মাননীয় মন্ত্রীরা, আপনাদের প্রতি……

[আজকের লেখাটি দেশের সেই ক’জন প্রচণ্ড ক্ষমতাবান মানুষের উদ্দেশ্যে যারা এতোটাই ভাগ্যবান যে, ১৬ কোটি মানুষ তাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তাদের হাতে দিয়েছে। ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্ন তাদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। আমি নিশ্চিত নই, তাদের মধ্যে একজনও এই লেখা পড়বেন কি না! তবুও, চেষ্টা করতে দোষ কোথায়?]
আজকাল খুব কঠিন কঠিন চিন্তা-ভাবনা নিয়ে লেখালেখি করতে হয়। এক পাতা লেখায় এক মুঠো জাতীয়তাবোধ, তিন আঙুলের এক চিমটি সমালোচনা আর চামচ দিয়ে কঠিন সব শব্দের নাড়াচাড়া হলেই ভালো কলাম অথবা ব্লগ লেখা হয়। সেই লেখায় উঠে আসতে পারে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা, আশাবাদ অথবা রাজনীতি নিয়ে সুচিন্তিত মতামত।
আমি খুব সাধারণ মানুষ, সাধারণ কয়েকটি চিন্তার বাইরে কিছু করাও সম্ভব না।

মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,
দেশে সবাই কেমন আছি? প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে কয়েকটা জিনিস দেখি।
এ সপ্তাহের বাজার দর কেমন আপনারা জানেন?
যেই গার্মেন্টস কর্মীর বেতন তিন হাজার টাকা তিনি এই টাকা দিয়ে দিয়ে কী খাবেন বলতে পারেন?
যে লোকটা ইট ভাঙে তার দৈনিক আয় হয়তো ১০০-১৫০ টাকা। সেই টাকা দিয়ে উনি কোথায় থাকবেন?
মধ্যবিত্তের মাসিক আয় মোটামুটি ৩০০০০ টাকা। বাড়ি ভাড়া দিতে চলে যায় ১০০০০-১২০০০ টাকা। ঢাকা শহরে ৬০০-৮০০ বর্গফুট এর একটা ফ্লাটের ভাড়া এতো দিতে হয় ঠিক কোন যুক্তিতে?
খাবারে ফর্মালিন ও কার্বাইড নিয়ন্ত্রণ করা খুব দরকার। মাত্র ৫৭ বছরের গড় আয়ুর দেশের মানুষের আয়ু কিছু অমানুষের কারণে আরো কমে যাচ্ছে।

মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রী,
সকালে বেলা কি কখনো সাধারণ মানুষ হয়ে বের হয়েছেন? যখন পুলিশ হর্ন দিতে দিতে আপনার জন্য রাস্তা খালি করে দেয় না-তখন?
ঢাকায় এখন ২ কিলোমিটার যেতে এক ঘণ্টা সময় লাগে। হাজারে হাজারে প্রাইভেট কার এর অন্যতম প্রধান কারণ। ঢাকায় কি প্রাইভেট কারগুলো নিয়ন্ত্রণ করে ভালো প্রচুর বাস ছাড়া যায় না?
আমরা যারা প্রাইভেট কার ছাড়া চলি-তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।

মাননীয় বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী,
আপনার অফিসে বা বাসায় নিশ্চয়ই কারেন্ট যায় না। গ্রীষ্মের দুপুরে ৩৫-৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে একটা শিশু কিভাবে ছটফট করে জানেন?
যেই লোকটা সকালে বিকালে চার ঘণ্টা জ্যাম ঠেলে মাঝে দশ ঘণ্টা অফিস করে আসে, সে কি রাতে ঘুমাতে পারে কি না সেটা কখনো ভেবেছেন?
হাজার হাজার কোটি টাকার বাজেটে অনেক নতুন প্রস্তাবনা আছে। পদ্মা সেতুর বদলে আমরা আরিচা ঘাট দিয়ে আরো কয়েক বছর কষ্ট করে পার হবো, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের বা উপগ্রহ নিক্ষেপ করার মতো বড় বড় ভাবনা যখন সরকার করতে পারে, দেখুন না কয়েকটা নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানানো যায় কি না। আর, নষ্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ঠিক করাটা সম্ভব কি না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনি নেতৃত্বে এসেছেন, দেশের তরুণ সমাজকে মুগ্ধ করে। সেই তরুণরা কিন্তু সবসময় আপনার পক্ষেই থাকতে চাইবে। কিন্তু, সত্যিকারের সাধারণ যুব সমাজকে দেশের জন্য এগিয়ে আসবে দেখতে চাইলে ছাত্ররাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করাটা অনেক জরুরী।
দেশের ভালো হয়, এমন সিদ্ধান্তই সবসময় গ্রহণ করুন। দূরদর্শী উন্নয়ন পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নে কঠোর মনোভাবই আপনার জনপ্রিয়তা বাড়াবে। কাজের মাধ্যমে আপনি যদি দেখাতে পারেন আপনি দেশের জন্য ভালো, তবে, অন্য কেউ খারাপ কি না-সেটা মুখে বলতে হবে না।
প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ে আলাদা আলাদা মন্ত্রী আছেন। তারা যেন সব সিদ্ধান্তের জন্য আপনার মুখাপেক্ষী না হয়ে থাকে, সেটা নিশ্চিত করা খুব দরকার।

মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী,
আপনার হয়তো সংসদে আসন সংখ্যা বেশি নয়, কিন্তু, কোটি কোটি মানুষ কিন্তু আপনাকে ভোট দিয়েছে তাদের কথা বলার জন্য। সেই কথা বলার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান জাতীয় সংসদ। সংসদকে ত্যাগ করে সত্যিকারের সমালোচনা হয় না।
দেশের ভালোর জন্য কাজ করতে চাইলে কিন্তু যে কোন পরিস্থিতিতেই করা যায়।

[ছবিসূত্র: ইন্টারনেট]

বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন প্রয়োজন-এই কথাটা আপনারা বুঝবেন বলেই আমরা আশা করে আপনাদের ভোট দেই। আমাদের অপেক্ষাটা বড় দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে।
[এই কথাগুলো দেশের সাধারণ একজন মানুষের চিন্তাভাবনা ও আশা আকাঙ্খার কথা। আশা করছি, এই কথাগুলো রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কিছু হবে না।]

স্বপ্ন বিলাস সম্পর্কে

বাস্তবে মানুষ হবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জীবনের নানা পথ ঘুরে ইদানীং মনে হচ্ছে গোলকধাঁধায় হারিয়েছি আমি। পথ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি আর দেখে যাই চারপাশ। ক্লান্ত হয়ে হারাই যখন স্বপ্নে, তখন আমার পৃথিবীর আমার মতো......ছন্নছাড়া, বাঁধনহারা। আর তাই, স্বপ্ন দেখি..........স্বপ্নে বাস করি.....
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

16 Responses to মাননীয় মন্ত্রীরা, আপনাদের প্রতি……

  1. সামিরা বলেছেনঃ

    অনেক ভাল হয়েছে লেখা। যাদের বলা হল তারা যদি শুনতো!

    • স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

      ডিজিটাল যুগে আমরা আশা করতেই পারি, তারা জনগণের কথা শোনার জন্য ইন্টারনেট এ লক্ষ্য রাখবে……

  2. ইতস্তত বিপ্লবী বলেছেনঃ

    কী বলব? কিছু বলা ঠিক হবে না আমার, শেষে রাষ্ট্রদ্রোহী বনে যাব… 😐

  3. জ্ঞানচোর বলেছেনঃ

    একেবারে পোড়খাওয়া বাংলাদেশীর মনের কথা।

  4. শামসীর বলেছেনঃ

    প্রজাদের এত কথা বলতে নেই । বেঁচে আছি এই বেশ ভাল আছি ।

  5. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    অনেক নরম করে বলছিস!!

    আর আমরা যারা প্রাইভেট কার ছাড়া চলি তাদেরই না বাকিদেরও কষ্ট হয়! সবার কষ্ট।

    শামসীর ভাই এর সাথে একমত! প্রজাদের হয়ত এত কথা বলতে নেই!

  6. মিজানুর রহমান পলাশ বলেছেনঃ

    মন্ত্রীরা আপাতত রুটি ভাগে ব্যস্ত- আপনার কথা তারা পরে শুনবেন। এখনো শোনার সময় নেই, অন্তত নির্বাচনের কয়েকদিন আগের পূর্বে আর সময় হবে না।

  7. অনাবিল বলেছেনঃ

    অযথাই কষ্ট করলেন………… 😐

    • স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

      একদিন আমি বলেছি, আরেকদিন ১০ জন বলবে, তারপর ১০০ জন………কোন এক দিন ১০ কোটি মানুষ বলবে।

      সেই দশ কোটি থেকেই তো ২০ বছর পর নতুন নেতারা আসবেন, তাই না?

  8. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    ইশ মাননীয় মন্ত্রীরা যদি ব্লগিং করতেন, কী ভালোটাই না হত! 🙁

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।