সাধারণত আমি মন খারাপ না থাকলে লিখিনা।আসলে লেখা বের হয় না।শেষ মন খারাপ হয়েছিল দেরী হচ্ছে।তাই লিখতে পারছিনা কিছু।এখনও খুব সুখে আছি।আসলে অন্যরা এতো ভালো লিখছে যে মনে হয় সবার মন খারাপ ভীষণ ইদানীং।সবাইকে সুখে থাকার গোপন রহস্যটাই খোলা বাজারে বেপর্দা করছি।এতে সুখ মহাশয় লজ্জা পেলে আমার কিছুই করার নেই।অনেক বক ধার্মিক আবার হৈচৈ ফেলে দিতে পারেন এতে সুখের পাপ হতে পারে।তাই শুরুতেই ধরে নেই সুখ একটি ধর্মহীন!!!তবেই বেপর্দা করার লাইসেন্স পেলাম।
এবার বলতে পারেন আমি কিভাবে সুখে থাকার রহস্য উদঘাটন করবো?সবার সন্দেহ জাগতে পারে বা প্রশ্ন উঠতে পারে আমি নিজে সুখে আছি নাকি?আরে মন্ত্রীবাবুরা যদি নোবেল না পেয়েই জানতে পারেন কিভাবে নোবেল পেতে হয় তবে আমি সুখে না থেকে কিভাবে সুখে থাকতে হয় জানাটা কি অসম্ভব?মোটেও না।তবে আসল কথা হলো আমি সত্যিই সুখে আছি এবং নিজের অভিজ্ঞতার আলোকেই বলতে যাচ্ছি।
সুখ শান্তি এসব আমাদের দেশ থেকে প্রস্থান করেছে বহুকাল পূর্বে।অতীত নিয়ে নাকি ঘাটতে নেই তাই যেসব সুখ দেশের মাটিতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিল তাদের চিন্তা বাদ দিয়ে বিদেশ থেকে আমদানী করা যায়।আমরা সারাদিনই সুখ খুঁজে মরি,এটা জানার জন্যে চক্ষুদ্বয় বেশি মেলিবার প্রয়োজন বোধ হয় না।সবার বিরহ মাখা কবিতা গল্প পড়েই বোঝা যায়।সবসময় সুখে থাকার প্রথম পদক্ষেপ সব কিছুকেই সুখের আধার ভাবা।
পাশের বাড়ির সুন্দরী মেয়েটির স্পর্শ পাইনিতো কি হয়েছে?সে বারান্দায় এসে খোলাচুলে দাড়ালে সেখানেও আমি সুখ খুঁজে পাই।আবার যখন সে মেয়ের বয়ফ্রেন্ড আছে জেনে যায় তখন ব্যাথার চেয়ে বেশি সুখ পাই।বয়ফ্রেন্ড হয়েও ছেলেটা তাকে দেখে সপ্তাহে ২দিন।আর আমি?তাকে সকালে দেখি,সন্ধ্যায় দেখি।কারণে দেখি অকারণে দেখি।এটাই কি আমার সুখ না?
মাস শেষে যখন পকেটে ভাটা পড়ে আর পাশের বাড়ির আন্টিটা চুলোয় বিরানী বসায় আমি দুঃখ পাইনা।অলিতে গলিতে ঘুরে স্বস্তা হোটেলের খাবারগুলো খেয়ে পেটভর্তি করি তারপর টয়লেটে ঢুকে ধরাম করে দরজা লাগায়।ঘন্টা খানেক পর বের হয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাসে বলি, “ভোগে নয়,ত্যাগেই প্রকৃত সুখ” বলুন আমি সুখী হবোনা কেন?
বাসে বসে গরমে ফার্মগেট যাচ্ছেন।অতিষ্ট খুব?একটু আপনার পাশের বাসে তাকিয়ে দেখুন তারা কোন একটা মুরগীর খামারের মুরগীর মত একজনের পিঠে আরেকজন দাঁড়িয়ে যাচ্ছে?কোনটা ভালো লাগবে?
বাসা থেকে জোর করে আপনার ছোট চুল ছোট করে দিল।আপনার এখন খারাপ লাগব?আপনার টাকু আঙ্কেলটার মাথাটা একটু দেখুনতো।নাকি উনার মত হলে বেশি খারাপ লাগবে?
একবার এক কবিতা লিখেছিলাম……
“পথহারা পথিক পশ্চাৎগামী,
পদ্মের পত্রোল্লাস
পরিশীলিত পরিক্লান্তি,পরিচ্যুতির পরিহাস।
পরিবৃত্তি পরাভূতে
পরদ্বেষিণী পরপুষ্ট পরবাসে।
পরিমুক্তির পরিকল্পিত পরিব্যক্ত,
পরিশিষ্টের পরিভুক্ত
পুনর্মিলনে পুষ্পপ্রাপ্তির পরিকীর্তিত প্রয়াস,
পারিপার্শ্বিকতার প্রেক্ষিতে পরিষ্ফুটিত পলাশ……
যার অর্থটা এরকম অনেকটা্……মানুষ একজায়গায় কষ্ট পেতে থাকলে অন্যপথে চলে যায়।ভুল জায়গায় গিয়ে সুখ খোঁজে।যখন সে ভুল বুঝতে পারে তখন আগের জায়গায় ফিরে আসে এবং আগের জায়গায় যেসব কষ্ট পেতো সেগুলোকেও সুখ মনে হতে থাকে।
আসলে আগের জায়গার কষ্টগুলো কি পালটে গিয়েছিল?না আগের জায়গার অবস্থার পরিবর্তন হয়েছিল?আগের জায়গার বিন্দুমাত্র পরিবর্ত হয়নি।পরিবর্তন হয়েছে আপনার অভিজ্ঞতার।সেই অভিজ্ঞতার সুবাদে আপনি নিজেকে সুখী মনে করছেন।আমরা কোন কিছুর শেষ খারাপটা দেখার আগ পর্যন্ত বুঝতে পারিনা আমরা কি ভালো ছিলাম।
আমার এই ক্ষুদ্র পরিসরের জীবনে এতো বিচিত্র রকমের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে যে কোনকিছুই এখন সহজে আমার মন খারাপ করতে পারে না।কারণ আমি জানি আরও খারাপ বলেও একটা জিনিস থাকে।
সুখে থাকা আপেক্ষিক ব্যাপারতো বটেই সাথে আপনার মনের উপর আপনার নিয়ন্ত্রনের উপর নির্ভর করে।আপনি অনেক কষ্টে থাকলেও কিন্তু ভালো থাকা যায়।আপনি ধরেই নিন আপনি অনেক ভালো আছেন,২/১টা নিষ্পাপ হাসি দিন দেখবেন অর্ধেক খারাপ লাগা দূর হয়েছে।
অতীতের কোন বিষয় নিয়ে যদি কষ্ট পেতে থাকেন বা অতীতের কিছু যদি আপনাকে বেশি নারা দেয় তাহলে তা সুন্দর করে একটা পরিষ্কার সাদা কাগজে লিখে ফেলুন।কারও উপর ক্রোধ থাকলে তাকে গালমন্দ দিয়ে লিখে ফেলুন।এবার কাগজটা ভাঁজ করুন।সাবধান ২য় বার পড়তে যাবেন না।এবার ভাঁজ করা কাগজটা পুড়িয়ে ফেলুন।ছাই হওয়া অংশটুকু কমোডে ফেলে ফ্লাশ করে দিন সাথে গোসল দিন একটা।কথা দিচ্ছি আপনার সেইসব চিন্তা খারাপ লাগা ততক্ষনে ঝেঁটিয়ে বিদায় হয়েছে দেখবেন।একই পদ্ধতি রিপোর্ট কার্ড,CTএর খাতা সবকিছুর উপরই প্রয়োগ করতে পারেন।
পরীক্ষা খারাপ হয়েছে?বন্ধুদের প্রশ্নবাণের সম্মুখীন?একটা বিষয় নিশ্চিত থাকতে পারেন আপনি তাদের যতই বোঝান আপনার পরীক্ষা খারাপ হয়েছে তারা কখনই বিশ্বাস করবেনা উলটো আপনাকে বলবে আপনি মিথ্যা বলছেন,বিরক্তও করবে।তার উপর আপনার মন খারাপ।এই মন খারাপ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
জ্বালিয়ে দিন আপনার বন্ধুদের অকটেন,পেট্রোল যা আছে তা দিয়ে। :fire: :fire: পেট্রোলের দাম বেশি হলে কেরোসিন দিয়ে জ্বলাতে পারেন।কিভাবে?সোজা বলবেন, “দোস্ত জানিস?সব ঠিকঠাকভাবে লিখতে পেরেছি তবে একটা এক নাম্বারের প্রশ্ন বানিয়ে লিখেছি।ঐটাতে ১দিবেতো?নাকি কাটবে কিছু?নাহয় পরীক্ষাটা ফাটাফাটি হয়েছিল।আপনার বন্ধুর পোড়া মুখ দেখে আপনি যে পৈশাচিক আনন্দ পাবেন তা আপনার পরীক্ষা খারাপ হওয়ার কষ্টকে ছাপিয়ে যাবে অনেকসময় পরীক্ষা ভাল হলেও আপনি এমন নির্মল বিনোদন পেতেন না!!
মন খারাপকে এভাবেই ক্রমাগত পদপিষ্ট করে দূরে রাখতে হবে।
আরেকটু দেখুন……
প্রেমিক বা প্রেমিকা যদি মেসেজ পাঠায় “ব্রেক-আপ,তোমার সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই” আপনি এটাতে কষ্ট পাবেন নাকি যদি আরেকটা মেসেজ পাঠিয়ে বলে “স্যরি,ঐটা তোমাকে পাঠায় নি” এটাতে বেশি খারাপ লাগবে?(মানে আপনি জানলেন যে ও আরও অনেকের সাথে……)
একটা আপেল খেতে গিয়ে যদি দেখেন আপেলের ভেতর পোকা।আপনি ঐটাতেই ইয়াক বলে বমি শুরু করবেন নাকি যদি দেখেন পোকাটা অর্ধেক কাটা তখন্ বমি করবেন?(পোকার বাকি অর্ধেকটা যে আপনার পেটে বুঝতেই পারছেন)
পৃথিবী এমন এক প্রকারের নরক যেখানে আপনি ১০০% সুখ কখনই গেইন করতে পারবেন না।আপেক্ষিকতার কল্যানেই আপনার সন্তুষ্ট থাকতে হবে।তাই সবকিছু আশাও করা উচিত কম কম।মানে এক্সপেকটেশানটা কম রাখতে পারাই হলো সুখে থাকার মূল রহস্য।নিজের কাছেই হোক বা নিজের আপনজনের কাছেই হোক।অনেক বড় লক্ষ্য রেখে কাজ করবেন কিন্তু ফলাফলের পূর্বে প্রত্যাশাটাকে সীমাবদ্ধতার রেখায় আটকে দিবেন।এইটা মেনে নিতে পারলে আপনি সত্যিই সুখী।মা বলেছে আপনি পারবেন।আপনি সত্যিই পারবেন!!!
হাহা! ভিন্ন রকম।
সরব এ স্বাগতম।
ধন্যবাদ:D
বোহেমিয়ানের “স্প্যাশাল থিওরী অব বিবাহ-সুখ” সম্পর্কিত গ্রাউন্ড ব্র্যাকিং থিসিসের সাথে আপনার, “জেনারেল থিওরী অব সুখ” দেখি দারুণ মিলে গেল।
এখন সুখ-পেটেন্ট নিয়ে যুদ্ধ না বাধালেই সুখী।
দন্ত্য-স দিয়ে কবিতা সহজ হবে। লিখে ফেলুন। স-তে সুখ বলে কথা।
:welcome:
হেহেহে! এটা আমার একটা ফেসবুক নোটের কপি পেস্ট মাত্র!!তাই যুদ্ধ ইম্পসিবল!
আজকে “ন” দিয়ে লিখলাম,কালকে “স” দিয়ে হয়ে যাবে।কারও বার্থডে আসুক!
সুখের প্রতি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। ভালো লেগেছে লেখাটা।
আপনার কবিতাটা দেখে মজা পেয়েছি। শব্দগুলো কঠিন হলেও সব শব্দ একই অক্ষরের! অদ্ভূত!
সরব-এ স্বাগতম!
ধন্যবাদ!
” অ” থেকে শুরু করে সব অক্ষর দিয়েই এক অক্ষরীয় কাব্য লেখার প্রজেক্ট নিয়েছিলাম। ” অ/আ” “প” “ল” এই ৪টা অক্ষরের কাজ শেষ। প্রিয় মানুষগুলোর জন্মদিনে তাদের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে কবিতা লিখি এরকম। 🙂
বাহ! এমন কবিতা পড়ার আগ্রহ রইলো…
আর একটা ছোট্ট জিনিস। প্রতিটা দাঁড়ি(।) এর পরে একটা স্পেস হবে।
এটা আমি ঐদিনের পর থেকে ঠিক করে নিয়েছিলাম। অনেক বেশি উপকৃত হয়েছি ভাইয়া,অনেক ধন্যবাদ
🙂
:welcome:
ভালো লেগেছে 🙂
অসংখ্য ধন্যবাদ:D
:welcome:
:welcome:
বেশ ভালো লাগল কনসেপ্ট। 🙂
আমিতো ব্লগে এসে শুধু পড়তাম আর শেয়ার করতাম,কমেন্টগুলো আজকে দেখলাম। অনেক ধন্যবাদ সবাইকেঃ)