“শিক্ষা” একটি স্বেচ্ছাসেবামূলক উদ্যোগ।
গ্রাম এবং মফস্বলের স্কুল কলেজগুলোর স্বল্পসুবিধাপ্রাপ্ত ছেলেমেয়েদের কাছে প্রচলিত শিক্ষা কার্যক্রমকে আরো সহজবোধ্য ও আকর্ষণীয় করে তোলাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। পাশাপাশি গ্রামের বা মফস্বলের তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকা একজন স্টুডেন্টকে মেইনস্ট্রিমের একটা স্টুডেন্ট যেসব সুযোগ সুবিধা পায় সেগুলোর সাথে পরিচিত করে তোলাও আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।
এ লক্ষ্যে আমরা কয়েকটি ধাপে কাজ করছি।
আমাদের পুরো টিমটাকে ভাগ করা হয়েছে ৩টা মেজর গ্রুপে –
১) থিওরী টিম,
২) ইন্সট্রুমেন্টাল টিম,
৩) দৌড়ঝাঁপ টিম।
এই তিনটা টিমের নামই আসলে এদের কাজ সম্পর্কে অনেকটা ধারণা দিয়ে দেয়।
থিওরী টিমের কাজ হল বোর্ডের বইগুলোকে ঠিকঠাক করা!! আমরা বহুদিন ধরেই বলে আসছি যে আমাদের টেক্সট বইগুলো বাচ্চাদের উপযোগী না বা বইগুলো আকর্ষণীয় না কিংবা দরকারি তথ্য নাই, আবার বয়সের সাথে অপ্রয়োজনীয় তথ্যে ঠাসা ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা এই ধরণের অ্যানালাইসিসের পেছনে খুব বেশি সময় না দিয়ে সমাধানের পথে পা বাড়াতে বেশি আগ্রহী। তাই আমরা নিজেদের ক্ষুদ্র পরিধির মধ্যে নতুন করে লিখে ফেলছি বোর্ডের বইগুলোকে। তৈরি হচ্ছে ‘প্যারালাল টেক্সট’ !!!
আমাদের ইন্ট্রুমেন্টাল টিম কাজ করছে বইগুলো থেকে বিজ্ঞানের বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্টগুলোকে আলাদা তালিকাভুক্ত করতে এবং সেগুলো হাতেকলমে দেখানোর জন্য প্রয়োজনীয় সেটআপ তৈরি করতে। আমরা কাজ করছি আমাদের একদম হাতের কাছে অ্যাভাইলেবল খুচরো জিনিসপত্র দিয়ে এই সেটআপগুলো বানাতে, যেন বাচ্চাদের মধ্যে নিজে নিজে এমন নানা সেটআপ বানানোর আগ্রহ তৈরি হয়।
(ইন্সট্রুমেন্টাল টিমের কচিকাঁচাদের নিয়েই আলাদা একটা লেখা লিখব ভাবছি!!! 😛 )
আর আমাদের দৌড়ঝাঁপ টিমের কাজ হচ্ছে এই থিওরি আর ইন্সট্রুমেন্ট টিমের তৈরি কাজগুলো নিয়ে গ্রামেগঞ্জে ছুটে বেড়ানো!!! আমরা ইতোমধ্যে ঘুরে এসেছি কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলা থেকে, আমাদের সদস্যরা ঘুরে এসেছে মুন্সীগঞ্জের একটি আঞ্চলিক বিজ্ঞান উৎসব, আমরা ঘুরে এসেছি লালমনিরহাটে আয়োজিত প্রথম গণিত অলিম্পিয়াড থেকে। যেখানেই কেউ শিক্ষা নিয়ে, গণিত নিয়ে, বিজ্ঞান নিয়ে কোন আয়োজনের জন্য স্বেচ্ছাসেবক দরকার মনে করছে সেখানেই আমরা আমাদের ক্লাসের শিডিউলের ফাঁকে ফাঁকে দৌড় দিচ্ছি!!!
এর বাইরে আমরা আরো দুইটা পর্যায়ে কাজ শুরু করছি।
এদের একটা হল ঢাকাতে আমাদের আশেপাশের স্কুলগুলোতে সাপ্তাহিক বিজ্ঞান কর্মশালা করা। আর আরেকটা হল একটা ওয়েবসাইট চালু করা। আমরা ইতোমধ্যে ঢাকার তিনটা স্কুলে যোগাযোগ করেছি। আশা করছি এদের মধ্যে অন্তত একটাতে আমরা শীঘ্রই আমাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারব। আর আমাদের সাইট বানানোর কাজ হয়ে গেছে, এখন চলছে এর টেস্টরান। আশা করছি পহেলা জুলাই থেকে আমরা এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করতে পারবো। আমাদের সাইটটার ঠিকানা হল – শিক্ষা ২৪
সংক্ষেপে এই হল আমাদের কার্যক্রম।
শেষ করি আমাদের স্বপ্নের কথা বলে। আমাদের স্বপ্ন হল বুয়েটসহ দেশের সব ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টদেরকে গ্রামে/মফস্বলে শিক্ষা বিস্তারের কাজে যোগ দেয়ার মতো একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। যেন আমরা নিজেদের শিকড়কে ভুলে না যাই, যেন আমরা আমাদের উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করার পেছনে যে কোটি মানুষের শ্রম রয়েছে তাদের প্রতি দায়িত্বের কথা ভুলে না যাই। আর আমাদের নিজ নিজ অবস্থান এই ছোট ছোট উদ্যোগগুলোই একসময় বদলে দিবে বাংলাদেশ। কারণ, আমরা চাইলেই পারি…
বিঃ দ্রঃ একটা কার্যক্রমের কথা লিখতে ভুলে গিয়েছি। আমরা লালমনিরহাটে একটা প্রোজেক্ট শুরু করতে যাচ্ছি। সেখানে ২০টা স্কুলের ক্লাস নাইনের ৪০ বাচ্চাকে নিয়ে আমরা কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য এদের দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ (দূরশিক্ষন বলা যায়!!) আর অনুপ্রেরণা দেয়ার মাধ্যমে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়ে আসার মতো অবস্থা তৈরি করা। আমাদের বিশ্বাস এরাই তারপর তার নিজ এলাকার উন্নয়নের হাল ধরবে!!!
{ খুব সংক্ষেপে আমাদের কাজগুলো তুলে ধরলাম। অনেক জায়গাতেই বক্তব্যের অস্পষ্টতা আছে জানি। আমাদের প্রতিটা কাজের পেছনেই আসলে একেকটা গল্প আছে, ধীরে ধীরে সেই গল্পগুলোও আশা করি বলা হবে। আর আপনি কিভাবে এই কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হবেন সেটা নিয়ে শিগগিরই আরেকটা লেখা লিখে ফেলব! (আমি ধরেই নিচ্ছি আপনি আগ্রহী হয়ে উঠবেন!! 😛 ) আর এপর্যন্ত আমাদের বেশিরভাগ কাজই সম্পন্ন হচ্ছে ‘বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি’ আর ‘বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি’র ছত্রছায়ায়!!! তাই আপনি চাইলে সরাসরি আমাদের এই দুটি প্রতিষ্ঠিত প্ল্যাটফর্মের সাথেও কাজ করা শুরু করে দিতে পারেন! 😀 }
আরও পড়তে পারেন, শিক্ষা – ০১
এবং শিক্ষা – ০২
অফিসে বসে প্রক্সি দিয়ে কমেন্টাই। একটা করলাম কিন্তু পোস্ট হইলো না!
পাশে আছি।
দারুণ একটা কাজ। আমার ধারণা অনেক তরুণের স্বপ্নের কাজ! বুয়েট এর সাথে আরও কয়েকটা ভার্সিটির নাম যোগ করে দেয়া উচিৎ।
প্যারালাল টেক্সটটা নিয়ে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী। উইকির মতো ম্যানেজ করার সিস্টেম কি চালু করা যায়?
ইদানিং ওপেন টেক্সটবুক নামে কিছু একটা শুনছি। সেটাতেও চোখ রাখা উচিৎ।
অন্য বেশ কয়েকটা ভার্সিটির সাথে কাজ চলছে। তবে এতদিন নিজেদের ঘর গোছানোতে বেশি সময় দিয়েছি তো তাই লিস্টটা ছোটই থেকে গেছে!!!
আর প্যারালাল টেক্সট এর ডিটেল নিয়ে আরেকটা লেখা দিব। উইকির চিন্তাটা আমাদের প্ল্যানে আছে। তবে এনসিটিবির কিছু রেগুলেশান আছে, এখন সেটা নিয়ে কাজ করছি।
আর আপনি তো সাথে আছেনই! 😛
শিক্ষা এগিয়ে যাক। শুভ কামনা থাকলো।
দারুণ প্রচেষ্টা!
পাশে থাকতে পারলে খুব ভালো লাগবে……
এতো মন খারাপ খবরের মাঝেও কিছু কিছু জিনিস আশার প্রদীপটা জ্বালিয়ে রাখে নিরন্তর……
অনেক অনেক অনেক শুভকামনা………
অসাধারণ উদ্যোগ।
সাথে আছি। 🙂