মাসখানেক আগে সরবের জন্যে HSC-12 ব্যাচের কচিকাঁচাদের জন্যে লিখতে চাইলাম কিছু একটা। কী লেখা যায় ?! শেষ পর্যন্ত ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা প্রসঙ্গেই লিখতে বসলাম। একটা সিনিয়র সিনিয়র ভাব নিয়ে বিনামূল্যে জ্ঞান দেওয়ার সুযোগ ছাড়তে চায় কে ?? :happy:
আর লেখার জন্যে কলম হাতে নিতেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লাম। মনে পড়ে গেল জীবনের সেই কঠিন দিনগুলোর কথা; HSC পরীক্ষার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন, চিন্তা আর প্রত্যাশা নিয়ে কাটানো প্রতিটি দিন! আর এ সময়টাতে যে প্রত্যেকের মানসিক অবস্থা কেমন থাকতে পারে তা নিজের কিংবা বন্ধুদের অভিজ্ঞতা থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠে।
বিস্তারিত আলোচনা করলে শত প্রকার সমস্যা, প্রতিবন্ধকতা, সমাধানের পথ তুলে ধরা সম্ভব। কিন্তু এই লেখাতে প্রধান কিছু বিষয়েই কথা বলতে চাইছি। কেননা এই মুহূর্তে এই কথাগুলোই আমার মতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর এক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করারও প্রাণান্তকর চেষ্টা করলাম…।
লক্ষ্য নির্ধারণঃ
অবধারিতভাবে নিজের লক্ষ্যটা নির্ধারণ করে নাও। নিজেকে বারবার প্রশ্ন কর যে তুমি কী হতে চাও। নিজের সক্ষমতা আর ইচ্ছার দিকটা নিজেকেই বুঝে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, ভবিষ্যতটা তোমার নিজের!
এক্ষেত্রে যে সমস্যাটা অনেককেই সামলাতে হয়, তা হল অভিভাবকদের মতামতের সাথে সংঘর্ষ। হয়ত তুমি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়তে চাও, আর তোমার বাবা-মা চায় তুমি ডাক্তারি পড়। এই ধরণের সমস্যা আসলেই প্রকট আকার ধারণ করে এই সময়ে। 😳
এজন্যে তোমার করণীয় কী ?? তোমার উচিত অবশ্যই তোমার অভিভাবককে তোমার ইচ্ছার কথা যুক্তি সহকারে বুঝানো। তুমি কোন দিকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে তা বুঝিয়ে বললে তারা অবশ্যই বুঝবেন। কারণ তারা তোমার ভালো চান। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে বাবা-মা বুঝতেই চান না। তারা নিজেদের মতামতকে চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করেন, যা সন্তানের জন্যে ভালো কিছু আনতে পারে না। তাই অভিভাবকদের করণীয় অবশ্যই সন্তানের ভালোর দিকেই হওয়া উচিত।
মানসিক প্রস্তুতিঃ
তোমার লক্ষ্যের দিকে ধাবিত হতে হলে অবশ্যই মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। অনেকটা যুদ্ধের পূর্বপ্রস্তুতির মতই! কেননা এখন আমরা ভর্তি পরীক্ষা শব্দের পরিবর্তে ‘ভর্তিযুদ্ধ’ শব্দটা ব্যবহার করছি, যা আক্ষরিক অর্থেই সত্যি! তুমি যদি মানসিকভাবে আগে থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করতে পারো, নিজের প্রতি বিশ্বাসটা বাড়িয়ে নিতে পারো তাহলেই তোমার সামনের পথচলাটুকু অনেকটাই মসৃণ হয়ে উঠতে পারে!
দিক নির্দেশনাঃ
আমাদের চারপাশে জ্ঞান বিতরণের মানুষের অভাব নেই। সবাই সুযোগ পাওয়ামাত্রই বিনামূল্যে জ্ঞানপ্রদান করতে চায় (আমি নিজেও এখন সম্ভবত তাই করছি!)। কিন্তু কার কথা শোনা উচিত বা কার কথা উচিত না – এই দোটানায় পড়তে হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এই প্রসঙ্গে আমার অভিমত – নিজের বিচার বুদ্ধি দিয়ে সবার কথা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নাও। এক্ষেত্রে তোমার পরিচিত অগ্রজ কিংবা শিক্ষকদের অভিমতকে গুরুত্ব দাও। আসল কথা হল – গাইডলাইন পাওয়ার পর তোমার কাজ তোমাকেই করতে হবে।
হীনম্মন্যতা প্রসঙ্গঃ
তোমাদের অনেকেই কলেজে থাকতে ভালো ফলাফল করতে সক্ষম হওনি। ফলে এইচএসসি পরীক্ষা বা এর পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতির সময় হীনম্মন্যতা সৃষ্টি করে। বিশেষত দেশের শীর্ষস্থানীয় কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এটা বেশি দেখা যায়। এই হীনম্মন্যতা থেকেই আত্মবিশ্বাসে চির ধরে যায়, যা কোনক্রমেই কাম্য নয়। মনে রাখা উচিত যে, কলেজের ফলাফল মুখ্য নয়। তুমি কী শিখতে পেরেছ সেটাই মুখ্য।
এজন্যে তোমাকে আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে, আর মনোযোগী হয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
কোচিং সেন্টারের ভূমিকাঃ
এই ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা থাকা আবশ্যক। আমার জুনিয়র অনেক ভাই-বোন অনেক আগে থেকেই এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেছে আমাকে কিংবা আমার অনেক বন্ধুকে। তাই এই বিষয়ে সরাসরি কথা বলাটাই উচিত।
অনেকের কাছে শুনতে খারাপ লাগলেও এতাই সত্যি যে, প্রায় সব কোচিং সেন্টারই বাণিজ্যিক মনোভাবের। ভর্তি পরীক্ষার আগে-পরে তাদের প্রসপেক্টাস আর ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের সাথে সবাই কম বেশি পরিচিত। আর ক্লাসের ধরণ দেখেও তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার বুঝা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে। আর কোচিং সেন্টারের মূল ভূমিকা কিন্তু চান্স পাইয়ে দেওয়া নয়, বরং গাইডলাইন দেওয়া।
তাহলে কোচিং সেন্টার কী ধরণের ভূমিকা রাখছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নেতিবাচিক ভূমিকাই বলা চলে। শুধু ব্যবসায়িক দিকের কারণেই না, তাদের কার্যক্রমের কারণেই এটা বলা যায়। কোচিং সেন্টারগুলো শিক্ষার্থীদের অতি-নিরাশ বা অতি-আত্মবিশ্বাসী করে ফেলে, যা শিক্ষার্থীর জন্যে কোনমতেই ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না। কোচিং সেন্টার কর্তৃপক্ষ যখন দেখে তাদের কয়েকজন ছাত্রছাত্রী ভালো করছে, তখন তাদের দিকে বেশি ফোকাস করে ফেলে। ফলে বাকিদের প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির সৃষ্টি হয়। 😳
আর তথাকথিত স্পেশাল ব্যাচ তৈরি করে কতটুকু লাভ হয় তাও প্রশ্নবিদ্ধ। তবু বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোচিং সেন্টারগুলো অনেক প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে। অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের মাঝে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছে যে, কোচিং সেন্টার ছাড়া চান্স পাওয়া অসম্ভব! কিন্তু এই কথাটি সম্পূর্ণ ভুল। আবারও বলছি যে, কোচিং সেন্টার কেবল গাইডলাইন ছাড়া আর কিছুই না। তোমার কাজ তোমার নিজেরই করতে হবে! তাই কোচিং সেন্টারকে তীর্থস্থান মনে করার দরকার নেই। আর তাদের কথাকেই বেদবাক্য মানারও যৌক্তিকতা দেখি না।
আর কোচিং সেন্টারে ভর্তি হতে চাইলে বড় ভাই-বোনদের পরামর্শ নাও যারা আগে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করেছে। তাদের কাছে শুনে নাও – কোথায় গেলে ভালো গাইডলাইন এবং ‘সার্ভিস’ পাওয়া যাবে।
নিয়মিত পড়াঃ
পড়াশুনার ক্ষেত্রে নিয়মিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। তোমরা সবাই প্রস্তুতির জন্যে ৪ মাসের মত সময় পাচ্ছ সম্ভবত। এই সময়ের মধ্যে যদি কোন পড়া ফেলে রেখে দাও, তাহলে তা পরবর্তীতে পড়ার সময় পাবে – এর নিশ্চয়তা নেই। কারণ এই সময়ের মধ্যে তোমাকে প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন বিষয়ের সাথে পরিচিত হতে হবে। আর কোনকারণে ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হলে অনেক বিপদে পড়তে হবে। তাই বাস্তবতা মেনে নিয়ে এই সময়ে নিয়মিত পড়াশুনা করবে।
লেকচার শিট সম্পর্কেঃ
অনেকের মনেই এই প্রশ্ন আসে যে, কোচিং প্রদত্ত বিশাল লেকচার শিটগুলো পড়বে কীভাবে? এই ব্যাপারে আমার অভিমত হল, লেকচার শিট এতো বেশি পড়ার দরকার নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কঠিন এবং অপ্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু দিয়ে শিটগুলোর স্বাস্থ্য বাড়ানো হয়, যা কাজে আসে না। যে বিষয়বস্তুগুলো দরকারি সেইগুলোই ভালোভাবে পড়ে নাও।
আর অনেক সময়ই শিটের ‘exercise’ অংশে খুব কঠিন সমস্যা দিয়ে রাখা হয়। সেগুলো দেখে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছুই নেই। না পারলেও সমস্যা নেই, আর বেশি সাহস দেখিয়ে এগুলো অনেক অনুশীলন করাটাও অন্তত আমি সমর্থন করি না। :nono:
বইয়ের ভূমিকাঃ
এক কথায় – “অপরিহার্য”! ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন যত কঠিনই হোক না কেন, পাঠ্য বইয়ের বাইরে থেকে আসার সম্ভাবনা অনেক কম। বিশেষত মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিচ্ছুদের জন্য বই হৃদয়ে ধারন করা ফরজ! কারণটাও কারও অজানা নয়!
আর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বইয়েয় উপর পূর্ণ দখল থাকলে তোমার ভালো না করার কোন কারণ নেই।
এক্ষেত্রে আরেকটি কথা! এইচএসসি পরীক্ষার আগে যে বই Follow করেছ সেই বই পড়াই বেশি কাজে দিবে। কিছু বিশেষ সমস্যা বা প্রশ্নের জন্য অন্য বই দেখতে পারো। কিন্তু মূল রেফারেন্স যেন আগে পড়া বইই হয়! নইলে নতুন বইয়ের সাথে পরিচিত হতেই অনেক সময় ব্যয় হয়ে যাবে।
বিগত বছরের প্রশ্নঃ
যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিবে তার বিগত ৭-৮ বছরের প্রশ্নগুলো অনেক কাজে দেয়। সরাসরি ওই প্রশ্ন আসতেই পারে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রশ্নের ‘প্যাটার্ন’ বুঝা। প্রশ্নের প্যাটার্ন ঠিকভাবে বুঝতে পারলে প্রস্তুতি নেওয়ার পথটা তুলনামূলক সহজ হয়ে যায়। তাই আগে থেকেই আগের বছরের প্রশ্ন নিয়ে নিজে নিজেই Analysis করে ফেলতে পারো।
Daily-weekly Exam:
কোচিং সেন্টারে ভর্তি হলে তুমি যে কাজটি অবশ্যই করবে তা হল – প্রতিদিনের এবং সাপ্তাহিক পরীক্ষাগুলো নিয়মিত দিবে। এগুলো ভালোই কাজে দিবে; অন্তত অনুশীলনের জন্যে। তবে পরীক্ষাগুলোতে খারাপ করলে ভেঙ্গে পড়ার কিছুই নেই। পরীক্ষাগুলো নিয়মিত continue কর। আবার একই ভাবে ভালো করলেও অধিক আত্মবিশ্বাসী হওয়া উচিত নয়। ধারাবাহিকভাবে উন্নতির চেষ্টা করে যাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো।
আর যদি কোচিং সেন্টারে ভর্তি না হও, তাহলে নিজে নিজে বিগত বছরের প্রশ্নতে পরীক্ষা দিতে পারো।
চিন্তামুক্ত থাকাঃ
এই সময়ে চিন্তামুক্ত থাকাটা সবচেয়ে জরুরি। হতাশা থেকে কিংবা প্রত্যাশার চাপে অযথা চিন্তা করা নিজের ক্ষতিরই কারণ হবে। সব ধরণের চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে নিজের লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টি রাখো।
Routine অনুসরণ করাঃ
একটা নির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী চলার চেষ্টা কর। তাহলে নিজের পড়াগুলো ঠিকমত গুছিয়ে রাখতে পারবে। আর রুটিনের মাঝে চললে সব ধরণের নেতিবাচকতা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হয়। পরীক্ষার আগে তাই রুটিন করে চলাটা গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক বেশি না পড়াঃ
এই কথাটা অনেকেই বুঝতে চায় না। তাদের ধারণা – বেশি পড়লেই ভালো করা সম্ভব। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা ফলপ্রসূ হয় না। বেশি বেশি না পড়ে নিয়মিতভাবে যথাযথ পড়াটাই পড়। পারলে একই পড়া একাধিকবার পরে ফেল, কাজে আসবে। আর এক্ষেত্রে আগের ২ টা পয়েন্ট মনে রাখতে পারো।
বন্ধুদের সাথে সুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়াঃ
তোমার যারা বন্ধু, তারাই কিন্তু ভর্তিযুদ্ধে তোমার প্রতিদ্বন্দ্বী! কিন্তু তাই বলে তাদের সাথে বৈরী মনোভাব প্রকাশ করার দরকার নেই। তুমি যদি ভালো করতে পারো, তাহলে তোমার বন্ধু নিশ্চয়ই তোমার চান্স পাওয়া ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না!
তাই তোমার উচিত বন্ধুর সাথেই ‘সুস্থ’ প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া। বন্ধুর সাথে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে তুমি অবশ্যই উপকৃত হতে পারবে।
তবে এক্ষেত্রে একটা কথা মনে রাখা উচিত যে, “বন্ধু পারে কিন্তু আমি পারি না” কিংবা “আমি পারি কিন্তু বন্ধু পারে না” – এই ধরণের মানসিকতা কখনোই ভালো কিছু আনবে না।
এই সময়েই তোমার বন্ধুকে তোমার এবং তার ভালোর জন্যে উৎসাহিত করতে পারো। 🙂
ফরম Fill up:
তোমার পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন ভার্সিটির ফরম পূরণ করবে। তুমি যে ভার্সিটিকে লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারিত করেছিলে, তার পাশাপাশি আরও কয়েকটা ভার্সিটির ফরম পূরণ করতে পারো। এক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ‘ঝুঁকি’ না নেওয়াই ভালো (নিজেকে যদি মহামানব মনে না কর!)। 8)
আর ফরম পূরণের সময় সতর্কতা জরুরি। ভুল করে ফেললে যদি তা ঠিক করার অপশন না থাকে, তাহলে কিন্তু তুমি নিজ হাতে তোমার ভবিষ্যতকে মাটিচাপা দিচ্ছ! তাই নিয়মাবলী ঠিকভাবে দেখে তারপর সব পূরণ করবে।
প্রশ্ন ফাঁস গুজবঃ
বিভিন্ন ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন ফাঁসের গুজব শোনা যায়। সত্যি নাকি মিথ্যা সেটা যেহেতু সব সময় নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না, তাই সবচেয়ে ভালো হবে যদি সব গুজব থেকে দূরে থাকা যায়। প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কিনা তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে – তুমি পরীক্ষার জন্য যথাযথভাবে প্রস্তুত কিনা!
পরীক্ষার সময় নিয়ে সচেতন থাকাঃ
পরীক্ষার Admit Card সংগ্রহ করার পর সবার আগেই পরীক্ষার সময়টা দেখে নিবে। পারলে যে যে ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিবে, তার সবগুলোর সময়সূচির লিস্ট ডায়েরিতে লিখে রাখতে পারো একসাথে। আর কোথায় সিট পড়েছে সেটাও ঠিকভাবে দেখে রাখবে।
অবশ্যই সময় অনুযায়ীই পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাবে!
পরীক্ষার হলেঃ
মূল কথা – প্রত্যাশার চাপ দূরে সরিয়ে রাখো। স্বাভাবিকভাবেই আর সব সাধারণ পরীক্ষার মতই পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। মানসিক চাপকে সম্পূর্ণ উড়িয়ে দাও। কেননা যখনই তুমি নিজের উপর চাপ নিবে তখনই তুমি বাকিসব পরীক্ষার্থীদের চেয়ে কয়েক ধাপ পিছিয়ে গেলে!
আর পরীক্ষার হলে নিয়মাবলী দেখে তারপর OMR শিট কিংবা লিখিত পরীক্ষার খাতা ঠিকভাবে পূরণ করবে। রোল নাম্বার থেকে শুরু করে একেবারে শেষ উত্তরটি দেওয়া পর্যন্ত Alert থাকবে। [ রোল নাম্বার, রেজিস্ট্রেশন নাম্বার, সেট কোড নিয়ে বেশি সচেতন থাকবে ]
অনুমাননির্ভর উত্তর দিবে না। বিশেষত নেগেটিভ মার্কিং থাকলে সরাসরি এইভাবে উত্তর দেওয়া বর্জন করবে। নাহলে প্রত্যাশামত ভালো করতে পারবে না। কোন জানা প্রশ্নের উত্তর দিতে ভুল হলে অনেক সময়েই হতাশা চলে আসে। তখনই যদি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড় তাহলেই সর্বনাশ হয়ে যাবে। অর্থাৎ সব ধরণের পরিস্থিতেই পরীক্ষার হলে স্বাভাবিক থাকবে।
পরীক্ষার পরঃ
পরীক্ষার পরেই দেখা যায় অনেকেই আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে থাকে, আবার অনেকেই সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ে। আবার কত পেলে চান্স পাওয়া যাবে তা নিয়েও Prediction শুরু হয়ে যায়। এগুলোর কোনটাই করা উচিত না। তোমার পরীক্ষা ভালো হয়ে থাকলে অবশ্যই খুশি থাকবে। কিন্তু বেশি আনন্দিত হয়ে পরবর্তী পরীক্ষার কথা ভুলে যাওয়া উচিত হবে না। :nono:
পরীক্ষার পর অনেকেই (যারা একটু পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী) চিন্তায় অস্থির হয়ে যায়। কিন্তু চিন্তায় বেশি মগ্ন হয়ে গেলে কিছুদিন পরে অন্য ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি ঠিকভাবে নিতে পারবে না।
তাই সবার উচিত পরীক্ষার পর রেজাল্ট নিয়ে চিন্তামুক্ত থাকা, পরবর্তীতে আর কোন পরীক্ষা থাকলে প্রস্তুতি নেওয়া। আর কোন এক্সাম না থাকলে বন্ধুদের সাথে সময় কাটাও! সব চিন্তাকেই এক ফুঁৎকারে উড়িয়ে দাও না কেন ? কেন শুধু শুধু চিন্তা করে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকবে ?
রেজাল্টের পরেঃ
ভালো জায়গায় ভালোভাবে চান্স পেলে অবশ্যই ভালো! কয়েক জায়গায় যখন চান্স হবে তখন তোমার পছন্দ অনুযায়ী বিষয়ে ভর্তি হও। দরকার হলে অভিভাবক-অগ্রজদের কাছ থেকে পরামর্শ নাও।
আর দুর্ঘটনাবশত চান্স না পেলে কী করবে সেই প্রসঙ্গে কিছুই বলতে চাচ্ছি না। কারণ সবাই ভালোভাবে চান্স পাবে সেটাই আমাদের কাম্য!
কথা তো অনেক বলে ফেললাম! এই অধমের কথা কার কতটুকু কাজে আসবে জানি না। তবে আশা করি অনেকেই সামান্য হলেও উপকৃত হতে পারবে। আমরা অনেকেই হয়ত তোমাদের উদ্দেশ্যে বিনামূল্যে উপদেশ বা নির্দেশনা দিচ্ছি। আমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলছি কথাগুলো। হয়তো কোন বিষয় তোমাদের কাছে সাংঘর্ষিক মনে হতে পারে। কিন্তু মূল কথা কিন্তু একই! তোমাদের যেকোন প্রশ্ন থাকলে বা পরামর্শ দরকার হলে সাথে সাথে আমাদের সাথেই যোগাযোগ করতে পারো। 😀
আমরা চাই আমাদের অনুজরা আমাদের ছাড়িয়ে যাক সাফল্যের দিক দিয়ে। সবার স্বপ্ন হবে আরও সুন্দর, আরও বিশাল। আর সেই পথটা তৈরি করে দেওয়াটাও কিন্তু আমাদেরই দায়িত্ব। আশা করি আমরা আমাদের এই আপাত-ক্ষুদ্র দায়িত্বটুকু নিষ্ঠার সাথে পালন করার চেষ্টা করব।
তোমাদের সাথে আমাদের সবার যেন দেখা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রঙ্গিন দিনের মাঝে! সবার জন্যেই শুভকামনা থাকল। 😀
Md. Mydul Islam (Mahi)
Dept of ME, BUET-11
আশাবাদী চিন্তা চেতনাই সাফল্য আনে B-) 8)
আশাবাদ, আত্মবিশ্বাস আর প্রচেষ্টার সম্মিলনই সাফল্য আনে … 🙂
অনেকগুলো বিষয় কাভার করেছো। আমাদের অনুজদের কাজে লাগুক।
ইনশা-আল্লাহ 🙂
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিংয়ের বিরোধীতা করে থাকি। তবে, অনেকগুলো পয়েন্ট এসেছে, যেগুলো আসলে কোচিং থেকে ভাল দিকটা তুলে নিতে সাহায্য করবে। ভাল লেগেছে।
লেখা আগেরগুলোর মতো গোছালো হইতে পারতো।( বয়স কম পাইয়া একটু বড়ামি ঝাড়লাম 😛 )
সবই আপেক্ষিক !
আর সবই ভেরিএবল … 😛