ভাবনা ও ভয়: টিপাইমুখ

দৈনিক প্রথম আলোয় প্রথম পৃষ্ঠায় আজ একটা প্রতিবেদন পড়েই এ লেখার শুরু। লেখার শিরোনাম “টিপাইমুখ প্রকল্প : প্রস্তুতির কাজ থেমে নেই”। ((http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-06-16/news/266165))


লেখার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পয়েন্ট আগে দেখে নেই:
১. প্রধান প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা এনএইচপিসির (জাতীয় জলবিদ্যুৎ সংস্থা) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেছেন, পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়া গেছে। এখন বনসংক্রান্ত ছাড়পত্র পেলে মন্ত্রীসভা কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া হবে। এ ছাড়া কারিগরি ও অর্থনৈতিক ছাড়পত্র আগেই দিয়ে দিয়েছে ভারত সরকার।
২. ভারতের মণিপুর রাজ্যে প্রস্তাবিত এই বৃহদায়তন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তবে এনএইচপিসির নির্বাহী পরিচালক এ কে সরকারের দাবি, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বন্যা নিয়ন্ত্রণে সুফল পাবে বাংলাদেশ।
৩. প্রকল্পটিতে বাংলাদেশের অনুমতি নিয়েই সব করা হবে বলা হলেও বাংলাদেশকে ছাড়াই এগিয়ে চলছে প্রস্তুতির কাজ।
টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে এখন পর্যন্ত কম কথা হয় নি। অনেকেই অনেক কিছু বলেছেন, অনেক কিছু লিখেছেন।
পক্ষে যাহা কহিতেছেন সাধুরা:

১. এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ভাটিতে বাংলাদেশের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর আশেপাশের এলাকার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
২. এই প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এর ভাগ পাবে বাংলাদেশ।
ভাবনার কথা:

১. টিপাইমুখ বাঁধ দেয়া হবে বরাক নদীতে। এই বরাক নদীই পরবর্তীতে দুই ভাগ হয়ে সুরমা ও কুশিয়ারা তৈরি করেছে। এই নদীর অববাহিকা এলাকায় বাংলাদেশের অন্যতম হাওর অঞ্চল। বাঁধ দিয়ে যে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হচ্ছে, তাতে এ হাওরে পানির পরিমাণ ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে। এ হাওরের এর ইকোসিস্টেম ধ্বংস হয়ে যেতে পারে এ বাঁধের কারণে। একই সাথে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে এই এলাকার মাছ এবং পাখির বিভিন্ন প্রজাতি। তাছাড়া, এই হাওর এলাকার ফসল উৎপাদন ব্যবস্থাও গড়ে উঠেছে লম্বা সময় জমে থাকা পানির উপর নির্ভর করে। কৃষিকাজে ব্যাপকভাবে ক্ষতিসাধন করতে পারে এ বাঁধা।

২. বাংলাদেশের এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ চাহিদা প্রায় ৬০০০ মেগাওয়াট এবং উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৪০০০ মেগাওয়াট। ((http://www.infokosh.bangladesh.gov.bd/detail.php?article_id=2901&content_type=0&doc_type=5))
অর্থাৎ, বিদ্যুৎ ঘাটতি প্রায় ২০০০ মেগাওয়াট।
টিপাইমুখ প্রকল্পে যে জলবিদ্যুৎ তৈরি হবে, তার পরিমাণ প্রায় ১৫০০ মেগাওয়াট। বাংলাদেশ হয়তো বড়জোর এর ২৫০-৫০০ মেগাওয়াট পেতে পারে। এই বিদ্যুৎ এর পরিমাণ এমন বেশি নয় যে, বিশাল পরিমাণ এলাকার ইকোসিস্টেম নষ্ট করে দিয়ে এই বাঁধকে অনুমোদন দিতে হবে।
মনে আছে, নাকি নাই?:
বরাক নদীর যে জায়গায় বাঁধ দেয়া হবে সেটা ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল। ১৯৮৮ সালে এ এলাকায় ৬.৬ মাত্রার এক ভূমিকম্প হয়।
টিপাইমুখ বাঁধে যে পরিমাণ পানি ধরে রাখা হবে তার পরিমাণ ১০হাজার ২১৪ কিউসেক।
এমন কোন ভূমিকম্প হলে এবং তাতে বাঁধ ভেঙে গেলে এই পানি নেমে আসবে ভাটি অঞ্চলে, অর্থাৎ, সুরমা ও কুশিয়ারা অববাহিকায়। এই অতিরিক্ত পানি ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলা এবং পরবর্তীতে মেঘনা নদীর অববাহিকা।

সরকার মহাশয়, ভাবিবার বিষয়:

টিপাইমুখ বাঁধ হলে বাংলাদেশের একমাত্র লাভ হতে পারে বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়া, যার বিষয়ে কোন চুক্তিও ভারতের সাথে হয় নি। তাছাড়া, ভারত কোন চুক্তি করলে তা মানবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই(গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি না মানা, তিস্তা চুক্তি না করা)। আর, বিদ্যুৎ পেলেও তা ঘাটতির বড়জোর চারভাগের একভাগ পূরণ করতে পারে।
টিপাইমুখ বাঁধ ঝুঁকির মুখে ফেলবে বাংলাদেশের কয়েকটি জেলার মানুষ ও পশুপাখির জীবন এবং ফসল উৎপাদন ব্যবস্থা।
দেশের ভালোর জন্য এ কথাগুলো কি সরকার ভাববে না?

স্বপ্ন বিলাস সম্পর্কে

বাস্তবে মানুষ হবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জীবনের নানা পথ ঘুরে ইদানীং মনে হচ্ছে গোলকধাঁধায় হারিয়েছি আমি। পথ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি আর দেখে যাই চারপাশ। ক্লান্ত হয়ে হারাই যখন স্বপ্নে, তখন আমার পৃথিবীর আমার মতো......ছন্নছাড়া, বাঁধনহারা। আর তাই, স্বপ্ন দেখি..........স্বপ্নে বাস করি.....
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা, সচেতনতা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

8 Responses to ভাবনা ও ভয়: টিপাইমুখ

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    ভয়াবহ অবস্থা দেখি!
    এই রিলেটেড অন্য আলোচনাগুলোর লিঙ্ক যোগ করলে ভালো হবে। কারণ অনেক আলোচনা হয়েছে। সেটা আমরা সবাই মিলে কমেন্ট সেকশনেই করতে পারি!

  2. সামিরা বলেছেনঃ

    🙁
    কেউ তো ভাববে বলে মনে হয় না।

  3. জ্ঞানচোর বলেছেনঃ

    জরুরী লেখা। তবে কি না এ দেশে খবরের ফলো আপ হয় না।

  4. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    বেশ ভয় ভয় লাগল লেখাটা পড়ে।
    আমাদের দেশের সাধারণ মানুষেরা এতটুকু বোঝে, কিন্তু উচ্চ আসনের মানুষেরা কেন বোঝেন না?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।