১
তুমি হতে পারো অনিন্দ্য রূপবতী কোন অষ্টাদশী তরুনী।
আবার তুমি হতে পারো খুব সাধারণ একটা মেয়ে- সবার চোখে অসুন্দর। কিন্তু বাতাসে এলোমেলো উড়ে যাওয়া তোমার খোলা চুল দেখে আমি পাগল হতে পারি- চুপে চুপে তোমায় নিয়ে লিখে ফেলতে পারি কয়েকটি পঙক্তি, কিংবা একটি কবিতা। তোমায় ভেবে ভেবে আমি রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিতে পারি। আমার চোখে তোমার কাছে জগদ্বিখ্যাত সব রূপসীরা হার মানতে পারে।
তুমি কেমন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমি তোমাকে কিভাবে দেখি সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
২
কোন এক উদাস রৌদ্রকরোজ্জল দুপুরে ক্ষণিকের তরে তোমার আমার মুখোমুখি দেখা হতে পারে কৃষ্ণচূড়া ছাওয়া কোন এক পথে, কিংবা তোমায় আমি দেখতে পারি কোন ব্যস্ত রাস্তায় রিক্সায় যেতে যেতে। আবার এক ঝুম বৃষ্টির দিনে ডান হাতে ছাতা আর বাম হাতে শাড়ি সামলে পেরিয়ে যেতে পারো তুমি আমার জানালার সামনের রাস্তা। তোমার সাথে আমার আর কোনদিন দেখা নাও হতে পারে এই জনমে।
কিন্তু আমি যে ভাবতে বড় ভালবাসি। আমি আমার মনে ঘটনার জন্ম দেই, কাহিনী বিন্যস্ত করি- চরিত্র সৃষ্টি করি, সেই চরিত্রকে পূর্ণতা দেই। বাস্তবে হয়তো তুমি এতীম হতে পারো- অন্যের বাসায় শত গঞ্জনা সয়ে হয়তো কষ্টের জীবন কাটে তোমার। কিন্তু আমার মনের কল্পনায় আমি তোমার সম্বন্ধে অনেক কিছুই ভেবে নিতে পারি। আমার কল্পনায় তোমার একটা চমৎকার ভাল মানুষ আম্মু থাকতে পারে, একটা সদা-দুশ্চিন্তাগ্রস্ত আব্বু থাকতে পারে। আরো থাকতে পারে সর্বংসহা এক বড় ভাই, দুষ্ট মিষ্টি ছোট ভাই বোন। অভিজাত এলাকায় ছোট্ট বাগান ঘেরা একটা পাখির নীড়ের মত বাড়ি থাকতে পারে তোমার- যার লনে তোমরা পরিবারের সবাই বিকেলে এক সাথে চা খেতে খেতে বৈকালিক আড্ডা দাও। বোনের স্কুলে মিসের কঠোরতার কথা শুনে চোখ বড় করতে পারো আবার ভাইয়ের বোকামিতে সবাই মিলে হাসতে হাসতে ভেঙ্গে পড়তে পার।
তুমি হয়তো চরম মেধাবী কোন এক পড়ুয়া ছাত্রী কিন্তু আমার কল্পনায় তুমি হতে পারো পড়াশোনায় অমনোযোগী এক রুপ সচেতন মেয়ে- পড়ার টেবিলে যার শুধু ঘুম পায়, ক্লাসরুমের বোরিং ক্লাস গুলোর চেয়ে বান্ধবীদের সাথে মিলে ফুচকা খেতে যার অনেক আগ্রহ। প্রতিবার রেজাল্টের শেষে যার তিনদিন রুমের দরজা বন্ধ করে বসে কাঁদতে হয়- তুমি হতে পারো সেই ফাঁকিবাজ মেয়ে যদিও আমার কল্পনায় তুমি মোটা চশমার সিরিয়াস ছাত্রী, ভাল রেজাল্টের কারনে যে বার বার শিরোনাম।
তুমি সারাদিন কানে হেডফোন লাগিয়ে হিন্দি গান শুনতে অভ্যস্ত- তেরি মেরি গানের সাথে লালন গীতির তুলনা তোমায় হাসায় কিন্তু আমার ভাবনায় হয়তো তুমি খুব সুন্দর রবীন্দ্রসংগীত গাইতে পারো। তোমার কিন্নর গলায় দর্শক তন্ময় হয়।
৩
এভাবে একদিন কোন এক ক্ষণে সামান্য সময়ের তরে, তোমার আমার দেখার পরে- আমি তোমায় নিয়ে অনেক কিছু ভাবতে পারি। তুমি আমার হঠাৎ পাওয়া একটুকরো কাদামাটির ঢেলার মত- আমি তোমায় নিজের হাতে ভেঙ্গে গড়ে ইচ্ছেমত গড়ে নিতে পারি। আমি তোমার সেই কল্পিত রূপের প্রেমে পড়তে পারি। তোমায় নিয়ে ঘুরতে যেতে পারি বালুকাময় নির্জন প্রান্তরে- যেখানে চারিদিকে শুধু ধুধু বালুচর। তোমায় নিয়ে আমি ঘর বাধতে পারি গহীন অরণ্যে- যাবতীয় ব্যস্ততা আর কোলাহল থেকে দূরে সরে গিয়ে। যদিও বাস্তব তুমি আর আমার মনের ভেতরে তুমি অনেক অনেক দুরের।
একদিন সামান্য দর্শনের পরে তোমায় নিয়ে ভেবে ভেবে আমি হয়তো তোমার প্রেমে পড়তে পারি। তবে বিশ্বাস করো সেই প্রেম তোমার সাথে নয়- তোমায় আশ্রয় করে গড়ে ওঠা আমার কল্পনার নায়িকার সাথে, যাকে আমি নিজের খেয়ালে তৈরি করেছি- তোমার সাথে হয়তো তার সামান্য মিলও নেই।
তুমি কি সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমি তোমার সম্পর্কে কি ভাবি সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
———————
মিজানুর রহমান পলাশ
নজরুল ইসলাম হল, বুয়েট
১২/৬/২০১২
লেখাটা আমার ব্যক্তিগত ব্লগেও প্রকাশিতঃ
———->প্রথম পাতাঃ মিজানুর রহমান পলাশ এর লেখার জগত।
আমার নতুন-পূরাতন সব লেখা পাওয়া যাবে এখানে।
লেখাটা কি , তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঠক কিভাবে বুঝে নেবে ………
গভীর thinking …………
onek valo lagche………………… :love: :thinking:
আমারো ভয় এই লেখাটায় মেসেজটা কয়জনে ধরতে পারে- সবার শেষে আমার লেখাটায় প্রদত্ত মেসেজ তুলে দেবার ইচ্ছে আছে কমেন্টে।
পলাশ, আমি কি বুচ্ছি সেই কথা বলার আগে আপনি বলেন, আপনি নিজে কি বুঝে আপনার পাঠককে বেক্কল ঠাওরাচ্ছেন?
এক কাজ করুন। যদ্দিন আপনার মনে না হচ্ছে, আপনার পাঠকের বুদ্ধিমত্তার লেভেল আপনার লিখার “ম্যাসেজ” ধরতে পারার স্তরে না পৌছাচ্ছে, তদ্দিন নিজের লিখা তালাচাবি মেরে রাখুন।
ধন্যবাদ- ভালো থাকবেন।
এখানে কোথাও লেখক ‘নিশ্চিত’ করে বলেন নি যে ‘পাঠক বুঝতে পারবেন না’। তিনি নিজের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, তিনি লিখে পাঠককে কথাগুলো ‘বোঝানোর মতো করতে’ সক্ষম হয়েছেন কি না!
কথার মূল উদ্দেশ্য বুঝতে আপনার ভুল হয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস।
ভালো থাকবেন।
সুন্দর হয়েছে… … :happy:
অনেক ধন্যবা :love: :love: দ আপনাকে।
তবে বিশ্বাস করো সেই প্রেম তোমার সাথে নয়- তোমায় আশ্রয় করে গড়ে ওঠা আমার কল্পনার নায়িকার সাথে, যাকে আমি নিজের খেয়ালে তৈরি করেছি- তোমার সাথে হয়তো তার সামান্য মিলও নেই।
এই কথাটা সবচেয়ে ভালো লাগল।
@সাত্যকির সমস্যা কী?!! কী কমেন্ট করলেন এটা?!! মাথা ঠিক আছে?!!
লেখাটা নিয়ে আমি গতকাল কয়েকজনের সাথে আলোচনার করেছি। দেখলাম সবাই লেখাটা নিয়ে একইরকম ভাবেই ভাবছে। মোটামুটি আমি যা ধারনা করেছিলাম তাই- আমি যখন পেছনের ঘটনা আর দুই একটা উদাহরন দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম তখন সবাই একবাক্যে বললো যে ভাই এখন আরো ভাল বুঝছি, ওভাবে চিন্তা করি নাই- মেসেজটা এখন ধরতে পারছি।
আমার মনে হচ্ছিলো যে চিন্তাটা অদ্ভুত ধরনের। সেটা পাঠক বুঝতে পারবে না তা নয়- কিন্তু আমি কি আসলেই বুঝাতে পারছি ঠিকভাবে? কারন ঠিকমতো বুঝাতে না পারলে সবাই এই লেখাটা সমন্ধে একটা ভুল ইমপ্রেশন পাবে। হয়েছেও তাই- সবাই মোটামুটি এটাকে একটা রোমান্টিক লেখা ভাবছে। কিন্তু আমি এটাকে মোটেও কোন রোমান্টিক লেখা হিসেবে লেখি নি। হয়তো এটা আমার লেখার ব্যর্থতা অথবা আমার চিন্তা এমন অদ্ভুত যেটার সাথে অন্যের পরিচয় নেই।
আমরা একটা জিনিস তখনই বুঝতে পারি যখন সেই ফিলিংসটা আমারও থাকে। যে লোক কখনো বাবা হয়নি যতই বোঝানো হোক না কেন তাকে কখনো বাবা হবার প্রকৃত অনুভূতি বোঝানো যাবে না।
ঘটনাকে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে দেখার উৎসাহ অথবা প্রেরনা যাই বলি না কেন সবার থাকে না। তাই আমি বলেছিলাম যে সবাই বুঝতে পারবে কি না ঠিক মতো- অফকোর্স সবাই নিজের মত বুঝবে, কিন্তু আমি কি বুঝাতে চেয়েছিলাম সেটা বুঝবে কি?
“I am not what I think I am, I am not what you think I am, I am what I think you think I am.” – লেখার সাথে সম্পর্কহীন মনে হয়, কিন্তু পড়তে পড়তে এই উক্তিটা মনে পড়ে গেল। Cooley নামের কেউ বলেছেন সম্ভবত।
আমার এক বান্ধবী আছে, আমি ওর ফটোগ্রাফির ভক্ত। ও একবার একটা কথা বলেছিল, “আমি কোন ছবি তোলার সময় যেই মেসেজটা দিতে চাই অনেক সময়েই মানুষ পুরো অন্য অর্থ করে। তাতে আমি কোন সমস্যা দেখি না, আমার মত করেই যে সবাইকে বুঝতে হবে এমন তো না।” আমি নিজে লেখা শুরু করার পরও এই জিনিসটা দেখেছি; আর মনে হয়েছে আমরা কোন গল্প-কবিতা-উপন্যাস পড়ে যেই অর্থ বুঝি লেখক আসলে ঠিক সেটাই বোঝাতে না-ও চাইতে পারেন, একেবারেই ভিন্ন কিছু বলতে পারেন। সেটা জানতে পারলে হয়তো ভাল হত, তবে আবার সেটা জানা হয়তো জরুরিও না!
তবে সবসময় হয়তো এই কথা খাটে না। ভুল বুঝলে হয়তো অনেক সময় লেখার উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়। সেক্ষেত্রে বুঝতে পারাটা জরুরি।
অনেক সুন্দর বলেছ
:clappinghands: :clappinghands:
“তুমি কি সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমি তোমার সম্পর্কে কি ভাবি সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।”
চমৎকার একটা কথা :clappinghands:
এভাবে হয়তো কখনো ভাবি নি……
ধন্যবাদ ভাইয়া
😛 😛
হায় বালিকা! পলাশ নামের এই ছেলেটিকে বাঁচাও প্লিজ। 😛
ফিনিক্স বলেছেন :
জুলাই 1, 2012 at 11:50 অপরাহ্ন
হায় বালিকা! পলাশ নামের এই ছেলেটিকে বাঁচাও প্লিজ।
——————
:happy: :happy: :happy: :happy: :happy: :happy:
—