমপ্লিট ফুটবলার! :huzur:

  9. সাদামাটা বলেছেনঃ

    বেশ ঘাঁটাঘাঁটি করে লেখা :clappinghands: পড়ে অনেক অনেক কিছু জানলাম…

    বিখ্যাত ‘ঢুশ কাহিনী’ দেখে সেবার আসলেই খারাপ লেগেছিল, বেচারা… 🙁

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।