এটা একটা হলেও হতে পারতো গল্প

এই কলমের নিবটা কাগজ ছোঁয়ার অনেক রকম মানে দাঁড়াতে পারে। এই মূহুর্তে একটা গল্প প্রাণ পাবে হয়তো। হয়তো না।

গল্পটা হতে পারে সমসাময়িক কোন ঘটনা নিয়ে। হতে পারে, আজকাল পেশাদার খুনীদের চাইতে কি সাধারণ মানুষই বেশি খুন করছে কিনা – তা নিয়ে গল্পকারের দুশ্চিন্তা নিয়ে।

অথবা গতানুগতিক কোন প্রেমের গল্প। কিংবা একটু আলাদাও হতে পারে। সেখানে বহুদিন-আগে-পড়া কোন ছুঁয়ে-যাওয়া গল্পের রেশ খুঁজে পাবো হয়তো আমরা। হয়তো সেটা ঝোড়ো আবেগে আপ্লুত বিবাহপূর্ব প্রেম না হয়ে অন্য কোন ভালবাসার গল্প শোনাবে। হয়তো সেখানে একটা হৃদয় আরেকটার সাথে স্বপ্নের সুতোয় অনেকখানি জড়াতে গিয়েও তাল হারিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে। আর কখনো জোড়া লাগবে না। কোনদিন।

আজকাল কীভাবে চুলের মত ‘মেয়েমানুষের’ ত্বকও রেশমি হতে শুরু করেছে সেটা নিয়ে গল্প শুনতে পারি আমরা কিছুক্ষণ। কিংবা নারী স্বাধীনতা নিয়ে বন্ধুদের সাথে তর্ক করে যে মেয়েটা বাসায় ফিরে ফেয়ারনেস ক্রীম বুলিয়ে নিল মুখে – তাকে নিয়ে গল্প।

হতে পারে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাওয়ার অবচেতন আশঙ্কার গল্প। সময় থাকতেই সবকিছু লিখে যাওয়ার তাড়না থাকতে পারে সেখানে।

অতি তুচ্ছ অপমানে যখন আজকে একজনের চোখ দিয়ে রাগে টপটপ করে পানি ঝরছিল, ঠিক তখনই গরু মোটাতাজাকরণের বড়ি খেয়ে তার স্বগোত্রীয়া আরেকজনকে যে ক্ষুণ্নিবৃত্তির আশ্চর্য উপায় করতে হল – সে গল্পও শুনতে ইচ্ছে করছে। আপনার করছে না?

গল্প অনেক হতে পারে। লাল-নীল-হলুদ-সবুজ। সাদা অথবা কালো – গায়ের রঙের মত। গল্পকারের মর্জিমত। অথবা আকাশের রঙের মত।

বিলাসী নারীবাদ নিয়ে কথা হতে পারে। নিও- আর আর্কিও-ফেমিনিজমের তত্ত্ব কপচে নেওয়া যেতে পারে এই সুযোগে। সেই সাথে নিজের অহমকে আরেক দফা খোরাক যোগানোর গল্প।

জাদু-বাস্তবতা? বেশ তো! ভাল গল্প হবে। সে গল্পের শেষে থাকতে পারে – শিল্প কেমন সময়ক্ষেপণ করে আর অনর্থক ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে মাথা ঘামায় – তা নিয়ে খানিকক্ষণ মাথা ঘামানো। ওয়াইল্ডের ‘All art is quite useless’ কথাটা মনে হবে হয়তো সে সময় আমাদের। আমার অথবা আপনার।

নিশাচর দুঃস্বপ্নের কথা আসতে পারে। ইদানিং স্বপ্ন দেখার মধ্যে কেমন একটা অলৌকিকতা এসে ভর করছে ধীরে ধীরে – শুনবেন নাকি? দিনের স্বপ্নগুলোও অদ্ভুত থেকে অদ্ভুতুরে হচ্ছে কেমন করে…

কল্পগল্প চলবে তো? গল্প বাদ দিয়ে কল্পগল্প কেমন ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার মতন শোনায় না? আমার কানে কিন্তু শোনায়! কল্পগল্পের বিষয়বস্তু বলবো না! আইডিয়া চুরি হয়ে যেতে পারে যে কোন সময়। আজকাল আমরা স্বত্ব নিয়ে দারুণ চিন্তিত – সে তো জানেনই।

অতি-আত্মবিশ্বাস কীভাবে কোন একদিন ভেঙে পড়ে – যখন নীতিবোধ আর আবেগ মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়, তা নিয়েও একটা গল্প হতে পারে। যে মানুষটা আমি নই, যে ঘটনা আমার সাথে কখনো ঘটে নি – সে মানুষটা আমি হলে আর সে ঘটনা আমার সাথে ঘটলে আমি যে এখনকার আমার মতই চিন্তা করতাম কিনা – ঘুণাক্ষরেও, ঘুণাক্ষরেও, ঘুণাক্ষরেও তা আমি কোনদিন জানতে পারবো না। কখনোই না। অতিমানব হলে আলাদা কথা। এসব থাকতো সেই গল্পে।

একটা সময় সামান্য একটা রঙধনুও যে আনন্দ এনে দিত, ইদানিং সমস্ত পৃথিবী আক্ষরিক অর্থে হাতের মুঠোয় পেলেও কেন যে সেই আনন্দ আর হবে না – তা নিয়ে গবেষণামূলক গল্প লেখা হতে পারতো আজ একটা। মনের ভেতর থেকে আগুনের ফুলকিগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে কোথায় যে মিলিয়ে যাচ্ছে – কিছু হয়তো খুঁজে আনা যেত তখন।

প্রকৃতির গল্প হতে পারতো। মানুষের গল্প হতে পারতো। স্মৃতির গল্প হতে পারতো।

সব না হয়ে কী হল? দায়সারা একটা হলেও হতে পারতো গল্প।

এর শুরু নেই, শেষ নেই। ভাবনার কোন সুতো নেই। যে সুতোটা ছিল তা থেকে পুঁতিগুলো খসে পড়েছে। এদিক-সেদিক। তা নিয়েও লেখা যায়!

গল্পটা হয়তো চলতি পথে গাড়ির চাকায় চাকায় ঘুরপাক খেয়ে, ঘামে-ভেজা হাজার হাজার শরীরের মাঝে ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে গিয়ে, চলন্ত ট্রেনের পাশের ধানক্ষেতে বাতাসের প্রচণ্ড গতির সাথে পাল্লা দিয়ে, কারো সুখী সুখী চোখের আবেশ গায়ে মাখিয়ে, অন্য কারো ঝিমিয়ে পড়া দংশনরত বিবেকের জানালায় উঁকি দিয়ে, সেদিনের বৃষ্টির ফোঁটার সাথে কার্নিশের ওপর দিয়ে গড়িয়ে পড়ে, ছাদের কোনার দিকে যেই ফুলটা ফুটে আছে সেটার পরাগ খানিকটা মুছে নিয়ে – এই তাপে দগ্ধ পাপে ক্লিষ্ট শহরটার ওপর অভিমান করে ঐ ছোট্ট নিষ্পাপ বাচ্চার ঘুড্ডিটার তালে তালে গোত্তা খেয়ে আকাশের ওপারে মিলিয়ে গেছে। আর ফিরবে না।

ওহ্‌। আর সেই যে একটা কলমের নিব কাগজে নিজেকে বুলিয়ে নিয়েছিল আলতো করে, সেও এতক্ষণে নিরস্ত হয়েছে। চুপচাপ ব্যাগে ঢুকে পরদিন ক্লাসের লেকচার তোলার প্রস্তুতি হিসেবে জিরিয়ে নিচ্ছে একটু।

গল্প লিখে কী হবে জীবনে? কিচ্ছু হবে না!

সামিরা সম্পর্কে

পীচ-গলা তরলে আটকে পা, দুঃস্বপ্ন অন্ধ দুই চোখে/ অসতর্ক হৃদয় পোষ মানে মিথ্যে বলার আফসোসে.../// প্রকাশিত লেখার কপিরাইট সংশ্লিষ্ট লেখক সংরক্ষণ করেন এবং লেখকের অনুমতি ছাড়া লেখা আংশিক বা পূর্ণভাবে কোন মিডিয়ায় পুন:প্রকাশ করা যাবে না।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে গল্প, হাবিজাবি-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

23 Responses to এটা একটা হলেও হতে পারতো গল্প

  1. বাবুনি সুপ্তি বলেছেনঃ

    গল্প কিন্তু নিজের মনের কথাই।

    অনেক গল্পই মনে মনে লিখি কিন্তু খাতায় লেখা হয়না বলে হারিয়ে যায়।

  2. অনাবিল বলেছেনঃ

    এলোমেলো করে দেয়া একটা লেখা, পড়ে কেমন যেন আনমনা হয়ে গেলাম………

    এতোটা নাড়িয়ে দাও কেন???

  3. বোকা মানুষ বলেছেনঃ

    চুলের মত মেয়েগুলোর ত্বক রেশমি—-
    বাস্তব কে ভালোই খোঁচা মারলেন!!!!

  4. জনৈক বলেছেনঃ

    সরসরে একটা লেখা…

  5. সরল বলেছেনঃ

    “যে মানুষটা আমি নই, যে ঘটনা আমার সাথে কখনো ঘটে নি – সে মানুষটা আমি হলে আর সে ঘটনা আমার সাথে ঘটলে আমি যে এখনকার আমার মতই চিন্তা করতাম কিনা – ঘুণাক্ষরেও, ঘুণাক্ষরেও, ঘুণাক্ষরেও তা আমি কোনদিন জানতে পারবো না। কখনোই না। “………. !!!…দারুণ ঠিক বলসিস তো !!… 🙂

  6. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    কেমন যেন! অনেক কিছু ভাবায়, অনেক কিছু দেখায়, অনেক অনুভূতিকে নাড়া দিয়ে যায়, তবু দিনশেষে বলার কিছু থাকে না……

  7. ইঁদুর বলেছেনঃ

    দারুন একটা স্রোত আছে যেন লেখাটার মাঝে এক টানে পড়ে ফেলা যায়। ভালো লাগল।

  8. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    দারুণ লেগেছে। শুরুর প্যারাটা শুরু করার পর আগ্রহ জাগে নি আসলে। তারপর আরেকটু এগুতেই তড়তড় করে এগুলাম।

  9. Annonymous বলেছেনঃ

    buddhidipto lekha.

    apni ki samira hossain from kathal bagan? chobi ta chena chena lagche.

  10. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    আমি তোর এই লেখাটা আগে পড়ি নাই কেন? :thinking: 🙁

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।